ইতিহাসের পাতা থেকে
আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রচিত বেশ কয়েকটি বই পড়লাম।নেটে অনেক ঘাটাঘাটি করলাম। সরাসরী মুক্তিযোদ্ধা এবং তখনকার সময়ের মানুষের সাথে কথা বলে মিলাতে চেষ্টা করলাম সবকিছু।প্রাপ্ত ক্ষুদ্রঞ্জান থেকে এবং আমার অতীক্ষুদ্র বিচার বিশ্লেষন থেকে নতুন প্রজন্মের জন্যে একটি উপশংহার টানা উচিত বলে মনে করছি। তারই আলোকে এই লেখাটি রচিত। এই লেখায় কোন মানুষ কিংবা দলের প্রতির কোন ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার বিশ্লেষনে যে্টি সত্য বলে মনে হয়েছে তারই সারাংশ এখানে তুলে ধরা হল। তারপরও বলে রাখা ভাল ১৯৭১ এর প্রেক্ষাপটে আমরা আর কখনো ফিরে যেতে পারবোনা। তাই তখনকার সময়ের অনেক নেতার অনেক সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ভুল হিসাবে মনে হতে পারে।আসলেই তাদের তখন পরিস্থিতিতে দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে সেটি সঠিক নাকি ভুল ছিল তা বিচার করা অসম্ভব। তাই সকল নেতার সকল সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই লেখার অবতারনা।
প্রাককথা
প্রথম কথা হচ্ছে ১৯৭১ এর যুদ্ধটা ছিল রাজনীতিক এবং ক্ষমতার যুদ্ধ।৭০ এর নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয়ী আওয়ামীলীগ চেয়েছিল ক্ষমতা এবং একটু স্বাধীনতা অপরদিকে মুসলিমলীগেরও দরকার ছিল ক্ষমতা সাথে ছিল বড়ত্বের অহংকার।
যুদ্ধ যেভাবে শুরু?
শুরুটা হয় মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ দিয়ে।নির্বাচনের ফলাফলটা দেখে পশ্চিম পাকিস্তানীদের ক্ষমতা হারার ভয় কাজ করছিল মনে। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের অফিস,আদালত থেকে শুরু করে সর্বত্র তারা ক্ষমতা দখলে লিপ্ত ছিল। অপরদিকে ক্ষমতা চলে যাওয়া এবং সন্দেহের যাতাকলে পিষ্ট পূর্ব পাকিস্তানীরা তখন থেকে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন বুনতে থাকে। শুরু হয় মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ।
অত:পর..
রাজনীতিক নেতারা যখন ব্যর্থ তখন সাধারন জনগনই যুদ্ধের ঘোষনা রচনা করে (যেটা মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচার করেন) শুরু করে গেরিলা হামলা। বেজে উঠে যুদ্ধের ডামঢোল। কিন্তু একটা আধুনিক বাহিনীর সামনে নিরস্ত্র বাঙ্গালীরা অসহায় হয়ে পড়ে।দরকার হয় সাহায্যের।
ভারতের স্বার্থ
দু’টুকরো পাকিস্তান মাঝে ভারত ব্যাপারটা মাথাব্যাথা হয়ে দাড়ায় ভারতের জন্য। এখানেও কাজ করে ক্ষমতার লড়াই। দুটো পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষে এগিয়ে আসে ভারত। বাঙ্গালীর হয়ে যুদ্ধ করে তারা। নিরস্ত্র বাঙ্গালীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখে নতুন দেশের।
বেইমান জাতি
যুদ্ধকালীন সময়ে দু’টা অদ্ভুদ দলের আবির্ভাব ঘটে। একদল মানুষ মুক্তিযোদ্ধর নাম করে প্রশিক্ষন নিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র নিযে এসে চড়াও হয় স্বজাতীর উপর। অন্যদিকে আরেকদল বেইমান পাকিস্তানীদের সাথে হাত মিলিয়ে চড়াও হয় নিজ ভাইয়ের উপর। বিষ্ময়কর হলেও সত্যি দুটো দলই ছিল আমাদের বাঙ্গালী জাত ভাই!
আওয়ামীলীগের অবদান
যদিও যুদ্ধের শুরুটা রচিত হয় সাধারন মানুষের ক্ষোভ থেকে কিন্তু যুদ্ধের ম্যানেজমেন্টে আওয়ামীলীগের অবদান অনষীকারর্য। অনেক ক্ষেত্র হয়তো তাদের ব্যর্থতা ছিল। আমরা হয়তো বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ কে বিচার করে আওয়ামীলীগের অসংখ্য ভুল ধরতে পারি কিন্তু ১৯৭১ এর প্রেক্ষাপটে সেটি ভুল ছিল কিনা সেটা বলা দুষ্কর। তাই তাদের সকল নেতাকে সম্মান জাননো উচিত।
নিহত মানুষের সংখ্যা
মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে নিহতের সংখ্যা নিয়ে। ৩০ লাখ নাকি ৩ লাখ সেটি নিয়ে আজো দন্দ লেগে আছে। যদিও একজন মানুষ নিহত হওয়াটা কাম্য নয় তথাপী এটা নিয়ে দন্দটাও শোভনীয় নয়।তারপরও নতুনদের ইতিহাস জানানোর প্রেক্ষিতে এটা বলতে হচ্ছে যে, নিজ পরিবার,বংশ,গ্রাম বা শহর এবং বন্ধু-বান্ধবদের কয়জন আত্মীয় খুন হয়েছিলেন সেটার হিসাব বের করতে। আশা করছি এতে করে বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
স্বাধীন বাংলাদেশ
শেখ মুজিবের একটা কথা থেকেই তখনকার অবস্থা উপলব্ধি করা যায়। তিনি বলেছিলেন সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। শেখ মুজিব ভাল মানুষের রাজনৈতীক নেতা হিসাবে আদর্শ ছিলেন হয়তো কিন্তু চোরের নেতা হিসাবে তিনি ছিলেন চরম ব্যর্থ। তিনি যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন চোরদের শায়েস্তা করার তারাই একসময় হয়ে উঠেছিল চোরের সর্দার।
প্রেক্ষাপট ১৯৭৫
সাধারন মানুষ যারা রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলনা যুদ্ধে যাবার তাদের প্রেরনা ছিল একটি স্বাধীন সমৃদ্ধ শোষনমুক্ত বাংলাদেশের। কিন্তু ১৯৭১ পরবর্তী প্রেক্ষাপট ছিল অতান্ত্য ভয়াবহ। সাড়ে তিন বছর পরও যখন ক্ষমতাধারীরা কিছু করতে পারছিলেননা তখনই তাদের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ফলে আবারো রক্ত ঝরে। লক্ষ্য করে দেখবেন শেখ মুজিবের হত্যাকারী দলের ৭ জনই ছিলেন একেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুজিব হত্যার পর তারা কেউই দেশের ক্ষমতায় বসেনি।
লেখাটি ক্রমশ ক্রমবর্ধমান…