গল্পে গল্পে ইংরেজী টাইপিং
শুরুটা আমার নিজের গল্প দিয়ে হোক। আমি তখন ডিপ্লোমার ছাত্র। ইংরেজী ছোটখাটো কোন প্যারগ্রাফ নিজেই টাইপ করে নিতে পারতাম। সমস্যা বাধতো বড় লেখা কিংবা বাংলা হলে। কানামাছি ভো ভো যারে পাবি তারে ছো করে আর কতক্ষন চলাযায় বলুন। পাড়ার দোকানের ক্লাস এইট ফেইল ছেলের টাইপিং দেখে মনে হিংসার আবির্ভার ঘটলো। ক্লাস এইট ফেইল ছেলে যেটা পারে আর আমি যদি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সেটা না পারি তবে আমার চাইতে অধম আর কে হতে পারে। সেইথেকে শুরু। কিন্তু সবচেয়ে বিরক্তিকর এই জিনিসটি একদিন নিয়ে বসলে দেখা যায় তিন দিন বসা হত না। টাইপিং মাষ্টার সফটওয়্যারের কল্যানে ততদিনে a s d f g h j k l ; অক্ষরগুলো মুখস্তই হয়ে গেছে বলা চলে। আর তো এগুতে পারিনা।কি করা তা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। একদিন বেশ সাহস করে টাইপিং মাষ্টার বাদ দিয়ে সরাসরী ইংরেজী লেখা শুরু করে দিলাম। প্রথমদিকে a s d f g h j k l ; ছাড়া অন্য অক্ষরগুলো দেখে না দেখে টাইপ করতে গিয়ে টেলাগাড়ির ন্যায়গতি পেলাম। ধৈয্য ধরে একদিন দুইদিন এইরকম করে এক সপ্তাহ টাইপিং করে যা ফল পেতাম তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। টেলাগাড়ি ইতিমধ্যে নিজের অজান্তেই রিক্সায় রুপান্তর হয়ে গেছে। এর পরের কাহিনী তো শুধু এগিয়ে যাবার পালা।
অতীত থেকে এবার বর্তমানে আসি। টাইপিং শেখার আসলে কোন সহজ তরিকা নাই। কি ভয় পেলেন? ভয় পাবার কিছু নাই। যারা a,b,c,d জানেনা বা পারেনা তাদের জন্য আসলেই অনেক কঠিন এটা। আরে আপনি তো a,b,c,d পারেন। তোভয়ের কি। জোরে জোরে একটা নিশ্বাস নিন। প্রথমে আঙ্গুলের নামগুলো একটু কষ্ট করে মুখস্ত করে নিন। টাইপিং করতে এসে আঙ্গুলের নাম !! হ্যাঁ আমি বললাম বাম হাতের মধ্যমা দিয়ে D টাইপ করতে হয়। এখন আপনাকে যদি মধ্যমা খুজতে গুগলেযেতে হয় তবে তার চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে বলুন।
হাতের আঙ্গুলের নাম শেখার পর এবার আমাদের সরাসরী যুদ্ধে নামার পালা। কি আপনি প্রস্তুত তো? দুই হাতের আঙ্গুলগুলোকে একবার মুষ্টিবদ্ধ করে খুলুন। হাতের শক্তি বাড়ানোর জন্য অভিনন্দন আপনাকে। এবার নিচের চিত্রের দিকে লক্ষ্য করুন।
প্রথমে বাম হাতের
পিংকি: পিংকি আপুকে কিবোর্ডের আবুল ভাই বা A এর উপর রাখুন।
রিং: এবার বিয়ের আংটি পরে যে আঙ্গুলে নাম জানি কি ও হ্যাঁ রিং ফিঙ্গার (ভুল হলে মাফ করবেন বিয়ে করি নাই এখনো) সেটাকে সোনার S উপর রাখুন।
মিডল: মিডল ফিঙ্গার কে D এর উপর।
ইনডেক্স: তর্জনী বা ইনডেক্স ফিঙ্গার কে F এর উপর রাখুন।
থাম্ব: বুড়ো ভাই কষ্ট দেবার দরকার নাই। উনাকে স্পেস বারের উপর রাখুন।
এবার ডান হাতের পালা
থাম্ব: বুড়ো ভাই কষ্ট দেবার দরকার নাই। বাম হাতের ন্যায় উনাকেও স্পেস বারের উপর রাখুন।
ইনডেক্স: থাকবে J এর উপর
মিডল: মিডল ভাই থাকবেন K এর উপর
রিং: আহা রিং ভালবাসার রিং L এর উপর রাখুন
পিংকি: ছোটখাটো মানুষ ; এটার উপর রাখুন। ; এটার নামটা জানি কি? কোলন এর অর্ধেক সেমিকোলন।
হাতধরা শেষ এবার টাইপিং এর পালা। জ্বি না। শুধু হাত ধরলেই চলবেনা মনটাও যে বিনিময় করতে হবে। কেমনে? গভীর ভালবেসে সেগুলোকে মেমোরীতে সেইভ করে নিতে হবে। এতটাই আয়স্ত করতে হবে যাতে করে চোখ বন্ধ করে আপনি আঙ্গুলনাড়িয়ে বলতে পারেন বাম হাতের পিংকিতে আবুল ভাই (A) রিং আঙ্গুলে সোনার (S) রিং। বাকীগুলোকে আপনার মতো করে না হয় মিলিয়ে নিন।
মন বিনিময় শেষ এবার বিসমিল্লাহ বলার পালা। প্রথমদিকে কিছুদিন শুধুমাত্র এই অক্ষরগুলো প্র্যাকটিস করতে থাকুন। সেই কিছুদিন হতে পারে সবোর্চ্চ ১ সপ্তাহ এর বেশী নয়। টাইপিং সফটওয়্যার হিসাবে আপনার যেটা ভাল লাগে সেটা দিয়েইপ্র্যাকটিস করুন। যখনই মনে হবে আপনি a s d f g h j k l ; এর সাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন তখন কিবোর্ডের Shift বাটনে ধরে আবার প্র্যাকটিস করুন। Shift বাটনে কেন ধরে করবেন? সবকিছু কি বলে দিতে হয় করেই দেখুন।
ধরে নিলাম আপনি ছোট-বড় a s d f g h j k l ; শিখে নিয়েছেন। তো এখন কি করবেন? আসলেই চিন্তার বিষয়। বাকী অক্ষরগুলো কোথায় কোন আঙ্গুল যাবে সেটাও তো শিখতে হবে তাইনা। লক্ষ্য করে দেখুন আপনি যে অক্ষরগুলো শিখেছেনসেগুলো কিন্তু একদম মাঝের অক্ষর। কনফিউসড? কিবোর্ডের a s d f g h j k l ; এর ঠিক উপরের সারি এবং ঠিক নিচের সারিতে আরে কিছু লেটার রয়েছে দেখেছেন কি। যদি সেটা দেখেই ফেলেন তবে এবার এই চিত্রটি দেখুন।
যদি চিত্র দেখে একদম কিছু বুঝে না থাকেন তবে বলি শুনুন। আপনার পিংকি আপু এবার আবুল ভাই (A) সাথে মন বিনিময়ের পাশাপাশি উপরের শ্রেনীর বড়লোক কাদির ভাই (Q) এবং নিচু জাতের জিয়ার (Z) সাথে টাংকি মারছেন। সহ্য করাযায় বলূন? আসলেই সহ্য করা মতো নয়। আর তাই একটু একটু করে আগান। প্রথমে কাদির ভাইকে নিয়ে প্র্যাকটিস করুন অথবা কম জাত জিয়াকে নিয়ে। যাত্রা পথে আর কোন মাধ্যম (টাইপিং সফটওয়্যার) দরার দরকার নাই। আপনাদের কারোনামের সাথে উপরে উল্লেখিত নামগুলো মিলে গেলে আমি দু:খিত।