Page 167

১৯০৫ খৃষ্টাব্দ বা বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলন


“মরা গাঙে বান ডেকেছে,জয় মা! বলে ভাসাও তরী। -- রবীন্দ্রনাথ।

ঊনিশ শ ' পাঁচ অব্দ চির -স্মরণীয়।

বাঙ্গালীর পক্ষে বটে অতি বরণীয়।।

শুধুই বাঙ্গালী কেন ভারতের বুকে।

সর্ব্বজনে এই সাল মনে করে রাখে।।

জাতীয় জীবনে ঢেউ প্রথমে উঠিল।

'মরা গাঙে বান ডেকেছে 'বাঙ্গালী গাহিল।।

স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে।

অতি -ধন্য দিন সেই বাঙ্গালীর কাছে।।

আদি অন্ত সে বৃত্তান্ত বলিবারে চাই।

দয়া করে কহ কথা গোপাল গোঁসাই।।

তব কৃপা বলে গুরু!মো 'সম পাতকী।

শ্রী গুরুচরিত কথা ক্রমে যায় লিখি।।

তুমিও লিখাও তারে অন্তরে বসিয়া।

তোমার গুরুর গুণ যেতেছ গাহিয়া।।

Page 168 start

কেবা তিনি কেন তিনি আসিলেন ধরা।

সেই তত্ত্ব তুমি জান নাহি জানি মোরা।।

তব ইচ্ছা যাহা তুমি করহে প্রকাশ।

দয়া করে মোর হৃদে কর তুমি বাস।।

পদাশ্রিত দাস আমি পদে দেহ স্থান।

করিতে পারি গো যেন গুরু-গুণ গান।।

কার্জ্জন নামেতে এল রাজ প্রতিনিধি।

সেই জনে বঙ্গ ভঙ্গ করিলেন বিধি।।

ভারতের রাজধানী কলিকাতা ছিল।

বঙ্গ -বুকে থাকি বঙ্গ ছেদন করিল।।

পূর্ব্ব ও পশ্চিম বঙ্গ নামে করে ভাগ।

উত্তেজিত বঙ্গ বাসী বলে 'সবে জাগ '।।

এক দেশ এক ভাষা মনে এক আশা।

বিভাগ করিলে কার্য হবে সর্ব্ব -নাশা।।

বাঙ্গালী একই জাতি এক হয়ে র'বে।

হেন শক্তি নাহি তারে পৃথক করিবে।।

সারা বঙ্গ জুড়ি বহে আন্দোলন ধারা।

জনে জনে ঘরে ঘরে ভাবে মাতোয়ারা।।

ব্যানার্জী সুরেন্দ্রনাথ অগ্রণী হইল।

তার আবাহনে জাতি দৃঢ় সাড়া দিল।।

মাতৃ-পূজা-ব্রত-মন্ত্রে দীক্ষিত সকল।

বাঙ্গালী স্বাধীন হবে বুকে বাঁধ বল।।

'স্বদেশী 'বলিয়া খ্যাত তাহারা লভিল।

মাতৃ-পূজা বেদী তলে অনেকে মরিল।।

ক্ষুদিরাম অরবিন্দ বারীন প্রফুল্ল।

উল্লাসে ' উল্লাস ' কর অন্যে নহে তুল্য।।

কেহ গেল দ্বীপান্তরে কেহ নিল ফাঁসী।

আন্দোলনে ঝাঁপ দিল সারা বঙ্গ বাসী।।

অম্বিকাচরণ নামে সে ফরিদপুরে।

ওকালতী ব্যবসায় সেথা বাস করে।।

এই আন্দোলন মাঝে ঝাঁপ দিল তেঁহ।

সেই বলে 'পিছে পড়ে থাক না'ক কেহ '।।

বাঙ্গালী সাজিল রণে প্রকাশ্যে গোপনে।

বোমা মারে লুঠ করে ধন কেড়ে আনে।।

লাটের গাড়ীর নীচে বোমা রেখে দেয়।

অপরাধে ক্ষুদিরাম ফাঁসী-কাষ্ঠে যায়।।

আলীপুর-বোমা-কেস বিখ্যাত ভারতে।

অরবিন্দ অপরাধী আছিলেন তা'তে।।

দেশবন্ধু চিত্ত বীর এই মামলাতে।

রাখিল অক্ষয় কীর্ত্তি বাক্ পটু তাতে।।

অরবিন্দ মুক্ত হল বাকী কতজনে।

দীপান্তর শাস্তি হল রাজার আইনে।।

এই ভাবে আন্দোলন কয়েক বছরে।

চলিল ভারত ব্যাপী বিবিধ প্রকারে।।

এই বার্ত্তা রাজদ্বারে ক্রমে পঁহুছিল।

শ্রী পঞ্চম জর্জ্জ তবে সিংহাসন পেল।।

তেঁহ আজ্ঞা মতে হল দিল্লী দরবার।

বঙ্গ ভঙ্গ বিধানের হল সুবিচার।।

বঙ্গ ভঙ্গ রদ হল খুশী বঙ্গ বাসী।

ছিন্ন বঙ্গ যুক্ত হল এক সঙ্গে মিশি।।

রাজদ্রোহ -কার্য যারা করে নানা মতে।

শাস্তি পে'ল তারা সবে বিচারক হাতে।।

রাজভক্ত ছিল যারা করিল সাহায্য।

পুরস্কার পে'ল কত সবে হল পূজ্য।।

এই আন্দোলন কালে ঘটে যে ঘটনা।

নমঃশূদ্র জাতি পক্ষে করিব বর্ণনা।।

অম্বিকাচরণ নাম লিখিয়াছি পূর্ব্বে।

নেতা বলে জেলাবাসী মান্য করে সর্ব্বে।।

নমঃশূদ্র জাতি চিনে সেই মহাশয়।

শক্তিশালী জাতি বলে জানে পরিচয়।।

মনের কল্পনা তাঁর যাহা দেখা যায়।

মনে মনে চিন্তা করে সেই মহাশয়।।

এই আন্দোলনে যদি এই জাতি নামে।

সৈন্য বিভাগেতে কার্য করিতে সক্ষমে।।

Page 169 start

ইহাদিগে' ভিড়াইয়া হ'ব শক্তিশালী।

অবশ্য বিদ্রোহ হবে মহাবলে বলী।।

এত ভাবি আলোচনা করে মহাশয়।

কোথা গেলে নমঃশূদ্র হাত করা যায়।।

ক্রমে ক্রমে শুনিলেন গুরুচাঁদ-কথা।

নমঃকূলে সে শ্রেষ্ঠ নমঃশূদ্র - নেতা।।

তিনি যদি সায় দেয় জাতি সায় দিবে।

একস্থানে বসে কার্য সমাধা হইবে।।

কিন্তু সবিশেষ জানা নাহি তাঁর সাথে।

সোজাসুজি এ প্রস্তাব করি কিবা মতে?

নমঃশূদ্র শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র ওড়াকান্দী গ্রাম।

জিনিতে হইবে তারে না করি বিশ্রাম।।

ওড়াকান্দী সন্নিকটে ঘৃত কান্দী গাঁয়।

কায়স্থ ব্রাহ্মণ কিছু বসতি তথায়।।

তাহাদের সহযোগে সভা মিলাইয়া।

নমঃশূদ্র গণে নিবে দলে ভিড়াইয়া।।

এই মত চিন্তা করি করে আয়োজন।

ঘৃতকান্দী গ্রামে এক সভা আমন্ত্রণ।।

নিমন্ত্রণ করে আনে নমঃশূদ্র গণে।

বুঝা 'ল অনেক সবে বিবিধ বিধানে।।

দেশমাতা স্বর্গ হ'তে হয় গরীয়ান।

তার লাগি দিতে হয় অনায়াসে প্রাণ।।

মাতৃ সেবা যেবা নাহি করা প্রাণপণে।

কুলাঙ্গার ব্যাখ্যা তার শাস্ত্রের বিধানে।।

অতএব দেশ লাগি সবে এক হও।

এক-ভাবে এক-মনে এক-কথা কও।।

এই ভাবে বহুক্ষণ অম্বিকাচরণ।

বক্তৃতা করিল শুনে সবে সভাজন।।

বক্তৃতা শুনিয়া সবে মোহিত হইল।

“স্বদেশী সাজিব মোরা “এমত কহিল।।

ভাবের তরঙ্গে যত নমঃশূদ্র গণ।

স্বদেশী সাজিতে সবে করিল মনন।।

মনে মনে উল্লাসিত অম্বিকাচরণ।

ডেকে বলে 'শুন ভাই নমঃশূদ্র গণ।।

আমি জানি এই দেশে তোমাদের নেতা।

ওড়াকান্দী গুরুচাঁদ অসীম ক্ষমতা।।

আমি দেশে যাই চলে দেরী না করিব।

কিছুকাল পরে পুনঃ মিলিত হইব।।

ইতিমধ্যে সবে মিলি এই কাজ কর।

ওড়াকান্দী গিয়ে সবে গুরুচাঁদে ধর।।

একত্রে সকলে গিয়ে জানাও তাঁহারে।

স্বদেশী সাজিলে সবে কোন নীতি ধরে।।

তোমরা বলিলে তিনি বুঝিবেন প্রাণে।

স্বদেশী সাজিতে দ্বিধা নাহি হবে মনে।। “

এত বলি সভা ত্যাগ করি মহাশয়।

নিজ দেশে চলিলেন দ্রুত অতিশয়।।

সভাতে আছিল যত নমঃশূদ্র গণ।

হস্তেতে পতাকা সবে করিল গ্রহণ।।

স্বদেশীর গান গাহি চলিয়াছে পথে।

দেশ ডুবে যায় যেন বহু জনস্রোতে।।

দলে দলে ওড়াকান্দী সবে উপনীত।

হস্তেতে পতাকা বহে কন্ঠে বহু গীত।।

লোক সমাবেশ হ'ল কয়েক হাজার।

মনে হয় ওড়াকান্দী মিলেছে বাজার।।

বিস্তৃত প্রাঙ্গণ 'পরে গদিখানা ঘর।

মহাপ্রভু বসিয়াছে আসন -উপর।।

হেনকালে মহা কলরব শোনা যায়।

প্রভু বলে 'দেখ দেখি কিসে শব্দ হয়।।”

বলিতে বলিতে সবে উপনীত হ'ল।

প্রভু জোরে হেঁকে বলে “ছাড় গণ্ডগোল “।।

প্রভু জোরে হাঁক দিল বজ্রধ্বনি -প্রায়।

মুহূর্ত্তে সে জনসঙ্ঘ স্তব্ধ হ'য়ে যায়।।

শিক্ষক অন্তরে গেলে যথা বালকেরা।

গোলমাল করে ঘরে সবে সাজি সেরা।।

Page 170 start

দেশ কাল ভুলি তারা বালক স্বভাবে।

হট্টগোল করে যথা অতি উচ্চ রবে।।

শিক্ষক প্রবেশি ' যবে গৃহের ভিতরে।

হাঁক দিয়া বেত্র নিয়া আস্ফালন করে।।

মুহূর্ত্তে বালক বৃন্দ কলরব ছাড়ি।

স্থানুবৎ বৈসে সবে দিয়ে সারি সারি।।

অথবা কৌরব সভা মাঝে যদুবীর।

দুষ্টের দমন হেতু তুলি নিজ - শির।।

অট্টহাস্য করি করে কৌরব মোহিত।

তেজঃ দেখি দুষ্টগণে মনে অতি ভীত।।

উত্তাল -তরঙ্গ -মত্ত যথা সিন্দু পানে।

উদ্যত শাসন -অস্ত্র রাম যবে টানে।।

ভয়াকুল সিন্দু পতি করজোড় করি।

অনুতাপে রাম পদে পড়িল আছাড়ি।।

তেমতি শ্রী গুরুচাঁদ বজ্রধ্বনি কৈল।

মূক -প্রায় জনসঙ্ঘ স্তব্ধ হৈয়া রেল।।

অতঃপর মহাপ্রভু কহিলেন ডাকি।

ক্রোধেতে কম্পিত দেহ রক্ত বর্ণ আঁখি।।

“তোমরা কাহারা বাপু! কি চাও এখানে।

চীৎকার কর কেন আমার উঠানে?

হাতেতে নিশান দেখি নিশান ত ভাল।।

দলে দলে গান গেয়ে কিবা চাও বল “।

ক্রোধ -মূর্ত্তি দেখি কেহ কথা নাহি কয়।।

কথাঞ্চিৎ শান্ত হ'য়ে বলে দয়াময়।

“বুঝিয়াছি তোমাদের যতেক কল্পনা।

স্বদেশী সেজেছ সবে করিয়া জল্পনা।।

স্বদেশী সেজছ ভাল আমি ত' বিদেশী।।

স্বদেশী সাথে মোর নাহি মিশামিশি।।

তবে কেন আসিয়াছ বিদেশীর কাছে ?

সকলে স্বদেশী হও আমি থাকি পাছে।।

দেশ কারে বলে বাপু, মাটি কি মানুষ।

কোন দিনে কেহ তাহা করিয়াছে হুষ?

বাক্য -বীর এক এক জনে হেথা আসে।

বলে যায় লক্ষ কথা চক্ষের নিমেষে।।

নির্ব্বোধ সরল জাতি মূল নাহি বোঝে।

যে যাহা বলিয়া যায় তাই শুনে মজে।।

যাহা শুনে মনে ভাবে তাই বুঝি ভালো।

চিরকাল এই ভাবে জনম কাটিল।।

এই কথা মনে নাহি ভাবে কোন দিন।

কি কারণে এ জাতির দশা এত হীন?

কি বলি দুঃখের কথা বুক ফেটে যায়।

শত্রু কি বান্ধব এরা চেনে না'ক হায়।।

'দেশ ' 'দেশ ' বলি যারা আজি ঘুরিতেছে।

কিছু বাপু বোঝ কেন এ ভাবে ধরেছে।।

সুদিনে মোদের যারা করিয়াছে ঘৃণা।

আজ কেন আসে তারা কিছুই বোঝ না।।

স্বার্থরক্ষা এরা সবে জানে ভাল করে।

তোমাদের কাছে আসে স্বার্থের খাতিরে।।

শিক্ষিত বিদ্বান যারা ধনী জমিদার।

'স্বদেশী 'স্বদেশী ' বলে করে চীৎকার।।

অশিক্ষিত আমি বাপু অর্থ কড়ি নাই।

স্বদেশীর অর্থ আমি বুঝি না 'ক তাই।।

আমাদের শশী কিছু পড়া পড়িয়াছে।

তোমরা সকলে বাপু যাও তার কাছে।।

আমি যে বিদেশী তাহা জানি আমি মনে।

এদেশে এসেছি শুধু বাবার কারণে।।

এত বড় 'দাবা -দেশ 'আগে নাহি জানি।

আসিয়া বেকুপ হয়ে বসে জের টানি।।

যাও যাও দেখ গিয়া শশী কোথা আছে।

সব কথা বল গিয়া শশী বাবু কাছে।।”

এই মত প্রভু যদি বলিল বচন।

অন্তরাল হ'তে আসে শ্রী শশিভূষণ।।

ইঙ্গিতে বলিল সবে আসিতে বাহিরে।

আজ্ঞা মতে গেল সবে জমির উপরে।।

Page 171 start

শ্রী শশি ভূষণে সবে ঘিরিয়া দাঁড়া'ল।

তাঁর কাছে সবে তবে কহিতে লাগিল।।

“বড় বাবু মন খুলে বলিবারে চাই।

কর্ত্তার নিকটে গেলে সাহস না পাই।।

যে কথা বলিছে আজি অম্বিকা চরণ।

তা 'তে বুঝি স্বদেশীতে ভালই মরণ।।

প্রাণে বলে বেঁচে থেকে কিবা কাজ হবে।

স্বদেশী রাজত্ব হ'লে সব দুঃখ যাবে।।

মনে ভাল ব'লে সব স্বদেশী সেজেছি।

কি হ'ল কেমন হবে জানিতে এসেছি।।

যাহা কিছু করি মোরা জানাই কর্ত্তারে।

সেই হেতু আসিয়াছি তাঁহার গোচরে।।

ভাল করি মন্দ করি তাঁহাকে জানাই।

জানি সবে তিনি ছাড়া বন্ধু কেহ নাই।।

আপনার কাছে যেতে বলিলেন তিনি।

দয়া করি তাই তুমি আসিলে আপনি।।

বুঝাও মোদেরে সব ব'সে মোরা শুনি।

পশ্চাতে করিব কার্য যাহা ভাল গণি।।

স্বদেশীরা করে কার্য নাহি রাখে স্বার্থ।

দেশের লাগিয়া ছাড়ে ধন, মান, অর্থ।।

বড়ই উদার তাঁরা মহৎ পরাণ।

আমাদের সাথে বসি করে জলপান।।

কর্ত্তার কথায় মনে লাগে যে সন্দেহ।

বড় কাজ করে ছোট হয় নাকি কেহ।।

জ্ঞান হীন সবে মোরা ভাব নাহি বুঝি।

কর্ত্তার নিকটে তাই আসি সোজাসুজি।।

হরি পুত্র গুরুচাঁদে সবে মান্য করি।

তিনি যান্ যেই পথে সেই পথ -ধরি।।

কিন্তু কি বলিব বাবু স্বদেশী সে -জন।

আমাদের মন প্রাণ করেছে হরণ।।

কিবা জানি কেন মন পাগল হইল।

বাধ্য হ'য়ে করি তাহা সে যাহা বলিল।।

ভাবিলাম কত ভাল স্বদেশীর কাজ।

কাস্তে ফেলে সবে হাতে ধরিলাম সাজ।।

উল্লাসে ছুটিয়া তাই আসি ওড়াকান্দী।

স্বদেশী সাজে তাই গুরুচাঁদে বন্দি।।

কিন্তু ক্রোধে কর্ত্তা যবে বলিল বচন।

সে উল্লাস যেন আর নাহিক এখন।।

এ যেন সিন্ধুর বুকে তরঙ্গের খেলা।

দুই দিকে দুই সিন্ধু মধ্যে মোরা ভেলা।।

একের তরঙ্গ ঘাতে বহু দূরে যাই।

দ্বিতীয়ের ঘাতে পুনঃ ফিরে আসি তাই।।

মনে হয় স্বদেশীরা বলেছে মধুর।

পুনঃ দেখি কর্ত্তা বলে মধুর মধুর।।

দো'টানায় প'ড়ে মোরা কূল নাহি পাই।

হাবুডুবু বড় বাবু খেতেছি সবাই।।

শিক্ষা ক্ষেত্রে আদি গুরু এদেশে আপনি।

যে আজ্ঞা করিবে মোরা সবে ল'ব মানি।।

সুযুক্তি বিধান চাহি মোরা তব ঠাঁই।

যা 'বলিবে তা 'করিব ইথে ভুল নাই”।।

এত যদি বলে কথা দেশ বাসী ভাই।

শ্রী শশি ভূষণ বলে “এই আমি চাই।।

স্থির চিত্তে শুন তবে বান্ধব সকল।

স্বদেশীতে হবে ভাল কিংবা অমঙ্গল”।।

এত বলি শশী বাবু বহুৎ প্রকারে।

স্বদেশীর ব্যাখ্যা করে সভার ভিতরে।।

আদি অন্ত সে বৃত্তান্ত করেছি লিখন।

হ'ল যথা শশী বাবুর জীবনী বর্ণন।।

সারগর্ভ সে বক্তৃতা শ্রী শশী করিল।

স্বদেশীর ধাঁধাঁ সবে বুঝিতে পারিল।।

সার -মর্ম্ম অল্প কিছু বর্ণন করিব।।

অপর বিষয় কিছু লিখিতে ধরিব।।

দেশ নহে মাটি শুধু দেশ --দেশবাসী।

এই তত্ত্ব আলোচনা করিলেন শশী।।

Page 172 start

যে -কর্ম্মে দেশের সবে সুখে কাল কাটে।

সেই কর্ম্মে দেশ সেবা শ্রেষ্ঠ হয় বটে।।

স্বার্থ রক্ষী পুজিবাদী যদি কোন দল।

বাঁচা 'তে নিজের স্বার্থ পা 'তে কোন ছল।।

দীন দুঃখী দেশে যারা তাহাদের পানে।

ভুলিয়াও কোন দিন দৃষ্টি নাহি হানে।।

বিপদে পড়িলে আসে দরদী সাজিয়া।

ভুলি যায় দীন দুঃখী দরদ দেখিয়া।।

একে ত শিক্ষার সঙ্গে নাহি জানা শোনা।

দারিদ্র বহিতে বক্র মেরুদণ্ড -খানা।।

চিরকাল তিরস্কার পুরস্কার যার।

ক্ষণিকের মিষ্ট -কথা প্রীতি পদ তার।।

জীবনে সুখের সঙ্গে নাহি পরিচয়।

সুখের মধুর -কথা যদি কেহ কয়।।

সুখেচ্ছু -তাপিত -প্রাণ মুহূর্ত্তে গলিয়া।

বক্তার চরণ তলে পড়ে যে ঢলিয়া।।

স্বদেশীর আন্দোলনে এই মর্ম্ম-কথা।

করিলেন শশী বাবু উচ্চারণ তথা।।

এত যে দরদ দেয় বিপদের কালে।

বিপদ কাটিয়া গেলে সব যায় ভুলে।।

চাটুবাক্যে শিক্ষিতেরা অতিশয় পটু।

অবশ্য উচিৎ কথা শোনা যায় কটু।।

বিপদের কালে ধরে চাটুকার -বৃত্তি।

মরে দীন চাটুকারে 'লভে মহাকীর্ত্তি।।

এই মত সত্য যত সরল ভাষায়।

শ্রী শশী ভূষণ বলে স্বজাতি-সভায়।।

শশীর বচনে সবে পায় দিব্য-দৃষ্টি।

সবে বলে করিয়াছি একি অনাসৃষ্টি।।

আজি হইতে বুঝিলাম এই তত্ত্ব-সার।

পতিত বান্ধব গুরুচাঁদ কর্ণধার '।।

মহারোলে জয়ধ্বনি সকলে করিল।

প্রভুর নিকটে গিয়া নীরবে বসিল।।

হেসে হেসে প্রভু বলে কি গো স্বদেশীরা।

কাটিতে পারিল শশী তোমাদের জেরা ?

করজোড়ে প্রধানেরা বলিছে বিনয়ে।

'ভুল করিয়াছি মোরা বাক্যে মুগ্ধ হয়ে।।

মূল -তত্ত্ব যত কিছু বুঝিতে না পারি।

যে যা বলে সেই সাথে সবে ছুটে মরি।।

অপার করুণা তব দয়া ধন্য বলি।

উদ্ধার করিবে সব স্ব -জাতি মণ্ডলী।।

এই আশির্বাদ চাহি বাঞ্ছা কল্পতরু।

অবোধ -অজ্ঞান -জনে সদা কৃপাং কুরু “।।

এত যদি প্রধানেরা বিনয়ে বলিল।

স্থির হয়ে মহাপ্রভু কহিতে লাগিল।।

“শুনহে স্বজাতি বন্ধু বলি সার কথা।

অকারণে হুড়াহুড়ি করিতেছে বৃথা।।

আপনার সাধ্য বুঝি করিবেক কর্ম্ম।

গৃহী-জন-পক্ষে জেন এই শ্রেষ্ঠ -ধর্ম্ম।।

পাঠ্য পুস্তকেতে আছে এক প্রস্তাবনা।

অসাধ্য করিলে কর্ম্ম পায় সে লাঞ্ছনা।।

ইহুদি দেশেতে ঘটে যাহা বলি এবে।

মেষ পাল রাখিতেছে রাখালেরা সবে।।

শূন্যেতে ঈগল পক্ষী শক্তিতে প্রধান।

নিম্ন -দৃষ্টি রাখি করে শিকার সন্ধান।।

মেষ শাবকেরা চরে মাতার নিকটে।

লোভেতে ঈগল পক্ষী নিম্ন দিকে ছোটে।।

অকস্মাৎ পদ নখে সাপুটি ধরিয়া।

মেষ শাবকেরে লয়ে চলিল উড়িয়া।।

হতবাক্ রাখালেরা শূন্য পানে চায়।

শক্তি বলে সে -ঈগল মেষ লয়ে যায়।।

দুষ্ট-বুদ্ধি দাঁড় কাক্ আসি হেন কালে।

উড়িয়া বসিল গিয়া বট বৃক্ষ-ডালে।।

প্রতক্ষ্যে দেখিল চক্ষে ঈগলের কাজ।

দাঁড় কাক মনে ভাবে শুভ দিন আজ।।

Page 173 start

অই বেটা ডানা দুটো ভর দিয়া চলে।

মুহূর্ত্তে মেষের বাচ্চা নিল অবহেলে।।

আমারও তো দুই ডানা পায় আছে নখ।

আমি কেন মিটা' ব না শিকারের শখ।।

কাল শিখিয়াছি নীতি বসিয়া ও গোহালে।

পণ্ডিত মশাই যাহা বলে পাঠশালে।।

বালকেরা পড়িয়াছে শুনিয়াছি তাই।

কাল যাহা শিখিয়াছি কাজেতে খাটাই।।

তারা পড়ে বড় ক'রে ক'রে চেঁচামেচি।

সব কটা কথা আমি মনে রাখিয়াছি।।

দশ জনে পারে যাহা আমি তাহা পারি।

পারি কিনা পারি হবে পরখ তাহারি।।

ঈগলে পারিল যাহা মোর কি অসাধ্য?

কবি জনে ছড়া গাহে আমি কব গদ্য?

ওর দুই পাখা আছে আরো দুই পাও।

তাহা ত আমারও আছে আর কিবা চাও ?

আহা কি নধর কান্তি বাচ্চাগুলি চলে।

উপোসি 'থাকিব আমি বসে বৃক্ষ-ডালে?

'কা চিন্তা মরণে রণে ' ঝাঁপ দিয়া পড়ি।

আপাতঃ একটাকে নখে লয়ে উড়ি “।।

এত ভাব ততক্ষণে মূর্খ দাঁড়কাক।

উড়িয়া মিটাতে গেল শিকারের শখ।।

শাবকের পৃষ্ঠো পরে যখনি পড়িল।

কম্বলের মত লোমে পদ আটকিল।।

হায়! হায়! একি দায় উড়া দূরে থাক্।

চরণ ছাড়াতে নারে মূর্খ দাঁড় কাক।।

ছট্ ফট্ করি পাখা লাগিল নাড়িতে।

মেষ -শিশু ভীত হ'ল পাখার বাড়িতে।।

হেন কালে রাখালেরা দৃষ্টিপাত করে।

ছুটে গিয়া দাঁড় কাকে লয়ে এল ধ'রে।।

শিকারী শিকার হল রাখালের হাতে।

হাত ছোট আম বড় লোকে বলে তা'তে।।

সকলের পক্ষে সব কাজ ঠিক নহে।

যার কাজ তার সাজে লোকে তাই কহে।।

স্বদেশী সাজিতে সবে হয়েছে উন্মত্ত।

কেহ কি জান কি সেই স্বদেশীর তত্ত্ব।।

দেশ যারা চেনে জানে দেশের খবর।

স্বদেশী সাজুক তারা হয়ে একত্তর।।

আমরা দরিদ্র সবে ঘরে নাহি অন্ন।

দেনা -দায়ে বাঁধা সবে চির-অবসন্ন।।

বিভাগ হউক দেশ অথবা জুড়ুক।

যা 'আছে রাজার মনে সে ভাবে করুক।।

ভাগ হই জুড়ে রই তা'তে মোদের কি ?

কোন ভাবে মোদের কপালে নাহি ঘি।।

বড়-জনে বড়-কথা বলে সর্ব্ব ঠাঁই।

দাঁড় কাক হয়ে কেন শিকারেত যাই।।

মনে ভাবি সব কথা বলিয়াছে শশী।

কাজ নাই আমাদের ওই দলে মিশি।।

আরো শুন বলি কথা কিছু মিথ্যা নয়।

দরিদ্র ধনীতে পথে কিবা ভাব হয়।।

এক সঙ্গে দুই জন চলে যদি পথে।

ধনী দেয় নিজ বোঝা দরিদ্রের মাথে।।

বোঝার বাহন করি তারে লয়ে যায়।

বাড়ীর চাকর বলি দেয় পরিচয়।।

দায় ঠেকে দীনজনে করে তোষামোদ।

দায় গেলে তারে লয়ে করয় আমোদ।।

উপহাসে পরিতোষ করে দীন জনে।

ধনী কি দরিদ্র বন্ধু-হয় কোন দিনে?

সমানে সমান হলে হয়ে থাকে ঐক্য।

অসমে বিষমে লেখা নাহি কেহ সখ্য।।

দরিদ্র কাঙ্গাল জাতি বন্ধু কেহ নাই।

রাজার বিরুদ্ধে কেন তবে মোরা যাই।।

দেশ-মাতা দেশ-মাতা আজ যারা বলে।

গ্রামে গ্রামে এসে কথা বলে দলে দলে।।

Page 174 start

এতদিন পরে বুঝি মনে পড়িয়াছে।

গ্রাম -ঘরে দেশ -ভাই বুঝি কিছু আছে।।

মহাসুখে রাজ ভোগে লভিয়াছ সুখ।

সেদিন পড়েনি মনে কঙ্গালের মুখ।।

হঠাৎ দরদ কেন জাগিয়া উঠিল।

হঠাৎ -দরদী -বন্ধু নহে কিন্তু ভাল।।

পড়ে দায় পাড়া গাঁয়ে করে হাঁটাহাটি।

এই ভাব ভাই সব নাহি হবে খাঁটি।।

কি জানি স্বার্থের বিঘ্ন ঘটিয়াছে কত।

তাই গাঁয়ে যাতায়াত করে অবিরত।।

কপট বান্ধব সব দৃঢ় জেনো মনে।

কিছুতে মিশ 'না কেহ তাহাদের সনে।।

ওরা যাহা বলে আমি সব তাহা বুঝি।

তথাপি ওদের কার্যে নাহি হ'ব রাজি।।

বিদ্যা, জ্ঞানে,ধনে,মানে বড় ওরা সব।

জমিদারী মহাজনী অতুল বিভব।।

ক্ষতি বৃদ্ধি দেশে যাহা ওরা তাহা জানে।

ধনহীন অজ্ঞে তাহা বুঝিবে কেমনে ?

এরা যবে ধনী হবে মানি হবে সবে।

দেশ চিনে দেশ -সেবা তখনি করিবে।।

আজ শুধু চায় এরা আত্মার উন্নতি।

যে -সাহায্য করে তা'তে ভক্তি তার প্রতি।।

বিশেষ ইংরেজ রাজা সাম্যের সাধক।

সমদৃষ্টি সবা 'পরে বিপন্ন - পালক।।

এ ভাব রাজার আছে তাই মোরা আছি!

না হে এ -হেন দেশে কোন ভাবে বাঁচি ?

দেশ দেশ করে যারা সবে দেশ -মান্য।

আমাদিগে ' দেশ মধ্যে করে নাকি গণ্য।।

কত অত্যাচার করে জমিদার গণ।

কেহ কি তাহাতে বাঁধা দিয়াছে কখন ?

ছুঁয়োনা ছুঁয়োনা বলে ব্রাহ্মণ কায়স্থ।

কেহ কি ক'রেছে তার হৃদয় প্রশস্ত।।

পশু হতে হীন ভাবে দেখে মো 'সবারে।

ভাই হ'লে এই ভাব করে কি প্রকারে ?

তাই বলি স্বদেশীতে কাজ কিছু নাই।

তা'তে দেশে স্থান মোরা পাই বা না পাই।।

যেদিন বুঝিব সত্য আমাদের দেশ।

প্রাণ দিয়া ঘুচাইব জননীর ক্লেশ।।

আরো বলি শুন সবে ভবিষ্য -ঘটনা।

এই হীন-দৃষ্টি দেশে কভু চলিবে না।।

পতিত তাড়িতে এসেছিল মোর পিতা।

কভু ব্যর্থ হবে নাহি তার কোন কথা।।

আজ যারা পদতলে কাঁদিছে পড়িয়া।

হরিচাঁদ -পরশেতে উঠিবে জাগিয়া।।

অব্যর্থ অমোঘ শক্তি দিয়াছেন তিনি।

জাগিবে জগতে যত পতিত -পারণী।।

সেদিন নাহিক দূরে বছর পঞ্চাশে।

ভাই ভাই হয়ে সবে রহিবে এ দেশে।।

অপক্ক থাকিলে ফল চাহিলে পাকাতে।

পণ্ডশ্রম হবে ভাই কার্য নষ্ট তা'তে।।

অপেক্ষা করিয়া রহ সবে এই ক্ষণ।

আত্মোন্নতি করি সবে মিলি সর্ব্ব জন।।

স্বদেশীর মূল -গুরু ব্যানার্জ্জী সুরেন্দ্র।

চারিদিকে ঘুরে সবে তারে করি কেন্দ্র।।

অম্বিকাচরণে জানি শিষ্য বলি তার।

গুরু হতে শিষ্য কিবা বেশী ক'বে আর ?

সুরেন্দ্র ব্যানার্জ্জী পত্র দিয়াছেন মোরে।

স্বদেশীতে নমঃশুদ্র মাতা'বার তরে।।

ইহার উত্তর আমি দিয়াছি তখন।

আমি বলিয়াছি লেখে শ্রী শশিভূষণ।।

এ -জাতি দরিদ্র আজি লিখিয়াছি তাই।

বিলাস ব্যসন কিছু এই ঘরে নাই।।

বিলাতী কাপড় মাত্র এরা কিনেতেছে।

অন্যান্য বিলাতী দ্রব্য কভু নাহি যাচে।।

Page 175 start

ব্রাহ্মণ কায়স্থ বৈদ্য শিক্ষিত যাহারা।

বিলাতী ভাবের ভাবে মত্ত সবে তারা।।

বস্ত্র কেনে অস্ত্র কেনে শাস্ত্র কেনে কত।

তেল কেনে ফল কেনে জল শত শত।।

চুড়ি কেনে ছুরি কেনে আরো কত ছাই।

এ-জাতির ঘরে নাহি এ সব বালাই।।

স্বদেশী সাজিতে হলে তারাই সাজুক।

পাঞ্চজন্য -শঙ্খ দেশে বাজেত বাজুক।।

নিপীড়িত জাতি যত আছে বঙ্গ দেশে।

চিরদিন কাটে দিন দরিদ্রের বেশে।।

রাষ্ট্র ক্ষেত্রে অর্থ ক্ষেত্রে অধিকার নাই।

সব অধিকার নি 'ছে উচ্চ বর্ণ ভাই।।

কোন কালে এতদিন উচ্চ বর্ণ সবে।

অনুন্নত জনে নাহি দেখে ভ্রাতৃভাবে।।

দাস -প্রায় তা সভায় রেখেছে পিছনে।

তাই ঘোর অবিশ্বাস তাহাদের মনে।।

একেবারে অন্ধ তারা আজি নহে আর।

মন হতে গেছে কেটে কিছু অন্ধকার।।

যদি উচ্চবর্ণ আজি তাহাদের চায়।

সেই পথে আছে মাত্র একটি উপায়।।

সরল উদার ভাবে ভাই বলি বুকে।

টানিতে হইবে মনে - নহে মুখে মুখে।।

সম্পদে বিপদে সুখ সমভাবে বাঁটি।

ভাই হয়ে ভাই বলে দিতে হবে খাঁটি।।

এই কার্য আমি দেখি আগে প্রয়োজন।

নচেৎ হইবে সব ব্যর্থ আন্দোলন।।

এই ভাবে পত্র লিখি দিয়াছে পাঠা'য়ে।

পুনরায় পত্র দি'ছে সেই পত্র পেয়ে।।

ওড়াকান্দী আসিবারে তিনি কৈল মন।

দেখা যাক্ কিবা হয় ভবিষ্য - ঘটন।।

এই মাত্র এই ক্ষণ বলি সবা 'ঠাঁই।

স্বদেশী স্বদেশী করে কোন কার্য নাই।।

দীন দুঃখী যত ভাই আছ এক দেশে।

এক ভাবে চল ফেরো থাক এক বেশে।।

জয় যদি হয় কিছু হউক সবার।

পরাজয় হ'লে ভাগ সবে নি'ব তার।।

এক সাথে মরি বাঁচি এক সাথে বসি।

এক সাথে সবে কাঁদি এক সাথে হাসি।।

এক সাথে সবে-মরা তা'তে বড় সুখ।

ভাগে ভাগে মারা গেলে পাব বড় দুঃখ।।

তাই বলি ভাই ভাই হও একত্তর।

এক গান গা'রে তোরা এক ভাব ধর্।।

এক করিবারে সবে হরিচাঁদ এল।

তাঁরে ভুলে গেলে কিন্তু সকল বিফল।।

আমাদের ভাই বন্ধু আর কেহ নাই।

ভাই ভাই সব ভাই হ'রে এক ঠাঁই।।

হয়ত স্বর্গে যাব না হয় নরকে।

শত্রু কিন্তু মরে ভাই চক্ষের পলকে।।

যুথ বাঁধি করি-দল চলে এক সাথে।

যুথ -ভ্রষ্ট নাহি হয় কভু কোন মতে।।

অগ্রণী হইয়া যেবা চলে যুথ -আগে।

পিছে পিছে চলে সব দৃঢ় অনুরাগে।।

অগ্র-করী কর্ম্ম দোষে পড়িলে নিগড়ে।

পিছু -হটা করী দল যায় কিরে ছেড়ে ?

সাথে সাথে নিগড়েতে সবে বদ্ধ হয়।

এক সাথে শোয় বসে এক সাথে খায়।।

করী দল হতে এই শিক্ষা লহ ভাই।

এক সাথে শোয়া-বসা-চলা-ফেরা চাই।।

এক মনে এক প্রাণে চল এক পথে।

নিশ্চয় জাগিবে জাতি ভুল নাহি তা'তে।।

এত বলি মহা প্রভু নীরব হইল।

সভাবাসী সবে মিশি জয় ধ্বনী দিল।।

সবাকারে সবে বলে 'সবে মোরা ধন্য।

তারিতে পতিত জনে হরি অবতীর্ণ।।

Page 176 start

সেই হরি বংশে এল হরি পুত্র রূপে।

মহাপ্রভু গুরুচাঁদ পিতার স্বরূপে।।

দীন জনে দয়া করে রাজ রাজেশ্বর।

নিশ্চয় পতিত জনে করিবে উদ্ধার।।

আজি হতে মোরা সবে তার বাক্য লয়ে।

চলিব জীবন পথে এক দৃষ্টি চেয়ে।।

কেহ বলে ওরে ভাই চিন্তা নাহি আর।

নিজ হাতে ভার নিল শ্রী হরি কুমার।।

কেহ বলে 'ওরে ভাই ভার নিল বটে।

ভার কিন্তু দিতে হবে সবে অকপটে।।

মুখে মুখে ভার দিলে কিবা কাজ হবে।

মরিলে ত মর সবে আজি এক ভাবে'।।

কেহ বলে ' কাটাকাটি কর কেন কথা।

কাজ-ছাড়া যত কথা সব কথা বৃথা।।

মুখে যদি নাহি বল তা'তে ক্ষতি নাই।

মনে মনে প্রাণপণে কাজ করা চাই।।

অপূর্ব্ব ভাবের ভাব হইল উদয়।

মহাভাবে সভাশুদ্ধ ভূমিতে লোটায়।।

অন্ধেরে দেখা'তে পথ দুঃখী-জনে আশা।

ব্যথিতের ব্যথা নিতে মূকে দিতে ভাষা।।

প্রাণ হীনে দিতে প্রাণ মৃতে দিতে সাড়া।

ওড়াকান্দী অবতীর্ণ হরি -মনচোরা।।

চরণ পরশে তাঁর সবে ধন্য হ'ল।

কর্ম্ম দোষে দূরে থেকে মহানন্দ ম 'ল।।

------