Page 549

বনে থাকে মুনি ঋষি খাদ্য কোথা পায়?

বনে থাকে মুনি ঋষি খাদ্য কোথা পায়?

ঘৃতকান্দিবাসী কুঞ্জ ভাবে সর্বদায়।।

একদিন মহাপ্রভু গুরুচাঁদ যিনি।

কুঞ্জকে ডাকিয়া কথা বলিলেন তিনি।।

“বনে থাকে মুনি ঋষি তারা কিবা খায়?

আমরা পরীক্ষা তাঁর করিব নিশ্চয়।।

অদ্য রাত্রে ওড়াকান্দি তুমি কর দেরী।

কল্য প্রাতে দেখি কোন কার্য করে হরি।।”

বিস্মিত হইল কুঞ্জ প্রভুর বচনে।

মনে ভাবে “প্রভু ইহা পেল কোনখানে।।

আপনার মনে মনে ভাবিয়াছি আমি।

ভাবনা জেনেছে সব প্রভু অন্তর্যামী।।”

প্রেমে পুলকিত কুঞ্জ ওড়াকান্দি রয়।

অতি ভোরে প্রভু তারে ডাক দিয়া কয়।।

“ওঠ, ওঠ, কুঞ্জ তুমি কত নিদ্রা যাও।

নীরবে চলিয়া এসো কারে নাহি কও।।”

চারিদিকে ঘোর কুব্জটিকা ঘেরা রয়।

কোন কিছু দেখিবারে নাহিক উপায়।।

শীঘ্রগতি চলে প্রভু কুঞ্জ পিছে ধায়।

সুদূর বিলের মধ্যে হইল উদয়।।

রাশি রাশি ঘাস দিয়ে “আল” ঢাকা রয়।

তাহার পিছনে বসে প্রভু দয়াময়।।

গ্রাম হ’তে এতদূরে এত নিরালায়।

ভুলক্রমে সেই পথে কেহ নাহি যায়।।

সেই খানে বসি প্রভু কৃষ্ণ-কথা কয়।

একা কুঞ্জ সাথী তার আর কেহ নয়।।

কৃষ্ণ-কথা বলে প্রভু কুঞ্জ বসে শোনে।

ঠিক যেন দুইজনে মুনি তপোবনে।।

হেনকালে এক ব্যক্তি নিয়ে এল ফল।

প্রণাম করিয়া বসে চক্ষে ঝরে জল।।

তরমুজ বেল আদি এক ঝাঁকা লয়ে।

অন্য এক ব্যক্তি এসে রহিল বসিয়ে।।

পরপর এইভাবে এল কতজন।

চিড়া দই আনে কেহ ঘৃতাদি মাখন।।

অন্য অন্য মিষ্ট দ্রব্য আসিয়া জুটিল।

সমস্ত দেখিয়া কুঞ্জ ভাবিতে লাগিল।।

এত দ্রব্য কেবা খাবে মনে ভাবি তাই।

কেবা কয় কে যে আনে বুঝিয়া না পাই।।

ক্রোধ ভরে প্রভু তারে বলিছে ডাকিয়া।

“কোন দেশে যাস তুই আমারে ফেলিয়া?

“কৃষ্ণ-কথা” শোন বসে কি চিন্তা করিস।

পেয়ে ধন হারা হ’য়ে এজন্য মরিস।।”

Page 550 start

হেনকালে কলাপাতা নিয়ে দুইজন।

উপস্থিত হ’ল আসি প্রভুর সদন।।

ক্রোধে প্রভু বলে তারে “তোর রক্ষা নাই।

কেন পাতা দিলি হেথা বল শীঘ্র তাই।।”

তারা কেন্দে বলে বাবা কি খেলা খেলাও।

এ জগতে কত খেলা খেলিয়া বেড়াও।।

দুই ভাই প্রাতে মোরা চষিতেছি হাল।

হেনকালে লোক তুমি পাঠালে দয়াল।।

সেই বলে কলা পাতা চেয়েছে ঠাকুর।

বিল মধ্যে আছ বসে নহে বেশিদূর।।

আজ্ঞা মতে পাতা নিয়ে আসিলাম হেথা।

এই ত বলেছি বাবা যাহা সত্য কথা।।

বেথুড়ী নিবাসী বুড়ী ডাকে কর্ণের মা।

তারে দিয়ে পাঠাইল দেবী সত্যভামা।।

“প্রভুর প্রভাতী খাদ্য তুমি নিয়ে যাও।

মুড়ি আর জল নিয়ে গদী ঘরে দাও।।”

বুড়ী এসে দেখে প্রভু নহে সেই খানে।

ফিরে গিয়ে বলে তাই মাতার সদনে।।

মাতা বলে “ঠিক ঠিক মোর ভুল হ’ল।

প্রভু গেছে বিল মধ্যে মনেতে পড়িল।।

কলসি পুরিয়া জল সেথা নিয়ে যাও।

আর কার কাছে এই কথা নাহি কও।।”

কথা মত সেই বুড়ী জল নিয়ে যায়।

প্রভুর নিকটে গিয়ে হইল উদয়।।

মহাপ্রভু বলে তবে সে কুঞ্জের ঠাই।

“এখনে কি কথা কিছু বুঝেছ গোঁসাই।।

বনে থেকে মুনি ঋষি কিবা কাজ করে?

এক মনে তারা সবে ডাকে সে ঈশ্বরে।।

যে করে হরির চিন্তা তার যত ভার।

নিজ স্কন্ধে লয় হরি জগত ঈশ্বর।।

বনে থাকে মুনি ঋষি হরি চিন্তা করে।

আহার যোগায় হরি বিবিধ প্রকারে।।

তার ‘পরে দিলে ভার চিন্তা নাহি আর।

নিষ্ঠা ভ্রী দেও ভার হরির উপর।।”

প্রভুর বচন শুনি কান্দিছে সকলে।

প্রেমানন্দে কুঞ্জ তবে হরি! হরি! বলে।।

ধ্বনি শুনি নরনারী বহু জন গেল।

ঠাকুরে দেখিয়া সবে আশ্চর্য মানিল।।

সবে মিলে করে পরে আনন্দ উৎসব।

দলে দলে নরনারী করে কলরব।।

মহোৎসব অন্তে প্রভু গৃহেতে ফিরিল।

কুঞ্জের মনের ধাঁধাঁ দূর হয়ে গেল।।

কত ভাবে ভক্তে শিক্ষা গুরুচাঁদ দেয়।

অপূর্ব অভূত লীলা নরে বোঝা দায়।।

শ্রীগুরুচাঁদের লীলা নাশে ভব ভয়।

মহানন্দ কর্ম মন্দ বোঝে নারে হায়!

---০---