Page 469

হরিবরের নিষ্ঠা ভক্তি ও গ্রন্থ রচনা

বারুনীতে কত লোক যাতায়াত করে।

তারা সবে আহারাদি করে দুর্গাপুরে।।

অভূত অপূর্ব্ব লীলা গুরুচাঁদ করে।

অন্ধে দৃষ্টি প্রায় কত মৃতে প্রাণ ধরে।।

একবার হরিবর বারুণী সময়।

মহাদুঃখে ওড়াকান্দী হইল উদয়।।

প্রভুর নিকটে গিয়া কেন্দে কেন্দে কয়।

‘‘বল দয়াময় আমি কি করি উপায়।।

সাত পৈকা ধান্য মাত্র মোর গৃহে আছে।

এ দিকে বারুণী বটে আসিয়াছে কাছে।।

বহু লোক সমাগম হয় দুর্গাপুর।

তাঁদের সেবার কিবা করিব ঠাকুর।।’’

প্রভু বলে ‘‘চিন্তা নাহি কর হরিবর।

কারে খেতে নাহি তুমি দিও এইবার।।’’

হরিবর বলে ‘‘প্রভু মনেতে বোঝেনা।

মতুয়ারে খেতে নাহি দিলে ত হবেনা।।

Page 470 start

আপনার কৃপাদৃষ্টি যদি আমি পাই।

যতেক আসুক লোক তাতে ক্ষতি নাই।।’’

প্রভু কয় ‘‘তবে শোন আমার বচন।

কি কাজ করিল সেই তারক সুজন।।

একবার অন্নাভাবে সেই মহাশয়।

আমার বাবার কাছে কেন্দে কেন্দে কয়।।

‘‘অন্নভাবে মারা প্রভু যাব এইবার।

অল্প দুটি ধান্য ছাড়া ধান্য নাহি আর।।’’

বাবা যেন সেই কথা শুনিলেনা কানে।

কিছু পরে চেয়ে বলি তারকের পানে।।

‘‘শুন হে তারক আমি বলি তব ঠাঁই।

কুমড়া আর মাছ পেলে পেমানন্দে খাই।।’’

তারক ভাবিল প্রভু কেন ইহা বলে।

নিশ্চয় উদ্দেশ্য কিছু অছে এর মুলে।।

এত ভাবি গৃহে চলি গেল মহাশয়।

হাতে তার অর্থ কড়ি কিছু নাহি হায়।।

গৃহ হতে ঘাটি এক লইল তখনে।

তাহা বান্ধা রেখে তবে কিছু কড়ি আনে।।

সেই কড়ি দিয়া পরে কুমড়া কিনিল।

সঙ্গে সঙ্গে কিছু মাছ কিনিয়া আনিল।।

মৎস্য আর কুমড়া লয়ে এল ওড়াকান্দী।

বাবার চরণে পড়ে করে কান্দাকান্দি।।

বাবা বলে নাহি ভয় ঘরে চলে যাও।

যত ধন আছে তাহা বর্ষ ধরে খাও।।

বাবার কৃপায় দেখ কিবা ফল হলে?

সেই ধান সে তারক বর্ষ ধরে খেল।।

কিছুতে না ধান তার হল কিছু ক্ষয়।

প্রতিদিন খায় তবু যাহা তাই রয়।।

লহ্মী যাঁরে করে পূজা সেই যদি কয়।

চঞ্চলা অচলা হয়ে তার গৃহে রয়।।

কথা শুনে হরিবর কান্দিয়া আকুল।

বলে ‘‘বাবা বুঝিলাম এই বারে মূল।।

দৈবযোগে গৃহ হতে ঘাটি এনেছিল।

সেই ঘাটি হরিবর বান্ধা রেখে দিল।।

তাতে চারি আনা হল অর্থ পরিমান।

দু’পয়সা দিয়ে কুমড়া কেনে মতিমান।।

বহু চেষ্টা করে কোথা মাছ নাহি পেল।

মাছের বদলে কড়ি প্রভু হস্তে দিল।।

প্রভু কয় ‘‘আর ভয় নাহি হরিবর।

যাও যাও বাড়ী তুমি যাও হে সত্বর।।’’

বাড়ী এসে ধান্য মেপে দেখে মহাজন।

উনিশ পৈকার ধান হয়েছে গনণ।।

পূর্ব্বে যবে মেপেছিল সাত পৈকা হয়।

ওড়াকান্দ হতে এসে ধান্য বৃদ্ধি পায়।।

প্রেমেতে আপ্লুত হয়ে গড়াগড়ি যায়।।

হেন কালে এক শিষ্য আসিল বাড়ি।।

নাম তার হরিবর পারশুলা তথায়।।

দেহের ওজনে বটে অতিশয় ভারী।।

ডাক দিয়া হরিবরে বলে সেই জন।

‘‘দয়াকরে গুরুদেব করুন শ্রবণ।।

দুইমণ চাল আমি দিব মহোৎসবে।

আজ্ঞা যদি কর প্রভু এনে দেই তবে।।’’

কিবা কবে হরিবর কেন্দে কেন্দে সারা।

স্মরিয়া প্রভুর দয়া যেন জ্ঞান হারা।।

মহানন্দে তথাকারে মহোৎসব হল।

পরম সন্তুষ্ট চিত্তে সকলে খাইল।।

সঙ্গে সঙ্গে ওড়াকান্দী এল হরিবর।

প্রভুর চরণে পড়ে কান্দিল বিস্তার।।

প্রবুর করুণা ধন্য মনে ভাই তাই।

এমন দয়াল বন্ধু আর দেখি নাই।।

এই ভাবে হরিবর ওড়াকান্দী যায়।

এবে শোন কোন কার্য্য করে মহাশয়।।

প্রতি পালা গানে তার যতেক বায়না।

টাকা প্রতি তিন পাই রাখে জরিমানা।।

Page 471 start

সেই অর্থ আনি দেয় প্রভুর নিকটে।

প্রতি বর্ষ বিশ ত্রিশ টাকা দেয় বটে।।

সদাশয় চিত্ত সাধু পরম উদার।

তারকের কৃপা ছিল তাহার উপর।।

কার্ত্তিক বৈরাগী নামে গঙ্গাচর্না বাসী।

গোলক পাগলে পেয়ে মত্ত হল আসি।।

তার পুত্র মহাকবি অশ্বিনী গোসাই।।

বড়ই দরিদ্র তিনি ছিল জানি তাই।।

তারকের আজ্ঞামতে সেই হরিবর।

কার্ত্তিকের অর্থ দান করিল বিস্তার।।

আমড়িয়া বাসী জানি সে নীল রতন।

একদিন হরিবরে বলিল বচন।।

দয়াময় গুরুচাঁদ বলিয়াছে কথা।

‘‘আজি যদি কেহ হায় থাকিত প্রণেতা।।

বাবার ‘‘দ্বাদশ আজ্ঞা’’ আর যত পাট।

সকল লিখিত বসে আমার নিকট।।

কত যে আনন্দ হতে বলিবার নয়।

এই ইচ্ছা পূর্ণ মোর বুঝি নাহি হয়।।’’

কথা শুনি হরিবর সুখী অতিশয়।

অন্তরের কথা কিছু তারে নাহি কয়।।

পরে গৃহে বসি তেঁহ করিল লিখন।

গ্রন্থ লয়ে ওড়াকান্দী করিল গমন।।

প্রভুর নিকটে গ্রন্থ পড়িয়া শুনায়।

গ্রন্থ শুনি গুরুচাঁদ সুখী অতিশয়।।

‘‘শ্রীমহাবারুনী’’ নামে গ্রন্থ একখান।

‘‘দ্বাদশ আজ্ঞা’র ছন্দে দ্বিতীয় প্রমাণ।।

তারকের বিরচিত ‘‘মহাসংকীর্ত্তন’’।

তারমধ্যে হরিবর করেছে রচন।।

‘‘হরি লীলামৃত’’ গ্রন্থ মুদ্রণের কালে।

কি কি কার্য্য করে তাহা আসিয়াছি বলে।।

পরম প্রেমিক সাধু সুরসিক ভক্ত।

জন্মাবধি ওড়াকান্দী মতে অনুরক্ত।।

‘‘মতুয়া সঙ্ঘের’’ মধ্যে শ্রেষ্ঠ একজন।

সংক্ষেপে জীবনী তাঁর করিনু লিখন।।

মতুয়া চরিত্র কথা সুধা হতে সুধা।

মহানন্দ বলে খেলে যাবে ভব ক্ষুধা।।

---০---