Page 077 

শ্রী শ্রী হরিচাঁদের তিরোভাবে ভক্ত মনোভাব প্রসঙ্গ

নর দেহ ছাড়ি হরিগুরুচাঁদে যায়।

দেশ বাসী নর নারী করে হায় হায়।।

কেহ বলে ছেড়ে গেল সোনার মানুষ।

বাঁচিয়া থাকিতে কেহ করি নাই হুষ।।

কেহ বলে 'অকস্মাৎ হল ইন্দ্র পাত।

বিনা মেঘে শিরে হল দৃঢ় বজ্রাঘাত।।

কেহ বলে 'নমঃশূদ্র জাতি ডুবে গেল।

আপদে বিপদে রক্ষা কে করিবে বল।।

আর জনে কহে “ভাই বড় দুঃখ মনে।

হরি বিনা রোগে শোকে বাঁচিব কেমনে।।

মহাব্যাধি লয়ে এল শ্রী হরির ঠাঁই।

শ্রী মুখের আজ্ঞা মাত্র ছাড়িত বালাই।। “

কেহ বলে “ ভাই সবে শোন দিয়া মন।

মহাপাপী সবে মোরা অতি অভাজন।।

তাই যদি নাহি হবে তবে বল দেখি।

এমন সোনার হরি কেন দিল ফাঁকি।।

নারী গণে জনে জনে করে আলাপন।

“ওলো দিদি কেন মোর হল না মরণ।।

কত দিন দেখিয়াছি শ্রী হরি চাঁদেরে।

রূপের ঝলকে হায় মন প্রাণ কাঁদেরে।।

দূর হতে মনহরা রূপ দেখিয়াছি।

মন খুলে মনো কথা কিছু না বলেছি।।

আজি কালি করি দিদি বলা হল নারে।

হরি চলে গেছে কথা আর বলি কারে।।

কোন লোকে বলে “ভাই,মোরা সবে অন্ধ।

এত দিন মনে কত করিয়াছি সন্দ।।

অকথা কু কথা কত বলিয়াছি তাঁরে।

হরি বিনে আজ দেখ যেন শূন্য ঘরে।।

থাকিতে মানুষ মোরা কেহ চিনি নাই।

শান্তি পতি বিনে বল কোথা শান্তি পাই।।

হরি যবে ছিল বেঁচে করেছি বিদায়।

অমূল্য পরশ মণি হারানু হেলায়।।

থাকিতে মানুষ বেঁচে কেহ নাহি চায়।

ছেড়ে গেলে সবে মিলে করে হায় হায়।।

দিন মানে সূর্য জ্বলে আকাশের গায়।

'অসয্য অগ্নির কুণ্ড ' বলি লোকে কয়।।

সূর্য যবে ডুবে যায় কালো রাত্রি আসে।

সেই কালে বিশ্ববাসী সূর্য ভাল বাসে।।

যুগে যুগে পলে পলে নরে করে ভুল।

ফল খায় ডালে বসি নাহি চেনে মূল।।

রাম এল কৃষ্ণ এল এল গোরা রায়।

নর - রূপ - ধারী হয়ে অবতীর্ণ হয়।।

মানুষের সাথে মিশি মানব আচারে।

মানুষের খেলা খেলে থাকিয়া সংসারে।।

অন্ধ নরে মনে করে এই বুঝি মানুষ।

বোঝে না'ক এ মানুষ নয় সে মানুষ।।

আপনার মত তারে সবে মনে করে।

নিজ তুল্য মনে করে দেয় তাঁরে দূরে।।

নর রূপে নর সাথে করে নর খেলা।

যারা জানে তারা দেখে সেত প্রেম লীলা।।

নর রূপ ছাড়ি যবে প্রভু ফাঁকি দেয়।

নরে তবে বুঝে পরে করে হায় হায়।।

মনে ভাবে এই ভুল আর না করিব।

এবারে আসিলে প্রভু ধরিয়া রাখিব।।

ছলা কলা লীলাময় পুনঃ নরাকারে।

দেখা দেয় নর হয়ে আমাদের ঘরে।।

Page 078 start

হয়ে সন্দ করে দ্বন্দ “এই কিরে সেই। “

তেমন মোহন রূপ এর দেখি কই?

চুল চিরে স্ববিচারে করে আনাগোনা।

ভুল করে পুনঃ তাঁরে চিনিতে পারেনা।।

সৃষ্টি মূলে আদি ভুল ব্রহ্মের বিকার।

ভুলে ভরা সসাগরা জগৎ সংসার।।

যার ভুল কাটিয়াছে চোখে নাহি কালি।

আব্রহ্ম তাহাতে ভরা দেখে যে সকলি।।

ভুলে তারে নাহি পায় ভুল ভুলে যায়।

নর মধ্যে সেই দেখে হরি রসময়।।

সেই ত দেখেছে সত্য সোনার মানুষ।

সেই মানুষের রসে হয়েছে বেহুঁশ।।

লীলা সাঙ্গ করিলেন প্রভু হরিচন্দ্র।

'সব বলে অস্ত গেল পূর্ণিমার চন্দ্র'।।

জীব কালে যারা কভু দেখে নাই চাহি।

তারাও কাঁদিয়া কহে কেন দেখি নাহি।।

ঘরে ঘরে জনে জনে করে আলাপন।

হায় হায় কিবা হবে উপায় এখন।।

সবে বলে গুরুচাঁদে বলি “বড় কর্ত্তা।

তাঁর কাছে মিলিবে কি সেই সব বার্ত্তা।।

কেহ বলে বড় কর্ত্তা বলে যারে ডাকি।

হরিচাঁদ তারে কিছু দিয়া গেছে নাকি?

হরিচাঁদ পুত্র বটে তিনি মহাশয়।

তবু বল মূল সম ডাল কভু হয়?

কেহ বলে “ শোন ভাই কথা বল ফাঁকা।

আগুন কি রাখা যায় কাপড়েতে ঢাকা।।

হরিচাঁদ যদি কিছু দিয়া থাকে তাঁরে।

ক্রমে পরিচয় পাবে তার ব্যবহারে।।

কেহ বলে “ওরে ভাই কিবা দিবে হরি।

তাঁর শক্তি নিল সব ভক্তে লুট করি।।

হীরামনে দেখেছে ত জলে হেঁটে যায়।

গোলক পাগল দেখ মহাশক্তি ময়।।

মৃত্যুন গোঁসাই ছিল, ছিল দশরথ।

টুণ্ডা প্রভু শ্রী লোচন গোঁসাই সাক্ষাৎ।।

আর যত ম'তো ছিল আরো আছে বেঁচে।

সবে মিলে হ 'রি হতে শক্তি লুটে নিছে।।

বড় কর্ত্তা দেখ নাই সে ধার ধারে না।

উনি যেন দিন রাত কি করে ভাবনা।।

বড় কর্ত্তা সেই শক্তি কোথা পাবে বল।

মোট কথা হরি গেলে সব চলে গেল”।।

কেহ বলে 'ওরে ভাই বাজে বকো ' নারে।

ফাঁকা ফাঁকা কথা বলে পরে ঠকোনারে।।

সিংহে জন্ম দেয় সিংহ, বাঘে দেয় বাঘ।।

যেমন বাপের বেটা ধরে সেই রাগ।

কিবা বল বড় কর্ত্তা কি শক্তি পেয়েছে।।

হরিচাঁদ তোমারে কি বলে কিছু গেছে?

পরমার্থ তত্ত্ব দেখ নহে ত সরল।

বুদ্ধি দিয়ে তার শেষ কেবা পায় বল?

তোমার আমার ভাই কতটুকু জ্ঞান।

তাহা ছাড়া ধর্ম্ম পথে মোরা যে অজ্ঞান।।

বাহির দেখিয়া কভু বিচার চলে না।

না দেখি অন্তর, জ্ঞানী বচন বলে না।।

কথা শুনে আর জনে বলে ক্রোধ ভরে।

জ্ঞানের কথা ত ভাই বলিলে প্রকারে।।

যেমনি বাপ তেমনি বেটা বলিলে ত সব।

পশু মধ্যে সত্য বটে নরে কি সম্ভব?

ঈশ্বর বিদ্যাসাগর শুনিয়াছি নাম।

বিখ্যাত পণ্ডিত তিনি অতি গুণধাম।।

প্রাতঃস্মরণীয় বলি কহে নাম তাঁর।

কেমন তাঁহার পুত্র বল একবার।।

সে সব ছাড়িয়া তবে ধর্ম্ম পথে কই।

কৃষ্ণ পুত্র কেবা ছিল বল শুনে লই।।

মহারাজ যুধিষ্ঠির ধর্ম্ম অবতার।

কেবা তাঁর পুত্র ছিল কেমন প্রকার?

Page 079 start 

বঙ্গ দেশে রাজা ছিল নাম সীতারাম।

কেবা তার পুত্র ছিল কিবা তার নাম।।

প্রতাপ আদিত্য নাম হিন্দু রাজ চূরা।

বিখ্যাত বসন্ত রায় ছিল তার খুড়া।।

প্রতাপের পুত্র কেবা জান নাকি তাই।

যেমনি বাপ তেমনি বেটা কোথা পেল ভাই!

বড় ঘরে বড় ভাব যদি দাও ছেড়ে।

এক ভাব সবখানে আছে দেশ জুড়ে।।

তাই ভেবে দুই কথা বলিয়াছি ভাই।

বড়কর্ত্তা গুরুচাঁদে নিন্দা করি নাই।।

হাসিয়া বলিল তবে দ্বিতীয় সুধীর।

সামান্য দুইটি কথা শোন বাক্য বীর।।

যেমনি বাপ তেমনি বেটা বলি নাই ভুল।

ডালে ডালে ঘুরে তুমি দেখ নাই মূল।।

ধর্ম্ম ক্ষেত্রে রাজ বংশে গৃহস্থ-আশ্রমে।

যেমনি বাপ তেমনি বেটা দেখ ক্রমে-ক্রমে।।

পরাশর মুনি পুত্র ব্যাস মহামুনি।

তিনি এক অবতার শাস্ত্রের কাহীনি।।

তাঁর পুত্র শুকদেব গুণে সীমা নাই।

অবিকারী মায়াত্যাগী সাধু শাস্ত্রে পাই।।

মুনি বংশে মুনি জন্মে অসংখ্য প্রমাণ।

কশ্যপের ঘরে অবতার শ্রী বামন।।

ভৃগু পুত্র ভার্গব সে এক অবতার।

ভরদ্বাজ - পুত্র দ্রোন বিদিত সংসার।।

মৃত্যুজয়ী অশ্বত্থামা পুত্র হল তার।

বিশ্বামিত্র মহামুনি গাধীর কুমার।।

অর্জুনের পুত্র নাম অভিমন্যু বীর।

গৌতমের পুত্র সতানন্দ ধর্ম্মে স্থির।।

সূর্য বংশ চন্দ্র বংশ বিখ্যাত ভারতে।

বংশ পরিচয় আছে নানা গ্রন্থ মতে।।

অজ পুত্র দশরথ তার পুত্র রাম।

রাম পুত্র লব কুশ বীর অনুপম।।

চন্দ্র বংশে যত ছিল মহারাজা গণ।

গুণে শীলে হীন কেহ ছিল কি কখন?

নমঃশূদ্র কুলে দেখ হরি বংশ হতে।

কোন বংশে নহে শ্রেষ্ঠ দেখ কোন মতে।।

যত যত রাজ বংশ আছে দেখ ভাই।

বংশ মূলে মুনি ঋষি ইথে ভুল নাই।।

আমি শুনিয়াছি কথা হরি গেছে বলে।

নমঃশূদ্র কুলে রাজা হবে কালে কালে।।

হরি বাক্য কভু নাহি হইবে লঙ্ঘন।

হরি বংশে হবে রাজা নিয়তি লিখন।।

এই বংশে পূর্ব্বে পূর্ব্বে জন্মিল যাহারা।

সাধু কি সন্যাসী সবে প্রেমে মাতোয়ারা।।

সজ্জনের সাধনাতে হরি এল বংশে।

তাঁর বাক্য মিথ্যা নাহি হবে কোন অংশে।।

বড় কর্ত্তা কোন ভাবে চলে দেখ তাই।

সকলের মধ্যে থেকে যেন তা'তে নাই।।

ইতর জনের মত কভু কোন দিন।

বাক্য কিবা কার্যে তারে দেখিয়াছ হীন?

কোন দোষ কোন দিনে যারে স্পর্শে নাই।

তাঁর মধ্যে কিবা শক্তি বল দেখি ভাই।।

তা 'তে বলি হরি কারে কিবা দিয়া গেছে?

সেই তত্ত্ব পরচার হবে ক্রমে পিছে।।

সেই তত্ত্ব দিয়ে ভাই কোন কার্য নাই।

তামাক সাজিয়া আন টেনে বাড়ি যাই।।

এই ভাবে ঘরে ঘরে চলে আলাপন।

এবে শুন ভক্তগণে কি করে মনন।।

যেই দিন হরিচাঁদ লীলা সম্বরিল।

তারক গোস্বামী বটে কাছে নাহি ছিল।।

বড়দিয়া বন্দরেতে কবি গান তরে।

আছিলেন শ্রীতারক গানের আসরে।।

সারা রাত্রি গান করে সেই মহাশয়।

অতি প্রাতেঃ কেহ আসি সংবাদ জানায়।।

Page 080 start 

নদী তটে আছে বটে শ্রী হরি ঠাকুর।

তারকেরে দেখিবারে ইচ্ছা সে প্রভুর।।

শ্রুত মাত্র এই বাণী তারক সুজন।

সভা ফেলি দ্রুত পদে করেন গমন।।

দূর হতে দেখে প্রভু আছে দাঁড়াইয়া।

ভুবন মোহন রূপে আঁধার নাশিয়া।।

প্রেমে ভোর অশ্রু লোর বহিছে নয়নে।

স্বেদ কম্প পুলকাশ্রু সাত্ত্বিক লক্ষণে।।

বৎস- হারা ধেনু যথা বৎসে দেখা পায়।

অথবা তটিনি যথা সাগরেতে ধায়।।

সেই মত হরি প্রতি ছুটিছে তারক।

হরি দরশনে প্রাণে অনন্ত পুলক।।

বাহু প্রসারিয়া ছুটে আনন্দে মাতিয়া।

মনে ভাবে বক্ষে হরি রাখে সাপুটীয়া।।

“এই বুঝি হরি অঙ্গ ধরিলাম বুকে।”

মহোল্লাসে হস্ত বেড়ি ধরিল তাঁহাকে।।

কই কোথা কেহ নাই এ যে শূন্য বুক।

বজ্রাহত প্রায় সাধু রহে হয়ে মূক।।

বড়ই আশ্চর্য লাগে সাধুর হৃদয়।

কিবা হ'ল কি দেখিনু ভোজবাজী প্রায়।।

এই চোখে দেখিয়াছি এই বালু পরে।

দাঁড়াইয়া ছিল হরি অপরূপ ধরে।।

জীবন্ত মূরতী ধারী নাহিক সন্দেহ।

সেই রূপ হৃদি মধ্যে হেরি অহরহ।।

এই হরি কোথা গেল শূন্যে মিলাইয়া।

কি ছল ছলিল প্রভু আমাকে ডাকিয়া।।

ভাবিতে ভাবিতে সাধু বালু ' পরে চায়।

বালু পরে পদ চিহ্ন দেখিবারে পায়।।

পদ চিহ্ন হেরি তার দূরে গেল সন্দ।

কেন্দে কয় “ হায় হায় মোর ভাগ্য মন্দ।।

বড়ই অভাগা আমি দৃষ্টি শক্তি নাই।

পেয়ে ধন হারা ইহা কাহারে জানাই।।

কেন হেন দেখিলাম ভাবিছে তারক।

বুঝি বা ছেড়েছে হরি এই মর্ত্ত লোক।।

ইতি উতি মনে ভাবি সেই মহাশয়।

কাঁদিতে কাঁদিতে সাধু পড়িল ধরায়।।

ভক্তের দুঃখ হেরি শূন্য বাণী ভরে।

দয়াময় হরিচাঁদ বলিল তাঁহারে।।

“সত্য সত্য বুঝিয়াছ তারক রসনা।

লীলা সাঙ্গ করিয়াছি তুমি তা জাননা।।

কায়া ছাড়িয়াছি বটে নহে তাহা ভুল।

শক্তি আছে গুরুচাঁদে এই জান মূল।।

পরাজ্ঞানী তুমি জানি ভকত নিপুণ।

বৃথা শোক কর সাধু ভাবিয়া বিগুণ।।

কাট মায়া ধাঁধাঁ ভক্ত দেখ দিব্য চোখে।

গুরুচাঁদ কায়া মধ্যে পাইবে আমাকে”।।

এত বলি শূন্য বাণী হল অন্তর্দ্ধান।

শোক সম্বরিয়া সাধু শেষ করে গান।।

গৃহে ফিরি তাড়াতাড়ি দেরি নাহি কৈল।

ওড়াকান্দী শ্রী ধামেতে উপনীত হৈল।।

গুরুচাঁদে দেখি সাধু ফুকারিয়া কাঁন্দে।

শ্রী তারকে দেখি ছলে বলে গুরুচান্দে।।

“তারক হে! দেখ চাহি হরি গেছে ছাড়ি।

কি কারণে তবে আর এস এই বাড়ি।।

তোমাদের সে ঠাকুর আর বেঁচে নাই।

ছেড়ে গেছেন হরিচাঁদ ক্ষীরোদ গোঁসাই।।

আর কেন তবে সবে আস ওড়াকান্দী।

কার গুণে রবে সবে প্রেমে হয়ে বন্ধি।।

আমিত সংসারী লোক সংসারে আবদ্ধ।

কোন গুণে বলো সবে করিব বা বাধ্য।।

হরি গেছে আার ওড়াকান্দী কিছু নাই।

খুঁজিয়া সে হরিচাঁদে লহরে সবাই।।

শ্রী গুরুর মুখে শুনি হেন খেদ বাণী।

পদে পড়ে সে তারক লোটায় ধরণী।।

Page 081 start

কেন্দে বলে গুরুচাঁদে জগৎ গোঁসাই।

কে বলে গিয়াছে হরি, হরি যায় নাই।।

পরাণ হরণ হরি এই খানে দেখি।

তোমা মধ্যে হরিচাঁদ দেয় ঝিকিমিকি।।

তোমার মধ্যেতে হরি রহিয়াছে মিশি।

“ হরি গুরুচাঁদ, মিলি হল পূর্ণ শশী।।

পিতা পুত্র অভিন্নাত্মা দোহে এক প্রাণ।

তারিলে জগৎ জীবে সাধিলে কল্যাণ”।।

গলে বস্ত্র জোড় হস্ত করি সে তারক।

স্তব করে মনোসাধে হইয়া পুলক।।


“প্রণমি চরণে জগৎ শরণে

অনাদি কারণে আমি।

জগৎ পালক ব্রহ্মাণ্ড নায়ক

কলুষ হারক স্বামী।।

গুণময় বিভু অখিলের প্রভু

গুণে নাই কভু সীমা।

আমি অতি মূঢ় না জানি নিগূঢ়

চরণে চাহিনু ক্ষমা।।

কিবা কব জানি সেই কথা শুনি

ওহে গুণমনি হরি।

করিবে করুণা এ মূঢ় বাসনা

কেমনে ধারনা করি।।

বানী বাগেশ্বরী বর্ণনাতে হারি

পদ সার করি দাসী।

সূর্য চন্দ্র পুজে প্রদীপের সাজে

আপন গরজে আসি।।

চামর দোলায় পবন সদায়

সাগর ধোয়ায় পদ।

যত নদী নদ করি কলনাদ

ছুটে প্রেম গদ গদ।।

শাখে ডাকে পাখি তোমারে নিরখি

কুসুমের আঁখি ফুটে।

শিশিরের কণা হয়ে অশ্রু কণা

তোমার চরণে লুটে।।

অতল সলিলে প্রলয়ের জলে

ধরাকে রাখিলে ঢাকা।

ধরাকে জাগাতে মৎস রূপেতে

মেলিলে জলেতে পাখা।।

দশ অবতার এস বারবার

হরে ধরাভার সুখে।

দুষ্টেরে নাশিতে সাধুকে রাখিতে

আসিলে ধরার বুকে।।

অবতার যায় আসে পুনরায়

জীবে দিয়ে যায় শিক্ষা।

পূর্ণ অবতার হয় নাই আর

এই বারে হবে রক্ষা।।

পূর্ণানন্দ হরি সফলা নগরী

ক্ষীর সিন্ধু ছেড়ে এলে।

যশোবন্ত ঘরে পূর্ণার উদরে

নর রূপ ধারী হলে।।

প্রথম আবাদ ওহে হরিচাঁদ

ঘুচালে আপদ সবে।

দেবের বঞ্চিত দানব লাঞ্ছিত

ব্রহ্মার কাঙ্খিত ভাবে।।

ক্ষেত্র সু প্রস্তুত যশোবন্ত সুত

পেল অবধূত তোমা।

মিশিল তোমাতে এ বিশ্ব জগতে

নাহিক গুণেতে সীমা।।

হরি গুরুচাঁদ পূর্ণিমার চাঁদ

সুধার আস্বাদ দিলে।

তারিলে জগত জগতের নাথ

সবে তোমাগত চলে।।

Page 082 start

পতিত যাহারা হয়ে সর্বহারা

বাদলের ধারা চোখে।

ডাকে দিবারাতি অগতির গতি

বেদনার ছবি মুখে।।

হয়ে কৃপাবন্ত ও হে প্রাণকান্ত

করিবারে শান্ত সবে।

অনাথ আতুর কান্দিল প্রচুর

আসিলে ঠাকুর ভবে।।

নিজে গৃহী সাজে গৃহীজন মাঝে

করে হরি রাজে লীলা।

মানুষের সাথে মিলিয়া সবাতে

কৃপাদণ্ড হাতে খেলা।।

সব নীতি দিয়ে গৃহীকে সাজায়ে

নিজে দেখাইয়ে দিলে।

পূর্ণ শিক্ষা লাগি ওহে সর্ব্বত্যাগী

গৃহধর্ম্ম ভোগী হলে।।

গুণে সীমা নাই নির্গুণ গোঁসাই

আমি বুঝি নাই তত্ত্ব।

জানে হীরামন গোলক লোচন

সঁপে দেহ মন মত্ত।।

কিবা কর খেলা অনন্ত মেখলা

ক্ষীরোদের বেলা ভূমে।

আনন্দে মাতিয়া ক্ষীরোদ আসিয়া

চরণে পড়িয়া চুমে।।

আকাশ বিচিত্র সাজিয়াছে ছত্র

নাহি কেহ মাত্র আর।

আপনা আপনি করেছ মেলানী

সৃষ্টি ছিনিমিনি সার।।

পলকে গড়িয়া পলকে ভাঙ্গিয়া

পলকে ধরিয়া বুকে।

ভাঙা গড়া খেলা কর নিত্য বেলা

বসিয়া একেলা সুখে।।

রূপ গুণহীন আপনাতে লীন

কারণ - বিহীন কান্ত।

ইচ্ছা - রস দিয়ে ব্রহ্মাণ্ড সৃজিয়ে

আপনা ছড়ায়ে শান্ত।।

জীব কুল যত পলে পলে কত

তোমাতে আগত দেখি।

জীব করে কর্ম্ম জীব কহে ধর্ম্ম

জীবে রাখে মর্ম্ম শিখি।।

তোমার বিকার সৃষ্টির আকার

তুমিত সার জানি।

যাহা কিছু হয় সকলি তোমায়

ও হে গুণময় গুণি।।

মোদের ব্রহ্মাণ্ড ক্ষুদ্র এক ভাণ্ড

কত যে ব্রাহ্মণ্ড আছে।

কেবা তাহা জানে বিভু তুমি বিনে

কেবা কোন খানে বাঁচে।।

তোমার কারণে বিবিধ বচনে

যতই রচনে লিখি।

কিছু নাহি হয় যাহা তাহা রয়

মনে ভাবি হায় একি?

গুণাতীত গুণী লোটায়ে ধরণী

করি জোড় পাণি বন্দি।

কোন কথা নাই জগৎ গোঁসাই

ভূমে লুটে তাই কাঁন্দি।।

যাহা ইচ্ছা কর অধম নফর

কাঁপে থর থর ভয়ে।

বিশ্বময় হরি নররূপ ধারী

রূপের মাধুরী লয়ে।।

নর জ্ঞান করি এত দিন ধরি

হয়ে অহংকারী সবে।

করিয়াছি হেলা চলে যায় বেলা

খেলেছি কু খেলা ভবে।।

Page 083 start

অনাদির নাথ কোটী দণ্ডবৎ

কৃপা দৃষ্টি পাত কর।

ভুবন পালক দাস যে তারক

অজ্ঞান পাবক হর।।


স্তব শুনি গুরুচাঁদ কহে প্রীত মনে।

“শুনহে তারক চন্দ্র আমার বচনে।।

তোমার হৃদয় ভরা ভক্তি-প্রেম-রসে।

হরি প্রেম বিরহেতে নাহি পাও দিশে।।

তাঁর কান্তি, তাঁর প্রেম সদা হৃদে ভাসে।

বিশ্ব-ভরা দেখ শুধু হরি -প্রেম রসে।।

ভক্তি বন্যা ডুবায়েছে তোমার হৃদয়।

যাহা কিছু দেখ চোখে সব হরিময়।।

হরি প্রেম খেলা আমি কিছু নাহি জানি।

তার ঘরে লভি জন্ম নিজে ধন্য মানি।।

তোমাদের সেই হরি ছিল কোন জন।

এইখানে এল হরি কিসের কারণ।।

তোমারা বা কোনভাবে তাঁরে দেখেছিলে।

কোন সে পরম ধন তাঁরে কাছে পেলে।।

সেই সব তত্ত্ব আমি কিছু নাহি জানি।

হরি ছিল দিবা তুল্য আমি যে রজনী।।

তবে এক বাঞ্ছা বটে আছে মোর মনে।

ইচ্ছা আছে সেই ধর্ম্ম পালিব জীবনে।।

মহাপ্রেম বন্যা ঢেউ তুলিয়া জগতে।

মম পিতা এসেছিল শ্রী হরি রূপেতে।।

সেই প্রেম বন্যা আজ দেখহে চাহিয়া।

ছুটিতেছে দেশে দেশে নাচিয়া নাচিয়া।।

যেই ঢেউ তোলে সেই জানে তার মর্ম্ম।

আমরত নহে বাপু ঢেউ-তোলা কর্ম্ম।।

সেই সাথে দিতে তাল আমার বাসনা।

আমার বাসনা শোন তারক রসনা।।

তোমরা রয়েছ যত শ্রী হরির গণ।

তোমাদের ভাব আমি বুঝিনা কখন।।

যদিবা তোমরা সবে আস এই বাড়ী।

আমাতে জানিবে সবে বাড়ীর প্রহরী।।

শ্রী হরির বাড়ী গণি তোমাদের ঘর।

কোন দাবী নাহি মোর বাড়ীর উপর।।

এস কিম্বা যাও চলি কোন বাধা নাই।

তোমাদের তালে তাল দিতে আমি চাই।।

আমি ত সংসারী লোক পুত্র কন্যা আছে।

আমার থাকিতে হবে তা'দের পাছে।।

যা কিছু পেয়েছ সবে ঠাকুরের ঠাঁই।

সেই সব তত্ত্ব মোর কিছু জানা নাই।।

তোমাদের সে ঠাকুর তোমরা তাঁহার।

কোন ধার নাহি ধার তোমরা আমার।।

সকলে হরির গণ তোমরা স্বাধীন।

তোমাদের কাছে ভক্তি মুক্তি সব হীন।।

নহিত ঠাকুর আমি আমাতে কি আছে।

বৃথা কেন এলে ছুটে তুমি মোর কাছে”।।

এত যদি গুরুচাঁদ বলিয়া বচন।

তারক কহিলা তবে করিয়া রোদন।।

“কৃপাময় আর ছলা করিওনা কভু।

নিশ্চয় জেনেছি তুমি অখিলের বিভু।।

আমার ঠাকুর আছে কভু যায় নাই।

তোমার মধ্যেতে ধরা ক্ষীরোদের সাঞী।।

বুঝি বা না বুঝি প্রভু তবু এই কই।

তোমা মধ্যে হরিচাঁদ আছে বসে ওই”।।

নীরবে তারক কান্দে ঠাকুর নীরব।

ভক্ত ঠাঁই ভক্তাধীন মানে পরাভব।।

এবে শুন কি করিল গোস্বামী গোলক।

হরি বিনে দেহে দহে জলন্ত পাবক।।

সদা মন উচাটন গোস্বামী বেড়ায়।

কোন স্থানে তিল মাত্র শান্তি নাহি পায়।।

ইতি উতি চলে সাধু চোখে নাহি ঘুম।

কদাচিৎ বাক্যালাপ নীরব নিঝুম।।

Page 084 start

গোস্বামীর ভ্রাতুষ্পুত্র নাম মহানন্দ।

নামে গানে মত্ত যেন প্রভু নিত্যানন্দ।।

একদা নিরালে বসি সেই মহাশয়।

কর জোড় করি তবে গোস্বামীকে কয়।।

“ভয় পাই প্রভু পাদ করিতে জিজ্ঞাসা।

তথাপি রাখিতে নারি মনের পিপাসা।।

যেই হতে হরিচাঁদ দেহ রাখিয়াছে।

সেই যেন তব প্রাণ কোথা চলে গেছে।।

কায়া মাত্র ছায়া সম যেন রাখিতেছে।

দয়া করি বল কেন এ ভাব ধরেছে?

তব মুখে পূর্ব্ব কালে শুনেছি বারতা।

সাধুর জীবন মৃত্যু নহে দুই কথা।।

শোকেতে কান্দেনা তারা সুখেতে না হাসে।

সুখ দুঃখ সমভাব তাহাদের পাশে।।

তবে কেন হরি বিনে শোকেতে কাতর।

শূন্য মনে সারা গাত্র কাঁপে থর থর।।

দয়া করি যদি প্রভু বলহে কারণ।

সুস্থ হয় শান্তি পায় এ দাসের মন।।

মহানন্দ বলে যদি এ হেন বচন।

গোস্বামী গোলক কহে দুঃখে ভরা মন।।

“ শুন শুন মহানন্দ ওরে বাছাধন।

কি কারণে দেখ মোর মলিন বদন।।

সুখ দুঃখ এক কথা চিত্তের বিকার।

সাধুগণ নহে কভু বাধ্য যে তাহার।।

দারা পুত্র স্বজনাদি সম্বন্ধ যা রয়।

সে সব বিয়োগে বটে মনে দুঃখ হয়।।

অসার সংসার ইথে নাহিক সম্বন্ধ।

তাহে সুখ দুঃখ শুধু মায়া পাশে বদ্ধ।।

আর দেখ স্বজনাদি হইলে বিয়োগ।

কিছুকাল আত্মজনে করে দুঃখ ভোগ।।

কালে কালে সেই দুঃখ দু ' দিনে ফুরায়।

শোক - ব্যথা ভুলে সবে হাসি কথা কয়।।

ক্ষণিকের শোক - ভোগ ক্ষণিকে বিলয়।

মোর বুকে যেই শোক সেই শোক নয়।।

এ যে কি আগুন পোড়া নাহি পাই দিশে।

দহিছে আমাকে সদা হরি - হারা বিষে।।

শত পুত্র শত পত্নী যদি ছেড়ে যায়।

তথাপিহ এই শোকের তুলনা না হয়।।

শোক দুঃখাতীত ছিল প্রাণের ঠাকুর।

দেখিলে সে মুখচন্দ্র দুঃখ হত দূর।।

সে যে মোর কেবা ছিল কহনে না যায়।

অহর্নিশি প্রাণ পোড়ে বুক ফেটে যায়।।

স্বজনাদি বলে যারে নর সাধারনে।

সম্বন্ধ পাতিয়া কত সুখ পায় মনে।।

সাধুজনে জানে তাহা ক্ষণিকের মায়া।

তাই পাশরিতে পারে সুখ - দুঃখ ছায়া।।

যেই মায়া করে নর দারা পুত্র প্রতি।

যেই মায়া পতি পদে রাখে তার সতী।।

কৃপনের যেই মায়া নিজ ধন পরে।

যেই মায়া করি মাতা বক্ষে পুত্রে ধরে।।

ততোধিক মায়া মোর আছে হরি প্রতি।

এ মায়া অক্ষয় মায় মোর চির সাথী।।

স্বজনাদি জানি সব অলিক কল্পনা।

কল্পনার পিতা হরি নাহিক তুলনা।।

স্বজন বিয়োগ ব্যথা দু ' দিনে ফুরায়।

চিরসাথী বান্ধবেরে কি সে ভোলা যায়?

ভোলার প্রাণের ধন কিসে ভুলি তাঁরে?

তাঁরে ভোলা সব ভোলা ভুলি কি প্রকারে?

আমি জানি কোন ধর্ম্ম শুন দিয়া মন।

যেই ধর্ম্মে সতী পূজে ' শিবের চরণ।।

পিতৃগৃহে পতি নিন্দা শুনিয়া জননী।

অশুচি ভাবিয়া তনু ত্যাজিল তখনি।।

শুচি - শুদ্ধা হেন সতী যাঁরে ছাড়ি যায়।

মহাকাল হ 'লে বাকি শোকে মৃত প্রায়।।

Page 085 start

গুণমণি সতীদেহ স্কন্ধেতে ধরিয়া।

ঘুরিল পাগল শিব জগত ভরিয়া।।

সুদর্শন চক্রে তবে প্রভু নারায়ন।

খণ্ডে খণ্ডে সতীদেহ করেন খণ্ডন।।

ভবেশ বুঝিলা স্কন্ধে সতীদেহ নাই।

বিরস বদনে ভোলা ঘন ছাড়ে হাই।।

আপনার মাঝে ভোলা আপনি ডুবিল।

মহাযোগে হয়ে মগ্ন সমাধিস্থ হ'ল।।

এ দিকেতে মহাসতী পার্ব্বতী রূপেতে।

গিরিরাজ পুরে এল জগত তারিতে।।

আলোক সম্ভূতা কন্যা রূপে সীমা নাই।

গিরি ভাবে কন্যা যোগ্য বর কোথা পাই।।

সতী জানে পতি তাঁর আছে যোগাসনে।

জন্মে জন্মে পতি ভোলা, অন্যে নাহি জানে।।

খেলা ছলে চলে দেবী কানন ভিতরে।

দূর হ'তে ভোলানাথে আনন্দে নেহারে।।

দেখ মাত্র জগন্মাতা পতিকে চিনিল।

দেহ মন প্রাণ দেবী পদে সমর্পিল।।

পতি পেতে ভুল পথে সতী লাজ পায়।

লভিলা কৈলাস পতি তীব্র সাধনায়।।

জন্ম ফিরে গেল তবু সতী নাহি ফিরে।

যেই পতি সেই পতি জন্ম জন্মান্তরে।।

অতীতের সেই ধর্ম্ম সদা জাগে মনে।

যেমনি মা তেমনি ছা ' শাস্ত্রের বচনে।।

বর্ত্তমানে দিকে দিকে দেখি ব্যভিচার।

পতিহারা পতিরূপে মাগে অন্য নর।।

শাস্ত্র বাক্য বলি কহে কতই যুক্তি।

পতি হারা লালসায় ভজে অন্য পতি।।

প্রাণনাথ প্রাণকান্ত প্রভু হরিশ্চন্দ্র।

সে বিনে দিবসে রাত্রি, চক্ষু মোর অন্ধ।।

শ্রী হরির বিরহ বিষে অসহ্য যাতনা।

হরি বিনে পোড়া প্রাণ বুঝি বা বাঁচেনা।।

শ্রী হরির পোষা পাখী মোরা যত জন।

হরি বিনে তিলে তিলে হবে যে মরণ।।

আমি জানি গুরুচাঁদ এল কোন জন।

ব্রহ্মা বিষ্ণু করে ধ্যান তাঁহার চরণ।।

তবু মনে হয় মোর যেই দেহ দিয়া।

হরিপদ পূজিয়াছি পরাণ ভরিয়া।।

সেই দেহ সেই রূপ ভিন্ন অন্য রূপে।

নাহি দিব না পারিব দিতে কভু সঁপে।।

এই দেহ এই প্রাণ হরিচাঁদ নিছে।

আর না বিকা'ব প্রাণ আর কা'র কাছে।।

হরি সম্বরিতে রূপ, সেই রূপ নাই।

এই রূপ ছেড়ে তবে আমি সাথে যাই।।

হরি শক্তি দিয়া গেছে প্রভু গুরুচান্দে।

আমি দিয়া যাব শক্তি তো'কে মহানন্দে।।

আমি যথা সেবিয়াছি শ্রী হরির পদ।

সেই ভাবে পূজা কর প্রভু গুরুচাঁদ।।

এত বলি শ্রী গোলক নীরব হইল।

নীরবে শ্রী মহানন্দ কাঁদিতে লাগিল।।

মহানন্দ দেখে ভেবে ভাবনা যে মিছে।

ছেড়ে গেছে শ্রী গোলক ছায়া মাত্র আছে।।

ইহ পরে সে গোলক দেশে দেশে ঘুরি।

ঘরে ঘরে এল ঘুরি বলে হরি হরি।।

প্রাণ শূন্য দেহ বল রহে কত দিন।

নিদারুণ শূলে তার দেহ করে ক্ষীণ।।

ইতি উতি ঘুরি প্রভু শ্রী গোলক চন্দ্র।

মৃত্যু কালে করিলেন তারকের সঙ্গ।।

জয়পুর গ্রামে আসি তারকের ঘর।

দেহ রক্ষা করিলেন কোলের উপর।।

উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক প্রায় এক জ্যোতিঃ উঠি।

আকাশ ভেদিয়া চলে পূর্ব্ব দিকে ছুটি।।

তারক দেখিল জ্যোতিঃ যায় পূর্ব্ব দিশি।

মহানন্দের অঙ্গেতে হল মিশামিশি।।

Page 086 start

সেই মহানন্দ তবে হ'ল শক্তিমন্ত।

হরি লীলামৃতে আছে সে সব বৃত্তান্ত।।

গুরুচাঁদ পদে নিষ্ঠা রাখি মহাশয়।

দিবানিশি ঘরে ঘরে হরিনাম বিলায়।।

শ্রী গুরুচাঁদেরে জানে সাক্ষাৎ ঈশ্বর।

হরি গুরুচাঁদ তত্ত্ব করিত প্রচার।।

তাহার যতেক লীলা বিবিধ প্রকারে।

প্রচারিত হরি লীলামৃতের ভিতরে।।

এবে পুনঃ মূল সূত্রে করিব বারতা।

অন্য কোন ভক্তে তবে বলে কোন কথা।।

বারশ ' পঁচাশি সালে জৈষ্ঠ মাস হল।

শ্রী রামভরত সাধু পুনঃ ফিরে এল।।

ওড়াকান্দী এসে দেখে হরি দেহে নাই।

ভূমিতে পড়িয়া সাধু কেন্দে ছাড়ে হাই।।

মহাপ্রভু গুরুচাঁদ নিকটে আসিল।

তাঁর দরশনে ব্যথা দ্বিগুণ বাড়িল।।

কেন্দে বলে “বড় দাদা বাবা গেল কোথা।

তাঁরে বিনে এ জীবনে বেঁচে থাকা বৃথা।।

তুমি ত জানিতে দাদা ভাঙ্গিবে কপাল।

তবে কেন ছেড়ে দিলে পরম দয়াল।।

তুমি যদি জোর করে বলিতে তাঁহারে।

নিশ্চয় যেত না হরি ছাড়িয়া সবারে।।

কোটী জন্ম সুকৃতির ভাগ্য ছিল ভাই।

অযোধ্যা হইতে বঙ্গে এসে তাঁরে পাই।।

ভুবন মোহন বেশে দেখিলাম তারে।

কোন গুণে গুণমণি ভুলা'ল আমারে।।

রাম মন্ত্রে উপাসনা ছিল যে আমার।

হরিচাঁদে দেখে গেল চিত্ত - অন্ধকার।।

মন প্রাণ হরি মোর করিল উতলা।

তাঁরে বিনে মনো ব্যথা কারে যায় বলা ?

রাম নামে দেহে বল হাতে ছিল যষ্ঠি।

মনে হত নাশিবারে পারি এই সৃষ্টি।।

তখন বুঝিনি দাদা সেই বল বৃথা।

সকল বলের বল হরিচাঁদ পিতা।।

তাঁরে দেখে গেল বল যষ্ঠি গেল পড়ে।

কাঙ্গাল সাজিনু আমি সব সজ্জ্বা ছেড়ে।।

কাঙ্গাল করিল মোরে কাঙ্গালের নাথ।

আত্মা কেড়ে নিয়ে করে মোরে আত্মসাৎ।।

হরিচাঁদে আত্মা দিয়া দেশে দেশে ঘুরি।

মনে হয় বিশ্ববাসী আমার প্রহরী।।

মনে ভাবি আমি মূঢ় এতই অজ্ঞান।

কেন ভয় করি? পিছে আছে হরিচাঁন।।

প্রাণের দোসর ভাই রসিক সুজন।

সেই মোরে দেখাইল হেন রত্ন ধন।।

এমন বান্ধব আর নাহি ত্রিভুবনে।

দিনমানে রাত্রি হল হরিচাঁদ বিনে।।

আ রে রে পাপিষ্ঠ প্রাণ দেহে কেন র'স্।

হরিপদে দাসী সেজে কার দাসী হ'স্।।

আ রে রে নয়ন অন্ধ দেখি কিবা আর।

হরিরূপ বিনে দেখি সব অন্ধকার।।

আরে আরে জড় জিহবা কিবা ক'স্ কথা।

হরিচাঁদ বিনে গাবি কার গুণগাঁথা।।

ওহো রে দুর্ব্বল হৃদি কি বসাবি বুকে।

স্পর্শ মনি হরিচাঁদ যদি নাহি থাকে।।

আরে আরে বদ্ধ কর্ণ কিবা গান শুনি।

যদি নাহি বাজে হৃদে হরিচাঁদ ধ্বনি।।

পাষাণ পরাণ মোর নাহি দয়ামায়া।

নিষ্ঠুর হইয়া রহে নাহি ছাড়ে কায়া।।

ত্রিভুবনে বন্ধু নাই এবে তাই দেখি।

হরি - শূন্য এ জীবনে বেঁচে কেন থাকি”।।

আছাড়ি পাছাড়ি সাধু করে কান্দাকান্দি।

বলে “অন্ধকার হল ক্ষেত্র ওড়াকান্দী “।।

তবে প্রভু গুরুচাঁদ বাহুড়ি আসিল।

শ্রী রাম ভরতে তবে কহিতে লাগিল।।

তবে প্রভু গুরুচাঁদ বাহুড়ি আসিল।

শ্রী রাম ভরতে তবে কহিতে লাগিল।।

Page 087 start

“শুন মিশ্র অবিমিশ্র নহে ত জীবন।

জন্মিলে মরিতে হবে বিধির লিখন।।

হরিচাঁদ গেছে চলি কথা মিথ্যা নয়।

যুগে যুগে এই ভাবে খেলা তাঁর হয়।।

তাঁহারি সৃজিত বিশ্ব সে বিশ্ব চালায়।

তাহা হয় যাহা ইচ্ছা করে ইচ্ছাময়।।

মোরা ত পুতুল মাত্র সে যে খেলোয়াড়।

খেলুক যে খেলা ইচ্ছা হয়েছে তাঁহার।।

মনে ভাবিতেছে হরিচাঁদ আজি নাই।

মোর মনে বলে ইহা ঠিক নহে ভাই।।

যাঁর আজ্ঞা ক্রমে চলে চন্দ্র সূর্য তারা।

যাঁরে দেখে ঢালে মেঘ সুধা-বারি ধারা।।

যাহার ইঙ্গিতে বায়ু বহিছে সদায়।

কল কল নদী নদ যাঁর গুণ গায়।।

প্রভাত আলোক দেখি যার মধু হাসি।

সন্ধ্যার আঁধারে রহে কাল রূপ রাশি।।

প্রচণ্ড মধ্যাহ্নে দেখি যাঁর রুদ্র মূর্ত্তি।

পাহাড় ধ্যানেতে মগ্ন রেখে যাঁহে আর্ত্তি।।

জননীর বুকে সুধা যে -জন জোগায়।

ফলে ফুলে বসুধারে হাসায় নাচায়।।

জীব প্রতি স্নেহ প্রীতি দয়া, ক্ষমা রূপে।

ভায়ার্ত্তের বুকে যেবা ভয় হয়ে কাঁপে।।

কল্পনারে দিয়ে রূপ জগৎ গড়ায়।

অনু পরামানু জুড়ে সে যে বিশ্বময়।।

সে কেন ছাড়িয়া যাবে এই কোন কথা।

“ সে নাই সে নাই “ ভাই ভাব তুমি বৃথা।।

কোথা আছে সেইজন খুঁজে তারে দেখ।

ব্যাকুলতা দূর করে সুস্থ হয়ে থাক “।।

গুরুচাঁদ মুখে শুনি এই তত্ত্ব বাণী।

প্রণমি শ্রীপদে সাধু দাঁড়াল অমনি।।

বলে “দাদা আমি আঁধা বোধশক্তি নাই।

দয়া করে মোরে তবে রাখ তুমি ভাই।।

শ্রী গুরু ডাকিয়া বলে “থাক থাক থাক।

প্রাণ ভরি ' হরিচাঁদে হেথা বসে ডাক।।

সুস্থির হইয়া সাধু রহে ওড়াকান্দী।

হরি বলে ঘুরে ফিরে উঠে কান্দি কান্দি।।

এবে শুন কোন্ কথা কহে হরিপাল।

কোন্ ভাবে দয়া করে পরম দয়াল।।

তাঁহার রচিত কথা বড়ই মধুর।

তাঁরে বহু কৃপা কৈল শ্রী হরি ঠাকুর।।

ধন্য শ্রী পরম সাধু নাম হরিপাল।

স্বচক্ষে দেখিল যিনি পরম দয়াল।।

কুম্ভকার বংশে জন্ম যশোহর জিলা।

তারে নিয়ে হরিচাঁদ করে কৃপালীলা।।

হরিলীলামৃত গ্রন্থে কবি রসরাজ।

লিখিয়াছে শুনিয়াছে ভক্ত সমাজ।।

উদ্দেশে মতুয়া হ'ল সেই মহাশয়।

সূর্যনারায়ন সাধু তারে পদ কয়।।

ওড়াকান্দী যাবে বলি করে আনাগোনা।

যাব যাব বলি শীঘ্র যাওয়া হ'ল না।।

এমন সময় প্রভু দেহ তেয়াগিল।

হরিপাল শুনি বার্ত্তা মনে ব্যথা পেল।।

মনে ভাবে কি দুর্ভাগ্য আমি অভাজন।

জীবমানে না দেখিনু প্রভুর চরণ।।

বুকে ব্যথা পুষি, সাধু ইতি উতি ধায়।

কল্পনাতে হরিরূপ সতত ধেয়ায়।।

কাষ্ঠ কাটিবারে তার নৌকা কতখান।

দক্ষিণেতে বাদা মধ্যে করিল প্রয়াণ।।

কিবা সে চক্রির চক্র বোঝা বড় দায়।

দৈব চক্রে নৌকা তার জলে ডুবে যায়।।

গদাই নামেতে সেথা দুষ্ট একজন।

ইচ্ছা করে তার ধন করিতে হরন।।

নানা ছলে সেই খল হরিপালে নিল।

ব্যাঘ্রের কবলে ফেলি নাশিতে ইচ্ছিল।।

নানা ছলে সেই খল হরিপালে নিল।

ব্যাঘ্রের কবলে ফেলি নাশিতে ইচ্ছিল।।

Page 088 start

ব্যাঘ্র দেখি হরিপাল সব বুঝি লয়।

বিপদে পড়িয়া ডাকে “ কোথা দয়াময়!

পরম নির্ভর সাধু করে এক মনে।

উপনীত হরিচাঁদ ভক্তের কারণে।।

ভক্তের স্কন্ধেতে বসি পদ দোলাইয়া।

ইঙ্গিতে তাড়াল ব্যাঘ্র সদয় হইয়া।।

কমলা - সেবিত পদ শিবের সম্পদ।

প্রতি লোমকূপে ফুটে আছে কোকনদ।।

নিটোল মধুর হেরি চরণের শোভা!

কল কল নাচে গঙ্গা সাধু মনোলোভা।।

চরণ পরশে এল হরিপালে হুস্।

কেন্দে বলে “কেবা তুমি সোনার মানুষ “।।

স্কন্ধে থেকে প্রভু বলে “শুন হরিপাল।

আমাকে চিনিবে যদি কাট মায়াজাল।।

ওড়াকান্দী হ'তে আমি আসিয়াছি হেথা।

বুঝিতে পারিবে পরে সেই সব কথা।।

মনে মনে যার রূপ ভেবেছ সদায়।

ওড়াকান্দী গেলে তার তত্ত্ব মিলে যায় “।।

এত বলি হরি তবে মিলা'ল বাতাসে।

প্রেমে পুলকিত হরিপাল দেশে আসে।।

মনে ভাবে হরিপাল এই কোন কথা।

হরি চলে গেছে শুনি এ কোন বারতা।।

হরি যদি গিয়ে থাকে ওড়াকান্দী হতে।

আমাকে রাখিল কেবা গহন বাদাতে।।

হতে পারে কায়া কান্তি ছাড়িয়াছে হরি।

নিশ্চয় রয়েছে হরি ওড়াকান্দী বাড়ী।।

“শুনিয়াছি প্রভু পুত্র গুরুচাঁদ যিনি।

শ্রীধামের কর্ত্তা এবে হয়েছেন তিনি।।

সন্দেহ আমার মনে বাড়িয়াছে বটে।

কোন গুণে গুরুচাঁদ বসে হরি - পাটে।।

হয় হরি অশরীরী আছে ওড়াকান্দী।

নয় গুরুচাঁদ দেহে হইয়াছে বন্ধি”।।

ইতি উতি মনে ভাবি সাধু হরিপাল।

যাত্রা করে ওড়াকান্দী চক্ষে বহে জল।।

উপনীত শ্রীধামেতে বহু লোক সঙ্গে।

দেখে গুরুচাঁদ আছে হাসির তরঙ্গে।।

খল খল হাসি ওঠে বালক সমান।

অপরূপ কান্তি দেখি হরি লয় প্রাণ।।

হস্ত নাচাইয়া প্রভু বলে তত্ত্ব কথা।

শুনিলে জুড়ায় হিয়া দূরে যায় ব্যথা।।

অপলক দৃষ্টে চাহি সাধু হরিপাল।

বুক বেয়ে ছোটে তার নয়নের জল।।

মনের সংশয় তার দূর হয়ে গেল।

গুরুচাঁদে হরিচাঁদ নিশ্চয় বুঝিল।।

অকস্মাৎ দণ্ডবৎ করে ভূমে পড়ে।

প্রভু কয় একি দায় তুলে ধর ওরে।।

জিজ্ঞাসা করেন প্রভু 'তুমি বাপু কেটা '?

হরিপাল বলে আমি গোলকের বেটা।।

নাম মোর হরিপাল বাড়ী যশোহর।

দয়া করি কর মোরে আপন নফর '।।

হাসি হাসি বলে প্রভু করিয়া রহস্য।

গুটি কত কথা বাপু বলিব অবশ্য।।

জন্ম তব পাল বংশ উচ্চ বংশ জাত।

কেন ক্ষুদ্র নমঃশুদ্রে কর প্রণিপাত ?

শুন শুন হরিপাল বলি তব ঠাঁই।

এমত অবিধি কার্য আশা করি নাই।।

তোমাদের আছে মনে জাতিতে কুলীন।

হীন জনে প্রণমিয়ে কেন হও হীন ?

প্রভু যদি এই কথা বলে তার আগে।

শেল-সম সেই কথা হরিপালে লাগে।।

কেন্দে কয় “রসময় কি আর বলিব।

তুমি যে বিশ্বের প্রভু তুমি জান সব।।

যুগে যুগে এসে তুমি কত কথা বল।

ভুলে গিয়ে নরগণে মানেনা সকল।।

Page 089 start

কলিকালে লীলাছলে এলে নদীয়ায়।

নররূপে শচী ঘরে হলে গোরা রায়।।

ভক্তির কন্টক পঞ্চ কর নিরুপণ।

জাতি বিদ্যা রূপ আর মহত্ব যৌবন।।


“জাতি-বিদ্যা-মহত্বঞ্চ রূপ যৌবনমেবচ।পঞ্চৈব ভক্তি কন্টকাঃ যত্নেন পরিবর্জ্জয়েৎ “।।

সাধ্য মত ভক্ত গণ বর্জ্জন করিবে।

তবে প্রেম রূপা রাধা হৃদয়ে বসিবে।।

উচ্চ কুলে জন্ম লয়ে করি যে বড়াই।

উচ্চ বৃক্ষ ঝড়ে ভাঙ্গে ফল প্রাপ্তি নাই।।

কুলে বড় রূপে বড় বিদ্যাতে মহৎ।

যৌবনের গর্ব্বে মত্ত যতেক অসৎ।।

কুলে দেখি কুল নাই অকুলেতে ভাসি।

অকুলে কাণ্ডারী পাই ওড়াকান্দী আসি।।

আর সেই যুগে বল অপূর্ব্ব বারতা।

কোনজনে আছে ভক্তি, ভক্তি রহে কোথা।।

তৃণ হতে হীন হবে অমানীকে মান।

তরু - সম সহিষ্ণুতা হরি গুণগান।।


“তৃণাদপি সুনীচেন, তরুরিব সহিষ্ণুতা।অমানীন মানদেন কীর্ত্তনীয়া সদা হরিঃ “।।

উচ্চ কুল বলি প্রভু বলিল যাহারে।

তৃণাদপি শ্লোক স্পর্শ করে না তাঁহারে।।

এই জীবনের প্রভু কোন মূল্য নাই।

তৃণাদপী শ্লোক মর্ম্ম ভক্ত হ'তে পাই।।

তাহার প্রমাণ প্রভু মহাজনে বলে।

হরি ভক্তি বিনা জন্ম যায় যে বিফলে।।


“ হরি ভক্ত হয়ে বরং বাঁচে পঞ্চ দিন।বৃথা সে সহস্র কল্প হরি ভক্তি হীন “।।--- শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত

আজি বঙ্গে যত দেখি উচ্চ উচ্চ কুল।

জাতি গর্ব্বে মত্ত হয়ে নাহি চিনে মূল।।

তাদেরি পূর্ব্ব পুরুষে লিখে গ্রন্থ মালা।

পিতৃ পুরুষের বাক্য কে কবে মানিলা।।

শাস্ত্র গ্রন্থ পুরাণাদি কহিছে প্রমাণ।

হরি ভক্তি হীন দ্বিজ নাহি পাবে ত্রাণ।।

উচ্চ বর্ণ ঘৃণা করি কহে নীচ বর্ণ।

চণ্ডালাদি আখ্যাদেয় এমনই জঘন্য।।

সেও যদি কর্ম্ম গুণে হরিভক্ত হয়।

দ্বিজ হতে শ্রেষ্ঠ গণি নমি তার পায়।।


“চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠঃ হরি ভক্তি পরায়নঃ।হরিভক্তি বিহীনশ্চ দ্বিজোহপি শ্বপচধমঃ “।।

কুলে কিবা করে প্রভু মূলে সব মিলে।

স্বর্গে হয় ঘন্টা ধ্বনি রুহিদাস খেলে।।

হরি ভক্ত শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা করিবার তরে।

কৃষ্ণ বলে যুধিষ্ঠিরে রাজসূয় পরে।।

নকুলের মুখে শুনি অদ্ভুত বারতা।

কৃষ্ণ বলে “যুধিষ্ঠির শুন মোর কথা।।

অশ্বমেধ রাজসূয় অতিথি সেবন।

সবা হতে শ্রেষ্ঠ হয় সাধুর ভোজন।।

দেব দৈত্য, যক্ষ রক্ষ নর আদি কত।

রাজা রাণী, ব্রাহ্মণাদি রাজ পুরোহিত।।

সকলের করি সেবা পায় নাই ফল।

রুহিদাস খেয়ে দিল সর্ব্ব-সিদ্ধি-ফল।।

কুলে গোত্রে এরা সবে ছিল বটে হীন।

ভক্তি গুণে হল তারা সবার প্রবীণ।।

এই মত লক্ষ লক্ষ সাধু দিবারাত্রি।

যাঁর পদ তীর্থ আসে হয়ে আছি যাত্রী।।

সাধু - জন - মন - ধন অতুল রতন।

অকুলের কুল তুমি শ্রী গুরুচরণ।।

Page 090 start

কুলে নাহি পাব কুল তব কুলে যেতে।

কুল - হারা কুল পাবে তোমার কুলেতে।।

কুল ফেলে কুলে এসে তব কুলে রই।

কুলে আর কুল প্রভু আছে বল কই ?

কুল হারা হরিপালে পদকুলে রাখ।

করুণা করিয়া কান্ত! কৃপা নেত্রে দেখ।।

ভক্তমুখে শুনি বাণী ভক্ত পরাণ।

বলে হরিপাল তুমি পালের প্রধান।।

হরিধনে দেখিবারে মনে ছিল আশ।

বল হরি হবে হরি! ধন,মান, যশ '।।

গুরুচাঁদ আজ্ঞা ক্রমে হরিপাল তবে।

ঘরে ঘরে হরিনাম বিলাইল সবে।।

সকলে জানিল হরিচাঁদ যায় নাই।

গুরুচাঁদ মধ্যে দেখে ক্ষীরোদের সাঁই।।

হরিচাঁদ গুরুচাঁদ অভেদ হইল।

দীন মহানন্দ বলে হরি হরি বল।।