Page 238

চন্ডাল গালি মোক্ষণ ও নমঃশূদ্র জাতি উদ্ধার

বল্লালের কোপে পড়ে, বাজ্য রাজধানী ছেড়ে,

বৌদ্ধ-ধর্ম্মী বঙ্গীয় ব্রাহ্মণ।।

অদৃষ্টের পরিহাসে বনে কি কান্তারে এসে

করিলেন আশ্রয় গ্রহণ।।

হিন্দু-ধর্ম্মী ব্রাহ্মণেরা বৌদ্ধ ধর্ম্ম করি সারা

হিন্দু ধর্ম্ম প্রতিষ্ঠা করিল।

Page 239 start

যারা নাহি বাধ্য হয় ব্রাহ্মণের মন্ত্রণায়

হীন-আখ্যা কত জন পেল।।

তারা বলে ব্যবস্থায় ইহা যুক্তি-মুক্ত নয়।

শাস্ত্র-মতে এই আখ্যা ভুল।

রাজধানী ছেড়ে দূরে, যাহারা বসতি করে

চন্ডাল বলিয়া জান স্থুল।।

ব্রাহ্মণের ব্যবস্থায় কেবা ভুল ধরে হায়!

তাই সবে রহে চুপ করি।

‘চন্ডাল’ বলিয়া তাই যত নমঃশূদ্র ভাই

আখ্যা পেয়ে মরিছে গুমরি।।

তারা বলে ‘একি দায়’ কি ভাবে ‘চন্ডাল’ কয়

এত শুধু হিংসা-করে-বলা।

বিধানে মেশেনা যাহা সেই আখ্যা দিল তাহা!

তাই সবে রহে চুপ করি।

‘চন্ডাল’ বলিয়া তাই যত নমঃশূদ্র ভাই

আখ্যা পেয়ে মরিছে গুমরি।।

তারা বলে ‘একি দায়’ কি ভাবে ‘চন্ডাল’ কয়

এত শুধু হিংসা-করে-বলা।

বিধানে মেশেনা যাহা সেই আখ্যা দিল আহা!

সব কিছু ব্রাহ্মণেরি ছলা।।

বলতে বলুক হীন এ ভাবে যাবে না দিন

কাল-চক্র অবশ্য ঘুরিবে।

সেই দিনে ব্রাহ্মণেরা মেলিয়া নয়ন তারা,

হীন ঠাঁই ক্ষমা চেয়ে লবে।।”

চন্ডালের পরিচয় দিব আমি এ সময়

ব্রাহ্মণের শাস্ত্রে যাহা লেখে।

প্রমাণ হইবে তাতে শুধু হিংসাহিংসি মতে

নমঃশূদ্রে নির্য্যাতনে রাখে।।

“গ্রামের বাহিসে বাস নাহি করে চাষ বাস

মৃত দেহ শ্মশানে পোড়ায়।

মৃত হতে বস্ত্র লয় তাই দিয়ে ঢাকে কায়

বর্ত্তমানে ‘ডোম’ বলি কায়।।

“চন্ডাল-শ্বপচানান্তু বহির্গ্রামাৎ প্রতিশয়ঃঅপপাত্রাশ্চ কর্ত্তব্যাঃ ধনমেষাং শ্বগর্দ্দভম।।বাসাংসি মৃত চেলানি ভিন্ন ভান্ডেষু ভোজনম।।কার্যায়সমলঙ্কারঃ পরিব্রাজ্যা চ নিত্যশঃ।।অন্নেমেষাং পরাধীনং দেয়ং স্যাদ্ভিন্নভাজনে।রাত্রৌন বিচরেয়ুস্তে গ্রামেষু নগরেষু চ।।দিবা চরেষুঃ কার্য্যার্থং চিহ্নিতা রাজ শাসনৈঃ।অবান্ধবং শবঞ্চৈব নির্হরেয়ুরিতি রাজ শাসনৈঃ।অবান্ধবং শবঞ্চৈব নির্হরেয়ুরিতি স্থিতিঃ।।বধ্যাংশ্চ হন্যুঃ সততং যথাশাস্ত্রং নুপাজ্ঞয়া।বধ্যাবাসাংসি গৃহ্নীয়ুঃ শয্যাশ্চ্য ভরণানি চা।” মনু

‘কুমারী-সম্ভবস্তেকঃ সাগ্রোত্রায়াং দ্বিতীয়কঃ।ব্রাহ্মণ্যাং শূদ্র জনিতশ্চন্ডাল স্ত্রিবিধঃ স্মৃতঃ।।-----ব্যসবাংহিতা

আরেক প্রমাণ বলি বল কোন পথে চলি।

নানা মুতি বলে নানা মতে।

আকাশেতে যেই রাহু মাথা আছে নেই বাহু

পূর্ণ চন্দ্র খায় নাকি তাতে।।

চন্ডাল বলিয়া তারে শাস্ত্র মধ্যে ব্যাখ্যা করে

অন্য এক আছেও চন্ডাল।

‘ক্রোধ না চন্ডাল’ বলে গালি দেয় পলে পলে

ক্রোধে নাহি মানে কালাকাল।।

এ তিন চন্ডাল সাথে যোগ নাই কোন মতে

বঙ্গবাসী নমঃশূদ্র গণে।

নমঃশূদ্র জাতি-শ্রেষ্ঠ শৌর্য্যে বীর্য্যে সুগরিষ্ঠ

তাই হিংসা করে হীন জনে।।

আর কতা বলি ধীরে রাহু বলে ত্রিসংসারে

জীব কিংবা শিব কিছু নয়।

যবে পৃথিবীর ছায়া ঢাকে পূর্ণচন্দ্র-কায়া

রাহু বলি সবে তারে কয়।।

বিজ্ঞানে প্রমাণ পাই রাহু বলে কিছু নাই

শেষ কথা বলি দৃঢ় স্বরে।

জীব মাত্রে আছে ক্রোধ, ক্রোধে আছে শোধ-বোধ

চন্ডাল কি আছে বিশ্ব ভরে?

Page 240 start

গ্রামের বাহিরে বাস নাহি করে চাসবাস

এই যদি চন্ডাল লক্ষণ।

কৃষি কর্ম্মে সদা রত নমঃশূদ্র আছে যত

গ্রাম ছাড়া থাকে না কখন।।

তবুও চন্ডাল তারে বলে শুধু হিংসা করে

হিংসা ফলে ফলে বিষফল।

হিংসা-পাপ দিনে দিনে বঙ্গবাসী হিন্দুগণে

ক্রমে ক্রমে দিল রবাতল।।

বিধর্ম্মীর পদতলে পিষ্ঠ হচ্ছে তিলে তিলে

ইষ্ট কিছু দেখা নাহি যায়।

যদি নাহি ভাঙ্গে ভুল আর কিরে পাবে কূল

হিন্দু ধ্বংস হইবে নিশ্চয়।”

সে সব কাহিনী ছেড়ে বলি গ্রন্থ সূত্র ধরে

কোন ভাবে এ কলঙ্ক গেল?

কে মুছিল এ কলঙ্ক সে ইতিহাসের অঙ্ক

কার গুণে প্রকাশিত হল।

লাট-দরবার কালে ম্যাজিস্ট্রেট মীডে বলে

নমঃশূদ্র জাতি নাহি চিনি।

গুরুচাঁদ ব্যথা পায় তাই ফিরে নিজালয়

মনঃশূদ্র জাতি নাহি চিনি।

গুরুচাঁদ ব্যথা পায় তাই ফিরে নিজালয়

যুক্তি করে নিজে গুণমণি।।

মীডে ডাকি বলে ধীরে ‘বল মীড কি প্রকারে

এ কলঙ্ক ঘুচাইব আমি?

মোর মনে এই হয় ঘুচাইতে এই দায়

ইচ্ছা বুঝি কবে অন্তর্যামী।।”

মীড কহে ‘বড় কর্তা তব মুখে শুন বার্তা

মনে দুঃখ পাই অতিশয়।

চন্ডাল কাহাকে বলে কি দোষ চন্ডাল হলে

সব কথা বলহে আমায়।।

প্রভু কয় ‘শোন মীড তুমি রাজ পুরোহিত

কিন্তু যদি কোন দুষ্ট খল।

মুচি বলে আখ্যা দেয় ছলে বলে অর্থ নেয়।

তুমি তারে কিবা দেও ফল?

আমাদের দশা তাই বিনা দোষে গালি খাই

বল-হীন বসে থাকি চুপ।

রাজ্য যদি দয়া করে দূর করে দিতে পারে

ব্যথা ভার কলঙ্কের রূপ।।

এত বলি ব্যাখা করি তখনে বুঝাল তাঁরে

চন্ডালের খাটি ব্যাখ্যা যাহা।

এ অধ্যায় আদি ভাবে যাহা লেখা হল আগে

গুরুচাঁদ বলিলেন তাহা।।

কথা শুনি মীড কয় তাই যদি মহাশয়

গণনার পত্র আন কিনি।

দেখি তাতে কিবা লেখে কলমের ঘূর্নীপাকে

কত কথা আনিয়াছে টানি।।

প্রভু বলে মূল্য কত? দিব টাকা চাহ যত

অবিলম্বে আন সেই বই।

সংশোধনে লাগে যাহা আমি দিয়া দিব তাহা

বই এনে তুমি কর সই।।”

মীড বলে মহাশয় কার্য এত সোজা নয়

অগ্রভাবে টাকা দিতে হবে।

মূল্য পেলে দিবে বই এই ঠিক কথা কই

তার মধ্যে সব লেখা পাবে।।

গেট নামে অফিসার সেন্সার কমিশনার

তাঁই ঠাঁই দরখস্ত যাবে।

যু্ক্তি মত কথা হলে সাহেব কাটিবে ভেুলে

তোমাদের কলঙ্ক না রবে।।

পয়ঁত্রিশ টাকা চাই তাহা হলে গ্রন্থ পাই

শীঘ্র করি টাকা দাও মোরে।

মোর মনে এই হয় যীশুজীর করুণায়

সিদ্ধকাম হব অতঃপরে।।

প্রভুজীর মনে হয় একা যদি এ সময়

এই টাকা আমি করি দান।

কেহ টেন নাহি পাবে কোন দিন কোন ভাবে

চন্ডালত্ব হল অবসান।।

Page 241 start

স্বাজাতি প্রধান গণে সুধাইব জনে জনে

এই কার্যে কে কে অগ্রসর?

তারা যদি নাহি দেয় স্বজাতির এই দায়

একা আমি করিব উদ্ধার।

ইচ্ছাময় ইচ্ছা করে আর কি থাকিতে পারে

তালতলা বাসী একজন।

প্রভু পদে পড়ি কয় ‘দয়া কর’ দয়াময়।

পদতলে এই নিবেদন।।

মাতৃ-শ্রাদ্ধ বাসরেতে স্বজাতির আসরেতে

আপনারে নিতে মোর হবে।”

প্রভু বলে ‘যেতে পারি যদি মনে নিষ্ঠা করি

টাকা মোরে দিতে পার সবে।।

স্বজাতি উদ্ধার হবে ধরাতলে কীর্তি রবে

চন্ডালত্ব হইবে মোচন।

এই কাজে দিলে টাকা চিরদিন রবে লেখা

তাঁন নাম গাবে সর্ব্ব জন।”

প্রভু-মুখে বাণী শুনি বলে প্রভু গুণমনি।

দয়া করি চল একবার।

যাহা চাও দিব টাকা এই কথা নহে ফাঁকা

তাই আমি করিনু স্বীকার।।”

---০---