জীবনের গল্প - হাই স্কুল
হাই স্কুলের পথে ১৯৯৮
লিখবো লিখবো করে আর লেখা হচ্ছিলনা।সময়ের সাথে সাথে সব কিছু দ্রুত ভুলে যাচ্ছিলাম। আর তাই সময় ক্ষেপন না করে লিখতে বসে গেলাম। প্রাইমারি স্কুলের গন্ডিপেরিয়ে হাই স্কুল জীবনে পদার্পন করতেই মনের মধ্যে বেশ ভয় কাজ করতে লাগলো। পরিচিত গন্ডির বাহিরে অনেক বড় স্কুল অনেক টিচার কেমনে সবকিছু ম্যানেজ করবোচিন্তায় পড়ে গেলাম। প্রথমদিন আব্বুর সাথে কাঠালতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে যাই। বলে রাখা ভাল আব্বু এক সময় এই স্কুলের টিচার ছিলেন। প্রথমদিন যখন ভর্তী হই তখনআমাকে একটি বেতন কার্ড দেওয়া হয়েছিল। আমার রোল দেওয়া হয়েছিল ৩৪। মনে আছে আব্বু আমার বেতন কার্ডের সব কিছু ফিলআপ করেছিলেন। ছোট্ট একটা ভুলকরেছিলেন তিনি। আমার নাম আব্দুল্লাহ আল এমরানের জায়গায় আব্দুল্লা আল এমরান লিখেছিলেন। পরে অবশ্য আমি সুন্দর করে আব্দুল্লা এর সাথে একটা ‘হ’ যুক্তকরেছিলাম। প্রথমদিন আর ক্লাস হয়নি। আব্বুর সাথে বাড়ি ফিরি অনেক আনন্দে। বড় হবার আনন্দে।
ক্লাস সিক্স
কবে ক্লাস শুরু হয়েছিল আমার মনে নাই। প্রথমদিনের প্রথম ক্লাসে সম্বভত আমরা শফিক স্যারকে পাই। স্যার অমায়িক মানুষ। একদম শিশুদের মতো মত মন। আমার বা আমাদের কারোরই মনে হয়নি আমরা ছিলাম তার অপরিচিজন। তিনি বুঝালেন এটা হাই স্কুল। আমরা বড় হয়েছি। সুতরাং আচরনেও আমাদের বড় হতে হবে। তারপর শিরিন ম্যাডাম আর মোল্লা স্যারকে পেয়েছিলাম। উভয়ই আমাদের নানা গাইড লাইন দিয়েছিলেন। যাহোক হাই স্কুলের ভয়টা আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগলো। একটা বড় সুবিধা পেয়েছিলাম আমরা। আমরা যারা কাছের কাঠালতলী প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছিলাম যেহেতু সংখ্যায় বেশি ছিলাম আর তাই কাঠালতলী হাই স্কুলে উঠে আমাদের বেশ দাপট ছিল। অন্য গ্রামের ছেলে-মেয়েরা বেশ সমীহ করতো আমাদের। বড় হবার সাথে সাতে দাপট কি জিনিস আস্তে আস্তে বুঝতে শিখলাম। সেই সাথে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে লাগলাম।
ক্লাস সিক্সের ক্লাস শুরুর দিকে হঠাৎ নবীল নামের একটা চশমাওয়ালা ছেলের আবির্ভাব। ও ছিল আমাদের মাঝে প্রথম চশমাওয়ালা ছেলে। আমাদের স্কুলের হেড স্যার ছিলেন মোছব্বির আলী স্যার । এই চশমাওয়ালা ছেলেটা ছিল তার নাতি। অন্যদিকে সে আবার শফিক স্যারের ভাইয়ের ছেলে। তাই এখানে দাপট চললোনা। তার সাথে বেশ লিয়াজো রাখতাম। অচীরেই সে আমার আর রেজার বন্ধুর লিষ্টে যুক্ত হল।
ক্লাস সেভেন
ক্লাস সিক্সের পর যখন সেভেনে উঠলাম তখন বন্ধুর লিষ্টটা বেশ লম্বা হয়ে গেল। প্রাইমারি স্কুলের দীর্ঘ ৫ বছরের বন্ধুদের সাথে লিষ্টে ক্লাস সিক্সের অন্য স্কুল থেকে আসা ছেলেদের নামও যুক্ত হল। মেয়েরা অবশ্য কখনো আমার বন্ধু ছিলনা। মেয়েদের থেকে বেশ খানিকটা দূরে রাখতাম আমি নিজেকে। স্কুলে তখন চোখ টিপা ব্যাধি মহামারি আকার ধারণ করেছিল। প্রায়ই শুনা যেত অমুক তমুককে চোখ টিপা মেরেছে। আর এই চোখ টিপা নিয়ে স্কুল থেকে গ্রাম সবত্র চায়ের কাপে আলোচনার ঝড় উঠতো। ক্লাস সেভেনে আমি গনিতের জন্য আলাদা একটা খাতা করেছিলাম। সেই খাতায় শুধু অংক করতাম। মনে আছে প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় আমি একা কেবল ৩৩ পেয়েছিলাম। বিষয়টা আমার জন্য বেশ রোমাঞ্চকর ছিল। কেননা গনিতে আমার ডাবল জিরো পাবার বেশ ভাল রেকর্ড ছিল। তাছাড়া ক্লাস সেভেনে প্রথম আমি স্কুল থেকে পালাই। সেদিন সারাটা দিন আমার জন্য ছিল চরম বিরক্তিকর। কিছুটা সময় আনোয়ারের সাথে কলাগাছের ভেলা নিয়ে পানিতে খেলা করি তারপর তো আর সময় যেন কাটতে চায়না। সেদিন থেকে প্রতিজ্ঞা করি আর কখনো স্কুল থেকে পালাবোনা। আর কখনো স্কুল পালাইনি।
ক্লাস সেভেনের আরেকটি ঘটনা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। স্কুলে তখন আমাদের পানি পান করার একমাত্র ব্যবস্থা ছিল টিউবওয়েল। ক্লাসে কারো পানির তৃষ্ণা পেলে স্যারকে বলে টিউবওয়েলে গিয়ে পানি পান করতে হত। একবার আমি আর আমার এক ফ্রেন্ড ক্লাস চলাকালিন অবস্থায় পানি পান করার জন্য স্যারকে বলে টিউবওয়েলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি সুন্দর একটা কলম টিউবওয়েলের পাশে রাখা। সাধারনত টিউবওয়েলে এসে অনেকে পানি পান করার সময় হাতে থাকা কলমটা আশেপাশে কোথাও রাখতো তারপর যাবার সময় সেটা নিতে ভুলে যেত।কলমটা দেখে বেশ সুন্দর লাগলো। কিন্তু অন্যের জিনিস তো আর নেওয়া যায় না। ধরা খেলে মান ইজ্জত কা সাওয়াল। কলম যেমন ছিল ঠিক তেমন রেখে টিউবওয়েল থেকে ফেরত আসার পথে দেখি সমছ যাচ্ছে পানি পান করতে। সাথে থাকা বন্ধুটিকে বললাম দেখ কেমন করে সমছকে দিয়ে কলমটি নিয়ে আসি। সমছ কাছে আসতে বললাম আমার বন্ধু কলমটা টিউবওয়েলে ফেলে আসছি তুই যদি একটু কষ্ট করে নিয়ে আসতে। সাথে সাথে সমছের উত্তর আমি তোর চাকর নাকি আমি তোর কলম কেন নিয়ে আসবো। এবার তাকে সরাসরি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বসলাম। বললাম তুই না আমার বন্ধু। বন্ধু হয়ে বন্ধুর জন্য এই সামান্য কাজটা করতে পারবেনা? আর যায় কই বেচারা। ও এবার বললো তাহলে ঠিক আছে নিয়ে আসবো। এরপর দেখি সত্যি সত্যি সমছ কলমটা নিয়ে আসছে। আমি আর বন্ধু হাসতে হাসতে ততক্ষনে শেষ।
ক্লাস এইট
যখন ক্লাস এইটে উঠলাম তখন আমাদের মধ্যে বেশ একটা সিনিয়র সিনিয়র ভাব কাজ করলো। আমাদের তখন ইংরেজির ক্লাস নিতেন জহির উদ্দিন স্যার। হেড স্যার আমেরিকাতে থাকায় উনি তখন ছিলেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত হেড । সবাই উনাকে এতটাই ভয় পেত যে আড়ালে টাইগার নামে ডাকতো। আমার মুখস্ত বিদ্যা শক্তি মাশাআল্লাহ বেশ ভাল ছিল। বড় বড় অংক যেখানে মুখস্ত করে ফেতলাম সেখানে ইংরেজি ছিল ডাল ভাত। আর তাই স্যারের কাছে তেমন ধরা খেতে হতনা। অবশ্য তখন আমি একটু সাহিত্যমনা ছিলাম। নিজে নিজে ছড়া লিখে ফেলতাম। একবার বাংলা পরীক্ষায় বৃষ্টির রচনায় আমার নিজের একটি ছড়াকে তাইতো কবি বলে বলেছেন বলে লিখে দিয়ে আসছিলাম। সেবার পরীক্ষায় বাংলায় ৮১ নাম্বার পেয়েছিলাম। ক্লাস এইটে আবার বৃত্তি নামক প্যারা শুরু হল। আমি অবশ্য সেই প্যারা থেকে নিজেকে কোনক্রমে মুক্ত রাখলাম। তাছাড়া তখন আমি সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায়ও বেশ আসক্ত ছিলাম। অনেক সময় আমার পরীক্ষা চলতো দেখা যেত আমি মাঠে প্র্যাকটিস করছি। আমার বন্ধু রেজাউল মারাত্মক সুন্দর বলিং করতো। স্কুলে তার বলিং দেখার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো। ইমন ছিল অপেনিং ব্যাটম্যান। সমছ অলরাউন্ডার। খেলাধুলার এই নেশা আমাকে এতটাই আসক্ত করেছিল যে বার্ষিক পরীক্ষায় ইতিহাসের সেরা খারাপ রেজাল্ট করেছিলাম সেবার আমি।
ক্লাস এইটে থাকাকালিন সময়ে আমার বন্ধু ইমন আবার নতুন করে প্রেমে পড়েছিল। মেয়েটির আমাদের জুনিয়র ছিল।স্কুলের পাশেই ছিল ওদের বাড়ি। বাংলার ঢালিউডের আকাশে তখন নায়িকা পূর্ণিমার আবির্ভাব। ইমন ওকে নায়িকা পূর্ণিমার ফটোকপি বলতো। বেশ কয়েকদিন সে পূর্ণিমার ফটোকপির পিছনে ঘুরাঘুরি করে। সম্বভত পূর্ণিমার মনের গ্রিন সিগনাল না পেয়ে বেচারা ইমনের প্রেমে লাল সিগনাল জ্বলে উঠে। এরপর অবশ্য সে পুনরায় আরেকটি প্রেমে পড়েছিল। সেই মেয়েটিও জুনিয়র ছিল। আফসোস সেটিও ব্যার্থ হয়েছিল।
ক্লাস নাইন
ক্লাস এইটে ইতিহাসের সেরা রেজাল্ট করে কোনক্রমে ক্লাস নাইটে উঠি।নিজের মধ্যে ভাবনা জাগে এই রকম রেজাল্ট আর করলে তো পরিবারের ইজ্জত ধূলায় লুটাবে। আব্বু বোর্ড স্ট্যান্ড করা স্টুডেন্ট আর তার ছেলে কিনা এস.এস.সি ফেইল! মনে ঝড় উঠে।ট্রাকের পেছনে থাকা ১০০ হাত দূরে থাকুন বানীটাকে খেলাধুলার পিছনে লাগিয়ে নেই। স্থায়ী ভাবে ক্রিকেট ব্যাট তুলে রাখি। নিজেকে একজন অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসাবে ঘোষনা করি।এবার পড়াশুনায় মন দেই। যেহেতু্ আমি বাউন্ডুলে ছিলাম আর তাই আমাকে সায়েন্সে দেওয়ার রিস্ক নেওয়া হলনা। বিজ্ঞানের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করা হল।সবাই ক্লাসের ফাঁকে সায়েন্স রুমে যায় কি সব এক্সপেরিমেন্ট করে আর আমি ইতিহাস নিয়ে পড়ে থাকি। ইতিহাস নিয়ে অবশ্য আমার আরেক ইতিহাস আছে। আমাদের ইতিহাস পড়াতেন মন্নান স্যার। স্কুলে দু’জন মন্নান স্যার ছিলেন। একজন বি.এস.সি মন্নান আর আরেকজন নরমাল মন্নান স্যার। নরমাল মন্নান স্যার একটু সহজ সরল ছিলেন এজন্য তাকে সবাই আড়ুয়া মন্নান ডাকতো। তিনি আমাদের ইতিহাস পড়াতেন। আমি তখন ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মী। একবার ইতিহাস পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধ নিয়ে কি একটা প্রশ্ন আসলো। আমি রীতিমত শেখ মুজিবকে নিয়ে কি সব আজেবাজে কথা লিখে দিয়েছিলাম। ভাগ্যিস স্যার সে লেখা পড়েননি। উনি আওয়ামীলীগ করতেন। লেখা পড়লে আমি নিশ্চিত ফেইল ছিলাম।যেহেতু আমরা স্কুল থেকে বিদায় নিচ্ছি সেহেতু আস্তে আস্তে সবার সাথে সম্পর্ক বাড়তে লাগলো। বান্ধবী নাছিমা তখন চুটিয়ে প্রেম করছিল সিনিয়র বদরুল ভাইয়ের সাথে।গ্রামে তখন নতুন টেলিফোন সংযোগ আসলো। তাদের দু’জনের মধ্যে বেশিরভাগ কথা হত টেলিফোনে। আমি তাদের অনেক কিছুই জানতাম। অবশ্য পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে তাদের প্রেম আর আলোর মুখ দেখেনি।
ক্লাস টেন
হাই স্কুলের শুরুটা ছিল দাপটের ভাবনা নিয়ে কিন্তু শেষে এসে দেখি সব ভুয়া। কেমনে জানি প্রতিষ্টানটাকে ভালবেসে ফেলি। ভালবেসে ফেলি স্যার আর বন্ধুদের। শেষে এসে তাই এই বন্ধনে টান পড়ে। দ্রুত সময় চলে যায়। প্রথম সাময়িক এর পর দ্রুত প্রিটেষ্ট তারপর টেষ্ট পরীক্ষা হয়। চিন্তা ছিল তখন কেবল মার্ক বাড়ানোর। শেষের দিকে এসে আব্বু আমাকে আবার পড়াতে লাগলেন। আগে যে পড়াতেননা তা নয়। সমস্যা ছিল আমি অংক পারতামনা আর তিনি আমাকে মারতেন। এই মার খাওয়া থেকে বাচতে আমি তখন একটি চালাকি করতাম। সাধরনত তিনি সন্ধার পর আমাকে নিয়ে বসতেন। আমি মাগরিবের নামাযে গিয়ে আব্বুর বন্ধু বজলু চাচাকে মসজিদ থেকে ধরে নিয়ে আসতাম। ব্যাস কেল্লা ফতে। আব্বু আর বজলু চাচার মধ্যে আড্ডা চলতো গভীর রাত পযর্ন্ত। শেষে এসে সবাই মিলে আব্বুুকে বুঝানো হল আমাকে না মারার জন্য। আমিও উৎসাহ পেয়ে আবার উনার কাছে অংক করতে লাগলাম। মনে আছে শেষের দিকে তিনি আমাকে ত্রিকোণমিতি আর পরিমিতির করাতেন। এই দুই চাপ্টারে আমি এত এক্সপার্ট হয়েছিলাম যে এই দুই চাপ্টার দিয়ে আমি গণিতে পাস করি। এরই মাঝে অনেক বন্ধু প্রিটেষ্ট আর টেষ্টে ধরা খেয়ে হারিয়ে যায়। গতবারের প্রিটেষ্ট আর টেষ্টে ধরা খাওয়া বেশ কয়েকজনও আমাদের বন্ধু হয়। তাদের মধ্যে রহমান ভাই, রুহেল, রুহুল, নওশাদ ভাই, সাইফুল, ইস্পাক, সানু, খুরশিদ ভাই, মনিসহ আরো কয়েকজন ছিল।
ডায়েরির পাতা থেকে
০৯.১০.২০০২: খুবই মজার একটি দিন ছিল।সারাটা দিন কেটেছে খুব আনন্দে।প্রথমে কিছুটা ভয় ছিল বিপদের জন্য। শেষে যখন বিপদ কেটে গেল ঠিক তখনেই মেঘের আড়ালে সূর্য হাসার মত শুরু হল আনন্দ। যতটা সময় স্কুলে ছিলাম তার অর্ধেকটা সময় কাটিয়েছি রেজাউল, খুরশিদ ভাই, ইস্পাক, নিজামী ও মুহিদের সঙ্গে।রেজাউলের সাথে শব্দ মিলানো খেলেছি প্রচুর। ক্লাস শুরু হবার পর জহির উদ্দিন স্যার বেশ কয়েকটি উপদেশ দিলেন। জীবনে চলার পথে অন্যের ক্ষতি না করে ভাল করার উপদেশ দিলেন তিনি। অনেক হাসিখুশির পর শেষ হয়ে এল সময়।স্কুলের ঘন্টায় বাজলো বিদায়ের সুর।সবার কাছ থেকে দোয়া চেয়ে আমি চলে এলাম আমার গন্তব্যস্থলে।
১০.১০.২০০২: খুবই চমৎকার একটি দিন। সেই দিন ছিল বিদায়ের দিন।যদিও স্কুল থেকে পুরোপুরি বিদায় না হলেও দশম শ্রেনী থেকে বিদায়ের দিন।বারটি ছিল বৃহস্পতিবার। তাই স্কুল ১ঘটিকার সময় ছুটি।নিদির্ষ্ট সময়ের পূর্বে তাই নবম শ্রেনীর সব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিন চারজনের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।বুঝিয়ে দিলাম তাদের কাছে এই স্কুলের দায়িত্ব। নবম শ্রেনীর মেয়েরা আমাদেরকে বিদায়ের মানপত্র দিল।আমরা সবাই খুবই আনন্দ করলাম।দু’তিনজন মাঠে ক্রিকেট খেললো শেষবারের মতো।শেষবারের মতো ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেনী পযর্ন্ত ঘুরলাম আমি, রেজা আর ইস্পাক। এইভাবে শেষ হয়ে গেল স্কুলের শেষ এই দিনটি।বিদায়ের যন্ত্রনা করুন কিন্তু তবুও বিদায় নিতে হয়।
এস.এস.সি- ২০০৩
২০০৩ সালে এস. এস.সি উত্তীর্ণ হই আমরা ১২ জন।
নতুন: আমি, ইমন, কাওছার, সাইফুল, রেজাউল, শিপা, সোহানা, লাবনী, সুমেনা, নাছিমা, কলি, নাজমা
আগের বছরের ছিল: ইস্পাক, সাব্বির, দেবাশিষ, ফারুক, রহমান ভাই, হাফছা, মনি, নওশাদ ভাইয়ের বোন।
যাদের হাতে হাড়েখড়ি
মোছব্বির আলী স্যার: উনি ছিলেন আমদের হেড। একাধারে তিনি ছিলেন আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। স্যারকে যতটুকু দেখেছি খুবই নরম মনের মানুষ। মাঝে মাঝে কোন স্যার না আসলে স্যার সেই ক্লাস প্রক্সি দিতেন। স্যার মারা যান ২৭ এপ্রিল ২০২০ এ আমেরিকায়।
জহির উদ্দিন স্যার: উনি ছিলেন স্কুলের সহকারী হেড স্যার। হেড স্যারের চেয়ে সবাই বেশি উনাকে ভয় পেত।এতটাই ভয় পেত যে আড়ালে উনাকে টাইগার বলে ডাকতো। স্যারের সেই কঠোর শাসন আমাদের মানুষ হবার মুলমন্ত্র ছিল। ব্যাক্তিগতভাবে স্যারের সাথে আমার বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল। স্যারের কিছু কথা আজো কানে ভাসে। বিশেষ সেই কথাটি যে - কারো কোন উপকার না করতে পারলে দয়া করে ওর কোন ক্ষতি করতে যেও না।
শফিক স্যার: শফিক স্যারকে প্রথম ক্লাস সিক্সে পাই। স্যার সিক্সের ম্যাথ পড়াতেন। বন্ধু নবীল তাকে মোল্লা চাচ্চু বলে ডাকতো। আমি বুঝতামনা উনি আবার তার মোল্লা চাচ্চু হলেন কিভাবে। যদি ধর্ম শিক্ষা পড়াতেন তবে না হয় কথা ছিল। ম্যাথ পড়ান একজন মানুষ মোল্লা চাচ্চু কিভাবে হোন সেই রহস্য আজো আমার অজানা। স্যারের কাছে কখনো কোন ধমক খাইনি। সব সময় স্যারের হাসিমাখা মুখ দেখেছি।
মোল্লা স্যার: মোল্লা স্যার যেদিন গরম হতেন সেদিন সবার খবর হয়ে যেত। সাধারনত স্যার খুব একটা গরম হতেননা। কেউ পড়া না পারলে কিছু বলতেননা। কিন্তু কেউ দুষ্টামি করলে আর কাউকে ছাড় দিতেননা।
বি.এস.সি মন্নান স্যার: স্যার গনিত পড়াতেন। বুঝিয়ে বুঝিয়ে পড়াতেন। স্যারের ছেলে মাহবুব ছিল আমার ঘনিষ্ট ফ্রেন্ড। আমাকে খুব আদর করতেন স্যার। অনেক সময় স্যারের বাসায় গিয়ে খেয়েছি পযর্ন্ত।
মন্নান স্যার: এই মন্নান স্যার আমাদের ইতিহাস পড়াতেন। তিনি আমার চাচার সহপাঠি ছিলেন। স্যার খুব বেশি ধমক দিতেন কিন্তু তার ধমকে কেউ ভয় পেতনা। উনি সাধারনত কাউকে মারতেন না। ইতিহাসের চেয়ে ইংরেজি বেশ ভাল পারতেন।
পারুল আপা: পারুল আপা আমাদের কি পড়াতেন ভুলে গেছি। উনিও কাউকে মারতেননা। এমনকি ধমক পযর্ন্ত খুব কম দিতেন।
পন্ডিত স্যার: বাংলার এই স্যারকে সবাই খুব ভয় পেত। স্যারের রাগ একটু বেশি ছিল। আমার মনে আছে ক্লাস এইটে থাকতে তিনি একদিন আমাদের উদ্দেশ্য বলেছিলেন “তোমাদের বয়স এখন কাদাঁ মাঠির বয়স। কুমার যেমন কাদাঁ মাঠি নিয়ে যেভাবে ইচ্ছে বাসন বানায় তোমরাও ঠিক তেমনি তোমাদের মনকে কাদাঁ মাঠির মতো নিয়ন্ত্রন করতে পার। চাইলে ভাল পথে মনকে পরিচালিত করতে পার। আর যদি ইচ্ছে হয় খারাপ পথেও নিয়ে যেতে পার। এই বয়সটা নষ্ট হবার বয়স।” স্যারের কথাগুলো সত্য ছিল তা পরে বুঝেছিলাম। বাংলায় বেশ ভাল ছিলাম বলে সব সময় স্যারের ভালোবাসা পেয়েছিলাম।
নুরুল স্যার: স্কুলে দু’জন নুরুল স্যার ছিলেন। এই নুরুল স্যার ম্যাথ করাতেন। তিনি আবার আব্বুর ছাত্র ছিলেন। অন্য দিকে আমার ছোট চাচার বন্ধু ছিলেন। স্যার অসম্বভ ভাল ছিলেন।
লম্বা নুরুল স্যার: লম্বা নুরুল স্যারের চুলগুলো বেশ লম্বা ছিল ঠিক উনার মতো। ক্লাসে প্রায়ই বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে মাথা ঝাকি দিয়ে চুল ঠিক করতেন। স্যারকে বেশিদিন আমরা পাইনি। তাই স্যারের তেমন স্মৃতি মনে পড়েনা।
লুৎফুর স্যার: গণিত আর বিজ্ঞানের স্যার ছিলেন লুৎফুর স্যার। আমার উদ্দেশ্য প্রায় বলতেন তোমার বাবা অংকের টিচার আর তুমি কেন এত দূর্বল। আমি এই প্রশ্নের কোন উত্তর খুজে পেতমনা। স্যারকে দেখলে অনেকটা পালিয়ে বাচঁতাম।
নিরঞ্জন স্যার: প্রেজেন্ট ইন্ডিফিনিট টেন্সের রিয়েল লাইফ এক্সামপলটা নিরঞ্জন স্যারের কাছ থেকে শিখেছিলাম। মনে আছে একবার তিনি ক্লাসে চক দিয়ে বোর্ডে কিছু লিখলেন তারপর সেটা মুছে বললেন এটাই হল প্রেজেন্ট ইন্ডিফিনিট। স্যারের কাছ থেকে সব সময় বন্ধুর আচরন পেয়েছি। স্যারকে কখনো স্যার বলে মনে হয়নি।
বদরুল ইসলাম স্যার: বদরুল স্যারও কি পড়াতেন জানিনা। স্যার আমদের তেমন ক্লাস নেননি। স্যারের সাথে তাই কারো তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। এই স্যার হঠাৎ করে মারা যান।
শিরিন ম্যাডাম: শিরিন ম্যাডাম ছিলেন আমার প্রিয় একজন ম্যাডাম। উনি আমার ফুফু ফ্রেন্ড ছিলেন। ক্লাসে প্রায় সময় আমার বাড়ির সবার খোজ খবর নিতেন। ম্যাডামের বিয়ে হয়ে যায়। তারপর জব ছেড়ে দেন।
নতুন বন্ধুবান্ধব সমগ্র
রেজাউল: রেজাউল বেশ ভাল একজন ছাত্র ছিল। অনেকটা গম্ভীর ছিল। আমাদের একটা জুটি ছিল হাই স্কুলে। আমি, রেজাউল আর নবীল এক সাথে থাকতাম। পরবর্তীতে আমরা একসাথে কত পাগলামী করেছি তার কোন হিসাব নাই।
নবীল: নবীল ছিল আমার মত আস্ত একটা পাগল। পড়াশুনায় তার অবস্থা তেমন ভাল ছিল না। কেন জানি ও পড়াশুনা করতে পারতো না।তবে পাগলামীতে বেশ ভাল ছিল। কখনো না বলতোনা। যদি বলতাম নবীল চল ওমুক জায়গায় যাই। বিনা বাক্যে সে আমার সাথে যেত।
মুহিদ: মুহিদ ছিল আরেকটা শান্ত মনের মানুষ।কোন ঝামেলায় ও জড়াতোনা। সব সময় হাসিখুশি থাকতো। যেকোন বিষয়ে মজা করতে ভালবাসতো।
ছাদিক: ছাদিক ছিল একদম শান্ত একটা ছেলে। খুব গুছিয়ে কথা বলতো। ওর মায়াভরা মুখটা দূরে গেলেও চোখে ভাসতো। সে বড়খলার থেকে সাইকেল চালিয়ে রোজ স্কুলে আসতো। সাইকেল নিয়ে ছাদিক একবার মজার একটা কান্ড করেছিল। আব্বু তখন রাস্তায় আর ছাদিক স্পীডে সাইকেল চালাচ্ছিল। হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সে আব্বুর উপর সাইকেল তুলে দেয়।তারপর আমার আব্বু জেনে তাকে জড়িয়ে ধরে। আব্বু অবশ্য তাকে কিছু বলেননি শুধু স্পীডে চালাতে বারণ করে দিয়েছিলেন। আমার এই বন্ধুটি অল্প বয়সে ক্লাস টেনে উঠে সে বিদেশ চলে যায়।
কয়েছ: দ্রুত গতির বোলার হিসাবে কয়েছের বেশ নামডাক ছিল। ওর মাঝে একটু গুন্ডা গুন্ডা ভাব ছিল।
সামছ: সামছও তেমন একটা কোন কিছুর ধারে কাছে থাকতো না। বাজারে ওদের একটা দোকান ছিল। সেখানে সে মাঝে মাঝে বসতো।
জাকারিয়া: জাকারিয়া সব সময় পিছনের বেঞ্চে বসতো। ওর বন্ধু লিষ্টে ছিল তাজুল আর মনজুর।তেমন একটা আমাদের সাথে মিশতোনা। একটু চাপা স্বভাবের ছিল ও।
তাজুল: তাজুলের পড়াশুনায় তেমন একটা মন ছিলনা। ও ক্লাস নাইনে প্রথম লেজার লাইট কোথা থেকে সংগ্রহ করে। তারপর সেটা দিয়ে বেশ কিছু দুষ্টামি করে।
নাছিমা: স্কুলের পাশেই নাছিমারা থাকতো। ও ছিল বন্ধু মনজুরের ফুফাতো বোন। মেয়েদের মধ্যে নাছিমা তখন একমাত্র চশমাওয়ালী ছিল।ও ছিল খুব স্পষ্টবাদী মানুষ। যেটা সত্য সেটা সব সময় বলে দিত। আর তাই ও আমার বেশ ভাল বন্ধু ছিল। সে এখন আমেরিকা থাকে।
নাছিমা -২: আমাদের নাছিমা ২ ছিল বন্ধু সমছের ক্রাস। আমরা তখন সেটা বুঝতামনা।কেমন করে জানি বন্ধু সমছ তাকে ভালবেসে ফেলে। অবশ্য নাছিমা ২ এর জীবনে আরো ভালবাসা এসেছিল। পরবর্তীতে কোনটা সফল হয়েছিল তা অজানাই রয়ে গেল।
কাদির: বেচারা একটু নিরীহ গোছের মানুষ। কোন ঝামেলায় তাকে পাওয়া যেতনা। ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পরীক্ষার সময়। ওরা দুই ভাই কাদির আর হাসেম এক সাথে স্কুলে আসতো।
রেদওয়ান: কোন কিছুর ধারেকাছে থাকতো না রেদওয়ান। নিয়মিত নামাজ পড়াে আর স্কুলে আসা যাওয়া তার রোজকার কর্ম ছিল।
আবুল আর হোসাইন: কিছু মানুষ আছে যারা অনেক চেষ্টা করে যায় কিন্তু কোন ফল পায়না। আমার বন্ধু হোসাইন আর আবুলের ছিল এই দশা। ওরা বাই সাইকেল চালিয়ে অনেক কষ্টে তেরাকুড়ি থেকে স্কুলে আসতো। দু’জন আবার দু’জনের খুব ভাল ফ্রেন্ড ছিল। তারা অনেক চেষ্টা করেছিল ভাল করে পড়াশুনার করার। কিন্তু কপালের লিখন যায়না খন্ডন। তাদের দিয়ে পড়াশুনাটা হয়নি। দু’জনই বেশ ভাল মানুষ ছিল।
কাওছার: কাওছার ছিল অনেকটা অন্তর্মুখী মানুষ। তেমন একটা কারো সাথে মিশতো না। তবে অন্যদের সাথে মিশুক আর নাই মিশুক নাজমার সাথে তার বেশ ভাল একটা সম্পর্ক ছিল। যে সম্পর্কের নাম প্রেম কিংবা ভালাবাসা বলা যায়। করে শুরু আর কবে শেষ আমরা তার কিছুই জানিনা। ডাক্তার হবার বড় শখ ছিল কাওছারের। আর তাই এস.এস.সি তে সায়েন্স নিয়ে পড়া।
সাইফুল: সাইফুল ছিল একদম চুপচাপ। খুব কম কথা বলতো। ওকে আমার বেশ ভাল লাগতো। বলে রাখা ভাল কাওছার আর সাইফুল দু’জন বেশ ভাল বন্ধু ছিল। আজ দু’জন শিক্ষকতায় আছে।
মনজুর: মনজুর তখন বেশ মডার্ণ ছিল। জাকারিয়ার সাথে তার খুব ভাল ভাব ছিল। অবশ্য এখনো সেটা আছে। দু’জন মিলে মজা করে সেই বয়সে সিগারেট খেত।
নরমাল আলি, মোটা আলি, লম্বা আলি আর দেলওয়ার: আমাদের তিনটা আলি ছিল।প্রথম আলিটা ছিল নরমাল আলি। বেচারা বেশ ফ্যাশন সচেতন ছিল। দুই নাম্বার আলি ছিল মোটা আলি। তার আরেক ভাই ছিল দেলওয়ার। ও দেখতে বেশ শুকনো ছিল। মোটা আলিকে প্রায় প্রশ্ন করতাম একই ঘরে দুই জনের দুই রুপ কেন। শেষ আলিটা ছিল বেশ লম্বা। আর তাই আমরা ওর নাম দিয়েছিলাম লম্বা আলি। কিছু বললে সে মুচকী মুচকী হাসতো।
হান্নান: আমার আরেকটা স্পষ্টবাদী বন্ধু ছিল হান্নান। যেটা সত্য সেটা সে মুখের উপর বলে দিত। অনেকেই তাকে পচন্দ করতোনা। আমার কাছে সে ছিল সত্যি অসাধারন একজন মানুষ।
ডালিম: ডালিমের পুরো নাম কি ছিল ভুলে গেছি। ওকে আমরা কখনো ডালিম আবার কখনো চটপটি বলে ডাকতাম। একটু চটপটে ছিল ওর নামকরণ হয় চটপটি।
মঈন: কোন কিছুর ধারেকাছে থাকতো না মইন। স্কুলে আসা যাওয়া তার রোজকার কর্ম ছিল।
লুটমন: লুটমন ছিল আমাদের একমাত্র উপজাতি বন্ধু। পাথারিয়া পাহাড়ে ওদের আবাস। প্রায় সময় ওকে ওর ভাষা আর ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করতাম। ও সেগুলো নিয়ে তেমন একটা কথা বলতোনা।
নিজামি: নিজামীকে আমরা পানি বিজ্ঞানী বলে ডাকতাম। অসম্ভব ভাল ছেলে ছিল ও। পড়াশুনায় বেশ সিরিয়াস ছিল। দুভার্গ্যবশত প্রথমবার সে এস. এস.সি তে খারাপ করে বসে। তারপর তার সে কি কান্না। ওর কান্না দেখে বেশ কষ্ট লেগেছিল।
ইমরান: ক্লাসে ইমরান দু’জন ছিল। আমি যদিও এমরান কিন্তু সবাই কেমন করে জানি ‘এ’ শব্দটাকে ‘ই’ তে রুপান্তর করে ফেলতো। ওই ইমরান একদম চুপচাপ ছিল। আমার মতো এতটা চঞ্চল না থাকায় তেমন একটা লাইমলাইটে আসেনি।
এনাম: এনাম সর্বদা একটিভ ছেলে ছিল। কোন কিছু হলে সে বেশ উৎসুক চোখ নিয়ে তাকাতো। ভাগ সময় গল্পগুজব করে সময় কাটাতো।
রাজু: রাজু ছিল পাগলা টাইপের ছেলে। একবার কি একটা জিনিস আবিষ্কার করতে গিয়ে বড় ধরনের একটা এক্সিডেন্ট করে ফেলে। তার পড়াশুনার জগতের ইতি সেখানেই ঘটে।
হোসাইন: হোসাইনও বেশ মডার্ণ ছেলে ছিল। মাঝেমাঝে ও আমাদের সাথে হরিন খাবার গল্প বলতো। শিপার সাথে চুটিয়ে প্রেম করতো সে। জানিনা কেন তাদের সেই প্রেমটি সফল হয়নি।
লুৎফুর: ক্লাসে লম্বা ছেলেদের মধ্যে লুৎফুর ছিল অন্যতম। সুমেনার উপর ও ক্রাস খেয়েছিল। আমদের কাছে সে বিষয়টা অনেক পরে বলেছিল।
মাহবুব ও জায়েদ: মাহবুব ছিল বি.এস.সি মন্নান স্যারের ছেলে।ও পড়াশুনায় তেমন ভাল ছিলনা। তবে বন্ধু হিসাবে বেশ ভাল ছিল।আরেকজন ছিল জায়েদ। ও ছিল আরেক মন্নান স্যারের ছেলে। সে ও পড়াশুনায় তেমন ভাল ছিল না। অসম্বভ মোটা ছিল জায়েদ। মাহবুব আর জায়েদ একসাথে স্কুলে আসতো। দুই জন দুই স্যারের ছেলে থাকা এবং আমরা তাদের বন্ধু হওযায় ক্লাসে ওই স্যাররা সব সময় আমাদের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতেন। ছেলের বন্ধু বলে কথা উল্টো স্যারেরা আমাদের তেল মারতেন।
কলি: কলিকে আমরা কাঁচা মরিছ বলে ক্ষেপাতাম। ও দেখতে মরিছের মত একদম শুকনো ছিল। একবার আমার নামে বিচার পযর্ন্ত দিয়েছিল স্যারের কাছে। স্যার অবশ্য হেসে সবকিছু উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
খয়রুল: ও আমার প্রাইমারির ফ্রেন্ড ছিল। প্রাইমারিতে তেমন একটা সম্পর্ক হয়নি তার সাথে। দোষটা তার নয় আমারই ছিল। বেচারা ছিল একদম অন্তর্মুখী একজন মানুষ। আমি হয়তো তার সাথে মিশতে পারিনি। যাহোক পড়াশুনায় সে তেমন একটা ভাল ছিলনা। কোনক্রমে টেনেটুনে ক্লাস টেনে উঠে। তার একটা খুব ভাল গুন ছিল। সে কখনো ক্লাস ফাকি দিতনা। স্যাররা বুঝতেন তার সমস্যা। আর তাই তাকে কোন প্রশ্ন করতেননা। একবার জহির উদ্দিন স্যার তার নাম দিয়ে বসলেন মুরব্বী। অবশ্য তাকে দেখতেও অনেকটা মুরব্বীদের মত লাগতো। সেই থেকে তার আরেকটা নাম লেগে গেল মুরব্বী। মুরব্বী আজ আর আমাদের মাঝে নাই। সবার মুরব্বী হয়ে সবার আগেই চলে গেছে না ফেরার দেশে।
তাছাড়াও আমাদের সাথে আরো যারা ফ্রেন্ড ছিল - ছয়ফূল (লম্বা), কয়ছর, রয়ফুল, মজনু, নজরুল, রহিম, জাকির, আছাদ। যাদের চরিত্র হারিয়ে গেছে মস্তিষ্ক নামক মানব হার্ডডিস্ক থেকে।
মতুর দোকান: স্কুলের সামনে মতু ভাইয়ের একটি দোকান ছিল যেটির পরিচিতি ছিল মতুর দোকান নামে যদিও দোকানটির আরো কি জানি নাম ছিল। এটি ছিল আমাদের স্কুলের সামনে থাকা একমাত্র দোকান। প্রতিদিন কোন না কোন কিছু কেনা হত দোকান থেকে।
লেখাটি ক্রমবর্ধমান। অনেক বন্ধুর নাম ভুলে গেছি সাথে অনেকের চরিত্রও।ছোট বেলার ছোট ছোট স্মৃতিগুলো সহজে মনে করা সহজ নয়। কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে খুশি হই।
এই লেখাটা উৎসর্গ করলাম আমাদের বন্ধু আয়েশা, খয়রুল আর পারভিনকে যারা আমাদের ছেড়ে দূর তারাদের দেশে।