Page 540

অসহযোগ আন্দোলনের পরিণতি (গোল টেবিল বৈঠক)

অসহযোগের পক্ষে কংগ্রেসের যুদ্ধ।

সৈনিক জুটিল তার নরনারী শুদ্ধ।।

মহাত্মা গান্ধীর বাণী শুন দিয়া মন।

তিনি বলে “হতে পারে স্বরাজ অর্জন।।

আমি যাহা বলি তাহা সবে যদি শোনে।

স্বরাজ আনিতে আমি পারি একদিনে।।”

ক্রমে ক্রমে আন্দোলন বাড়িয়া চলিল।

রাজার আইনে বহু জেলে ধরে নিল।।

“আইন অমান্য” নীতি কংগ্রেস ধরিল।

“মানি না তোমার নীতি” রাজারে কহিল।।

পুলিশের অত্যাচার তা’তে হ’ল ভারী।

বহু লোক হতাহত হ’ল ফলে তারি।।

“লবণ আইন ভঙ্গ” করিলেন গান্ধী।

অভিযান করিলেন শহর সে ডাণ্ডী।।

বড়লাট আইরুন ছিল মহাশয়।

গান্ধীজীর সাথে তার কথাবার্তা হয়।।

তেজ বাহাদুর সপ্রু আর জয়কার।

দুইজনে চেষ্টা বহু করে মীমাংসার।।

স্থির হ’ল বিলাতেতে “গোল টেবিলেতে”।

হইবে মীমাংসা সভা মিশি এক সাথে।।

আদি কাণ্ডে কংগ্রেসের যত নেতৃগণ।

গোল টেবিলের ক্ষেত্রে করে না গমন।।

কংগ্রেসের দাবী পূর্ণ যখনে হইল।

গোল টেবিলেতে তারা তবে যোগ দিল।।

পূর্ব পূর্ব বারে যত “গোল টেবিল” হয়।

কংগ্রেসের যোগ ছাড়া সব বৃথা যায়।।

তেরশ ছত্রিশ সালে রাজার আজ্ঞায়।

কংগ্রেসের দাবী কিছু পূর্ণ করা হয়।।

তা’তে রাজী মহাত্মাজী সাঙ্গোপাঙ্গ লয়ে।

“গোল টেবিলের” স্থলে চলিলেন ধেয়ে।।

ভারতের অনুন্নত সমাজ যাহারা।

তিন জন প্রতিনিধি পাইলেন তারা।।

ডক্টর আম্বেদকর বোম্বায়েতে বাস।

কর্মগুণে মহাশয় লভিয়াছে যশ।।

জীবনের আদি ভাগে বহু কষ্ট পায়।

এবে মহাশক্তিশালী বটে বিধির কৃপায়।।

ভারতের বড়লাট শাসন ব্যাপারে।

মন্ত্রণা সভায় সভ্য মনোনীত করে।।

“এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল” ইংরেজিতে কয়।

ডক্টর আম্বেদকর সদস্য তথায়।।

এম.সি. রাজা বলি অন্য একজন।

মাদ্রাজ হইতে চলে শ্রীনিবাসন।।

মুসলমান পক্ষ হ’তে চলে বহুজন।

মহম্মদ আলী জিন্নাহ বোম্বেতে ভবন।।

গজনবী, আগাখান, ফজলুল হক।

আর কত গেল সাথে ছিল যার সখ।।

কংগ্রেসের মধ্যে গেল মহাশয় গান্ধী।

ইতিপূর্বে জেলে তিনি ছিল বটে বন্ধী।।

পণ্ডিত মালব্য চলে বারাণসি হ’তে।

নারী পক্ষে সরোজিনী চলে সাথে সাথে।।

এইভাবে বহুজন চলিল বিলাতে।

“গোল টেবিলের” ধারে বসে শান্ত চিতে।।

প্রধানমন্ত্রীর নাম সবে ভালো জানে।

র‍্যামজে ম্যাকডোনাল্ড ইংলণ্ডেতে ভণে।।

Page 541 start

ভারত শাসন নীতি হ’ল আলোচনা।

সকল শুনিয়া পরে করে বিবেচনা।।

বাদ প্রতিবাদ বহু সেই স্থলে হয়।

যার যার স্বার্থ মত সেই কথা কয়।।

যৌথ নির্বাচন দাবী করিল কংগ্রেস।

সংখ্যাল্পে মুসলমান তা’তে করে দ্বেষ।।

পৃথক ভোটের দাবী তাহারা করিল।

সেই ভাবে ভোট প্রথা প্রবর্তিত হ’ল।।

পূর্বে যত অনুন্নত ছিল সম্প্রদায়।

তপশীলী বলি তারা এবে আখ্যা পায়।।

আইন সভার মধ্যে তা’দের লাগিয়া।

বিভিন্ন আসন দিল নির্দিষ্ট করিয়া।।

তাহা দেখি মহাত্মাজী উপবাস করে।

ইচ্ছা করে দেহত্যাগ করিবার তরে।।

“উন্নত কি অনুন্নত সবে মোরা হিন্দু।

ইহাদের মধ্যে ভেদ নাহি এক বিন্দু।।

দুর্বুদ্ধি করিয়া ভাগ ইংরাজে করিল।

আজ হ’তে হিন্দু বুঝি ধ্বংস হ’য়ে গেল।।”

এত ভাবি উপবাস করে মহাশয়।

তাহা দেখি হিন্দু সবে জুটিল পুণায়।।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরখাস্ত যায়।

বলেন প্রধানমন্ত্রী “আপত্তি না রয়।।

সবে মিলে এক হ’য়ে যদি কিছু কও।

বাধা কিছু নাহি যাহা চাও তাই পাও।।”

ভারতে যতেক হিন্দু মিশিল পুণায়।

আপোষে আসন সংখ্যা ঠিক করি লয়।

এক সঙ্গে ভোট হ’বে হ’ল নিরূপণ।

ভোট দিতে ভাগ নাহি হ’বে হিন্দুগণ।।

বঙ্গদেশে দশ ঠিক করিল ইংরাজ।

পুনরায় তিরিশ দিল হিন্দুর সমাজ।।

সমস্ত ভারতবর্ষে তপশীলী যত।

আসনের সংখ্যা বেশী পেল এত মত।।

মহাত্মা গান্ধীর কাছে আসন ব্যাপারে।

তপশীলী সবে ঋণী ভারত মাঝারে।।

এবে শোন কিবা দেয় ভারত আইনে।

উনিশ শ’ পঁয়ত্রিশ অব্দে রাজার বিধানে।।

গোল টেবিলেতে যাহা হ’ল নিরূপণ।

পার্লামেন্টে গেল তাহা পাশের কারণ।।

বহু স্থানে বহু ভাবে হ’ল সংশোধন।

পরিশেষে “শ্বেতপত্র” করিল মুদ্রণ।।

“ভারত আইন” নামে হ’ল পরিচয়।

যার বলে অদ্যাবধি শাসন চালায়।।

দুই পরিষদ হ’ল বড় প্রদেশেতে।

মনোনয়ন বর্জন হ’ল নিম্ন খাতে।।

উচ্চ পরিষদে সব পূর্বের আকার।

নির্বাচন মনোনয়ন বিভিন্ন প্রকার।।

নব প্রবর্তিত হ’ল একটি নিয়ম।

কোনক্রমে নাহি হয় তার ব্যতিক্রম।।

প্রতি তিন বর্ষ পরে উচ্চ পরিষদে।

এক তৃতীয়াংশ সভ্য ত্যাগ করে পদে।।

নিম্ন পরিষদে আয়ু পঞ্চবর্ষ জানি।

নির্বাচন প্রথা মতে সভ্য আনে টানি।।

লাটের সদস্য বলি কোন সভ্য নাই।

“রক্ষিত” “হস্তান্তরিত” ভাগ নাহি পাই।।

মন্ত্রীগণে চালাইবে সমস্ত বিভাগ।

লাটের ইচ্ছায় তারা করে পদত্যাগ।।

আর এক ভাবে বটে পদত্যাগ হয়।

অনাস্থা প্রস্তাবে যদি বেশী ভোট রয়।।

আপাততঃ দেখা যায় দেশবাসী সবে।

শাসকের ভার যেন পে’ল সর্বভাগে।।

কিন্তু পরীক্ষায় তাহা প্রমাণ না হয়।

ইংরাজের হাতে শক্তি পুরাপুরি রয়।।

কিবা পরিষদ কিবা যত মন্ত্রীগণ।

লাট বাধ্য নহে কভু কাহার সদন।।

Page 542 start

শাসনের পক্ষে যদি তার মনে হয়।

অনায়াসে শাসনের ভার হাতে লয়।।

কিংবা কোন আইনের প্রয়োজন হয়।

পাশ করে নিতে পারে লাট মহোদয়।।

কিংবা পারিষদ যদি কিছু পাশ করে।

ইচ্ছা হ’লে লাট তাহা বাদ দিতে পারে।।

এমন বিস্তৃত শক্তি আছে বটে লেখা।

প্রায় কালে ব্যবহার নাহি যায় দেখা।।

প্রায়শঃ মন্ত্রীরা যাহা করে নিরূপণ।

লাট মহোদয় তাহা করে সমর্থন।।

প্রাদেশিক শাসনের এই পরিচয়।

কেন্দ্রীয় শাসন পন্থা বলি এ সময়।।

প্রাদেশিক স্ব-শাসনে স্বাধীনতা পা’বে।

কেন্দ্রীয় নীতির তলে সকলেই র’বে।।

প্রত্যেক প্রদেশ হ’তে বিভিন্ন সংখ্যায়।

কেন্দ্রীয় পরিষদে সভ্য নির্বাচিত হয়।।

ভারতের বুকে যত সামন্ত নৃপতি।

অথবা করদ বন্ধু করিছে বসতি।।

কেন্দ্রীয় শাসন চক্রে আসিবারে পারে।

কা’রে নাহি নে’য়া হবে শুধু জোর করে।।

“ফেডারেশন” নামে তার হ’বে পরিচয়।

আজিও ভারতে তাহা প্রচারিত নয়।।

“শ্বেতপত্র” দেখি যত কংগ্রেসের নেতা।

তারা বলে “ইংরাজেরা রাখে নাই কথা।।

ফাঁকি দিয়ে চোখে ধূলা দিতে চায় আজ।

দেখা যাক কোন ভাবে করে কোন কাজ।।

মিলিত হও রে ভাই কংগ্রেসি সকল।

যত পার সভ্য পদ কররে দখল।।”

এগার প্রদেশে যবে হ’ল নির্বাচন।

সাত দেশে কংগ্রেসিরা হ’ল অগণন।।

দাবী নিয়ে লাট সঙ্গে হ’ল প্রতিবাদ।

সপ্ত দেশে “ভারত আইন” হ’ল বাদ।।

অসহযোগের ফলে হ’ল আন্দোলন।

তার ফলে হ’ল নীতি “ভারত শাসন”।।

সংক্ষেপে লিখেছি আমি সেই পরিচয়।

মূলসূত্রে গ্রন্থ বার্তা বলি এ সময়।।

---০---