Page 332

শ্রীশ্রীদেবীচাঁদ ও শ্রীশ্রীতারক চাঁদের বর লাভ

মরা বাঁচে বিনা চালে অন্ন রাধি দেয়।

‘শ্রীগোপাল সাধু বলে হল পরিচয়।।

দেবী-চাঁদ শুনিলেন সমস্ত কাহিনী।

অমনি গোপালে বক্ষে লইলেন টানি।।

ডেবে বলে “রে গোপাল বাঁচালি আমারে।

আমার যা কিছু আছে তোরে দিব ধরে।।

গোস্বামীর সঙ্গে সাধু ওড়াকান্দী যায়।

বসে বসে লীলা দেখে কথা নাহি কয়।।

Page 333 start

হেনকালে তেরশত সপ্তদশ সালে।

‘বিধবা-বিবাহ দাও’ প্রভু দিল বলে।।

শ্রীমুখের আজ্ঞাক্রমে সে দেবীচরণ।

নানা স্থানে বিবাহের করে আয়োজন।।

গোপাল বিপিন এই ভাই দুইজন।

বহু কষ্টে বিবাহাদি করে সংঘটন।।

দেবী যায় ওড়াকান্দী সঙ্গেতে গোপাল।

প্রভুকে প্রণাম করে চক্ষে বহে জল।।

সেই দিন গোপালের দেয় পরিচয়।

“নন্দের গোপাল” বলি গুরুচাঁদ কয়।।

দুই বর্ষ গত হয় এমন সময়।

গোস্বামী তারক চন্দ্র দক্ষিণেতে যায়।

খোনকারবেড় নামে আছে এক গ্রাম।

গান করিবারে যায় কবিগুণধাম।।

রসরাজে ওড়াকান্দী গোপাল দেখেছে।

বিশিষ্ট আলাপ তাঁর সঙ্গে নাহি আছে।।

বানিয়ারী গ্রামে বসি সংবাদ শুনিল।

শ্রীতারক গোস্বামীজী দক্ষিণেতে গেল।।

দ্রুতগতি সে-গোপাল গৃহপানে ধায়।

মনে ইচ্ছা রহিবে সে গানের সভায়।।

পরম সাধক কবি করিবেন গান।

নিশ্চয় উঠিবে সেথা প্রমের তুফান।।

এত ভাবি দ্রুতগতি দেশ-মুখে চলে।

পথ চলে আর মুখে হরি হরি বলে।।

হেনকালে শুন এক দৈবের ঘটন।

কলেরায় তারকেরে করে আক্রমণ।।

সাথী যারা দূরে তারা কাছে নাহি যায়।

রোগ নিয়ে গোস্বামীজী রহে একেলায়।।

হেনকালে উপস্থিত সাধুজী গোপাল।

গোস্বামীর কষ্ট দেখি চক্ষে বহে জল।।

হেনকালে গোস্বামীজী চক্ষু মেলে চায়।

পায়খানা যাবে ভেবে উঠিবারে যায়।।

আগু হয়ে সে-গোপাল ধরিল যখন।

গোস্বামী কহিল তারে অতি কুবচন।।

ভয় পেয়ে ছেড়ে দিয়া দাঁড়াইয়া রয়।

এত গালি খায় তবু কথা নাহি কয়।।

পুনরায় তাঁরে যবে ধরিবারে যায়।

ক্রোধ ভরে গোস্বামীজী তাঁহাদের শুধায়।।

“কেরে বেটা এলি হেথা কোন দেশে ঘর?”

গোপাল ভাবিছে মনে কি দিব উত্তর।।

ওড়াকান্দী হতে তেঁহ বানীয়ারী গেল।

তথা হতে খোনকারবেড় পঁহুছিল।।

মনে করেগোস্বামীকে বলিবে সকল।

কর জোড় করি বলে আঁখি টলমল।।

বলে “ওড়াকান্দী হতে আমি আসিয়াছি।”

আর কি শুনিবে কবি উঠিলেন নাচি।।

গোপালে জড়ায়ে বলে “ওরে দয়াময়।

তোমাকে পাঠাল প্রভু দেখিতে আমায়?

নিশ্চয় বুঝিনু তবে আর মৃত্যু নাই।

তোমাকে পেয়েছি কাছে আর কিবা চাই”?

প্রাণপণে গোস্বামীর শুশ্রষা করিল।

নিজ হাতে গোস্বামীর বিষ্ঠা ফেলাইল।।

গোপালের নিষ্ঠা দেখি গোস্বামী বিস্মিত।

মনে ভাবে এরে কৃপা করাই উচিত।।

যাত্রার প্রাক্কালে তাই দিল তারে বর।

“শুনহে গোপাল তুমি বচন আমার।।

যে ভাবে আমার সেবা করিয়াছ তুমি।

তার লাগি এই বর দিয়া যাই আমি।।

সাধন ভজন তোর কিছু না লাগিবে।

আপনি শ্রীগুরুচাঁদ করুণ করিবে।।”

গোপাল কান্দিয়া তবে লুটায় ধরণী।

শ্রীতারক গোপালেরে বক্ষে নিল টানি।।

এই ভাবে কৃপা পেল প্রভুজী গোপাল।

দিবানিশি নামে গানে মত্ত মাতোয়াল।।

Page 334 start

এই সব কৃপা পেয়ে শক্তিমন্ত হয়।

এবে শুন কোন প্রেমে গুরুচাঁদ পেল?

আদি আজ্ঞঅ বিধবারে বিবাহ করাল।

“নন্দের গোপাল” আখ্যা গুরুচাঁদ দিল।।

দ্বিতীয় কীর্ত্তির কথা করিব কীর্ত্তন।

শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত গ্রন্থের মুদ্রণ।।

কর্ম্মগুণে কর্ত্তা মেলে শুধু বাক্যে নয়।

কর্ম্ম-ছাড়া বৃথা-বাক্য মহানন্দ কয়।।

---০---