Page 418 start

শ্রীশ্রীগুরুচাঁদের পাতলা গ্রামে গমন

পাতলা নিবাসী সাধু নামে ধনঞ্জয়।

ঠাকুরের পদে তার নিষ্ঠা অতিশয়।।

এবে শুন কি ভাবেতে ‘মতুয়া’ হইল।

বিপদ বান্ধব হয়ে সাহায্য করিল।।

বহু ধনবান বটে সেই মহাশয়।

দেশমধ্যে মান্য তাতে আছে অতিশয়।।

দৈবেতে কঠিন ব্যাধি দেহে হ’ল তার।

রস পৈত্তিকের ক্ষত অতি কদাকার।।

বৈদ্য ডাকে ওঝা ডাকে ডাকিল ডাক্তার।

কোন পথে কোন মতে মিলে না উদ্দার।।

বড়ই দুঃখিত হয়ে থাকে নিরানন্দে।

সকলের অগোচরে একা বসে কান্দে।।

কি যে সে অমৃত ভবে হরিচাঁদ আন।

ভব-ব্যাধি যায় দুরে সে অমৃত পানে।।

একবার সে অমৃত যেবা করে পান।

আধি ব্যাধি সব তার হয় অবসান।।

অমৃত বহিয়া ফেরে মতুয়ারা সব।

ঘরে ঘরে করে ‘‘ফেরী’’ করে ‘‘হরি’’ রব।।

যাদব বিশ্বাস যিনি তালতলা ঘর।

তিনি বটে করিতেন শ্রীনাম প্রচার।।

পাতলা গ্রামেতে গেল সেই মহাশয়।

ভক্ত গৃহে প্রেমানন্দে নাম গান গায়।।

উঠিছে নামের ধ্বনি ভেদিয়া গগন।

মনে হয় কাঁপিতেছে আকাশ, পবন।।

যত দূরে যায় ধ্বনি সকলেরে টানে।

টানে টানে আনে টানে নাম যেইখানে।।

মতুয়ারা অবিরাম করিতেছে নাম।

লম্ফ ঝম্ফ করে সবে নাহিক বিশ্রাম।।

নামের মোহিনী শক্তি ধনঞ্জয়ে টানে।

ধীরে ধীরে উপনীত হইল সেখানে।।

বংশদন্ড যষ্টি করি চলে মহাশয়।

শক্তি নাই যেন সদা ঢলে পড়ে যায়।।

এই ভাবে উপনীত মতুয়া-আসরে।

বহু কষ্টে বসিলেন একা কিছু দুরে।।

নামের তরঙ্গ থামে কিছুক্ষণ পরে।

ভুমে পড়ি মতুয়ারা কাঁদাকাঁদি করে।।

সে যে কি বিরহ ব্যথা নাহি যায় বলা।

অকারণে মনপ্রাণ করে যে উতলা।।

কি যেন কি ছিল আগে এখানে তা নাই।

কোথা যাব? কি করিব? কিসে তাঁরে পাই?

ধন জন মান মনে হয় বৃথা।

শুধু ভাল লাগে তাঁরে না-পাওয়ার ব্যথা।।

ছোয়াচে রোগের মত সদা চরে ধেয়ে।

যারে ছোঁয়া তারে থো’য় পাগলা সাজায়ে।।

এসব দেখিয়া মনে ভাবে ধনঞ্জয়।

কোন গুণে মানুষের এইভাব হয়?

শুধু শুধু কেন কান্দে এই সব লোক?

কি দুঃখে কান্দিছে সবে পেয়ে কোন শোক?

শোকের কান্নার মধ্যে আছে রকমারী।

এ কান্না যে কোন কান্না বুঝিতে না পারি।।

এত কথা মনে ভাবি সেই মহাশয়।

উপস্থিত একজনে ডাক দিয়া কয়।।

‘‘বল দেখি মহাশয় এ কোন কারণ?

যার জন্যে এরা সবে কান্দিল এখন?

কেন কান্দে? কে কান্দায়? কেন্দে কিবা হয়?

সেই সব কথা কিছু শোনাও আমায়।।’’

এই কথা ধনঞ্জয় বলিল যখন।

ধীরে ধীরে বলে তাঁরে সে ব্যক্তি তখন।।

‘‘যে কথা জিজ্ঞাসা তুমি করিলে আমারে।

সকল বলিব আমি তোমার গোচরে।।

পতিতের দুঃখ দেখি পতিতের কুলে।

আসিল মানুষ এক হরি! হরি! বলে।।

Page 419 start

নমঃকুলে জন্ম নিল সফলানগরে।

ওড়াকান্দী গিয়া পরে পূর্ণ লীলা করে।।

নাম ছিল হরিচাঁদ বেহালের বেশ।

দয়া করে পতিতের দুঃখ কৈল শেষ।।

কি যে সে আনিয়াছিল কিছু বুঝি নাই।

তাঁর নামে কান্না আসে বুঝি মাত্র তাই।।

একবার তাঁর কথা করিলে স্মরণ।

অকারণে ঝরে ভাই বিশুদ্ধ নয়ন।।

নরদেহে সেইজন আজি বটে নাই।

তাঁর সব গুণ মোরা তাঁর পুত্রে পাই।।

শ্রীগুরুচরণ নাম অপরূপ কান্তি।

‘‘গুরুচাঁদ’’ বলে ডাকে ভক্তে পায় শান্তি।।

পিতাপুত্রে একসূত্রে বন্ধেছে জগত।

নাম নিলে নামগুণে পাপী হয় সৎ।।

এই যত লোক তুমি দেখেছ হেথায়।

শ্রীগুরুচাঁদের প্রেমে সকলে কান্দায়।।

সে কান্দায় তাই কান্দে কান্না হ’ল সার।

কেন্দে যে কি হবে নাহি জানি সমাচার।।

তবে যাহা দেখি চোখ তাই মাত্র বলি।

কান্দিলে কান্নার মত মুছে যায় কালী।।

আর যাহা হয় তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।

এইখানে দেখ তুমি আছে বিদ্যমান।।

অই যে সভার মধ্যে একটি মানুষ।

কীর্ত্তন করিয়া যাঁর নাহি ছিল হুষ।।

যাদব বিশ্বাস নাম বাড়ী তালতলা।

উনি বটে একজন খাঁটি ‘‘হরিবোলা’’।।

এতদিন কেন্দে কেন্দে অই মহাশয়।

যা কিছু পেয়েছে বলি কিছু পরিচয়।।

মুখের কথায় ব্যাধি সারিবারে পারে।

বহু দুষ্ট সৎ হল ওঁর পদ ধরে।।

যেইখানে মহাশয় করেন গমন।

তাঁরে দেখে কেন্দে সারা নর নারীগণ।।

এই মত শত শত আছে এই দলে।

কথায় কি কাজ দিবে মন না কহিলে।।

এক কথা বলি আমি শুন মহাশয়।

এই ভাব বাজারের সাথে তুল্য হয়।।

দূরে থেকে শোনা যায় শুধু গন্ডগোল।

মনে হয় জুটে গেছে রাজ্যের পাগল।।

কিন্তু যদি বাজারের মধ্যে কেহ যায়।

কোন দৃশ্য সেইখানে দেখিবার পায়?

সকলে কাজের কথা বলে নানাভাবে।

প্রয়োজন মত কথা বলিতেছে সবে।।

তাই বলি যদি চাও বুঝিতে এ ভাব।

লও নাম দাও ছেড়ে পূর্ব্বে স্বভাব।।

একমনে ধর দিয়ে যাদবের পায়।

যাদব বলিলে রোগ সারিবে নিশ্চয়।।

দেহের সামান্য রোগ আমি বলি নাই।

ভবরোগ যাবে সেরে বলিয়াছি তাই।।’’

এই কথা সেই ব্যক্তি যখনে বলিল।

লাঠি ফেলে ধনঞ্জয় তখনে চলিল।।

সাব্যস্ত হইল মন মোহ গেল কেটে।

পড়িলেন যাদবের চরণেতে লুটে।।

যাদব ডাকিয়া বলে ‘‘এই কোন জন?

আমার চরণে তুমি পড় কি কারণ?

ধনঞ্জয় কেন্দে বলে ‘‘তুমি মোর পিতা।

তোমার চরণে আমি রাখিলাম মাথা।।

দয়া করে রক্ষা কর ব্যাধি কর দূর।

ব্যাধির যন্ত্রণা আমি সহেছি প্রচুর।।

সাথে সাথে দুর কর ভবরোগ মোর।

বিষয়-বাসনা বিষে রয়েছি বিভোর।।’’

কান্দিয়া কান্দিয়া কথা কহে ধনঞ্জয়।

কান্না দেখি যাদবের প্রাণে দয়া হয়।।

বলে ‘‘ভয় নাই! তুমি ওঠ ধনঞ্জয়।

রোগে বিধি বলিতেছি শোন মহাশয়।।

Page 420 start

গোরোচনা মাটী দিয়ে মাখ’ নিজ গায়।

দূর না করিও তাহা যাবাৎ শুকায়।।

শুকাইয়া গেলে তাহা ধুয়ে ফেল জলে।

তিল তেল মাখ’ পরে অতি কুতুহলে।।’’

ধনঞ্জয় কেন্দে বলে ‘‘ওহে দয়াময়।

দয়া করি চল তবে আমার আলয়।।’’

যাদব বলিল ‘‘তাহা অদ্য নাহি হবে।।

ব্যাধি মুক্ত হলে তবে পরে যাওয়া যাবে।।’’

এই ভাবে ধনঞ্জয় মতুয়া হইল।

এবে শুন কোন ভাবে ঠাকুরকে নিল।।

যাদবের বিধিমতে রোগ কম হ’ল।

কিন্তু একেবারে রোগ ছেড়ে নাহি গেল।।

একদিন তালতলা গেল ধনঞ্জয়।

প্রণাম করিয়া বেল যাদবের পায়।।

‘দয়া করি ওড়াকান্দী মোর সাথে চল।

আমার ব্যাধির কথা ঠাকুরকে বল।।’’

তাহা শুনি সে যাদব তার সঙ্গে গেল।

অল্পক্ষণে ওড়াকান্দী উপস্থিত হল।।

ঠাকুরের কাছে তার দিল পরিচয়।

দয়া করি প্রভু তারে ডাক দিয়া কয়।।

‘‘এতকাল কোন লোভে বল ধনঞ্জয়।

মহা দুঃখ পেলে থেকে সংসার করায়।।’’

কেন্দে বলে ধনঞ্জয় ‘‘দয়াল আমার।

সকলি হতেছে ভবে দয়ায় তোমার।।

তব দয়া বিনে প্রভু কিছু সাধ্য নাই।

দয়া বলে ওড়াকান্দী আসিয়াছি তাই।।

বিপদ বান্ধব হল ব্যাধি রূপে আসি।

বিপদের পথ ধরে চরণেতে মিশি।।

আর কিবা ক’ব প্রভু এই মাত্র সাধ।

জনমে জনমে যেন পাই রাঙ্গা পদ।।

এই ভাবে ধনঞ্জয় কহিতেছে কথা।

দূর করে দিল প্রভু তার মনোব্যথা।।

যাদব বিশ্বাস কহে করিয়া মিনতি।

‘‘প্রবু দয়া কর আজি ধনঞ্জয় প্রতি।।

দারুণ ব্যাধির জ্বালা বহিতেছে দেহে।

ব্যথা পায় তবু তেঁহ কথা নাহি কহে।।’’

প্রভু কয় ‘‘ধনঞ্জয় রোগের কারণে।

বল দেখি গিয়াছিলে কোন কোনখানে?’’

ধনঞ্জয় বলে ‘‘প্রভু বাকী রখি নাই।

ওঝা বৈদ্য কবিরাজ দেখেছে সবাই।।

বঙ্গদেশে শ্রেষ্ঠ স্থান কলিকাতা জানি।

তথায় দেখেছে কত শাস্ত্রী শিরোমণি।।

দ্বারিক সেনের কাছে ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্রধান ডাক্তার সবে রোগ দেখায়েছি।।

কোন ফল হয় নাই শুধু অর্থ গেল।

মনোদুঃখে আছি প্রভু উপায় কি বল?’’

প্রভু কয় ‘‘যাদবের ব্যবস্থা মানিও।

সঙ্গে যাহা বলি আমি তাহাও করিও।।

নারী স্পর্শ নাহি আর করিও কখন।

শূণ্য গায়ে মৃত্তিকায় করিবে শয়ন।।

দেড় বর্ষ এই ভাবে ময়ন করিবে।

নির্দ্দোষ হইয়া ব্যাধি তাহাতে সারিবে।।’’

সেই মত কার্য্য করে’ সেই মহাশয়।

দারুণ ব্যাধির হাতে তবে মুক্ত পায়।।

ব্যাধি সেরে গেলে পরে সেই মহাজন।

প্রভুকে লইতে গৃহে করিল মনন।।

আগ্রহ যাদব তাতে করিল প্রচুর।

দয়া করি পাতলায় গেলেন ঠাকুর।।

তেরশ’ আটাশ সনে গেল একবার।

ধনঞ্জয় ইচ্ছা করে নিতে পূনর্ব্বার।।

তাহাতে ঠাকুর বলে ‘‘আর নাহি যাব।

একবার গিয়েছিত? আর কোন ভাব?’’

যাদব মল্লিক আর শ্রীযাদব ঢালী।

যাদব বিশ্বাস আদি জুটিয়া সকলি।।

Page 421 start

সবে মিলে এক সাথে করে দরবার।

‘‘দয়া করে দয়াময় চল আর বার।।

শ্রীযাদব ঢালী আর যাদব মল্লিক।

দুই জনে মনে মনে করে এক ঠিক।।

দয়া করে পাতলায় যদি প্রভু যায়।

তথা হতে নিতে তারা পারে নিজালয়।।

ভাবগ্রাহী গুরুচাঁদ ভাব বুঝে মনে।

স্বীকার করিল কথা প্রভু ততক্ষণে।।

যেই কালে এই সব কথাবার্ত্তা হল।

গোপাল বিপিন দোঁহে উপস্থিত ছিল।।

সকলেরে ডাকি প্রভু বলিল তখন।

‘‘পাতলা আসিও সবে শুন ভক্তগন।।

যেই ভাবে ধনঞ্জয় করিয়াছে মন।

মনে হয় রাজসূয় যজ্ঞ আয়োজন।।’’

ভক্তগণে চলি গেল যার যার দেশে।

কয় দিন পরে সেই ধনঞ্জয় আসে।।

যাদব মল্লিক আর শ্রীযাদব ঢালী।

ওড়াকান্দী উপস্থিত হয়ে কুতুহলী।।

প্রভু কয় ‘‘ভাল হ’ল এক সঙ্গে চল।

সবে মিলে পথে পথে কৃষ্ণকথা চল।।’’

যাত্রা করিলেন প্রভু পারিষদ সহ।

আদিত্য সঙ্গেতে তাঁর থাকে অহরহ।।

আদিত্যের পরিচয় সংক্ষেপেতে বলি।

ঘৃতকান্দী জন্ম তাঁর ভক্তি বলে বলী।।

ওড়াকান্দী শ্রীগোপাল করে যাতায়াত।

ঘৃতকান্দী গ্রাম দিয়া আছে তাঁর পথ।।

এই ঘৃতকান্দীবাসী সবে একদিন।

ঠাকুরে না চিনে ছিল অজ্ঞানে মলিন।।

ইহার তুলনা দিব আলোকের সাথে।

দূরেতে আলোর রেখা জ্বলে ভালমতে।।

প্রদীপের তলে দেখ অন্ধকার থাকে।

তলে থেকে কোন ভাবে প্রদীপেরে দেখে?

দ্বিতীয় আলোকে যদি কাছে আন’ তার।

দূর হয় প্রদীপের তলের আন্ধার।।

তল-বাসী সেইকালে দেখে প্রদীপেরে।

ইহা ভিন্ন প্রদীপেরে দেখে কি প্রকারে?

দূর হতে দূরে চলে ঠাকুরের খেলা।

দলে দলে আসে লোকে নামে প্রেমে ভোলা।।

তাহাদের ভাব দেখি ঘৃতকান্দীবাসী।

ক্রমে ক্রমে সেই দলে গেল সব মিশি।।

বিশেষ গোপাল সাধু মহিমা অপার।

নর নারী যায় ভুলে ভাব দেখে তাঁর।।

তিনি আসি ঘৃতকান্দী করিলেন থানা।

তাঁরে দেখে মাতে সব এই আছে জানা।।

শ্রীমধুসূদন নামে বিশ্বাস মশায়।

পরম ভকত তিনি সাধু অতিশয়।।

সাথী তাঁর মজুমদার শ্রীকুঞ্জবিহারী।

এক সঙ্গে যায় আসে ঠাকুরের বাড়ী।।

গুরুচাঁদে বাসে ভাল যায় তাঁর কাছে।

একেবারে মতো নয় মতো ভাবে আছে।।

একদিন গুরুচাঁদ ডাক দিয়া কয়।

‘‘শোন মধু! শোন কুঞ্জ’’ যাহা মনে হয়।।

লতা পাতা বৃক্ষাদিতে গুণ আছে বটে।

চর্ম্ম চক্ষে দেখা তাহা নাহি যায় মোটে।।

স্বাদ মিলে কিছু কিছু হয় পরিচয়।

কিন্তু কতগুণ আছে বোঝা নাহি যায়।।

বৈদ্য যারা দেখ তারা সব গুণ জানে।

ঔষধি বানায় কত বহুৎ বিধানে।।

‘‘মৃত সঞ্জীবনী সুধা’’ করে তাই দিয়ে।

শত শত ব্যাধি দেয় সহজে সারিয়ে।।

বৃক্ষের কি গুণ আছে বৈদ্য তাহা জানে।

বৃক্ষতলে সবে মর্ম্ম বুঝিবে কেমনে?

ভবব্যাধি নিরবধি করিতেছে ক্ষয়।

কেমনে পাইবে রক্ষা উপায় কোথায়?

Page 422 start

ব্যাধি-নাশী বৃক্ষ বটে আছে এই দেশে।

শুধু কি দেখিলে তারে রোগ শোক নাশে?

তাতে যে যে গুণ আছে কর ব্যবহার।

সঞ্জীবনী সুধা কিছু করগে আহার।।

সন্ধান বলিয়া আমি দিব তোমাদেরে।

বেঁচে যাবে ফল পাবে সে-মানুষে ধরে।।

এই যে গোপাল সাধু লহ্মীখালী বাস।

আমি বলি গোপালেরে কারণে বিশ্বাস।।

ভবব্যাধি সারিবারে যে ঔষধ লাগে।

গোপাল রেখেছে তাহা গাঢ় অনুরাগে।।

আমি বলি এক সাথে দোঁহে চলি যাও।

মানুষ ধরিয়া দোঁহে মহাশান্তি পাও।।’’

সেই হতে দুই জন গোপালে ধরিল।

গোপালে ধরিয়া গুরুচাঁদকে চিনিল।।

সুধন্য বাইন ধন্য অতি মহাশয়।

বারুনীতে মতুয়ারা সেই বাড়ী খায়।।

গোপালচাঁদের অতি প্রিয় মহাজন।

তাঁর গৃহে শ্রীগোপাল যায় ঘন ঘন।।

সরল সহজ সাধু রাধানাথ নাম।

উপাধি মজুমদার অতি গুণ ধাম।।

কুমুদ মনোরঞ্জন দুটি পুত্র তাঁর।

ভ্রাতৃপ্রেমে বব্ধ তারা আছে পরস্পর।।

কুমুদের কীর্ত্তি যত বলা হবে পাছে।

গোপালচাঁদের কাছে সে কুমুদ আছে।।

এই ঘৃতকান্দী গ্রামে আদিত্য জন্মিল।

ভাগ্যগুণে গুরুচাঁদের চরণ বন্দিল।।

কৈশোর বয়সে তারে ধরে মহাজ্বরে।

কোনরূপে সেই ব্যাধি সারিতে না পারে।।

গোপালচাঁদের কীর্ত্তি হল জানাজানি।

তাঁর কাছে আদিত্যের এনে ফেলে টানি।।

পিতামাতা তার পরে দাবী ছেড়ে দিল।

তাহা শুনে শ্রীগোপাল আদিত্যে কহিল।।

মরিবি ত আদিত্য রে! একেবারে মর।

বাবা গুরুচাঁদে গিয়ে ওড়াকান্দী ধর।।

সেই আজ্ঞা অনুসারে আদিত্য তখন।

ওড়াকান্দী গিয়ে ধরে প্রভুর চরণ।।

পরম দয়াল প্রভু রাখিলেন তারে।

সেই হতে সে আদিত্য তাঁর সেবা করে।।

প্রভুর সঙ্গেতে এই আদিত্য চলিল।

মহাজ্ঞানী যজ্ঞেশ্বর সঙ্গেতে থাকিল।।

মাধবেন্দ্র বাবুরাম অশ্বিনী গোঁসাই।

যষ্ঠীবাবু সনাতন কেদার, কানাই।।

বালা শ্রীবিপিনচন্দ্র কৃষ্ণপুর বাসী।

রাজকুমারের সঙ্গে উপনীত আসি।।

খুসী মন বিচরণ উঠিল নৌকায়।

যাদব বিশ্বাস মিশি সেই সঙ্গে যায়।।

পাতলা আসিয়া সবে উপনীত হল।

দলে দলে ভক্ত আসি চরণ বন্দিল।।

গোপাল বিপিন আসে আর নিবারণ।

তাহাদের সঙ্গে ভক্ত এল অগণন।।

বাজসূয় যজ্ঞ প্রায় হল আয়োজন।

দ্রব্য আনে ধনঞ্জয় যত তার মন।।

ত্রিশ মন চাউলের অন্ন রাঁধা হল।

প্রেমানন্দে মতুয়ারা ভোজন করিল।।

নামগান কীর্ত্তনাদি হল বিধিমতে।

অশ্বিনী করিল গান প্রভুর স্বাক্ষাতে।।

পরম নৈষ্ঠিক সাধু শ্রীযাদব ঢালী।

ধনঞ্জয়ে পরামর্শ দিয়াছেন বলি।।

তামা ও প্রভুর জন্যে বহু মূল্যবান।

দুই জোড়া বস্ত্র আনি করিলেন দান।।

ষাট টাকা দাম তার ধূতি ও চাদর।

পরিধান করে প্রভু মানিয়া আদর।।

প্রধান মতুয়া যত উপস্থিত ছিল।

জনে জনে বস্ত্র আনি ধনঞ্জয় দিল।।

Page 423 start

প্রভু বলে ‘‘ধনঞ্জয়! সবে যদি পায়।

আমার আদিত্য যেন বাদ নাহি যায়।।’’

এইভাবে মহাযঞ্জ হল সমাপন।

গোস্বামী যাদব তবে ভাবে মনে মন।।

লোহারগাতীর পথে প্রভুকে লইব।

পদস্পর্শে মোর দেশ ধন্য করি লব।।

যাদব মল্লিকে ডাকি মনোকথা কয়।

এক সঙ্গে দুই জনে করিলেন সায়।।

যাদবের পত্নী পুত্র সবে এসেছিল।

এক সঙ্গে সবে মিলে ঠাকুরে কহিল।।

‘‘দয়া করে চল বাবা আমাদের বাড়ী।

লোহারগাতীর পথে চল দয়া করি।।’’

প্রভু কয় ‘‘এই কার্য্যে নাহি মোর হাত।

আমি আসিয়াছি হেথা যাদবের সাথ।।

আমারে যেখানে নিবে যাদব বিশ্বাস।

সেইখানে যাব আমি মনে করি আশ।।’’

প্রভু যদি এই কথা বলিলেন হেসে।

উভয় যাদব গেল যাদবের পাশে।।

যাদব মল্লিক ধরে যাদবের পায়।

বলে ‘‘দয়া কর তুমি বিশ্বাস মশায়।।

তুমি যদি বল প্রভু যাবে এই পথে।

আমাদের বাঞ্ছাপূর্ণ হইবে তাহাতে।।’’

যাদব বিশ্বাস তাতে বেশী সুখী নয়।

দো-মনা ভাবের ভাবে তাই কতা কয়।।

তিনি কন ‘‘প্রভু যদি যেতে ইচ্ছা করে।

আমি কি রাখিতে কভু পারি তাঁরে ধরে।।

বিশ্বাস না কর চল তাঁর কাছে যাই।

আমার যা বলার আমি কব তাঁর ঠাঁই।।

এই ভাবে সবে গেল ঠাকুরের কাছে।

যাদব বিশ্বাস ধীরে কথা বলিতেছে।।

বলে তিনি গুণমনি করি নিবেদন।

নিজালয় যাওয়া ভাবি উচিত এখন।।

প্রভু কয় ‘সুনিশ্চিয় যাদব সুজন।

কোন পথে কোন কালে করিব গমন?’

প্রভুর প্রাণের ইচ্ছা লোহারগাতী যায়।

‘কোন পথে যাব’ তাই যাদবেরে কয়।।

প্রকারে যাদব বলে দুই-মনা ভাবে।

‘‘ঢালী মহাশয় নাকি আপনারে লবে।।

সেই পথে গেলে কিছু হবে ঘোরাঘুরি।

বাড়ী যেতে হতে পারে কিছুদিন দেরী।।’’

প্রভু কয় ‘‘তবে থাক গিয়ে কার্য্য নাই।

এই খান হতে সবে চল বাড়ী যাই।।’’

যাদবে ডাকিয়া বলে ‘শুনহে যাদব।

এই কার্য্যে তুমি যেন নাহি কর ক্ষোভ।।

পরে কোন দিনে যাব লোহারগাতী বাড়ী।

এই বারে বাবা তুমি মোরে দেও ছাড়ি।।’

যাদব মল্লিক তবে বলে করজোড়ে।

‘বহু দ্রব্য এ যাদব কিনিয়াছে ঘরে।।

আপনি না গেলে তার কি উপায় হবে।

সগোষ্ঠী যাদব তাতে বড় ব্যথা পাবে?’’

প্রভু কয় সব দ্রব্য ওড়াকান্দী লও।

মা-ঠাকুরাণীকে নিয়ে শীঘ্র বাড়ী যাও।।

এইবারে কোনখানে আমি নাহি যাব।

অদ্যকার রাত্রি মাত্র এইখানে রব।।

নিরুপায় সে যাদব মরমে মরিয়া।

পত্নী পুত্রগণে গৃহে দিল পাঠাইয়া।।

বিদেশ হইতে যত ভক্ত এসছিল।

সকলেরে ডাকি প্রভু বিদায় করিল।।

পুনরায় যাদবেরে ডাকিয়া নিকটে।

বলে ‘হে যাদব! দুঃখ করিও না মোটে।।

দুইজনে এক সঙ্গে নিয়ে এক নাও।

শীঘ্র করি যার যার বাড়ী চলে যাও।।

ভাবের ভাবুক প্রভু মহাভাবময়।

কোন ভাবে কিবা করে কেবা বুঝে হায়!

Page 424 start

প্রণাম করিয়া তবে যাদব চলিল।

এবে শুন কি ঘটনা তারপরে হল।।

কিভাবে কি করে প্রভু বুঝিতে না পারে।

বুঝে সুঝে কাজ কর বল হরি হরি।।

---০---