সাজেক ভ্রমনের বিস্তারিত
মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্রমন করতে কে না চায়। কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাব প্রথম প্রতিবন্ধকতা হিসাবে দাড়ায়। সিলেট থেকে যাবার আছে সহজ দুইটা উপায়। এক হল চট্রগ্রাম গিয়ে সাজেক যাওয়া নতুবা ঢাকা গিয়ে সাজেক যাওয়া। চট্রগ্রাম গিয়ে সাজেকগেলে অতিরিক্ত একদিন চট্রগ্রাম না হয় সাজেক থাকতে হবে। তাই আমার সাজেশন ঢাকা হয়েই যান। চলুন কথা আর না বাড়িয়ে দেখে নেই বিস্তারিত।
ভ্রমনের উপযুক্ত সময়
সাজেক বছরের যেকোন সময়ই যাওয়ার জন্য পারফেক্ট একটা স্থান শুধু মাত্র গরমের সিজন ব্যতিত। কেন গরমে সেখানে সেখানে যাবেননা? কারন সাজেকে বিদ্যুত বাবুর কোন ব্যবস্থা নাই। সেই সাথে রয়েছে পানির সংকট। সুতরাং বুঝতেই পারছেন গরমে আপনার অবস্থা হবে কেমন। আর যখন অতিরিক্ত বৃষ্টি হয় তখনও সাজেক যাওয়ার পথে রয়েছে ভয়। কেননা তখন পাহাড় ধসের আশংকা থাকে। সুতরাং অতিরিক্ত বৃষ্টি আর অতিরিক্ত গরম এড়িয়ে যেকোন সময় চলে যান সাজেক।
যাওয়ার পূর্বে যা যা লক্ষ্য রাখতে হবে
আবহাওয়া: চরম গরম আর অতিরিক্ত বৃষ্টির দিকে নজর দিন। এই সময় না যাওয়াই ভাল।
উপলক্ষ: ঈদ, পহেলা বৈশাখ, ইংরেজী নববর্ষ, লম্বা সরকারী ছুঠিতে ভিড় থাকে। তখন কটেজগুলোতে সীট পাওয়া যায়না। তাই এ সময়টাতে এড়িয়ে চলুন।
#shillong #shillong tips #shillong jete #shillong travelling #shillong vromon
যা যা সাথে নিবেন: সাথে কিছু নেওয়ার দরকার নাই। মোবাইলে চার্জ দেওয়ার জন্য শুধু একটা পাওয়ার ব্যাংক মনে করে নিবেন। আর রবি সীম।
জুতা এবং পোষাক: টি-শার্ট, থ্রিকোয়াটার, ট্র্যাভেলিং জুতা নিয়ে যান।
পারফেক্ট কম্বিনেশন: ৮/১০ জন হল পারফেক্ট। বিশেষ করে চান্দের গাড়ি শেয়ারিং এর জন এই সাইজ না হলে খরচ অনেক বাড়বে। সি.এন.জি বা মটরসাইকেলে যাওয়া অনেক রিস্ক।#shajeker golpo #shajek #shajek jete #shajek jabar tips #sylhet teke shajek
থাকবেন যেখানে
সাজেকে রয়েছে অসংখ্য কটেজ। থাকা নিয়ে তেমন একটা চিন্তা নাই। তবে আপনাকে ঠিক করতে হবে কোন পাড়ায় থাকবেন। সাজেক গিয়েই প্রথম যে পাড়াটি পাবেন সেটি হল রুইলুই পাড়া। পাড়া মানে গ্রাম। তারপর রুইলুই পাড়ার পরের পাড়া হল কংলাক পাড়া। রুইলুই পাড়ায় অসংখ্য কটেজ রয়েছে। রয়েছে সাশ্রয়ী থাকার ব্যবস্থা। অন্যদিকে কংলাক পাড়ায় কটেজ কম এবং যাওয়ার রাস্তাও বেশ দূর্গম। বয়স্ক মানুষেরা পাহাড় বেয়ে সেখানে উঠা অনেকটাই কঠিন। যদি বয়সে সবাই তরুন হোন তবে কংলাক পাড়া সত্যি অসাধারন একটি স্থান।রিকোমেন্ড করি বেশি টাকা দিয়ে হলেও সেখানে যান। আর কম টাকায় থাকতে চাইলে রুইলুই পাড়ার বিকল্প নাই। আর হ্যাঁ আদিবাসীদের ঘরেও খুব কম খরচে থাকতে পারেন।
রক প্যারাডাইস
কংলাক পাড়া, সাজেক
রাঙ্গামাটি।
ফোন: ০১৮৪২৩৮০২৩৪
মেঘপুঞ্জি
ফোন: ০১৯১১৭২২০০৭
জুমঘর
ফোন: ০১৮৮৪২০৮০৬০
মেঘমাচাং
ফোন: ০১৮২২১৬৮৮৭৭
খাওয়া-দাওয়া
খাবার নিয়ে সাজেকে তেমন একটা ভাবতে হয়না যদি আপনি কটেজে উঠেন। কেননা ওই কটেজ থেকে আপনার খাবার-দাবারের সকল আয়োজন করা হয়ে থাকে। আপনি জাষ্ট মেনু ঠিক করে দিবে কি খাবেন ব্যাস ঠিক সময়ে খাবার পাবেন। তবে মাথায় রাখতে হবে ওখানে কিন্তু বেশি কিছু সিলেক্ট করার অপশন নাই। তাছাড়া কটেজের বাহিরেও কিছু রেস্টুরেন্ট পাবেন যেখানে আপনি পেট ভরে তিন বেলা খেতে পারবেন।
স্পেশাল খাবার
১. কলা
২. ডাবের পানি
৩. পেয়ারা, পেপে, আনারস ইত্যাদি যখন যা পাওয়া যায় (ফলমূল)
৪. ব্যাম্বু চিকেন (ইজোর রেস্টুরেন্ট, খাগড়াছড়ি)
৫. তেতুলের জুস (ইজোড় রেস্টুরেন্ট, খাগড়াছড়ি )
টিপস: খাগড়াছড়িতে ইজোড় রেস্টুরেন্টে অবশ্যই খাবেন। ওখানে পাহাড়ি আইটেম পাবেন।
ক্রিং ক্রিং শপিং শপিং
সত্যি কথা বলতে গেলে সাজেক থেকে কেনার মত তেমন কিছু পাবেননা। যদি আপনি কিনতে চান তবে ফলমুল কিনতে পারেন। এর বাহিরে আর কিছু কেনার নাই। তবে হ্যাঁ আপনি খাগড়াছড়ি থেকে শপিং করতে পারেন। ওখানে আদিবাসীদের নিজস্ব জিনিস থেকে শুরু করে ওখানকার অনেক জিনিস পাবেন।
কি কি কিনবেন?
১. জামা কাপড়
২. বাশের তৈরী আইটেম
অত:পর ঘুরাঘুরি
সাজেক/খাগড়াছড়ি গিয়ে যা যা দেখবেন তা হল
১. রুইলুই পাড়া
২. কংলাক পাড়া
৩. হেলিপ্যাড
৪. সেলফী ব্রিজ
৫. হাজাছড়া ঝর্ণা
৬. রিসাং ঝর্ণা
৭. আলুটিলা গুহা
টিপস: গাড়ি সিলেক্ট করার সময় ড্রাইভারের সাথে উপরের সবগুলোর কথা বলে রাখবেন। আর অবশ্যই এবং অবশ্যই ভাল গাড়ি এবং দক্ষ ড্রাইভার দেখে নিবেন।
ট্যুর প্ল্যান
১ম দিন: সকালের ট্রেন কালনিতে করে ঢাকা যেতে হবে আপনাকে। সিলেট থেকে ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭ টায়। ভাড়া শোভন চেয়ার ৩২০ টাকা জনপ্রতি।ঢাকা পৌছাবে বিকাল ৩ টায়। শুক্রবার কালনী বন্ধ থাকে। তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে একটু রেষ্ট নিন। একটু ঘুরাঘুরি করে রাতের খাবার খেয়ে রাত ১০:০০ টায় আরামবাগ থেকে শ্যামলী নন এসি চেয়ার কোচে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু।
খরচ:
সিলেট থেকে ঢাকা: ৩২০ টাকা জনপ্রতি
দুপুরের খাবার: ২০০ টাকা জনপ্রতি
রাতের খাবার: ২০০ টাকা জনপ্রতি
ঢাকা টু খাগড়াছড়ি বাস ভাড়া: ৫২০ টাকা জনপ্রতি শ্যামলী নন এসি
২য় দিন: পরদিন সকালে খাগড়াছড়ি পৌছে ইজোড় রেস্টুরেন্টে নাস্তা সেরে রিজার্ভ চান্দের গাড়িতে করে চলে যাবেন বাঘাইহাট। আর্মি এস্কর্টে রিপোর্ট করার আগেই হাজছড়া ঝর্নাটা দেখে নিন যদি হাতে সময় থাকে। হাজাছড়া দেখার জন্য ১ ঘন্টা (যাওয়া-আসা মিলিয়ে) যথেষ্ট। তারপর সকাল ১০.৩০ এ আর্মি এস্কটের সাথে আনুষ্টানিক ভাবে সাজেক যাত্রা শুরু। দুপুর আনুমানিক ১ টা নাগাদ সাজেক পৌছে রুইলুই পাড়ায় পৌছে যাবেন। ফ্রেশ হয়ে দুপুরে খাবারটা খেয়ে নিন। তারপর একটু রেষ্ট নিয়ে বিকেলে হেলিপ্যাডে চলে যান। হেলিপ্যাড থেকে সুর্যাস্ত দেখুন এবং যতক্ষন খুশি সেখানে থাকুন। সন্ধ্যায় কটেজে ফিরে জম্পেস একটা বারবিউ করুন। রাত ১০:০০ টার পরে আবারো চলে যান হেলিপ্যাডে।
খরচ:
খাগড়াছড়ি গিয়ে নাস্তা: ১০০ টাকা জনপ্রতি
চান্দের গাড়ি রিজার্ভ ২ দিনের জন্য: ৯০০০/= ড্রাইভারের থাকা খাওয়ার টাকাসহ
চান্দের গাড়িতে যাওয়া যায় ৮/৯/১০ জন (গাড়ি দেখে নিতে হবে)
সাজেকে কটেজ ভাড়া: ৪ জনের কটেজ ২৫০০ টাকা (একেকটা একের রেট)
সাজেক গিয়ে দুপুরের খাবার: ২০০ টাকা জনপ্রতি
রাতের খাবার: ২৫০ টাকা জনপ্রতি (বারবিকিউ)
৩য় দিন: পরদিন খুব ভোরে সাজেকের হেলিপ্যাড থেকে/ কংলাক পাড়া থেকে মেঘের উপর নিজেকে ভাসিয়ে নিন। ওখান থেকেই দেখুন মেঘের রাজ্যের প্রথম আলোর মুখ। তারপর সাজেকের বিখ্যাত সেল্ফি ব্রিজ দেখে এসে নাস্তা সেরে নিন। এবার ফেরার পালা আবার সকাল ১০:৩০ এর আর্মি এস্কর্টের সাথে খাগড়াছড়ি ফেরা। খাগড়াছড়ি পৌছাতে দুপুর ১ টা বেজে যাবে। দুপুরের খাবারটা ইজোড় রেস্টুরেন্টে স্পেশাল কিছু আইটেম দিয়ে সেরে নিন। খাবার সেরে চলে যান রিসাং ঝর্নায়। তারপর রিসাং ঝর্না থেকে ফিরে বিকেলের আবছা আলোয় রহস্যময় আলুটিলা গুহায় ঘুরে বেড়ান। এবার আবারো খাগড়াছড়ি ফিরে ইজোড় রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার পা রাখুন ঢাকার পথে।
খরচ:
সকালের নাস্তা: ১০০ টাকা জনপ্রতি
দুপুরের খাবার: ২০০ টাকা জনপ্রতি
রাতের খাবার: ২০০ টাকা জনপ্রতি
খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা: ৫২০ টাকা জনপ্রতি
৪র্থ দিন: ভোর ৬:০০ টা নাগাদ ঢাকা পৌছে একটু ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে দুপুর ১২টার ট্রেন জয়ন্তিকায় বাড়ি ফেরা। উল্লেখ্য যে জয়ন্তিকা প্রতিদিন থাকে।
খরচ:
সকালের নাস্তা: ১০০জনপ্রতি
দুপুরের খাবার: ২০০জনপ্রতি
ঢাকা থেকে সিলেট: ৩২০ টাকা জনপ্রতি (ট্রেন)
স্পেশাল টিপস
১. সি.এন.জি বা বাইক নিয়ে যাবেন না। রাস্তা চরম রিস্কি।হঠাৎকরে গাড়ি বন্ধ হয়ে গেল বিপদে পড়বেন।
২. রিসাং ঝর্নায় নারী, শিশু এবং দূর্বলদের না যাওয়াই উত্তম। অনেক জায়গা হাটতে হবে।
৩. আলুটিলার রহস্যময় গুহায় যেতে মশাল কিনবেননা। মোবাইলের আলোই যথেষ্ট। তাছাড়া মশাল থেকে নির্গত কার্বনডাই অক্সাইড শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা করতে পারে।
৪. হাজাছড়া ঝর্ণায় যেতে বাশেঁর লাটি সঙ্গে নিবেন।
৫. রুইলুই পাড়া থেকে কংলাক পাড়া যেতে বাশেঁর লাটি, পানি এবং টিস্যু সাথে রাখবেন।
৬. সাজেকে রাতে থাকার প্ল্যান থাকলে সন্ধার আগেই ওডোমোস ক্রিম মেখে নিবেন।
৭. ব্যাকপ্যাকে কাপড় খুব কম নিবেন।
৮. শীতে সাজেক গেলে সাথে অবশ্যই মাস্ক নিবেন। ধুলা থেকে বাচঁতে পারবেন।
৯. যে কটেজে থাকবেন তাদের যাবার আগে অবশ্যই বলে রাখবেন খাবার ব্যবস্থা করে রাখার কথা।
১০. খাগড়াছড়ি যাবার আগে গাড়ি কনফার্ম করে রাখবেন।
১১. যাওয়ার সময় যা যা অবশ্যই সাথে রাখবেন।
রোদ চশমা
পারফিউম
মোবাইল চার্জার + পাওয়ার ব্যাংক
টিস্যু (কিনতে পাবেন তবে দাম বেশি রাখবে)
সাবান
শ্যাম্পু মিনি প্যাক
এডোমস ক্রিম
পেষ্ট-ব্রাশ
চিরুনী
প্রয়োজনীয় ওষুধ
হেডফোন
রবি সীম (অন্য সীমের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়না)
রেইন কোর্ট (বর্ষায় গেলে)
ডাউনলোড সেকশন
২. নিসর্গ কটেজ সাজেক রুইলুই পাড়া
৩. রক প্যারাডাইস সাজেক কংলাক পাড়া
বি:দ্র: যেকোন ভাড়া, যাত্রার সময়সূচী, ফোন নাম্বার , কোনকিছুর দাম এবং কটেজ বা রেস্টুরেন্টের মান সব সময় একই নাও থাকতে পারে। সুতরাং অবশ্যই যাচাই করবেন।