Page 484

“অসাধ্য প্রভুর লীলা নরে বোঝা দায়”

অসাধ্য প্রভুর লীলা নরে বোঝা দায়।

গোস্বামী বিপিন মোরে সেই কথা কয়।।

একবার গোস্বামীর কন্ঠের ভিতর।

বিষাক্ত স্ফোটক হল অতি খরতর।।

জল বিন্দু গ্রাসিবারে শক্তি নাহি ধরে।

বাক্যলাপ করে কষ্টে ফিস ফিস স্বরে।।

মনে মনে ভাবিলেন বিপিন গোঁসাই।

‘‘এ বিপদে গুরুচাঁদ বিনা বন্ধু নাই।।

এই ভাবে বাড়ী বসে কোন কার্য্য নাই।

মরি বাঁচি আজ আমি ওড়াকান্দী যাই।।’’

কয় জনে সাথে করে গোঁসাই চলিল।

সন্ধ্যার কিঞ্চিৎ পরে ওড়াকান্দী গেল।।

গদী ঘরে আসনেতে প্রভু বসিয়াছে।

ইতি উতি কেহ কেহ কথা কহিতেছে।।

হেনকালে শ্রীবিপিন হইল উদয়।।

দন্ডবৎ করে গিয়া প্রভুজীর পায়।।

অন্য কোন কথা প্রভু বলিল না তারে।

শুধু বলে ‘‘পদ ধুয়ে এসো শীঘ্র করে।।

অন্য কোন কথা প্রতি নাহি দিব কাণ।

সারারাত্রি হেথা বসে কর তুমি গান।।’’

প্রভুর বচন শুনি গোস্বামীর ভয়।

মনে ভাবে কোন ভাবে বাক্য রক্ষা হায়।।

কথা বলি হেন সাধ্য কন্ঠে মোর নাই।

কোন ভাবে সারা রাত্রি আমি গান গাই।।

পুনঃ ভাবে এই চিন্তা মন্দ অতিশয়।

ব্রাহ্মান্ডে প্রভুর কিছু অজানা কি রয়?

কি জানি কি ইচ্ছা প্রভু করিয়াছে মনে।

যাহা বলে প্রভু আমি করিব এখনে।।

এত ভাবি শীঘ্রগতি পদ ধুয়ে এল।

প্রভুর সম্মুখে বসে কান্দিতে লাগিল।।

Page 485 start

নীরবে ঝরিছে জল মুখে কথা নাই।

মনে মনে ডেকে বলে ‘‘জগত গোঁসাই।।

তোমার ইচ্ছা না হলে ধুলি নাহি নড়ে।।

তোমার ইচ্ছায় বারি মেঘ হতে পড়ে।।

তোমার ইচ্ছায় জানি কোন বাধা নাই।

আমা হতে ইচ্ছা নষ্ট হবে ভাবি তাই।।

ইচ্ছাময় নিজ গুণে ইচ্ছা পূর্ণ কর।

নিরুপায় বিপিনকে দয়া করে ধর।।

মনে মনে বলি সব ধরিলেন তান।

কন্ঠ হতে এল যেন সুরের উজান।।

বিস্মিত হৃদয়ে সাধু গান গেয়ে যায়।

দুই চোখে শত ধারা ধরাতে গড়ায়।।

এক গান শেষ করি যবে ক্ষান্ত দেয়।

‘‘গাও, গাও আরো গাও’’ বলে দয়াময়।।

প্রেমানন্দে এই ভাবে শর্ব্বরী পোহাল।

ঊষান কিরণে যেন ধরা জুড়াইল।।

প্রভু বলে এবে ক্ষান্ত কর তবে গান।

ঊষাকালে কর দিয়ে প্রভাতের স্নান।।’’

আজ্ঞা পেয়ে শ্রীপদেতে দন্ডবৎ করি।

উঠিল বিপিন সাধু বলে হরি হরি।।

পুস্করিনী মধ্যে নাম জল মুখে দেয়।

‘কোথায় স্ফোটক তার বেদনা কোথায়?

নীরোগ, নির্দ্দোষ কন্ঠ ক্ষত চিহ্ন নাই।

তাই দেখে কেন্দে বসে বিপিন গোঁসাই।।

এই ভাবে সে তারিখ পেল পরিচয়।

অবোধ্য প্রভুর লীলা নরে বোঝা দায়।।

অর দুই বার সাধু বিপদে পড়িল।

গুরুচাঁদ কৃপা গুণে প্রাণ রক্ষা হল।।

একবার পড়িলেন কলেরা কবলে।

দুদ্দর্শা ঘটিল যবে প্রভু বাক্য ফেলে।।

কলেরা রোগীর কাছে যেতে ছিল মানা।

করুনায় গোস্বামীর পরাণে শোনেনা।।

দয়া করে গেল যেই রোগীর নিকটে।

ফাঁক দেখে সে-কলেরা আক্রমিল বটে।।

যখনে সংবাদ গেল প্রভুজীর ঠাঁই।।

গালাগালি করে প্রভু যাহা ইচ্ছা তাই।।

তিরস্কার শান্তি দিয়ে দয়া করে কয়।

‘যাক চলে বিপিনের নাহি কোন ভয়।’

সেই দিনে কলেরার প্রকোপ কমিল।

সপ্তাহ মধ্যেতে রোগ আরোগ্য হইল।।

এই ভাবে অন্য রোগে সাধু আরবার।

দিনে দিনে হইলেন অস্থিচর্ম্মসার।।

মনে ভাবে ‘‘এই বুঝি ঘনিয়াছে শেষ।

হাঁটিতে শকতি নাই নাহি বল লেশ।।

অতি কষ্টে ওড়াকান্দী হইল উদয়।

প্রভু বলে ‘‘যাও চলে নাহি কোন ভয়।।

অমোঘ প্রভুর বাক্য সবে মানা করে।

দিনে দিনে গোস্বামীর ব্যাধি গেল সেরে।।

এসব দেখিয়া বলে বিপিন গোঁসাই।

প্রভুর লীলার তত্ত্ব বুঝি শক্তি নাই।।

অসাধ্য লীলার কথা বলে পুনরায়।

শেষবারে প্রভু যবে লহ্মীখালী যায়।।

ফিরিবার কালে এল সে মোল্লার কুলে।

নৌকা পড়ে বালুপূর্ণ ক্ষুদ্র একখালে।।

জোয়ারের জলে যবে জলবৃদ্ধি হয়।

ছোট বড় সব নৌকা সে সময়ে যায়।।

অল্প জলে নৌকা তলে বালু ধরে এটে।

সে সময়ে নৌকা চলা সাধ্য নাই মোটে।।

খালতলে যে সময়ে জল নাহি রয়।

প্রভুর তরুণী সেথা এল সে সময়।।

সবে বলে ‘‘কি উপায়? তরী চলে কিসে?

জল নাই, থাক, সবে সেই খানে বসে।।

জোয়ার আসিল তবে তরী খুলে দিব।

যত চেষ্টা করি নাক ফল নাহি পাব।।

Page 486 start

প্রভুজী শুনিয়া বলে ‘‘ওর অলসেরা।

‘‘পারিব না’ বলে কাজ ছেড়ে দিলি তোরা?

পার কিনা পার তার চেষ্টা নাহি কর।

বন্দুকের নাম নাই গুলি খেয়ে মর।।

ধন নৌকা, যত বোকা, আমি সাথে ধরি।

দেখি মোরা তরী নিতে পারি কিনা পারি।।’’

প্রবুর বচন শনি সঙ্গী সাথী যারা।

হাতে হাতে ধরে তরী টান দিল তারা।।

এদিকে প্রভুজী কিন্তু নৌকার ভিতর।

‘‘গুরা’’ ‘পরে বাঁধায়েছে পদযুগ তাঁরা।।

জোর দিয়া বলে প্রভু টান দেরে জোরে।

বলা মাত্র তরী কিন্তু চলে ধীরে ধীরে।।

প্রভু কয় ‘‘দেরে টান, টান দেরে জোরে।।’’

বলা মাত্র তরী কিন্তু চলে ধীরে ধীরে।।

প্রভু কয় ‘‘দেরে টান, টান দেরে জোরে।।’’

বলিতে বলিতে তরী চলে বায়ু ভরে।।

অর্দ্ধ ক্রোশ দীর্ঘ হবে সেই ছোট খাল।

তাহা ছেড়ে থাকে তরী যেথা বেশী জল।।

আশ্চর্য্য মানিয়া ভক্তে কথা নাহি কয়।

প্রেমানন্দে সকলের চক্ষে ধারা বয়।।

এই মত কত লীলা করে দয়াময়।

প্রভুর অসাধ্য লীলা নরে বোঝা দায়।।

---০---