Page 091

শ্রী রাম ভরত মিশ্রের মহাপ্রস্থান

বার'শ পঁচাশি সালে জ্যৈষ্ঠের প্রথমে।

শ্রী রাম ভরত এল ওড়াকান্দী ধামে।।

Page 092 start

হরিচাঁদ অদর্শনে ব্যাকুলিত মন।

তাঁরে শান্ত করি রাখে শ্রী গুরুচরণ।।

সেই সাধু তবে রহি ওড়াকান্দী ধামে।

অবিরাম প্রেম ভরে মত্ত হরিনামে।।

ক্ষণে ক্ষণে ছাড়ে হাই “ হরিচাঁদ “বলি।

তাঁর ভাব হেরি কাঁন্দে ভকত মণ্ডলী।।

গভীর নিশিথে সাধু বসি বৃক্ষ তলে।

গুরুচাঁদে ডাকি কত মনোকথা বলে।।

কি জানি কি তত্ত্ব কহে বসি দুই প্রভু।

কেহ না জনিতে পারে সেই তত্ত্ব কভু।।

ক্রমে ক্রমে গুরুচাঁদ সংসারে প্রবেশে।

শ্রী রাম ভরত তবে আঁখি জলে ভাসে।।

বাণিজ্য কারণে প্রভু সদা ব্যস্ত রয়।

দেশে দেশে গুরুচাঁদ তরণী পাঠায়।।

এবে মনে হ'ল আশা বন্দরের স্থানে।

করিবেন ব্যবসায় বাসিন্দা দোকানে।।

গৃহীর পরম বল অর্থ মহাশক্তি।

মহাশক্তি লভিবারে প্রভু করে যুক্তি।।

যাঁর ঘরে মহাশক্তি রহে লক্ষ্মীরুপে।

তাঁর কেন খোঁজাখুজি অর্থের পাদপে?

জীব শিক্ষা লাগি প্রভু করে যত কর্ম্ম।

যাহা করে প্রভু মানে জীবে সেই ধর্ম্ম।।

হরিচাঁদ রূপে প্রভু ক্ষেত্র বানাইল।

গুরুচাঁদ রূপে তাহে বীজ বুনাইল।।

প্রথম আবাদ কালে যত ভক্ত জন।

কর্ম্ম শেষ হল তাঁরা ভাবে মনে মন।।

তাই যবে হরিচাঁদ রূপ লুকাইল।

অগ্রে পরে সব ভক্ত বিদায় লইল।।

যার কর্ম্ম তার সাজে অন্য গণ্ডগোল।

শৃঙ্খলা রাখিয়া চলে ভক্ত সকল।।

হরিচাঁদ রূপ - ধ্যায়ী যত ভক্ত ছিল।

সেই রূপ চিন্তা করি সে রূপে মিশিল।।

শ্রী রাম ভরত তবে এক নিশিকালে।

ভকতি করিয়া কথা গুরুচাঁদে বলে।।

“চরণে বিদায় মাগি শুন বড় দাদা।

হরিচাঁদ-রূপ ভাবি মন কাঁন্দে সদা।।

যেই লীলা প্রকাশিতে তোমা ' রাখি পাছে।

পরম দয়াল মোর রূপ লুকায়েছে।।

সেই লীলা প্রকাশিতে জগৎ তরাও।

আমাকে করিয়া কৃপা চলে যেতে দাও।।

গৃহীজন আছে লয়ে গার্হস্থ্য জীবন।

সে জীবনে নাহি মজে আমার যে মন।।

উদাসী সাজিয়া আমি যাব দেশে দেশে।

দেখি হরিচাঁদ যদি দেখা দেয় এসে।।

গৃহ ত্যাগী দেখ মোর বাড়ী ঘর নাই।

পথসার করি এবে ঘুরিয়া বেড়াই।।

গৃহস্থ জনেরে দেখ গৃহস্থ সাজা ' য়ে।

মনে হলে এসে যাব তোমাকে দেখিয়ে।।

গৃহস্থজনের বন্ধু পরম দয়াল!

তব পাদস্পর্শে ধন্য হইবে কাঙ্গাল।।

প্রতি বৎসরে আসি শ্রী বারুণী দিনে।

অলক্ষ্যে থাকিয়া লীলা দেখিব নয়নে।।

গৃহস্থ জনের দেখ বহু ত্রুটি আছে।

আমি র'লে ক্ষমা নাহি পাবে মোর কাছে।।

গৃহস্থ আশ্রম ছাড়ি তাই দূরে থাকি।

তারহে গৃহস্থ জনে মোরা বসে দেখি।।

মম পক্ষে ঘর বাড়ী বড়ই জঞ্জাল।

জঞ্জালের মধ্যে থাকি কিবা পাব ফল।।

বিশ্ব ঘুরে দেখি কোথা কোন ভাবে হরি।

করেছে কেমন লীলা আপনা সম্বরি।।

তব আজ্ঞা বিনা মোর যেতে সাধ্য নাই।

তাই পদে মনোসাধে এই ভিক্ষা চাই।।

শ্রী রাম ভরত যদি এই কথা বলে।

আজ্ঞা দিল গুরুচাঁদ “ যাহ “ “যাহ “ বলে।।

Page 093 start

অন্তর্যামী গুরুচাঁদ অন্ত নাহি যাঁর।

অন্তর বুঝিয়া চলে এই ভাব তাঁর।।

শ্রী রাম ভরতে ডাকি প্রভু বলে কথা।

প্রতি বারুণীতে এসো রহ যথা তথা।।

স্বীকার করিল সাধু পদতলে পড়ি।

“শ্রী হরি করিয়া অম্নি করিল “ শ্রী হরি “।।

মাঘী পূর্ণিমার তিথি উর্দ্ধে চন্দ্র হাসে।

শ্রী রাম ভরত ছাড়ি গেল বঙ্গ দেশে।।

স্থুল দেহে তাঁরে কেহ আর দেখে নাই।

“অমর হইয়া আছে প্রকাশে ' সবাই।।

সর্ব্ব আশ্রমের লোক রহে ওড়াকান্দী।

মহানন্দ গেল না রে হয়ে মায়া বন্ধী।।

--০--