Page 303

ভক্ত কৃপাগুণে ভেকরূপী কামাচারী গুরু-উদ্ধার

এ-ভবে কর্ম্মফল এড়ান কারো নাই।

কর্ম্মফল-কথা কিছু শুন সবে ভাই।।

কৃ-ধাতু-ত্রি-গুণ জান সত্তঃ রজঃ তমঃ।

ণক প্রত্যয় মনোময় আগমন নিগম।।

সৃষ্টি হল কর্ম্ম-জীব ইহা বলে রাখি।

ফলরূপে ভোগ যাহা তাহা শুধু বাকি।।

সাকারে কর্ম্মের খেলা নিরাকারে নাই।

কর্ম্মফলে বাধা তাতে সৃষ্টিতে সবাই।।

কর্ম্মগুণে ফল ভোগ কিবা লাভ হয়।

সুকর্ম্ম কুকর্ম্ম সব ফলে পরিচয়।।

এই কর্ম্মফল কেহ এড়াইতে নারে।

কর্ম্মফল শ্রেষ্ঠ তাই এ-ভব সংসারে।।

কর্তা ভিন্ন কর্ম্ম কেহ শাসিতে না পারে।

সর্ব্ব-কর্ম্ম-সাধ্য মাত্র প্রভুর চক্রধরে।।

তাঁর ভক্ত যেই জন তাঁরে দেছে প্রাণ।

তাঁর কৃপাগুণে বটে সেই বলবান।।

কর্ম্ম-চক্র-ভেদ বটে তাঁর পক্ষে সাধ্য।

কর্ম্মফল তাঁর আজ্ঞঅ মতে রয় বাধ্য।।

“কৃপা” গুণ যারে বলি কোন গুণ সেই?

সে-গুণের কাছে কিন্তু কর্ম্মফল নেই।।

“কৃপা-সিন্ধু” “কৃপা-ধন্য” হয়েছে যে জন।

কর্ম্মফল-বন্ধু-মুক্ত সদা তাঁর মন।।

প্রকৃতির দান যাহা বাহিরেতে রয়।

তা্ই নিয়ে কর্ম্মফল ধার শোধ লয়।।

“কৃপা-সিদ্ধ” কৃপা-রসে ডুব দিয়ে রয়।

প্রকৃতির পরিশোধ টের নাহি পায়।।

কর্ম্মএল এড়াবার কারো সাধ্য নাই।

ভাগবত পুরাণেতে সে-প্রমাণ পাই।।

সহস্র ধেনুর মধ্যে বৎস চেনে মাতা।

কর্তার পশ্চাতে কর্ম্ম ফিরে যথা তথা।।

“যথা ধেনু সহস্রেষু বৎসো বিন্দতি মাতরম।তথা শুভাশুভৎ কর্ম্ম কর্ত্তারমনুগচ্ছতি।।”----ভূমিখন্ডম।

কিন্তু ফলভোগ হয় বিভিন্ন প্রকারে।

কারে ফল স্পর্শে কারে স্পর্শ নাহি করে।।

তাহার প্রমাণ দেখি দস্যু রত্নাকরে।

পাপে মুক্তি পেল সেই নারদের বরে।।

কর্ম্মফলে দেহ তার হ’ল বটে লয়।

রাম নাম মগ্ন থেকে টের নাহি পায়।।

প্রকৃতির দান যাহা রয়েছে বাহিরে।

তাই নিয়ে কর্ম্মফল ঋণ শোধ করে।।

তাহাতে বলেছি আমি “কৃপা-সিদ্ধ’ জন।

সেই পারে কর্ম্মফল করিতে খন্ডন।।

মহতের কৃপাগুণে কর্ম্মফল নাশে।

শুনহে ঘটনা যাহা বলি অবশেষে।।

ব্যানার্জি প্যারীচরণ নামে মহাশয়।

লহ্মীপাশা গ্রামে ঘর যশোর জেলায়।।

বৃহৎ দীর্ঘিকা এক খনন কারণ।

নিয়াগ করিলে তেঁহ বহু লোকজন।।

চারিহস্তি পরিমিত গভীর হইলে।

প্রকান্ড দুর্দ্দুর এক দেখিল সকলে।।

এত বড় ভেক কেহ কভু দেখে নাই।

সর্ব্বাঙ্গে “চেটুয়া-ঢাকা” সবে দেখে তাই।।

মাটী দূর হল ভেক আলোক দেখিল।

ক্রোধ ভরে ফোঁস ফোঁস করিতে লাগিল।।

পিয়ারী বাকুবে তবে ডাকিল সকলে।

কথা শুনি প্যারীবাবু এল সেই স্থলে।।

Page 304 start

দুই হাত দীর্ঘে হবে প্রস্থে এক হাত।

ভেক দেখি প্যারী বলে “এ কোন ডাকাত।।

এই জীব ভেক নাহি হবে কদাচন।

কি জান কি কর্ম্মফলে হয়েছে এমন।।”

কথা শুনি কোদালীরা বলে তার ঠাঁই।

“ইহার কারণ মোরা শুনিবার চাই।।

তিনি কন, “এই সাধ্য না হবে আমার।

মহাজ্ঞানী হরি ভক্ত সেই মহাশয়।।

তোমরা তাহারে ডেকে আন গো হেথায়।

কথা মত কোদালীরা তারকে ডাকিল।

সব শুনি সেই সাথে তারক আসিল।।

প্যারীবাবু বলিলেন তারকের ঠাঁই।

“তোমাকে ডেকেছি আমি তারক গোঁসাই।।

তত্ত্বজ্ঞঅনী সাধু তুমি আমি জানি ভাল।

প্রকান্ড ভেকের তত্ত্ব মোর কাছে বল।।

মোর মনে বলে এই ভেক কভু নয়।

কোন দিন এত বড় ভেক নাহি হয়?

আশ্চর্য্য ঘটনা তাতে চোখে যায় দেখা।

সর্ব্বাঙ্গ রয়েছে তবে “চাটুয়াতে” ঢাকা।।

ইহার মীমাংসা করি বুঝাও সকলে।

মনের সন্দেহ সব যাক দূরে চলে।।

ব্যানার্জির কথা শুনি তারক কহিল।

“আমি কিবা জানি বাবু সেই কথা বল।।

জানাজানি যাহা মোর সব ওড়াকান্দী।

এ সব তত্ত্বের আমি কিবা জানি সন্ধি।।

শ্রীহরির-পদ চিন্তা মনে করি সার।

অবশ্য করিব চেষ্টা ইহা মীমাংসার।।

এতবলি চক্ষু মুদি তারক বসিল।

ভেকের অতীত কথা সকলি জানিল।।

ক্ষণপরে চক্ষু মেলি সেই মহাশয়।

উপস্থি লোক জনে ডেকে ডেকে কয়।।

“অদ্ভুত ঘটনা সবে শুন দিয়া মন।

পূর্ব্ব জন্মে ছিল ভেক গুরু একজন।।

ভেকধারী বৈরাগী পালিল আচার।

বহু শিষ্য ক্রমে হইল তাহার।।

ঐশ্বর্য্য বাড়িয়া ধর্ম্মে দিল ছারখার।

শিষ্য নারী সঙ্গে সেই করে ব্যাভিচার।।

ভেকধারী হয়ে গুরু করে ব্যাভিচার।

এই জন্মে পেল তাই ভেকের আকার।।

গুরু যারা ব্যাভিচারি তার রক্ষা নাই।

গুরু-শিষ্য এক সঙ্গে সমান সবাই।।

ভবরূপ সাগরেতে শ্রীগুরু-তরণী।

বুকে করে শিষ্যে পার করে তাই জানি।।

তরী যদি ডুবে যায় আরোহী কি করে।

অকুল সাগর ডুবে জানে প্রাণে মরে।।

কর্ম্মফলে গুরু পেল ভেকের আকার।

“চেটা-রূপে” শিষ্য সর্ব্ব দেহ অলঙ্কার।।

গুরু-পদ নহে কভু সামান্য ব্যাপার।

গুরু যিনি গুরুতর দায়িত্ব তাহার।

শত শত গুরু মিলে সদ গুরু কই?

উপায় নাহিক কভু সদ গুরু বই।।

যা’ হোক তা’ হোক এই বলিলাম সার।

ব্যাভিচারী গুরু হয়ে এ-দশা ইহার।।

এতেক বলিয়া সাধু নীরব হইল।

পিয়ারী চরণ তবে ডাকিয়া কহিল।।

“সত্য যুক্তি বলি ইহা মোর মনে হয়।

দয়া করে অভাগার করহে উপায়।।।

অতীতের কথা যবে বলিয়াছি তুমি।

ভবিষ্যৎ আছে জানা মনে করি আমি।।

দয়া করে অভাগারে করহে উদ্ধার।

তোমার দর্শণে পাপ দুর হোক তার।।

তারক বলেন বাবু শাস্ত্রের প্রমাণ।

কর্ম্মফল ক্ষয়ে হয় দেহ অবসান।।

Page 305 start

পুরাণে প্রমাণ তার শুন বলি তাই।

পদ্মপুরাণের মধ্যে সে প্রমাণ পাই।।

“তৈল ক্ষয়াদযথা দীপো নির্ব্বাণমধিগচ্ছতি।কর্ম্মক্ষয়া ত্তথা জন্তু শরীরান্নাশ মৃচ্ছতি।।”-----পদ্মপুরানম

মৃত্তি-তেল বহুদুঃখে ভোগ শেষ হল।

এবে দেহ নাশ হবে হরি হরি বল।।

সবে মিলে করতালে বলে হরি হরি।

লম্ফ দিয়ে ভেক তবে পড়িল আছাড়ি।।

পড়ামাত্র প্রাণ বায়ূ বাহির হইল।

ভোগ শেষে কামাচারী উদ্ধার পাইল।।

সাধু দরশনে কাটে কর্ম্মদোষ-ফল।

পাপ-ক্ষয়ে আত্মা তার হইল নির্ম্মল।।

তারকচাঁদের গুণে বলিহারি যাই।

তারকের প্রীতে হরি হরি বল ভাই।।

---০---