লজ্জার কাহিনী
রায়হান ভাইয়ের মত কৃপন লোক আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। খাওয়ার ক্ষেত্রে বেচারা মুক্তহস্ত হলেও চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভয়ানক কিপটা। একবার উনি কি একটা সমস্যায় জানি পড়েছিলেন। আমার উপদেশ চাইলেন। পড়লাম মহা বিপদে। উপদেশ না হয় ফ্রি দিলাম কিন্তু ফ্রি ডাক্তার কই পাই । পরে অনেক চিন্তা ভাবনা করে উনাকে নিয়ে হামদর্দ ফ্রি চিকিৎসালয়ে গেলাম। উনার সিরিয়াল আসার পর আমাকে বাহিরে রেখে উনি একাই ডাক্তারের কাছে গেলেন। আমি তখন বাহিরে বসে বসে সিলেটের লোকাল কিছু পত্রিকা পড়ছিলাম। হঠাৎ দেখি রায়হান ভাই বাহিরে এসে ডাক্তারের চেম্বারের দরজা জানালা লাগাচ্ছেন। ভীষন ঘাবড়ে গেলাম। পরে দেখি চেম্বার থেকে বের হয়ে কি সব রোগের জন্য ২৪০০ টাকার ওষুধ নিলেন হামদর্দ ফার্মেসী থেকে। আমি তখন হাসি থামাতে পারছিলামনা। উনাকে বার বার না করা সত্ত্বেও ওষুধ কেনা থেকে বিরত রাখতে পারলাম না। যাহোক বাড়িতে নিয়ে ওষুধগুলো যত্ন করে একটি ড্রয়ারে তালবদ্ধ করে রাখলেন। এত ওষুধ দেখলে যে উনার খবর হয়ে যাবে তাই ভয়ে কোন ওষুধও আর খেতে পারলেননা। একদিন কোন এক কারনে উনার বড় ভাই ড্রয়ারটা খুলে অবাক। সরাসরি মায়ের কাছে গিয়ে জানালেন ব্যপারটা। তারপর খালা উনাকে ডেকে নিয়ে ভালমন্দ প্রশ্ন করতে লাগলেন। বেচারা বুঝে গেলেন কাহিনী। আবারো এসে আমাকে ধরলেন। এবার হঠাৎ মনে পড়লো ডা. মুশফিক ইমতিয়াজ ভাইয়ের অনলাইনে ফ্রি চিকিৎসার কথা। সাথে সাথে তাকে দিলাম ওই লিংক। ওই দিন রাতে দীর্ঘক্ষন মুশফিক ভাইয়ের সাথে তার চ্যাট হলে ফেসবুকে। তারপরের দিন দেখি বেচারা একা একা হামদর্দে গিয়ে ওষুধগুলো ফেরত দিয়ে টাকা আনার তারিখ সম্বলিত মানি রিসিট নিয়ে আসলেন।
এবার আসি শিপারের কাহিনীতে। দেশে থাকতে আমার এই বন্ধুটি সব সময় লিকেলিকে বাশেঁর মতো চেহারার অধিকারী ছিল। আমরা যেখানে মেদ ভুড়ি কি করি বলতাম সে সেখানে মেদ ভুড়ির নাই জুড়ি স্লোগানে ব্যাস্ত ছিল। একবার সিলেটে গিয়ে আমাকে ধরলো মোটা হবার টিপস দেওয়ার জন্য। আমি তো আর ডাক্তার নই তাকে কি পরামর্শ দিবো। সরাসরি নিয়ে গেলাম ফ্রি চিকিৎসালয় হামদর্দে। দুপুর বেলা দু’জন ডাক্তারের একজন ছিলেন চেম্বারে। বন্ধুটি আমার চাঁদ কপালী। ওর ভাগ্যে পড়লো মহিলা ডাক্তার। রায়হান ভাইয়ের কাহিনীতে আমি আর সাহস পেলামনা চেম্বারে ঢুকার। একটু পর শিপার যখন চেম্বার থেকে বের হয়ে আসলো তখন দেখি সে ঘেমে অস্থির। কাহিনী জানতে চাইলাম। ওই মহিলা নাকি তাকে এমন সব পারসোনাল প্রশ্ন করেছে যে বেচারা কোনক্রমে লজ্জায় সেখান থেকে পালিয়ে আসছে। তারপর কিছুক্ষন আমার উপর রাগ ঝাড়লো। আমিও উল্টো ভাব নিয়ে বললাম দুনিয়ার মানুষ মোটা হবে আর আমার উপর দিয়ে সব ঝড় যাবে। বেচারা এখন ফ্রান্সে। আমার মত মেদভুড়ি কি করি স্লোগানে ব্যাস্ত।