Page 402

লাটমন্ত্রীর গোপালগঞ্জ পরিদর্শণ

চৌধুরী নবাব আলি নামেতে সুজন।

লাটের মন্ত্রীত্বে বটে ছিল সেই জন।।

বগুড়া নবাব বংশে জনম তাঁহার।

বহু মান করিলেন বঙ্গের ভিতর।।

লাটের মন্ত্রীত্বে যবে ছিল মহাশয়।

গোপালঞ্জেতে আসি হলেন উদয়।।

তাঁর আগমনে হয় সভার শোভন।

মহাপ্রভু গুরুচাঁদ পায় নিমন্ত্রণ।।

সাঙ্গো পাঙ্গো দেশ মধ্যে প্রধান যাহারা।

প্রভুর সংগেরত তবে চলির তাঁহারা।।

ভীষ্মদেব দাস আর শ্রীবিধু চৌধুরী।

মহাজ্ঞঅনী যঞ্জেশ্বর চলে সঙ্গে তারি।।

গোপালগঞ্জেতে আসি উদয় হইল।

লাট-মন্ত্রী সঙ্গে পরে সাক্ষাৎ করিল।।

প্রভুকে দিখিয়া বলে সেই মন্ত্রীবর।

‘‘বড়কর্ত্তা আপনাকে করি নমস্কার।।

আপনার পুত্র যিনি শ্রীশশিভূষণ।

পূ্র্ব্বে তাঁর সঙ্গে মোর আছে আলাপন।।

সুধীর সুশান্ত বটে সেই মহাশয়।

একবার হলে দেখা ভোলা নাহি যায়।।

তাঁহার কুশলবার্ত্তা জানিবারে চাই।

কেমন আছেন তিনি মোরে কন তাই।।

Page 403 start

এই প্রশ্ন করে যদি মন্ত্রী মহাশয়।

নীরবে পিতার বুকে অগ্নি জ্বলে হায়।।

আপনারে স্মবরিয়া প্রভু বলে হাসি।

‘‘মন্ত্রীবর! পরলোকে চলে গেছে শশী।।’’

ধীরে ধীরে প্রভু করে বাক্য উচ্চারণ।

বাক্য শুনি মন্ত্রী হল দুঃখে নিমগন।।

পিতার মুখেতে শুনি পুত্রের মরণ।

মন্ত্রী যেন বাক্য-হারা হইল তখন।।

নীরব লাটের মন্ত্রী নীরব সকল।

নীরবে কান্দিল যেন সেই গৃহতল।।

কিছু পরে লাট-মন্ত্রী প্রভু পানে চায়।

বলে ‘‘বড় দুঃখ প্রাণে হল মহাশয়।।

শশীবাবু সঙ্গে কিসে হল পরিচয়।

সেইবার্ত্তা বড়কর্ত্তা জানাই তোমায়।।

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন যখনে হইল।

হিন্দু সবে দলে দলে তাতে যোগ দিল।।

ঢাকার নবাব যিনি সলিমুল্লা নাম।

মহাজ্ঞানী বিচক্ষণ সেই গুণধাম।।

মুসলমানের পক্ষে এই আন্দোলন।

কর্ত্তব্য কি অকর্ত্তব্য তাতে যোগদান।।

সেই পরামর্শ লাগি তাঁর কাছে যাই।

তার গৃহে তব পুত্রে আমি দেখা পাই।।

একসঙ্গে পরামর্শ করিনু আমরা।

মোরা নাহি মানি লব আন্দোলন-ধারা।।

নমঃশূদ্র আর মোরা যত মুসলমান।

ঠিক হল মোরা নাহি দিব যোগদান।।

আমি জানি সেই মতে দেশে আসি শশী।

নমঃশূদ্র মুসলমানে করে মিশামিশি।।

আপনার কার্য্যধারা পাই পরিচয়।

সেই ইতিহাস আজি বলি মহাশয়।।

বড় গুণবাণ ছিল তোমার নন্দন।

বড় দুঃখ পাই শুনি তাঁহার মরণ।।

অবশ্য খোদার ইচ্ছা সদা বলবান।

তাই ভাবি দুঃখে নাহি হও মুহ্যমান।।’’

মন্ত্রীর বচন শুনি প্রভু হাসি কয়।

‘‘মোর কথা শুন তবে মন্ত্রী মহাশয়।।

আমি জানি তিনি মোরে বাসে সদা ভাল।

ভালবেসে যাহা দেয় তাই মোর ভাল।।

মঙ্গলময় কেন বল মনে ভাবি মোরা?

মঙ্গলময়ের ইচ্ছা সুমঙ্গলময়।।

পুত্রের মরণে আছে মঙ্গল নিশ্চয়।।

তাতে মোর মনে শোক কিছু হয় নাই।

যে-কার্য্যে এসেছি মোরা বলি শোন তাই।।

একেত দরিদ্র এই নমঃশূদ্র জাতি।

বিদ্যাহীন বলে আছে হয়ে হীনমতি।।

আমাদের মত আছে তব সম্প্রদায়।

বিদ্যা বিনা ইহাদের হবে না উপায়।।

আর বলি রাজকার্য্য দিলে ইহাদের।

তোমার আমার জাতি উঠিবে উপরে।।

অবশ্য তোমার মধ্যে আছে বহুজন।

ধনী, মানী, জ্ঞানী, গুণী কত মহাজন।।

তবু বলি অধিকাংশ মুসলমান ভাই।

আমাদের মত তারা বিদ্যা পায় নাই।।

আপনি লাটের মন্ত্রী বহু শক্তি হাতে।

বিদ্যা-বিহীনের গতি কর কোনমতে।।’’

প্রভুর বচন শুনি মন্ত্রী মহোদয়।

বলে ‘‘ধন্য বড়কর্ত্তা ধন্য মহাশয়।।

তোমার উদার নীতি শুনিলাম কানে।

বড়ই উদার দেখি তোমার হৃদয়।

তোমার মতন কথা কেহ নাহি কয়।।

সবে চায় নমঃশূদ্রে আর মুসলমানে।

বিবাদ বাধায়ে দিয়ে মরিবে পরাণে।।

Page 404 start

তোমার বাক্যতে মোর বড় আশা হল।

এতদিনে বুঝিলাম সুদিন আসিল।।

আমি বলি তব ঠাঁই কথা মিথ্যা নয়।

যাহা পারি সব আমি করিব নিশ্চয়।।’’

পুনরায় মন্ত্রীবর ধন্যবাদ দিল।

অতঃপর মহাপ্রভু বিদায় মাগিল।।

কি ধন্য প্রভুর খেলা কেবা মর্ম্ম জানে।

যেখানে যা লাগে প্রভু করে তা সেখানে।।

সঙ্গীসহ গুরুচাঁদ গৃহেতে ফিরিল।

কিছুদিন পরে দেখ মহা ঝড় হল।।

বাহিরেতে ঝড় হল গাছপালা ভাঙ্গে।

স্বরাজের আন্দোলন উঠে সঙ্গ সঙ্গে।।

সেই সব কথা এবে করিব বর্ণন।

হৃদয়ে স্মরণ করি শ্রীগুরু চরণ।।

দয়া করি গুরু মোর বস হৃদিপটে।

তব কৃপা বিনে মোর সাধ্য নাহি মোটে।।

---০---