নবজাতকের জন্য কেনাকাটা
১. মশারি (১টি): বাচ্চাকে মশার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একটি ভাল মানের মশারির কোন বিকল্প নাই। এক্ষেত্রে আপনি কৃপনতা করবেননা। সবচেয়ে দামী মশারীটা কিনে আনবেন। মনে রাখবেন মশারী কিন্তু একবারই কিনবেন। তাই বাচ্চা জন্মের আগেই এটি কিনে রাখুন।
২. ইউরিন ম্যাট (২ টি): বাচ্চা জন্মের আগেই অন্তত ২টি ইউরিন ম্যাট কিনে রাখুন। ২টি কিনে রাখার কারণ হল একটি কোন কারনে ময়লা হলে অপরটি তখন ব্যবহার করা যাবে।
৩. শিমুল তুলার বালিশ (১টি): বাচ্চা জন্মের আগেই শিমুল তুলা দিয়ে একটি বালিশ বানিয়ে নিবেন।
৪. ছোট কাঁথা (১০ টি): বাচ্চার জন্মের পর পরই যে জিনিসটা লাগে সেটা হল কাঁথা। আর এই জিনিসটাই সবচেয়ে বেশি লাগে। কেননা বাচ্চা প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ বারের অধিক প্রসাব/পায়খানা করবে। সো বুঝতেই পারছেন আপনাকে এই কাঁথা ঘনঘন বদল করতে হবে। অন্তত ১২টি ছোট কাঁথা বানিয়ে রাখুন বা কিনে নিন। প্রয়োজন অনুসারে আরো কিনবেন।
৫. বাচ্চার কাপড় (৪ সেট): বাচ্চা জন্মের পর বাচ্চার কাপড় অত্যাবশকীয় একটি জিনিস। যেহেতু আপনি পূর্বে থেকে কিনে রাখবেন তাই বেশি না কিনে অন্তত ৪ সেট কিনে নিবেন। সাথে খেয়াল রাখবেন কোন সময় বাচ্চার জন্ম হবে সেটা। যদি গরমের সময় বাচ্চার জন্ম হয় তবে বেশি কিছু কিনতে হবেনা। আর যদি শীতে জন্ম হয় তবে অতিরিক্ত হিসাবে হাত মোজা, পা মোজা, টুপী, গরমের কাপড় কিনতে হবে।
৬. বাচ্চার বিছানা সেট (১টি): নবজাতকের ঘুমানের জন্য ১টি বালিশ, নরম তোষক এর সম্মিলিত নাম হল বিছানা সেট। এটি একটি কিনে রাখবেন।
৭. টাওয়াল (১টি): একটি নরম এবং ভাল মানের টাওয়াল কিনে রাখুন। এটি দিয়ে আপনি নবজাতককে কোন জায়গায় মুভ করানো থেকে শুরু করে ঘুমন্ত অবস্থায় তার শরীর ডেকে রাখতে পারবেন।
৮. বেবি ওয়াইপস ( ২ প্যাকেট): বাচ্চা জন্মের পর পরই যে জিনিসটা লাগবে সেটা হল বেবি ওয়াইপস বা ভিজা টিস্যু। এটি আপনার নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চার টয়লেট পরিষ্কার থেকে শুরু করে গায়ের ময়লা পরিষ্কারের জন্য ভিজা টিস্যুর কোন বিকল্প নাই। আর তাই বাচ্চা জন্মের পূর্ব থেকে ২ প্যাকেট বেবি ওয়াইপস কিনে রাখুন। চেষ্টা করবেন ভাল কোম্পানীর ভাল প্রোডাক্ট কেনার। বোতলের বেবি ওয়াইপস থেকে প্যাকেটের বেবি ওয়াইপস ব্যাবহার করা সহজ। বাজারে স্যাভলন, NeoCare সহ আরে বিভিন্ন কোম্পানীর বেবি ওয়াইপস পাওয়া যায়। দাম ২০০ টাকার আশে পাশে হবে প্রতি প্যাকেট। আর একটি প্যাকেটে ১২০ এর মত ওয়াইপস থাকে। আমার পারসোনাল রিকোমেন্ড হল NeoCare Baby Wipes কেনা। কারণ এটির মান যথেষ্ট ভাল। নিন্মমানের বেবি ওয়াইপস ব্যাবহারের চাইতে কুুসুম গরম পানি ব্যবহার করা উত্তম। কেননা, নিন্মমানের বেবি ওয়াইপস আপনার শিশুর চর্ম রোগের কারন হিসাবে দাড়াবে। বাচ্চা জন্মের আগে অন্তত ২ প্যাকেট বেবি ওয়াইপস কিনে রাখুন।
৯. ডায়াপার (১ প্যাকেট): নবজাতকের ডায়াপার পরাবেন কিনা সেটা নির্ভর করে আবহওয়ার উপর। সাধারনত গরমের দিনে বাচ্চার জন্ম হলে ডায়াপার না পরানোই উত্তম। এতে করে বাচ্চার শরীরের অতিরিক্ত গরম লেগে চুলকানী দেখা দিতে পারে। তবে শীতের সময় জন্ম হলে ডায়াপার অবশ্যই পরাবেন। কেননা এটি মলমূত্র ধারনের পাশাপাশি আপনার বাচ্চার শরীর গরম রাখতে সহায়তা করবে। ডায়াপার ব্যবহার করুন আর নাইবা করুন ১ প্যাকেট ডায়াপার অবশ্যই কিনে রাখবেন। যেকোন সময় ডাক্তার দেখানো কিংবা দুরের যাত্রায় কাজে দিবে। আমার পারসোনাল রিকোমেন্ডেশন হল Molfix এর ডায়াপারটা কিনবেন। দাম সাধারনত ৭০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে হবে প্রতি প্যাকেট।
১০. নেইল কার্টার (১টি): সাধারনত বড়দের নেইল কার্টার দিয়ে বাচ্চাদের নোখ কাটা যায়না। আর তাই বাচ্চাদের উপযোগী নেইল কার্টার কিনে নিতে হয়। এটি খুবই দরকারী একটি জিনিস। বিশেষ করে যে সকল বাচ্চা লম্বা নোখ নিয়ে জন্মায় তাদের নোখ তাড়াতাড়ি কেটে দিতে হয়। নতুবা নোখ দিয়ে শরীরে চামড়া ছিলে ফেলে।
১১. গামলা (১টি): বাচ্চাদের গোসল করানোর গামলাটা বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর কিনতে পারেন। এতে কোন তাড়াহুড়ার কিছু নাই। জন্মের সাথে সাথে কেউ বাচ্চাকে গোসল করায় না। অপেক্ষাকৃত কম দামের একটি গামলা কিনে নিবেন।
১২. ওলিভ ওয়েল: বাচ্চাদের ত্বক খুব সেনসিটিভ হয়। অন্য কোন তেল বা লোশন ব্যাবহার না করে ওলিভ ওয়েল ব্যাবহার করাটা তাই উত্তম। আমার পারসোনাল রিকোমেন্ডেশন হল বাহিরের দেশ থেকে ওলিভ ওয়েল আনাতে পারলে খুব ভাল হয়।
আরে কিনতে পারেন
১. চিরুনী: বাচ্চার চুল আচড়ানোর জন্য একটি চিরুনী কিনে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাল মানের দামী চিরুনী অবশ্যই কিনবেন যদি চুল আচড়াতে চান।
২. নেজাল এসপিরেটর: বাচ্চাদের সর্দি হলে ভুগান্তির অন্ত থাকেনা। এক্ষেত্রে নাকের ভিতর থেকে সর্দি ফেলে দেওয়ার জন্য নেজাল এসপিরেটর কিনে রাখুন একটা। এটি সাধারনত ফার্মেসী বা সার্জিক্যাল স্টোরে পাবেন। দাম ২৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।
৩. বেবি বাউন্সার: জিনিসটা অনেকটা দোলনার মত কিন্তু পুরোপুরি দোলনা নয়। কিছু কিছু বেবি বাউন্সার প্রায় দোলনার মত আবার কিছু কিছু বাউন্সার চেয়ার আছে। বাচ্চারা বাউন্সারে বেশ আরাম করে ঘুমাতে পারে। তবে মনে রাখা উচিত ঘুমন্ত বাচ্চাকে কিন্তু বাউন্সারে না রাখাই উত্তম। কেননা ঘুমের মাঝে বাউন্সার দুলে উঠলে বাচ্চা বেশ ভয় পাবে। তাছাড়া বাচ্চাকে বাউন্সারে একা রেখে যাওয়া উচিত নয়। বেবি বাউন্সার সাধারনত নবজাতক থেকে শুরু করে ৬ মাস পযর্ন্ত ব্যবহার করা যায়।
৪. বেবি ব্যাথার: এটি একটি চমৎকার জিনিস। বাচ্চাকে রোদ খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল, গা মুছানো, তেল মাখানোর জন্য বেবি ব্যাথার ব্যবহার করতে পারেন। এটিও নবজাতক থেকে শুরু ৬ মাস পযর্ন্ত ব্যবহার করা যায়।
৫. পটি: বেবি পটি সাধারণত বাচ্চার বয়স ১৮ মাস তথা ভালভাবে বসা শেখার পর ব্যবহার করা উচিত। প্রথম দিকে বাচ্চা পটিতে বসতে চাইবেনা। আপনি থাকে বসানো শিখাতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে অভ্যস্থ হয়ে যাবে।
৬. ওয়াকার: বাচ্চা বয়স ৭ মাস হবার পর থেকে তাকে হাটঁতে শিখানোর জন্য ওয়াকার জরুরী। সুতরাং এটিও রাখতে পারেন আপনার কেনাকাটার লিষ্টে।
৭. বেবি কেরিয়ার: যারা ঘনঘন ট্র্যাভেলিং করেন তাদের জন্য আদর্শ একটি জিনিস হচ্ছে বেবি কেরিয়ার। আপনি যদি একজন ট্র্যাভেলার হয়ে থাকে তবে অবশ্যই রিকোমেন্ড করি একটি বেবি কেরিয়ার কেনার জন্য।
বাচ্চার মায়ের জন্য যা যা কিনবেন
১. ম্যাক্সি: বাচ্চার জন্মের আগে অবশ্যই বাচ্চার মায়ের জন্য ম্যাক্সি কিনতে ভুলবেননা। অপারেশনের এর সময় এটি কাজে লাগবে। বেশি কেনার দরকার নাই। সাধারণত ৪/৫ টা কিনলেই চলে। আর ম্যাক্সির দাম ও সস্তা। সাধারনত ৩০০ টাকায় ম্যাক্সি পাওয়া যায়।
২. ম্যাটারনিটি প্যাড: বাচ্চার জন্মের পর মায়ের প্রচুর রক্তক্ষরন হয়। সেটির জন্য আপনাকে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। হাসপাতালে যাওয়ার আগেই ৪ প্যাকেট ম্যাটারনিটি প্যাড ব্যাগে ঢুকাতে ভুলবেননা। প্রতি প্যাকেটের দাম পড়বে ১০০ টাকা।
৩. ম্যাটারনিটি বেল্ট: সিজার কিংবা নরমাল ডেলিভারি হোক ম্যাটারনিটি বেল্ট মাকে পরতেই হবে। এক্ষেত্রে বাচ্চা জন্মের আগেই সাইজ অনুযায়ী একটি ম্যাটারনিটি বেল্ট কিনে নেওয়া উত্তম। এটি সাধারনত ফার্মেসী বা সার্জিক্যাল স্টোরে পাবেন। দাম ৩০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।