আমার ষষ্ঠ কনে দেখা
মনির আলি চাচাকে আর সহ্য করতে পারছিলমানা। অফিসের অফ ডে তে বাড়িতে আসলেই আমার সাথে সাথে তারও আগমন ঘটতো।
শান্তিতে বাড়িতে যে থাকবো সেটার আর কোন উপায় ছিলনা। আর তার বাড়িতে আসা মানে নতুন কোন কন্যার খবর নিয়ে আসা। অবশ্য বেচারা আমাদের পারিবারিক ঘটক। তাই কিছু বলার ছিলনা কিন্তু তার এই ঘনঘন আগমন সহ্য করার মতও ছিলনা।যাহোক, চাচা একদিন জুড়ির গোয়ালবাড়ির এক পাত্রির খবর নিয়ে এলেন। উনাকে আমরা বিশ্বাস করি কারন তিনি আগেও আমার ফুফুর বিয়ে দিয়েছিলেন। তাই উনার কথায় সবাই সম্মত হয় পাত্রী দেখতে যাবার। যথারিতী আমিও বেশ আনন্দিত হই। কেননা, চাচা জানেন আমাদের ফ্যামেলী স্ট্যাটাস। তিনি কখনোই উল্টোপাল্টা কিছু করবেননা।
একদিন সকালে আমি, আব্বু, চাচা আর সাঈদ মিলে রওয়ানা দেই সেই কন্যা দেখতে। জুড়ির বাজারে গিয়ে কিছু কেনাটাকা করি তাদের জন্য। তারপর আবারো পথ ধরি গোয়ালবাড়ির উদ্দেশ্য। জুড়ি থেকে তাদের বাড়ি যেতে বেশ খানেকটা সময় লাগে। যখন সেখানে গিয়ে পৌছাই সূর্য মামা তখন ঠিক মাথার উপরে। সুন্দর একটা পরিবেশ। চারিদিক সবুজ, মাঝে তাদের বাড়ি। দেখে মুগ্ধ হই।
বাড়িতে ঢুকে কনের দুই বড় ভাই আর বাবার সাথে পরিচিত হই। উনারা যথেষ্ট আন্তরিক মানুষ। বিশেষ করে কনের বড় ভাই ছিলেন সত্যি অসাধারন। নাস্তা খাবার পর খাবার পর্বের আগেই ঠিক হয় কনে দেখার। যথারিতী ডাক পড়ে অন্য ঘরে যাবার। এবার ভাবিরা নিয়ে আসেন কন্যাকে। কনেকে দেখে বেশ ভয় পেয়ে যাই। দেখতে কনেকে আমার চেয়ে লম্বা লাগে। ভাবিরা দু’জনকে রেখে চলে যান। তারপর গল্প শুরু। ও বাংলা অনার্সে ছাত্রী। জানতে চাইলাম কবিতা লেখে নাকি। আরো কিছুক্ষন গল্প করার পর ভাবীরা আবারো চলে আসে। তারপর দু’জনকে একসাথে নিয়ে ছবি তোলে। এক ভাবী আমার কানে কানে বলে এটা নাকি ওই মেয়েটির প্রথম পাত্র দেখা। শুনে বেশ ভাল লাগে।
কনে দেখার পর্ব শেষ হবার পর শুরু খাবার পালা। ভাবীদের হাতের রান্না ছিল সত্যি প্রশংসা করার মত। বেশ তৃপ্তি নিয়ে খাবার খাই। খাওয়া শেষ হলে বাড়ি দেখতে যাওয়া হয়। পরিচিত হই কনের মায়ের সাথে। এই প্রথম ধাক্কা খাই। কনের মা মানসিক ভাবে অসুস্থ। অতিরিক্ত কথা বলেন এবং কি বলেন তার ঠিক নাই। বলে রাখা ভাল কনের আরেক ভাই ছিল প্রতিবন্ধী। ব্যাপারটা আমার কাছে খারাপ লাগে।
বাড়িতে আসার পর আম্মা আমার মতামত জানতে চাইলেন। আমি বেশ জটিল এক সমস্যায় পড়লাম। আসলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম কি করবো সেটা নিয়ে। পাত্রী যে পছন্দ হয়নি তা কিন্তু নয়। সমস্যা পাত্রীর মা আর ভাইকে নিয়ে। প্রতিবন্ধী ভাইয়ের ব্যাপারটাও আমি সহজভাবে মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু মায়েরটা মানতে পারছিলামনা। কেননা, মায়ের এই সমস্যা একমাত্র মেয়ের মাঝেও হতে পারে। ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে আমি আম্মাকে খুলাখুলি ভাবে জিনিসটা শেয়ার করি। আম্মাও একমত হন আমার কথায়।
কনে দেখতে যাওয়ার টিপস - কনে দেখার সময়
১. কনে দেখার সময় কনফিডেন্ট থাকাটা বেশ জরুরী।
২. কনের সাথে কথা বলার সময় ঘাবড়াবেননা। কনের চোখের সাথে চোখ রেখে কথা বলুন। মুখের চেয়ে হাত-পা ভাল করে দেখুন।
৩. প্রথমে নাম, তারপর পড়াশুনার কথা জানতে চাইবেন।
৪. কনেরটা বলা হয়ে গেলে আপনার নাম, পড়াশুনা ইত্যাদি নিজ থেকে বলবেন।
৫. তারপর আবার জানতে চাইবেন তার পছন্দের বিষয় কি বা যেখানে পড়াশুনা করে সেখানকার কোন স্যার বা বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন। এতে করে কনে আপনার সাথে ফ্রি হয়ে যাবে।
৬. এরপর রান্না করা জানে কিনা, অবসর সময়ে কি করে তা জানতে চাইবেন।
৭. মাঝেমাঝে আপনার নিজের বিষয়ে তাকে জানাবেন। এই যেমন আপনি কি পারেন বা পছন্দ করেন।
৮. নিজের সম্পর্কে কখনোই বাড়িয়ে বলবেননা। আপনার কোন সমস্যা থাকলে সেটা খুলাখুলিভাবে কন্যার সাথে শেয়ার করুন।
৯. খেলাধুলা নিয়ে কথা বলতে পারেন। ক্রিকেট ফুটবলে কোন দল সাপোর্ট করে জানতে পারেন। আপনি কোন দল সাপোর্ট করেন সেটা কিন্তু জানাতে ভুলবেননা।
১০. কনে চাকুরিজীবি হলে তার স্যালারি কত বা জব রিলেটেড বেশি কোন প্রশ্ন করবেননা।
১১. সবার শেষে কনের কাছে জানতে চাইবেন এ বিয়েতে তারমত আছে কিনা এবং তার আর আপনার সম্পর্কে কোন কিছু জানার আছে কিনা
পরবর্তী পর্ব