গর্ভবতী নারীর এ টু জেড
পৃথিবীতে মানুষের বংশ বিস্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিয়ের পর সবারই আকাংখা থাকে মা-বাবা হবার। তবে সঠিক জ্ঞান না থাকা
এবং ডাক্তাদের ব্যাবসায়িক মনমানসিকতায় অনেক সময় অনেকেরই বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হতে হয়। মিস ক্যারিজ বা গর্ভপাতের ঘটনা তো এখন অহরহই। তাছাড়া নানান মুনির নানান মত। কোনটা যে সঠিক আর কোনটা ভুল সেটা নির্ণয় করা দূরুহ। সবকিছু মাথায় রেখে এই লেখার অবতারণা। বলে রাখা ভাল আমি কোন ডাক্তার নই। আর এই লেখাটি কোন প্রেসক্রিপশনও নয়। কিছু নিরাপদ টিপস আর সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশি বিদেশী বিভিন্ন ডাক্তারদের পরামর্শ এখানে বর্ণিত হয়েছে।
গর্ভধারণের আগের ৩ মাস
গর্ভধারণের আগের ৩টি মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। কেননা মেয়েদের তথা হবু মায়েদের এই সময়ে কিছুটা শারীরিক প্রস্তুতির দরকার হয়। তখন ফলিক এসিড আর জিংক এই দুটো খাওয়াটা জরুরী। তাছাড়া যাদের শরীরে বড় ধরনের কোন সমস্যা আছে এই যেমন প্রেসার, ডায়বেটিক, রক্তশুন্যতা, কৃমি, গ্যাসের সমস্যা বা অনান্য রোগ তাদের অবশ্যই সেই রোগের জন্য প্রথমেই ভাল কোন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি আপনি এটি না করেন তবে থার্ড ট্রাইমেষ্টারে এসে এর ফল ভোগ করতে হবে। তখন আপনি এই সমস্যাগুলোর জন্য ওষুধ খেতে পারবেননা। ফলে সমস্যা প্রকোট আকার ধারন করে বাধ্য হয়ে সি সেকশন বা সিজারে যেতে হবে। শুরুর দিকে ডাক্তারের ৫০০ টাকার বিল তখন সি সেকশনে গিয়ে ৫০০০০ টাকা হবে। তাই অবশ্যই এবং অবশ্যই মায়েদের কোন শারিরিক সমস্যা থাকলে গর্ভধারনের আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। বিশেষ করে কৃমির জন্য ট্যাবলেট খাওয়াবেন। কেননা বেশির ভাগ মায়ের রক্তশুন্যতার জন্য কৃমি দায়ী থাকে।
ফলিক এসিড: এটি এক ধরনের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। গর্ভধারনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে এটা খেতে হবে কারন বাচ্চার জন্মগত সমস্যা দূর করার জন্য এই অত্যাবশকিয়। তাছাড়া রক্ত সল্পতা প্রতিরোধ করে ফলিক এসিড। IMO এর মতে, গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
জিংক: WHO এর মতে, গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস অন্তত ১১ মিলিগ্রাম, দ্বিতীয় ৩ মাস ১৪ মিলিগ্রাম ও শেষের ৩ মাস অন্তত ২০ মিলিগ্রাম করে জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। জিংক শরীরের কার্যক্ষমতা সক্রিয় রাখে এবং টিস্যু ও কোষ গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এমনকি গর্ভস্থ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বেড়ে ওঠায় জিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কি খাবেন: বুঝতেই পারছেন আপনার শরীরের জন্য ফলিক এসিড আর জিংক দরকারী। সুতরাং নরমাল খাবারের পাশাপাশি ফলিক এসিড আর জিংক আছে এমন সব খাবার আপনাকে খেতে হবে। যেমন- শাকসবজি, সীমের বিচি, মটরশুঁটি, ডিম, কলা, কমলা, দুধ (সিদ্ধ করা) খাবেন একটু বেশি বেশি। প্রতিদিন লেবু দিয়ে এক গ্লাস সরবত বানিয়ে খাবেন। তাছাড়া পানি পান করবেন বেশি করে।
কি খাবেননা: যেহেতু আপনি এখনো গর্ভধারণ করেননি তাই আপনার জন্য বাধ্যতামূলক কোন কিছু নয়। সবকিছুই আপনি খেতে পারবেন।
#pregnancy #pregnant #ma #baba #sontant #gorvoboti #gorbovoti #গর্ভবতী #গর্ভাবস্থায়কিখাবেন
কমন সমস্যা: এই সময় আসলে কোন সমস্যা হয়না। যেহেতু আপনি এখনো গর্ভধারনই করেননি তাই সমস্যা হওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা।
#ট্রাইমেষ্টার #ফলিকএসিড #জিংক #আয়রন #ভিটামিনডি #নরমালডেলিভারি #পানিভাঙ্গা
কি কিনবেন: অবশ্যই রিকোমেন্ড করি দুইটা জিনিস আগে থেকেই বাড়িতে কিনে রাখবেন। একটা প্রেসার মাপার মেশিন আর একটা ওজন মাপার মেশিন অবশ্যই জরুরী। শুরুতে না কিনতে পারলেও অন্তত থার্ড ট্রাইমেষ্টারের আগে কিনে নিবেন। এই মেশিন দুটোর দাম ৫০০০ টাকার মধ্যে হবে। কারো বাহিরে আত্মিয় স্বজন থাকলে মেশিনগুলো বাহির থেকে আনিয়ে নিবেন। দেশ থেকে কিনলে বাজারে Omron এর প্রেসার মেশিনটা ভাল। ডিজিটালটা কিনবেন। আর ওজন মাপার জন্য জার্মানির মেশিনগুলো ভাল।
রক্তের গ্রুপ নির্ণয়: শুরু থেকেই হবু মায়ের রক্তের গ্রুপটি জেনে নিন। আর সেই অনুযায়ী অগ্রিম বন্ধু, আত্মিয়-স্বজনেরও রক্তের গ্রুপ জেনে নিতে ভুলবেননা।
বাথরুমে সতর্কতা: আরেকটা জিনিস উপেক্ষিত থেকে যায় সেটি হল আমাদের বাথরুম। বেশিরভাগ মানুষের বাথরুমে এখন টাইলস লাগানো। টাইলসগুলো খুবই অনিরাপদ। বিশেষ করে পিছলে পড়ে যাবার সম্বভনা প্রচুর। তাই ভাল মানের স্যান্ডেল কিনে বাথরুমে রাখবেন। হয়তো ২০০ টাকার একটি স্যান্ডেল আপনাকে বাচিয়ে দিবে ২০০০ টাকা খরচ থেকে।
ট্রাইমেষ্টার
গর্ভধারনের পর প্রথম যে ডাক্তারি শব্দটির সাথে আপনি পরিচিত হবেন সেটি হল ট্রাইমেষ্টার। গর্ভাবস্থায় প্রতি ৩ মাসকে একেকটি ট্রাইমেষ্টার ধরা হয়। যেমন গর্ভধারনের প্রথম ৩ মাসকে বলা হয় ফাষ্ট ট্রাইমেষ্টার, মাঝের ৩ মাসকে সেকেন্ড ট্রাইমেষ্টার আর শেষের ৩ মাসকে থার্ড ট্রাইমেষ্টার বলে। সাধারন ট্রাইমেষ্টার ৩টি থাকে। গর্ভকালীন ৯ মাসকে ৩টি ট্রাইমেষ্টারে ভাগ করা হয়েছে।
তাছাড়া, আপনাকে আরেকটি হিসাব রাখতে হবে। সেটি হল সপ্তাহের হিসাব। আপনি চাইলে সেটি মোবাইলের এ্যাপসেও রাখতে পারেন। এই লেখার ডাউনলোড সেকশনে এ্যাপসের নাম দেওয়া আছে।
ফাষ্ট ট্রাইমেষ্টার (১ থেকে ১২ সপ্তাহ)
প্রথম ট্রাইমেষ্টারে ফলিক এসিড আর জিংক খাওয়াটা জরুরী। সাথে বমির সমস্যা থাকলে বমির ওষুধ খেতে হবে। যদি আপনার আগে গর্ভপাত হবার ইতিহাস থাকে তবে তা ডাক্তারকে অবশ্যই জানাবেন। ডাক্তার আপনাকে নিরাপদে রাখার জন্য আরো কিছু ওষুধ দিতে পারেন। শরীর দূর্বল থাকলে মাল্টিভিটামিনও দিতে পারেন। এই ট্রাইমেষ্টারটি বেশ ঝুকিপূর্ণ। বেশিরভাগ মিসক্যারেজ এর ঘটনা এই ট্রাইমেষ্টারে ঘটে। সুতরাং অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন এই ট্রাইমেষ্টারে অবশ্যই জরুরী।
কি খাবেন: শাকসবজি, সীমের বিচি, মটরশুঁটি, ডিম, কলা, কমলা, দুধ (সিদ্ধ করা),দই খাবেন একটু বেশি বেশি। প্রতিদিন লেবু দিয়ে এক গ্লাস সরবত খাবেন। তাছাড়া পানি পান করবেন বেশি করে। টয়লেটে সমস্যা হলে ইসুবগুলের ভুসি খাবেন। যদি পেট খারাপ করে তবে ওষুধ নয় স্যালাইন খাবেন।
কি খাবেননা: কাঁচা (দুধ/সবজী/লবন/আদা), অর্ধসিদ্ধ (মাছ/মাংস/ডিম), শুটকী, তেতুল বা কোন আচার, কলিজা, পেঁপে, আনারস, কাল আঙ্গুর খাওয়া যাবেনা। চা বা কফি এক কাপের বেশি নয় এবং কোল্ড ডিংক্স খাবেননা।
অনান্য যা বাদ দিবেন: জার্নি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ভারি কোন কাজ বা কোন কিছু তোলা একদমই করা যাবেনা। তাছাড়া প্রথম ৩ মাস সহবাস না করার জন্যই ডাক্তাররা সাজেষ্ট করে থাকেন। যদি সহবাস করে থাকেন তবে আগের মাসিক হবার দিনগুলোতে অবশ্যই সহবাস থেকে বিরত থাকবেন। ডাক্তারের দেওয়া নির্ধারিত ওষুধের বাহিরে আর কোন ধরনের ওষুধ খাওয়া যাবেনা। বিশেষ করে ব্যাথা নিবারনকারী প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ এবং পেট খারাপের ওষুধ তো অবশ্যই নয়। এমনকি গ্যাসটিকের জন্য ওষুধ খেতে হলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবেনা। মশার কয়েল/ধুমপানের ধুয়া থেকে বিরত থাকবেন।
কমন সমস্যা: বমি বমি ভাব, খেতে না পারা, মাথা ঘুরানো।
কখন ডাক্তার দেখাবেন: গর্ভধারনের শুরুতে একবার ডাক্তার দেখাতে পারলে ভাল। তাছাড়া ৬ থেকে ৯ সপ্তাহের মধ্যে আরো একবার দেখাবেন। তখন টেষ্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আপনি গর্ভবতী কিনা।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন। সম্বভ হলে নিয়মিত গোসল করবেন। নিয়মিত শরীরে অলিভ ওয়েল মাখবেন। বিশেষ করে পেটে এবং পায়ে ওলিভ ওয়েল তেল মাখবেন। প্রতিদিন দুই বার দাত ব্রাশ করবেন। অনেক সমস্যা থেকে পরিত্রান পাবেন।
সেকেন্ড ট্রাইমেষ্টার (১৩ থেকে ২৪ সপ্তাহ)
প্রথম তিনমাস সমাপ্ত হবার পর ফলিক এসিড, জিংক এর সাথে আয়রণ, ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খেতে হবে। এই ট্রাইমেষ্টারটা একটু সেফ। আপানি চাইলে জার্নি করতে পারেন। সহবাসও করা যাবে। তবে নির্ধারিত ওষুধের বাহিরে কোন ওষুধ খেতে হলে কিন্তু সেই আগের সতর্কবানী ফলো করতে হবে- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ নয়।
#সেকেন্ডট্রাইমেষ্টার
আয়রন: আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিন ও এনার্জি তৈরিতে সাহায্য করে, গর্ভস্থ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্নায়ুতন্ত্র বিকাশ করে। শরীরে আয়রনের অভাবে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। (IOM) এর মতে, গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার।
ক্যালসিয়াম: গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়। যদিও গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় তুলনামূলকভাবে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়, তবুও শেষের ৩ মাস চাহিদাটা সবচেয়েতে বেশি থাকে। WHO এর মতে, একজন গর্ভবতী মায়ের দিনে ১০০০ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসকে হাড়ের জন্য কার্যকরী করে। গর্ভবতী মায়ের শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে শিশুর সার্বিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং মায়েরও গ্যাস্টোলিন ডায়াবেটিস সহ নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। WHO এর মতে, গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন শরীরে ৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি এর চাহিদা থাকে।
কি খাবেন: শাকসবজি, সীমের বিচি, মটরশুঁটি, কচু, কাচকলা, কলিজা (পরিমানে সীমিত) ডিম, দুধ (সিদ্ধ করা), দই, কমলা, খেজুর (প্রতিদিন ২টা), কলা খাবেন। প্রতিদিন লেবু দিয়ে সরবত বানিয়ে এক গ্লাস খাবেন। তাছাড়া পানি পান করবেন বেশি করে।টয়লেটে সমস্যা হলে ইসুবগুলের ভুসি খাবেন। যদি পেট খারাপ করে তবে ওষুধ নয় স্যালাইন খাবেন।
কি খাবেননা: কাঁচা (দুধ/সবজী/লবন/আদা), অর্ধসিদ্ধ (মাছ/মাংস/ডিম), শুটকী, তেতুল বা কোন আচার, পেঁপে, আনারস, কাল আঙ্গুর খাওয়া যাবেনা। চা বা কফি এক কাপের বেশি নয় এবং কোল্ড ডিংক্স খাবেননা।
যা করা থেকে বিরত থাকবেন: সীমিত আকারে জার্নি করতে পারবেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নির্ধারিত ওষুধে বাহিরে কোন ওষুধ খাওয়া যাবেনা। ভারি কোন কাজ করতে পারবেননা। সীমিত পরিমানে সহবাস করতে পারবেন। একটানা বেশিক্ষন দাড়ানো বা বসা যাবেনা। মশার কয়েল/ধুমপানের ধুয়া থেকে বিরত থাকবেন।
কমন সমস্যা: বমি বমি ভাব, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ঘুমে সমস্যা, মাথা/কমর ব্যাথা, গ্যাসটিকের সমস্যা বেড়ে যাওয়া, চুলকানি, নাক/দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া, দু:স্বপ্ন দেখা, শ্বাসকষ্ট হওয়া।
কখন ডাক্তার দেখাবেন: সেকেন্ড ট্রাইমেষ্টারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই সেকেন্ড ট্রাইমেষ্টারের শুরুতে ১৬ সপ্তাহ বা ৪ মাস সময়ে অবশ্যই একবার ডাক্তার দেখাবেন এবং সেকেন্ড ট্রাইমেষ্টারের শেষে অর্থাৎ ২৪ সপ্তাহ বা ৬ মাসের সময় আরো একবার ডাক্তার দেখাবেন। যেহেতু এই ট্রাইমেষ্টার থেকে আপনি আয়রন ট্যাবলেট খাবেন তাই গ্যাসটিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং ডাক্তার যখন দেখাবে তখন ডাক্তার যদি কোন গ্যাসের ওষুধ না দেন তবে চেয়ে একটা লিখে আনাবেন।
টিটি টিকা: যদি আপনি আগে টিটি টিকা না দিয়ে থাকেন তবে দুই ডোজ টিটি টিকা সেকেন্ড ট্রাইমেষ্টারে দিয়ে দিবেন। টিটি টিকা সাধারনত গর্ভধারনের ২০ সপ্তাহ (৫ মাস) থেকে ৩২ সপ্তাহের (৮ মাস) মধ্যে দিতে হয়। মনে রাখবেন প্রথম ডোজ টিটি টিকা দেওয়ার পর পরের ডোজ ঠিক তার ১ মাস পর দিতে হয়।
#টিটিটিকা
রক্তের সন্ধান: এই ট্রাইমেষ্টারে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রক্তদাতা কে অগ্রিম বলে রাখা যে ৩ মাস পর আপনার রক্তের প্রয়োজন। না হলে দেখা যাবে আপনি যাকে সিলেক্ট করে রাখছেন তিনি আপনার দরকারের ১ মাস আগেই কাউকে না কাউকে রক্ত দিয়ে ফেলছেন। মনে রাখবেন রক্ত সাধারন প্রতি ৪ মাস অন্তর অন্তর দান করা যায়।
থার্ড ট্রাইমেষ্টার (২৫ থেকে ৩৬ সপ্তাহ)
ফাষ্ট ট্রাইমেষ্টারের মত থার্ড ট্র্রাইমেষ্টারটাও বেশ ঝুকিপূর্ণ। এই ট্রাইমেষ্টারে প্রতিদিনই আপনি আবিষ্কার করবেন আপনার শরীরের নতুন নতুন সমস্যা। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। কারণ এই সমস্যাগুলো কমন। এই ট্রাইমেষ্টারে এসে আপনাকে আর অতিরিক্ত কোন ওষুধ খেতে হবেনা যদিনা অতিরিক্ত কোন সমস্যা থাকে। সেকেন্ড ট্রাইমেষ্টারে যে ওষুধগুলো খাচ্ছিলেন (আয়রন, ফলিক এসিড, জিংক এর সাথে ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি ট্যাবলেট) সেইগুলি চলবে। তাছাড়া এই ট্রাইমেষ্টারের গ্যাসটিকের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই ডাক্তার গ্যাসের ওষুধও দিতে পারেন।
কি খাবেন: শাকসবজি, সীমের বিচি, মটরশুঁটি, কচু, কাচকলা, কলিজা (পরিমানে সীমিত) ডিম, দুধ (সিদ্ধ করা), দই, কমলা, খেজুর (প্রতিদিন ২টা), কলা খাবেন। প্রতিদিন লেবু দিয়ে সরবত বানিয়ে এক গ্লাস খাবেন। তাছাড়া পানি পান করবেন বেশি করে। টয়লেটে সমস্যা হলে ইসুবগুলের ভুসি খাবেন। যদি পেট খারাপ করে তবে ওষুধ নয় স্যালাইন খাবেন।
কি খাবেননা: কাঁচা (দুধ/সবজী/লবন/আদা), অর্ধসিদ্ধ (মাছ/মাংস/ডিম), শুটকী, তেতুল বা কোন আচার, পেঁপে, আনারস, কাল আঙ্গুর খাওয়া যাবেনা। চা বা কফি এক কাপের বেশি নয় এবং কোল্ড ডিংক্স খাবেননা।
যা করা থেকে বিরত থাকবেন: জার্নি করবেননা। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত কোন ওষুধ খাবেননা। ভারি কাজ করতে পারবেননা। ভারি কোন জিনিস তুলবেননা। সহবাস থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন। কাপড় ধোয়া, উপুড় হয়ে কোন কাজ করা নিষেধ। একটানা বেশিক্ষন দাড়ানো বা বসা যাবেনা। ঠান্ডা লাগানো যাবেনা। মশার কয়েল/ধুমপানের ধুয়া থেকে বিরত থাকবেন।
কমন সমস্যা: গরম লাগা, ঘেমে যাওয়া, পা ফোলা, ব্যাথা (কমর/পিঠ/পা/তলপেট), গ্যাসটিক বেড়ে যাওয়া, ঘুমে সমস্যা, চুলকানি, নাক/দাঁত দিয়ে রক্ত যাওয়া, প্রেসার এবং প্রসাব বেড়ে যাওয়া। সাদা স্রাব যাওয়া।
বাচ্চার নড়াচড়া: সেকেন্ড ট্রাইমেষ্টারের শেষের দিকে থেকে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করবেন। এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ বার নড়াচড়া করছে কিনা। যদি নড়াচড়া না করে বা ৮ বারের কম করে তবে অবশ্যই দেরী না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন।
আর যা যা করবেন: থার্ড ট্রাইমেষ্টারে এসে মায়ের ওজন আর প্রেসারটা শুরু থেকেই প্রতি সপ্তাহে চেক করবেন। ওজন যদি না বাড়ে তবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন। আর প্রেসার বেড়ে গেলেও তা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করবেন নতুবা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন।
কখন ডাক্তার দেখাবেন: থার্ড ট্রাইমেষ্টারের রিকোমেন্ড করা হয় ঘনঘন ডাক্তার দেখানোর জন্য। তবে আমাদের দেশে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় অন্তত ২ বার ডাক্তার দেখানোটা জরুরী। ৮ এবং ৯ নাম্বার মাসে অবশ্যই অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন।
টিপস
প্রসাবে ইনফেকশন: প্রসাবে ইনফেকশন গর্ভবতী মায়ের একটি কমন এবং মারাত্মক সমস্যা। গর্ভবতী মাকে এটি বেশ ঝামেলায় ফেলে দিতে পারে। এটির জন্য আপনাকে ঘন ঘন প্রসাব টেষ্ট করাতে হতে পারে। তবে উত্তম হল প্রসাবের পর ভাল করে পরিষ্কার হওয়া। বেশি বেশি পানি পান করা। আর ভিটামিন সি (লেবু দিয়ে শরবত) খাওয়া। এই টিপসটি পুরো ৯ মাস সময়ে ফলো করবেন।
প্রেসার কন্ট্রোল: থার্ড ট্রাইমেষ্টারে মায়েদের ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। আর বাড়াটাই স্বাভাবিক। তবে তা কন্ট্রোল রাখাটা আপনার দায়িত্ব। কিভাবে কন্ট্রোল করবেন ব্লাড প্রেসার। কাঁচা লবন একদমই বাদ। বলে রাখা ভাল পায়ে পানি আসার জন্য কিন্তু কাঁচা লবনের অবদান বেশ পাকা। গরু বা ছাগলের মাংস বাদ দিবেন খাবার তালিকা থেকে যদি দেখেন প্রেসার বেড়ে গেছে। কলা খাবেন বেশি করে সাথে পানিও পান করবেন। খাবারের ক্ষেত্রে শাকসবজিটা বেশি করে খাবেন। কিসমিস খাবেন নিয়মিত।
রক্তশুন্যতা: গর্ভকালীন সময়ে রক্তশুন্যতা দেখা দেওয়া কমন। এজন্য সেকেন্ড ট্রাইমেষ্টার থেকে প্রতিদিন ২টি করে খেজুর খেতে হবে। তাছাড়া অনেক সময় কৃমির জন্যও রক্তশুন্যতা দেখা দেয়। আর তাই গর্ভধারনের পূর্বে কৃমির ট্যাবলেট খেয়ে নেওয়া জরুরী।
ঘুমানোর আসন: গর্ভবতী একজন মা পুরো ৯ মাস ডান অথবা বাম দিকে পাশ ফিরে ঘুমাতে পারেন। যদি পায়ে ব্যাথা হয় তবে পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে ঘুমাবেন। তাছাড়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য আলদা বালিশ কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলো চাইলে কিনে নিতে পারেন।
মাথা ব্যাথা: গর্ভবস্থায় মাথা ব্যাথা কমন একটি সমস্যা। এর জন্য প্যারাসিটামল না খেয়ে গরম পানিতে মেনথল দিয়ে শ্বাস নিলে আরাম পাওয়া যায়। অথবা বাজারে মেনথল বা ভিক্স এর ইনহেলার পাওয়া যায়। সেগুলি দিয়ে শ্বাস নিলে আরাম মিলে।
পা ফোলা: অতিরিক্ত দাড়ানো কিংবা বেশি সময় বসার কারনে গর্ভবস্থায় পা ফুলতে পারে। লক্ষ্য রাখবেন পায়ে পানি আসছে কিনা। যদি পানি আসে তবে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। আর পানি না আসলে পা ফোলা কমানো জন্য আরামদায়ক জুতা পরা, কাঁচা আম, কলা খেলে উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়া, পায়ে অলিভ ওয়েল লাগাতে পারেন। এই টিপসটি পায়ে টান লাগা সমস্যা সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।
বমি সমস্যা: গর্ভকালীন সময়ে বমির সমস্যা কমন। যদি এটি আপনার কোন সমস্যা না করে তবে সমস্যা নাই। আর যদি অতিরিক্ত বমি সেই সাথে খাবার খেতে অরুচী চলে আসে তবে ডাক্তার দেখাবেন। ডাক্তার বমির ওষুধ দিবেন সেটা খেলেই দূর হয়ে যাবে। যদি একাধিক বার ডাক্তার দেখাতে না চান তবে এক্ষেত্রে আরো একটি টিপস ফলো করতে পারেন। যখন ডাক্তার দেখাতে যাবেন তখন বমির কথা বলে ওষুধ লেখিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। যখন সমস্যা হল তখন খেলেন। আর বমির সমস্যার জন্য ঘুম থেকে উঠে অন্যকিছু না খেয়ে শুকনো খাবার মুড়ি বা বিস্কিট খেয়ে দেখতে পারেন।
নরমাল ডেলিভারি নাকি সিজার
নরমাল ডেলিভারী নাকি সিজার করাবেন ব্যাপারটা নির্ভর করছে বেশ কিছু বিষয়ের উপর। যদি মা কিংবা বাচ্চার শারিরিক কোন সমস্যা না থাকে এবং মায়ের উচ্চতা ৪ ফিট ১০ ইঞ্চি এর বেশি হয় তবে নরমাল ডেলিভারির দিকে যেতে পারেন। আর যদি দেখা যায় মায়ের প্রেসার বেশি কিংবা অন্য কোন শারিরিক সমস্যা তবে সিজারে প্রসব করানোই উত্তম। এক্ষেত্রে আরো একটি টিপস ফলো করতে পারেন। আপনার নির্ধারিত ডাক্তারকে দেখানো পর আরো একজন ভাল ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর সিজারে যেতে পারেন। অনেক সময় হসপিটালগুলো বা ডাক্তার তাদের ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য অযথা ভয় দেখিয়ে সিজার করে নেন।
নরমাল ডেলিভারির জন্য কিছু টিপস
আমাদের দেশের ডাক্তাররা সাধারণত চাইবেনা যে আপনার নরমাল ডেলিভারি হোক। আর এই না চাওয়ার বেশ কিছু যুক্তিক কারণ রয়েছে। প্রথমত আপনি হয়তো কোন প্রাইভেট ক্লিনিক এ ডেলিভারি করাচ্ছেন যেখানে ডাক্তারের উপর ক্লিনিকের মালিক পক্ষ বলে একটি মুনাফাখোর পক্ষ থাকে। যাদের উদ্দেশ্য আপনাকে সেবা নয় বিজনেস করা। তাদের চাপ থাকে ডাক্তারের উপর যে কোন উপায়ে সিজার করানোর জন্য। বুঝতেই পারছেন টাকার খেলা এটি। তাছাড়া, একটি নরমাল ডেলিভারিতে যে পরিমান সময় অপেক্ষা করতে হয় সেটি সাধারনত ডাক্তারদের হাতে থাকেনা। অনেক সময় পানি ভাঙ্গার পর ব্যাথা উঠতে ২৪ ঘন্টাও লেগে যায়। বর্তমান এই সময় কোন প্রফেশনাল ডাক্তার বলেন আপনার জন্য ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করবে। যাহোক, এবার আসি আসল কথায়। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য কিছু টিপস আছে। যা আপনি আমাদের দেশের ডাক্তারদের কাছে পাবেননা। যদিও এইগুলোর বিজ্ঞানসম্মত কোন ভিত্তি নাই তারপরও বাহিরের দেশে এই টিপসগুলো ডাক্তাররাই সাজেষ্ট করেন রোগীদের ফলো করতে। তো চলুন দেখে নেই সেই টিপসগুলো-
১. হাটাহাটি করা: গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে ভাল একটি ব্যায়াম হল হাটাহাটি করা। অনেকে অভিযোগ করে যে বাচ্চা নড়াচড়া কম করে। মনে রাখবেন আপনার মুভমেন্ট এর উপর বাচ্চার মুভমেন্ট নির্ভর। আপনি নড়াচড়া করলে বাচ্চাও নড়াচড়া করবে। আর তাই ডাক্তাররা গর্ভবস্থায় সব সময় সাজেষ্ট করেন অতিরিক্ত জার্নি বা মুভমেন্ট এভোয়েড করতে। কেননা, আপনার অতিরিক্ত নড়াচড়া গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। বাহিরের দেশে সাজেষ্ট করা হয় ৩৬ সপ্তাহ থেকে আপনি নিয়মিত হাটাহাটি করবেন। তখন একটু বেশি হাটাহাটি করবেন। কেননা তখন আর আপনার গর্ভপাতের কোন ঝুঁকি থাকেনা।
২. ঝাল খাবার খাওয়া: এটির সাধারণত কোন বিজ্ঞানসম্মত কোন ভিত্তি নাই। আগেরকার দিনের মানুষেরা ডেলিভারি পেইন তোলার জন্য হবু মাকে ঝাল খাবার খাওয়াতো। বিষ্ময়কর হলেও সত্য তারা কিন্তু ভাল ফল পেত। তো ৩৬ সপ্তাহ থেকে এটি ট্রাই করতে পারেন। মনে রাখবেন ঝাল খেলে কিন্তু গ্যাসটিক এর ব্যাথাও হতে পারে। তাই গ্যাসের ওষুধ খেতে ভুলবেননা।
#নরমালডেলিভারিরজন্য
তাছাড়া আরো কিছু টিপস আছে যা সাধারনত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ফলো করা সঠিক হবেনা বিধায় এখানে উল্লেখ করা হয়নি। সবচেয়ে নিরপদ দুটি টিপস এখানে দেওয়া হল।
পানি ভাঙ্গা নিয়ে কিছু কথা
মাতৃগর্ভের ভিতরে শিশুটি যে তরল পদার্থের ভেতরে ভাসমান অবস্থায় থাকে তাকেই এমনিওটিক ফ্লুইড বলে। এটি এক ধরনে পানি। সাধারনত প্রথম ট্রাইমেষ্টার থেকেই এটি জমা হতে হতে থাকে এমনিওটিক স্যাক এ। এমনিওটিক স্যাক হল পানি জমা হওয়ার তলি। অনেক সময় আল্ট্রা সাউন্ড করে দেখা যায় যে এই পানির পরিমান কম। মনে রাখবেন, আপনি যত পানি পান করবেন এমনিওটিক স্যাকে তত এমনিওটিক ফ্লুইড বা পানি হবে। আপনি যদি গর্ভধারণের শুরু থেকে পানি কম পান করেন তবে এমনিওটিক স্যাকে এমনিওটিক ফ্লুইড বা পানি কম হবে।
গর্ভকালীন সময়ে পানি ভাঙ্গা নিয়ে আতঙ্কে ভুগেননা এমন মা পাওয়া দুষ্কর। থার্ড টাইমেষ্টারে এসে অনেক সময় যৌনি পথে কোন তরল নির্গত হলেই মায়েরা ভাবেন এই বুঝি পানি ভেঙ্গে গেল। সাধারন তরল আর পানি ভাঙ্গার মাঝে কিছু পার্থক্য আছে। সাধারনত অ্যমনিওটিক ফ্লুইড বা পানি হল একধরনের পানি। এটা পানির মত পরিষ্কার আর গন্ধবিহীন হয়। মাঝেমধ্যে তাতে হলুদ বা গোলাপী আভা থাকতে পারে। পানি ভাঙ্গছে কিনা তা নিশ্চিত হতে চাইলে একটি পরীক্ষা করতে পারেন। একটি ম্যাটারনিটি প্যাড পরে সেটি ভিজে যাওয়ার পর কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। তারপর সেটি বের করে দেখুন। যদি সেটি হলুদ হয়ে যায় এবং গন্ধ আসে প্যাড থেকে তবে ধরে নিন সেটি প্রসাব ছিল অ্যমনিওটিক ফ্লুইড বা পানি নয়। আর যদি হলুদ না হয় এবং গন্ধ না থাকে তবে দেরী না করে একটি আল্ট্রসাউন্ড পরীক্ষা করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন যদি সেটি ৩৬ সপ্তাহের পূর্বে হয়ে থাকে। আর ৩৬ সপ্তাহের পরে হলে দুই দিন অপেক্ষা করে দেখতে পারেন ব্যাথা উঠে কিনা। যদি না উঠে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
প্রসবের পর
প্রসবের পর অবস্থা বুঝে (নরমাল নাকি সিজার) ব্যবস্থা নিতে হবে। সহজ কথায় সমস্যা অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিত কোন ওষুধ নয়। কেননা আপনি এখন বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবেন। আপনার ওষুধের প্রভাব আপনার বাচ্চার উপর পড়তে পারে। তারপরও নরমাল ডেলিভারি হোক আর সিজার হোক মা কে এই সময় আয়রন, ফলিক এসিড, জিংক এর সাথে ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খেতে হবে। কেননা, মায়ের শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে ব্লাড যাওয়ায় যেকোন সময় যেকোন সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এটা অব্যহত রাখতে হবে পরবর্তী তিন মাস। মোঠ কথা শেষের টাইমেষ্টারের আপনি আয়রন, ফলিক এসিড, জিংক এর সাথে ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি ট্যাবলেট এর যে ওষুধগুলো খাচ্ছিলেন সেগুলো প্রসবের পর আরো তিন মাস খেতে হবে। তাছাড়া প্রসবের পরই পরবর্তী দশ দিন তিন বেলা খাবার পর একটি করে সিভিট খাবেন। এটি ক্ষত শুকাতে বেশ ভাল কাজ দিবে।
#প্রসবেরপর #প্রসবেরপরকিখাবেন
কি খাবেন: লাল গাঢ সবুজ এবং কমলা রংয়ের শাকসবজি বিশেষ করে কচু আর কাচকলা। মিষ্টি ফল। প্রচুর পরিমানে পানি পান করবেন। ইসুবগুলের ভুসি খাবেন।
কি খাবেননা: দুধ, কাঁচা রসুন, টক জাতীয় ফল, চা, কফি, বাদাম, চকলেট তাছাড়া পেটে গ্যাস হয় এমন খাবার পরিহার করবেন।
যা করা থেকে বিরত থাকবেন: কয়েকদিন ভারি কাজ করবেননা। সহবাস করবেননা (অন্তত ৪৫ দিন)। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেননা। ঠান্ডা লাগবেননা।
কমন সমস্যা: চুল পড়া, প্রসাবে রক্ত যাওয়া, টয়লেটের রাস্তা/কমরে/পিঠে/পেটে ব্যাথা। মেজাজ খিটখিটে হওয়া। ওজন কমে যাওয়া।
বেল্ট ব্যাবহার: সিজার কিংবা নরমাল ডেলিভারি হোক ডাক্তার আপনাকে সাজেষ্ট করবে একট বেল্ট ব্যাবহার করার জন্য। যেকোন ফার্মেসী বা সার্জিকাল স্টোরে এটি পাবেন। দাম পড়বে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার ভিতর। নরমাল ডেলিভারির কয়েক ঘন্টা পরেই এটি আপনি পরতে পারেন। আর সিজার হলে অন্তত ৩/৪ দিন পর (ডাক্তারের পরামর্শ মতে) পরতে পারেন। বেল্ট পরার সময় কিছু জিনিস লক্ষ্য রাখবেন বেল্টটি যেন অতিরিক্ত টাইট না হয়। আর খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর বেল্ট পরবেন। গোসল এবং ঘুমের সময় অবশ্যই বেল্টটি খুলে রাখবেন। বেল্ট পরার পর যদি দেখেন অতিরিক্ত রক্ত যাচ্ছে তবে অবশ্যই বেল্টটি কিছু দিন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন।
ডাউনলোড সেকশন
১. অ্যাপস (যারা আইফোন ব্যবহার করেন তারা Pregnancy + দিয়ে সার্চ দিলে পাবেন)
৪. প্রফেসর ডা: শামসুন নাহার বেগন (হেনা) - আল হারামাইন হসপিটাল
৫. প্রফেসর ডা: নাদিরা বেগম - ওয়েসিস হসপিটাল
৬. প্রফেসর ডা. শাহানা ফেরদৌস চৌধুরী - ইউনাইটেড পলি ক্লিনিক
৭. এসিসট্যান্ট প্রফেসর ডা: কিশোয়ার পারভীন - মাউন্ট এডোরা হসপিটাল