Page 456

১৩৩২ সালে ভক্ত সঙ্ঘের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

অনন্ত ক্ষীরোদ-তলে অনন্ত ফণায়।

আপনি অনন্তদেব যাঁরে শিরে রয়।।

অনন্ত শক্তির ধাত্রী ‘‘লহ্মী’’ রূপে বসি।

যাঁর পদে অর্ঘ্য দেয় বসে দিবানিশি।।

ইচ্ছার বিকারে যাঁর সৃজিত ব্রহ্মান্ড।

অনন্ত অন্তত বিম্ব যাঁর ক্ষু্দ্রভান্ড।।

মহাসাগরের বুকে বুদ্ধুদের প্রায়।

কল্পে কল্পে বিশ্ব যাঁর সৃষ্টি স্থিতি লয়।।

Page 457 start

অনন্ত রূপেতে ছবি যাঁর ইচ্ছা গড়ে।

আপনি নির্লিপ্ত রয় বিশ্ব চরাচরে।।

ইচ্ছা হল তাই দিল মানবেরে জ্ঞান।

গুণমধ্যে শ্রেষ্ঠ যাহা তত্ত্বের প্রধান।।

আকারে মানবে করে আপনার প্রায়।

তত্ত্বজ্ঞানী নরগণে সেই কথা কয়।।

অনন্ত সাগর বুকে তলহীন বারি।

প্রতি বিন্দু কণা ধরে আছে জীব সারি।।

যেখানে যে জন আছে দেখিল যাহা।

আপনার ভাবে মনে বলে যায় তাহা।।

আপনার ভাবে নর তারে ব্যাখ্যা করে।

কেবা জানে পশুপাখি কোন ভাবে ধরে?

মানবের শাস্ত্র আছে দর্শন, পুরাণ।

শিল্প আছে সৃষ্টি আছে সাহিত্য বিজ্ঞান।।

প্রকৃতির যেই শক্তি তাহা উঘাড়িয়া।

মানব নিতেছে নিজ জগত গড়িয়া।।

প্রকৃতির শক্তি পরে কোন অধিকার।

নরভিন্ন অন্য জীবে নাহি কোথা আর।।

অধিকার বল কিম্বা বল ব্যবহার।

কিম্বা বল প্রকৃতির প্রকৃত আকার।।

মানব সাধনা কিংবা বল তার জ্ঞান।

পেয়েছে প্রকৃতি-তত্ত্বে অ-পূর্ব্ব সন্ধান।।

তাঁর জীব মধ্যে নর বহু অগ্রসর।

তার শাস্ত্র আছে তার আছেন ঈশ্বর।।

সে জানে বিরাট বিশ্বে সর্ব্বতত্ত্বময়।

রয়েছে এমন শক্তি যে বিশ্ব চালায়।।

অ-সাধ্য অ-বাধ্য তার নাহি কোনখানে।

সকলে জুড়িয়া একা আছে সর্ব্বস্থানে।।

সর্ব্বজ্ঞ সুন্দর তিনি, সকলের শ্রেষ্ঠ।

শ্রেষ্ঠর শ্রেষ্ঠত্ব তিনি প্রভু জগদিষ্ট।।

তিনি যে, কিবা নহে, কেবা তাহা বলে?

তাঁরে বলা শেষ নাহি হবে কোন কালে।।

জ্ঞান কি আকারে কিংবা ধ্যানে কি বিজ্ঞানে।

বিরাটের সাড়া নর দেখে যে যেখানে।।

শ্রেষ্ঠের স্বরূপ চিহ্ন দেখে মধ্যে তাঁর।

নর বলে ‘‘এই রূপ আমার ঈশ্বর।।’’

যেখানে শ্রেষ্ঠত্ব আছে সেথা প্রভু রয়।

জীব মধ্যে নরগণ শ্রেষ্ঠ বটে হয়।।

তাই নর ভাবে প্রভু তাহার স্বরূপ।

এই খানে তত্ত্ব কিন্তু নাহি রয় চুপ।।

মানবের মধ্যে পুনঃ আছে স্তর ভেদ।

আকারে জ্ঞানেতে দেখি কতই প্রভেদ।।

বিশ্বাসে বেড়িয়া সেই মহাসত্য রয়।

সকল মানব গোষ্ঠী তাহা জ্ঞাত নয়।।

যেই জন জানে তত্ত্ব সত্যের বিকাশ।

জেনে তত্ত্ব বিশ্বমাঝে করেন প্রকাশ।।

নর শ্রেষ্ঠ তার মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠতর।

নর দেখে তাঁর মাঝে বিকাশ তাঁহার।।

সূহ্ম হতে সূহ্ম জানি অহং তত্ত্ব জ্ঞান।

গোচরে কি অগোচরে চলে অভিযান।।

আপনার রূপধারী তাই কোন জনে।

সহজে মানব মন মানিতে না জানে।।

তাই মুখে বলে কথা মনে অহংকার।

এই ব্যক্তি সুনিশ্চয় অবতার তাঁর।।

তাঁর শক্তি এর মধ্যে করিতেছে খেলা।

‘‘তিনি এই’’ একেবারে নাহি যার বলা।।

অবশ্য আরেক তত্ত্ব থাকিতেও পারে।

প্রকাশ্যে বলিব তাহা সাধুর গোচরে।।

অনন্ত অসীম যিনি নিত্য নির্ব্বিকার।

অক্ষয় বলিয়া যাঁরে ব্যাখ্যা করে নর।।

সীমাবদ্ধ নর দেহ কিংবা অন্য দেহে।

পরিপূর্ণ শক্তি বল কোন ভাবে রহে?

সাগরের সাথে নদী আছে যোগাযোগ।

সাগরের কাছে নদী বল কিসে লাগে?

Page 458 start

নদী মধ্যে আছে বটে সাগরের জল।

সেই জল নদী মধ্যে করে কল কল।।

তাতে কি সাগর নদী এক বলা যায়?

নদী ও সাগরে ভেদ এইখানে রয়।।

নদীরে সাগর বলি কেহ নাহি কয়।

‘‘অবতার’’ তত্ত্বখন্ডে সেই পরিচয়।।

তার মধ্যে আছে দেখ বিভিন্ন প্রকার।

বিভিন্ন সাগরে নদী বিভিন্ন আকার।।

কোন নদী মিশে গিয়ে বৃহৎ নদীতে।

উপসাগরেতে কেহ পড়ে নানা পথে।।

কোন নদী পড়ে গিয়ে সাগরের বুকে।

নদীতে নদীতে এই ভিন্ন ভাব থাকে।।

সাগরের জল আসে উপসাগরেতে।

সেই জল ছোটে পরে যত নদী পথে।।

তাহা হতে জল পায় যত উপনদী।

এই ভাবে তাহাদের চলা নিরবধি।।

সাগরের শেষ হয় উপসাগরেতে।

উপসাগরের শেষ হয় নদী পথে।।

মহাসাগরের খেলা থাকে বহু দূরে।

প্রত্যক্ষ সংযোগ নদী সেথা নাহি ধরে।।

অবিরম বিবর্তন ধরা মাঝে হয়।

সাগরের পথ কত রুদ্ধ হয়ে যায়।

তাহার প্রমাণ দেখ কাস্পিয়ান সাগর।

হৃদ হয়ে আছে পড়ে দেশের ভিতর।।

এই সব সাগরেতে যেই নদী পড়ে।

সাগরের বুকে পড়ে তাই নিয়ে ঘোরে।।

কিন্তু মহাসাগরের বিবর্তন নাই।

আপন লীলার মাঝে প্রকট সদাই।।

মহাসাগরের বুকে যদি কোন নদী।

আপনার মূল রেখে চলে নিরবধি।।

মহাসাগরের খেলা তার বুকে চলে।

জনপদ সিক্ত হয় তার স্নিগ্ধ জলে।।

শুকায় না নদী সেথা নিত্য বয়ে যায়।

শ্রীহরিচাঁদের এই সত্য পরিচয়।।

এতকাল যে যে শক্তি নামিল ধরায়।

জীবের কল্যাণ হেতু লীলা করে যায়।।

কেহ এল বিষ্ণু শক্তি কেহ নারায়ণ।

গোলক বিহারী কেহ মুনির নন্দন।।

অনন্ত শক্তির কেন্দ্র ক্ষীরোধাব্ধী হতে।

কোন শক্তি আসে নাই জীবকে তারিতে।।

তার ইচ্ছা-শক্তি তাই নামিল ধরায়।

শ্রীহরি ঠাকুরন নামে পূর্ণ শক্তিময়।।

কল্পবৃক্ষ মূল তিনি গুরুচাঁদ কান্ড।

দুই রূপে পিতাপুত্র ধরেছে ব্রহ্মান্ড।।

গুরুচাঁদ ‘‘কান্ডে’’ দেখি কত শাখা পত্র।

সংক্ষেপে বলিব তার পরিচয় মাত্র।।

গুরুচাঁদ বৃক্ষে ফুটে কি সুন্দর ফুল।

গোপাল যাদব আর বিপিন নকুল।।

কবিরত্ন আর যিনি কবি চুড়ামণি।

প্রেমিক শ্রীহরিবর সরকার জানি।।

স্বভাব কবিত্বে ভরা ছিল যাঁর প্রাণ।

অশ্বিনী গোঁসাই ধন্য রচিলেন গান।।

রূপচাঁদ গোস্বামীর তেজ অতিশয়।

‘‘রমনী গোঁসাই’’ নামে হল পরিচয়।।

ডাক্তার তারিণী বাবু ব্রহ্মদেশে রয়।

পিতৃসম গুরুচাঁদে মানে মহাশয়।।

পরেশ সর্দ্দার নাম জয়ারাবাদ বাস।

পারশুলাবাসী সাধু শ্রীহরি বিশ্বাস।।

কৃষ্ণপুরবাসী সাধু নাম সোনাতন।

শ্রীবিপিন, তারিণীর ভাই একজন।।

পাটিকেলবাড়ীবাসী ষষ্ঠী বাবু নাম।

অবিরত যাতায়াত ওড়াকান্দী ধাম।।

বিচরণ, বলরাম, কানাই, কেদার।

মহাকর্মী মাধবেন্দ্র ওড়াকান্দী পর।।

Page 459 start

গোলক পাগল যিনি মহাভাবময়।

মহানন্দ, দশরথ, ভ্রাতুষ্পুত্র হয়।।

শ্রীদশরথের পৌত্র মাধবেনদ্র নাম।

কর্ম্মী ভক্ত সেজে রহে ওড়াকান্দী ধাম।।

গৃহকর্ম্ম লেখাপড়া সবখানে রাজী।

যেথা যান গুরুচান মাধবেন্দ্র মাঝি।।

কাথলী নিবাসী সাধু নাম নিবারণ।

তারকচাঁদের শিষ্য তিনি একজন।।

এই মত শত শত কত আর বলি।

অসংখ্য ভকত নিয়ে মতুয়া মন্ডলী।।

যতেক প্রধান সাধু তাঁহাদিগে ধরে।

অসংখ্য আসিল ভক্ত ওড়াকান্দী পরে।

গ্রন্থ সমাপন পর্ব্বে কিছু পরিচয়।

দিব যদি গুরুচাঁদ রাখে রাঙ্গা পায়।।

বিস্তৃত লিখিতে গেলে মতুয়া জীবন।

কোন কালে তাহা নাহি হবে সমাপন।।

দিনে দিনে কতজনে উদার মহৎ।

পবিত্র হইবে তারা নিয়ে এই পথ।।

জ্ঞানী, কবি, ভক্ত কত আসি ভবিষ্যতে।

শত শত গ্রন্থ রচি বিলাবে জগতে।।

মধুর রচনা তাঁরা করিবে রচনা।

মম সম দীন হতে সে সব হল না।।

সে সব প্রধানে ধরে এল বহুজন।

সংক্ষেপে বর্ণিত কিছু তাঁদের জীবন।।

মহতের কথা বলি হেন সাধ্য নাই।

ভুল দোষক্রুটী জন্যে পদে ক্ষমা চাই।।

শ্রীগুরু-রচিত কথা সুধা হতে সুধা।

মহানন্দ বলে খেলে যায় তব-ক্ষুধা।।

---০---