Page 258

জেলে নিকৃষ্ট কার্য হইতে নিষ্কৃতি

বিদ্যাহীন নমঃশূদ্র ছিল জ্ঞানহীন।

উচ্চবর্ণে হিংসা করে তারে রাত্রিদিন।।

রাজকর্ম্মচারী যত ইংরাজ আসিত।

বর্ণ হিন্দু নিকটেতে জিজ্ঞাসা করিত।।

নিজ স্বার্থ তারা সবে রাখিত ঘিরিয়া।

বিদ্যাহীন জনে কহে ‘অস্পৃশ্য’ বলিয়া।।

সেইভাবে নমঃশূদ্রে দিত পরিচয়।

ইংরাজে মানিত যাহা উচ্চবর্ণে কয়।।

ইহার কারণ এই শুন সবে বলি।

বিদ্যাহীন নমঃশূদ্র আছিল সকলি।।

মনে কোথা পাবে বল বিদ্যা কোথা নাই।

ভীরু কাপুরুষ-সম আছিল সবাই।।

অন্যায় বহিত শিরে বিনা প্রতিবাদে।

মুখে নয় বুকে কয় গভীর বিষাদে।।

স্বার্থ বাদী বলদর্পী পাইয়া সুযোগ।

যত পায় তত চায় রাখে অনুযোগ।।

নমঃশূদ্র জেলে গেলে হইয়া কয়েদী।

নিকৃষ্ট কর্ম্মেতে তারে রাখে নিরবধি।।

অসহ্য যন্ত্রণা কত সহে দিনে দিনে।

মুক্ত হয়ে শুদ্ধ হয় গিয়ে গঙ্গাস্নানে।।

যবে গুরুচাঁদ আসি অবতীর্ণ হল।

কৃপাদানে এ জাতিকে উদ্ধার করিল।।

‘চন্ডাল’ উপাধি দূর করিল ঠাকুর।

ধন্য ধন্য করে সবে দূর হতে দূর।।

কতজনে দিল তাঁরে ত্রাণকর্ত্তা বলি।

কতজনে দিল তাঁরে ভক্তির অঞ্জলি।।

কয়েদীরা জেল হতে আসিয়া বাহিরে।

ধন্য ধন্য ধ্বনি শোনে দেশ-দেশান্তরে।।

জিজ্ঞাসা করিয়া জানে স্বজাতির ঠাঁই।

গিয়াছে চন্ডাল গালি আর ভয় নাই।।

চন্ডাল বলিয়া যদি বলে কোন জন।

জরিমানা হবে তার নাহিক খন্ডন।।

এই কীর্ত্তি করিয়াছে শ্রীগুরুচরণ।

উপাধী ঠাকরি যাঁর বিখ্যাত ভুবন।।

কয়েদীরা বলিতেছে স্বজাতির ঠাঁই।

এক কার্য্য বাকী কিন্তু আছে শোন ভাই।।

নমঃশূদ্র জেলে গেলে হীন কার্য্য দেয়।

এর প্রতীকার করা উপযুক্ত হয়।।

ক্রমে ক্রমে এই কথা প্রভুজী জানিল।

মীডেরে ডাকিয়া তবে কহিতে লাগিল।।

সমস্ত বৃত্তান্ত তাঁরে বিশেষে জানায়।

শুনিয়া বলিল মীড “নাই কোন ভয়।।

ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের কুঠিতে যাইয়া।

এসব বৃত্তান্ত আমি আসিব বলিয়া।।

Page 259 start

ইতিমধ্যে দরখস্ত সাহেবের ঠাঁই।

আমি লিখি তুমি তাতে করে দেহ সই।।”

সেই ভাবে দরখস্ত হইল যখন।

ম্যাজিষ্ট্রেট দিল আজ্ঞা শুন সর্ব্বজন।।

“হীন কার্য্য নমঃশূদ্রে জেলের ভিতরে।

যেজন করাবে তার শাস্তি হবে পরে।।”

এই নীতি ক্রমে ক্রমে সর্ব্ব জেলা যায়।

হীন কার্ম্মে নমঃশূদ্র অব্যাহতি পায়।।

পতিতপাবন রূপে গুরুচাঁদ এল।

তাঁরে ছুঁয়ে মরাদেহে পরাণ জাগিল।।

---০---