Page 220

গোপালপুর দাঙ্গা ও নমঃশূদ্রের বিপদ

গোপালপুরেতে হ’ল দুরন্ত ঘটনা।

দাঙ্গা হাঙ্গামাতে লোক হারায় চেতনা।।

মুসলমানের সাথে নমঃশূদ্র ভাই।

করিল বিষম দাঙ্গা তুল্য দিতে নাই।।

সেই গ্রামে অত্যাচারী কিছু মুসলমান।

অকারণে নমঃশূদ্রে করে অপমান।।

‘যাক জান থাক মান’ করে অঙ্গীকার।

প্রতিকারে নমঃশূদ্র বদ্ধ পরিকর।।

এইমতে দুই দলে হ’ল মারামারি।

খুন হ’ল লোক মারা গেল জন চারি।।

আগে ভাগে মুসলিমে দরখাস্ত করে।

সংবাদ জানায় সব পুলিশ গোচরে।।

Page 221 start

পুলিশ সংবাদ লিখে জানায় উপরে।

তদন্তে পাঠায় লাট কমিশনাররে।।

উচ্চ কৰ্মচারী যত কায়স্থ ব্রাহ্মণ।

মনে করে নমঃশূদ্রে করিব দমন।।

“পিটুনী পুলিশ” সেথা বসাইতে চায়।

সংবাদ শুনিয়া সবে পে’ল মহা ভয়।।

বিপদে বান্ধব কেবা গুরুচাঁদ বিনে ?

সবে মিলে উপস্থিত শ্ৰীগুরু সদনে।।

বলে কৰ্ত্তা! শুন বাৰ্ত্তা করি নিবেদন।

এইবারে যাবে মারা নমঃশূদ্রগণ।।

‘পিটুনী পুলিশ’ শুনি অতি ভয়ঙ্কর।

তার হাতে কোনজনে পাবেনা উদ্ধার।।

রাজ-সরকারে এই গেছে সমাচার।

নমঃশূদ্র দাঙ্গাবাজ করে অত্যাচার।।

তুমি বিনে এ বিপদে বন্ধু কেহ নাই।

রক্ষা কর গুরুচাঁদ চরণে দোহাই।।”

প্রভু বলে “রক্ষা করি কিসের কারণে ?

বাঁচিয়া থাকিয়া কিবা করিবে জীবনে ?

তোমাদের ব্যবহার সব আমি জানি।

কাঁদাকাটি যাহা কর কিছু নাহি মানি।।

কিবা কাজ হবে তোরা বাঁচিয়া থাকিলে।

কিবা কাজ করেছিস তোরা এতকালে।।

শয়ন ভোজন আর পুত্রকন্যা-জন্ম।

তোদের জীবনে মাত্র দেখি এই ধৰ্ম।।

না মানিলি গুরুবিষ্ণু না হ’লি বিদ্বান।

তোদের জীবনে বাপু! কেন এত টান।।

ইতর পশুরা আছে বেঁচে যেই ভাবে।

তোরাও তাদের মত কাজে কি স্বভাবে।।

এমন জীবনে বল বেঁচে কিবা ফল?

আকারে মানুষ বটে পশু একদল।।

আমি বাপু বাঁচাবাঁচি কিছু নাহি বুঝি।

যার যার বাড়ী চলে যাও সোজাসুজি।।

তিরস্কার করে প্রভু যত তাঁর মন।

অধোমুখে শুনে বসে নমঃশদ্রগণ।।

প্রভুর উদ্দেশ্য বুঝে হেন কেহ নাই।

চুপ করে অধোমুখে বসে থাকে তাই।।

কতক্ষণ তিরস্কার প্রভুজী করিল।

কিন্তু তবু স্থান ছেড়ে কেহ না নড়িল।।

বারে বারে তিরস্কার করি কতক্ষণ।

পুনরায় রেগে বলে শ্রীহরি-নন্দন।।

কিবা কই কারে কই কেবা বোঝে কথা।

এমন বিষম দায়ে ঠেকায়েছে পিতা।।

বোকা জা’ত দিবা রাত করে অপকৰ্ম।

জ্ঞান কাণ্ড কিছু নাই কিসে পাবে ধৰ্ম ?

আজ বুঝি কেন বাবা বলেছিল মোরে।

“বড়ই ঠকেছি আমি এসে এই ঘরে।।”

এই ভাবে রাগারগি করে দয়াময়।

কেবা বোঝো কোনভাবে কোন কথা কয়।।

আপন সন্তান যদি কভু কৰ্ম দোষে।

বিপদে পড়িয়া পরে নিজ গৃহে আসে।।

তার দরশনে পিতা যেই ভাব করে।

কখন গৰ্জ্জনে কাটে’ কভু তিরস্কারে।।

সন্তানের বিপদেতে চিত্ত নহে স্থির।

সৰ্ব্বদায় করে যথা ভিতর বাহির।।

“কি করি কি করি’ মনে সদা এই ভাব।

গুরুচাঁদে দেখা গেল তেমনি স্বভাব।।

জ্ঞানী যজ্ঞেশ্বর তাহা বুঝিতে পারিল।

সাহসে করিয়া ভর সম্মুখে দাঁড়াল।।

করজোড় করি বলে প্রভুর সদন।

“এক কথা কৰ্ত্তা আমি করি নিবেদন।।

আপনার পিতা ছিলেন স্বয়ং শ্রীহরি।

আপনার ভাব মোরা বুঝিতে কি পারি?

Page 222 start

সত্যকথা এই ঘরে কোনই প্রকারে।

শ্রীহরির মত রত্ন আসিতে না পারে।।

হরি যে আসিল হেথা সে শুধু দয়ায়।

নৈলে কি তেমন রত্ন নমঃশূদ্রে পায় ?

আপন গরজে হরি নিল এই ভার।

ইচ্ছা ছিল নমঃশূদ্রে করিতে উদ্ধার।।

সেই কার্যভার পরে দিয়ে আপনাকে।

গিয়াছে দয়াল হরি আপনার লোকে।।

নিজে সেধে ঋণী হ’ল হরি দয়াময়।

তাহা নৈলে নমঃশূদ্রে কিসে তারে পায় ?

সাধা-ঋণ তাই দীন নমঃশূদ্র পেল।

তব দায় পিতৃদায় তা ছাড়া কি বল ?

মার’ কাট যাহা ইচছা করিবারে পার।

নমঃ তোমা নাহি ছাড়ে তুমি কিসে ছাড়?

দয়া করে এ জাতির ভার নে’ছ হাতে।.

নিজ গুণে নমঃশূদ্রে হইবে তরা’তে।।

এত যদি ভক্তবর যজ্ঞেশ্বর কয়।

বাহ্য-ক্রোধে কহে প্ৰভু অন্তরে সদয়।।

“ভক্ত-পুটুলীয়া” তুমি জানি যজ্ঞেশ্বর।

কার্যকালে ‘বটং নাস্তি’ কথার সাগর।।

বিশেষ গোমস্তা যারা বহু কথা জানে।

কথায় তোমার সঙ্গে পারিব কেমনে ?

পিতৃদায় বলে ব্যাখ্যা করিলে বহুৎ।

সেই ভরসায় এরা রয়েছে মজুত।।

আপন গরজে যেবা ভার টেনে নেয়।

তারে মান্য করলে কি দোষ কিছু হয় ?

একজনে দেবে শুধু অন্য সবে পাবে।

কতকাল বল দেখি চলে এইভাবে ?

শাস্ত্রজ্ঞান তোমার’ত কম কিছু নাই।

কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে বলে মনে আছে তাই।।

দে’য়া না থাকিলে কেহ নাহি পায় দান।

দান পেতে হ’লে আগে কর কিছু দান।।

কাপড়ের “কাণি’ দান দ্রৌপদীর ছিল।

দানফলে বস্ত্ররূপে কৃষকে পাইল।।

“দাঙ্গাবাজ নমঃশূদ্র” লিখেছে পুলিশ।

আচ্ছা শোন আমি করি উচিত শালিশ।।

কায়স্থ ব্রাহ্মণ আদি বল কোন গুণে ?

“ভদ্রলোক” আখ্যা পায় কিসের কারণে ?

‘বিদ্বান তাহারা সবে এই জান মূল।

‘বিদ্বান হইলে ভদ্র’ কথা নহে ভুল।।

নমঃশূদ্র চেষ্টা করি হওগে বিদ্বান।

দাঙ্গাবাজ গালি যাবে পাইবে সম্মান।।

এমন পরম_রত্ন_বিদ্যা মহাধন।

তার লাগি চেষ্টা এরা করে কি কখন?

ওরা যদি মুক্তি চায় যা’ বলি করুক।

কতটাকা স্কুলে দেবে আমাকে বলুক।।

ওড়াকান্দী হাইস্কুল করিবারে চাই।

ওরা কত চাঁদা দেবে বলুক সবাই।।

বিদ্যা তরে যেই জন করে কিছু দান।

নিশ্চয় তাহার বংশে হইবে বিদ্বান।।

বিদ্যা তরে দান দিলে পাপ কেটে যাবে।

বলিলাম এ বিপদ কিছু নাহি হবে।।

আবার বলিনু আমি নিশ্চয় করিয়া।

দান কর এ বিপদ যাইবে মুছিয়া।।

দৃঢ় করি বলে যদি প্রভু দয়াময়।

জোড় হস্তে সব লোক উঠিয়া দাঁড়ায়।।

সবে বলে “দয়াময় যে আজ্ঞা তোমার।

আমরা করিব দান প্রতিজ্ঞা সবার।।

অন্ধ মোরা এতকাল কিছু বুঝি নাই।

তোমার দয়ায় প্রভু অকুলে কুল পাই।।

ভাব দেখি প্ৰভু তবে সন্তুষ্ট হইল।

বলে “তোরা বল হরি বিপদ কাটিল।।”

অমনি সকলে বলে “বল হরি বল।”

সকলের চক্ষে এল প্রেম-অশ্ৰুজল।।

Page 223 start

প্রভূ বলে “পুনরায় বসহ সকলে।

কর সবে সেই কার্য যাহা দেই বলে।।

শুনিলাম আসিতেছে সে কমিশনার।

যথাযোগ্য অভ্যর্থনা করিব তাঁহার।।

মীডের সঙ্গেতে আমি পরামর্শ করি।

সংবাদ পাঠা’লে সবে এসো তাড়াতাড়ি।।”

এত বলি তা’ সবারে বিদায় করিল।

মীডেরে ডাকিতে প্ৰভু লোক পাঠাইল।।

শ্রুত মাত্র দ্রুত গতি মীড জী আসিল।

প্রভুজী সকল কথা তাঁহারে বলিল।।

প্রভু বলে এ বিপদে রক্ষা করা চাই।

মীড বলে “আমি বলি কোন ভয় নাই।।

আদ্যই লিখিব পত্র ম্যাজিষ্ট্রেট কাছে।

আমাকে জানাবে কবে দিন ঠিক আছে।।

আসিলে কমিশনার তাঁর কাছে যাব।

নিশ্চয় তাঁহারে আমি এ বাড়ী আনিব।।

তোমাকে দেখিলে তাঁর দ্বন্দ্ব ঘুচে যাবে।

এ বিপদে নমঃশূদ্র উদ্ধার পাইবে।।

মীডর সঙ্গেতে এই পরামর্শ করি।

নমঃশূদ্রগণে বলে ‘এস তাড়াতাড়ি’।।

ডাকা মাত্ৰ সবে আসি উপনীত হ’ল।

প্রভুর চরণে সবে প্রণাম করিল।।

প্রভু বলে “এক কাজ কর সবে মিলে।

বহু শুভ হবে জেন এই কৰ্ম ফলে।।

ওড়াকান্দী আসিবেন সে কমিশনার।

তাঁর প্রতি কর সবে যোগ্য ব্যবহার।।

তারাইল হ’তে কর পথের সূচনা।

দুই ধারে কলা গাছ করহ রচনা।।

তারাইল হ’তে পথ আন ওড়াকান্দী।

গাছে গাছে দেবদারু পত্র রাখ বান্ধি’।।

মাঝে মাঝে পুষ্পমাল্য তাহাতে দোলাও।

শুভ বাক্য লিখি তাহা গাছেতে টানাও।।

হিন্দু-পল্লী মধ্যে যবে সাহেব আসিবে।

নারীদলে দলে দলে হুলুধ্বনি দিবে।।

বাকী যাহা এই খানে আমি তা’ করিব।

তোমাদের লাগি আমি সাহেবে ধরিব।।”

মৃতে যদি সঞ্জীবনী সুধা পায় বুকে।

মূকে যদি অকস্মাৎ বাণী পায় মুখে।।

পুত্রহারা পুত্র যদি কোলে পায় ফিরে।

মরু যদি ডুবে যায় সাগরের নীরে।।

অমাবস্যা রাতে যদি পূর্ণচন্দ্ৰ পায়।

স্বপ্ন-ভয়াতুর জনে আঁখি মেলি চায়।।

বিরহিণী সতী পায় পতি দরশন।

দুঃসহ নিদাঘে হয় বারি বরিষণ।।

এই সবে যত সুখ নরের হৃদয়।

প্রভুর বচনে সুখ ততোধিক হয়।।

আনন্দে ছুটিয়া চলে যত লোক জন।

আজ্ঞা মতে কার্য করে হয়ে এক মন।।

তারাইল ওড়াকান্দী দূর পরিমাণ।

তিন মাইলের বেশী করি অনুমান।।

দলে দলে লোক জুটি সাজসজ্জা করে।

প্রভুর ইচ্ছায় কার্য তিন দিনে সারে।।

---০---

* Punitive Police