সরলার সরল কথা
সরলা ! যাকে সহজ সরল মেয়ে হিসাবে আবিষ্কার করেছিলাম জীবনের দ্বিতীয় কর্মস্থলে । বলছিলাম স্টাফ ইন্ডিয়ার কথা। আমি সেখানে সামান্য একজন টিম লিডার হিসাবে কর্মরত ছিলাম। হঠাৎ একদিন আমার নিজের এলাকার একটি মেয়েযোগ দিল স্টাফ ইন্ডিয়ায়। যদিও আগে থেকে আমার নিজের এলাকার অনেকে সেখানে কর্মরত ছিল কিন্তু এ মেয়েটি ছিল তাদের সবার চেয়ে ব্যাতিক্রম। একটু যেন অন্যরকম। প্রায় সময়ই গালে হাত দিয়ে বসে থাকতো। কি যেন ভাবতো।তেমন একটা কথা বলতো না সরলা। কোন কিছু জিঙ্গেস করলে চমকে উঠে তুতলামি করে টুকটাক উত্তর দিত। মুখে হাসি লেগেই থাকতো। ওর নিজের ভেতর নিজেই বন্দী থাকতো। চশমা পরতো সরলা। অদ্ভুত সেই চশমার ফ্রেমের ভিতর তারছোট মুখটা সত্যিই অসম্বভ মায়াবী লাগতো। ওর গালে নাকের পাশে ছোট একটা বসন্তের দাগ ছিল। ঠোট দুটো প্রায় সময়ই লাল থাকতো। মাথাটা ওর শরীরের তুলনায় একটু ছোট ছিল। যখন সে মাথা থেকে কাপড় সরাতো তখন তাকে একদমছোট মেয়েদের মত লাগতো। আরেকটা জিনিস ওর বিশেষ আকষর্ণের ছিল। হ্যাঁ সেটা ছিল সরলার পা। এত সুন্দর পা আমার জীবনের সেরা দেখা। হাইট এবং ওয়েইট সবকিছু মিলিয়ে পারফেক্ট ছিল সরলা।
সানিময় দিনগুলি
সানি তখন আমার টিমে। বিকালের শিফটে কাজ করতো। ছেলেটার পুরো নাম মনে নাই। অনেক লম্বা এই হিন্দু ছেলের প্রতি মুসলিম মেয়ে আমাদের সরলা কিঞ্চিত দূর্বল ছিল। প্রায় সময়ই তাদের অফিসের ব্যালকনিতে একসাথে আবিষ্কার করাযেত। লোকে কানাঘুসা করতো। অসম সম্পর্ক হিন্দু মুসলিম প্রেম নিয়ে আমিও ভাবতাম। সানির ডাকে সরলা বেশ রেসপন্স করতো। সরলার শিফট সকালে হওয়ায় পড়ন্ত বিকালগুলো তাদের মুখর কাটতো। একদিন সানির অফার লেটার চলেআসে নিউজল্যান্ডের কোন এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সরলার সরল প্রেমের অপমৃত্যু সেখানেই ঘটে।
রায়হান নামা
সানি চলে যাওয়ার পর সরলার একাকিত্ব দেখে এগিয়ে আসেন রায়হান ভাই। রায়হান ভাই ! অফিসের আমার সবচেয়ে কাছের কলিগ। যদিও উনার বাড়ি সিলেটে কিন্তু তিনি বড়লেখা সিটিজেনশীপ পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। সরলাও কমযায়না। নিজের সহজ সরল ছবিগুলো রায়হান ভাইয়ের কাছে দিতে দ্বিধা বোধ করেনা। এখানেও অসম প্রেম আবিষ্কার করলাম। এগারো জন ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ের লিষ্টে রায়হান ভাইয়ের কিউ যে অনেক লম্বা। সরলাকে শিখিয়ে দিলামবলতে ওর নিজের বিয়ে ঠিক হবার কথা। হিরোশিমায় আঘাত হানলো পরমানু বোমা। সমাপ্ত হল রায়হান নামা।
গুগলের সাথে প্রেম
তৌহিদের অফিসিয়াল নাম ছিল এলেন। সরলার বেশ পরে ও জয়েন করে স্টাফ ইন্ডিয়ায়। ছেলেটা বেশ অদ্ভুত ছিল। মানুষকে হাসানোর বেশ ভাল একটা গুন ছিল তার মাঝে। আমাদের সরলার মনে ধরে যায় সেটাই। তৌহিদ সরলাকে বেশকিছু ছদ্ম নামে ডাকতো। ব্যাটারী, গুগল তার মধ্যে ছিল অন্যতম। সেই সময় আমাদের সরলা মাঝেমধ্যে জিন্দাবাজার গেলে গুগল নাম ধরে ডাকার গায়েবী আওয়াজ শুনতে পেতেন। একদিন সরলার নানীর জন্য একটা মোবাইল সেট কেনারপ্রয়োজন হল। নিজের বিশ্বস্ত মানুষ তৌহিদ কে নিয়ে নগরীর করিমউল্লাহ মার্কেট থেকে সেট কিনলেন। শুনা যায় সেদিন নাকি তিনি তৌহিদকে জীবনের প্রথমবারের মতো ট্রিট দিয়েছিলেন। রাতভর চলতো হোয়াটসঅ্যাপে তাদের তুমুল চ্যাট।অনেক সময় ভোর ৪/৫টায় একসাথে দু’জনকে হোয়াটসঅ্যাপে অনলাইনে পাওয়া যেত। তাদের সেই একসাথে অনলাইনে থাকার রেকর্ড অনেকে নাকি স্কীনশর্ট নিয়ে রাখতো। এর মধ্যে সরলার চাকুরী হয়ে যায় গ্রামে। স্টাফ ইন্ডিয়াকে বিদায়জানায় সে। আহত পাখির মতো তৌহিদটা মনমরা হয়ে পড়ে থাকে। অবশেষে সেও একদিন চলে যায় চাকচিক্যময় আরেক নগরীতে।
স্টাফ ইন্ডিয়াতে জয়েন করার সময় আমরা যে সরলাকে আবিষ্কার করেছিলাম বিদায় বেলা সেই সরলাকে আর পাওয়া গেলনা। সহজ সরল মানুষটা জটিল হয়ে যাওয়াটা অনেকের মন ভেঙ্গে দিল। তারপরও সবাই চোখের জলে সরলাকে বিদায়দিল। কারো কারো সেই চোখের জল আরো অনেক গভীরে গড়ালো। সরলা সরলই থেকে গেল।