বগালেক ও কেওক্রাডং ভ্রমন
বগালেক আর কেওক্রাডং যেতে হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে বান্দরবন। ধরি আপনি ঢাকা থেকে বান্দরবন যাবেন। যদি সরাসরি বান্দরবন যেতে চান তবে বাসে করে যেতে হবে। আর যদি ট্রেনে যেতে ইচ্ছুক হোন তবে চট্রগ্রাম হয়ে তারপর আবার বাসে করে বান্দরবন যাবেন। ডিসিশন আপনার কিভাবে যেতে চান। ওকে বান্দরবন গিয়ে কিন্তু আপনাকে পাড়ি দিতে হবে আরো ৩ ঘন্টার পথ। অত:পর পৌছে যাবেন রুমা বাজার। রুমা বাজার যাওয়ার উপায় হচ্ছে ২ টি। চাইলে ওখানকার বিরতীহীন বাসে করে যেতে পারেন অথবা চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে নিয়ে যেতে পারেন। তো আমরা চলে আসলাম রুমা বাজার। এবার কিছু গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা। আপনি কোথা থেকে কেওক্রাডং হেটে যাবেন তার উপর নির্ভর করছে গাড়ি রিজার্ভ করা। বিষয়টা তাহলে খুলাসা করা যাক। রুমা বাজার থেকে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করতে হয়। আপনার ইচ্ছা এবং বাজেটের উপর নির্ভর করে গাড়ি যাবে কমলা বাজার, বগালেক, কেওক্রাডং। রুমাবাজার থেকে কমলাবাজার চান্দের গাড়িতে যেতে ১ ঘন্টা সময় লাগে। সাধারনত পযর্টকরা সেখানে গিয়েই গাড়ি ছেড়ে দেন। তারপর হেটে হেটে বগালেক যান এবং সেখানে একরাত থেকে পরেরদিন সকালে কেওক্রাডং হেটে হেটেই যান।
গাড়ি:
ঢাকা টু বান্দরবান
গাড়ি: বাস
ভাড়া:
বাসে যেতে সময় লাগে: ১০ ঘন্টা
বান্দরবান টু রুমাবাজার
গাড়ি: বাস, চান্দের গাড়ি
বাসের ভাড়া: ১২০ টাকা জনপ্রতি
চান্দের গাড়ি ভাড়া: ৪০০০ টাকা (১৪জন)
বাস/চান্দের গাড়িতে যেতে সময় লাগে: ৩ ঘন্টা
রুমাবাজার টু কমলাবাজার
গাড়ি: চান্দের গাড়ি
চান্দের গাড়ির ভাড়া: ২৫০০ টাকা (১৪জন)
চান্দের গাড়িতে যেতে সময় লাগে: ১ ঘন্টা
অপশন বি:
রুমাবাজার টু বগালেক
গাড়ি: চান্দের গাড়ি
চান্দের গাড়ির ভাড়া: ৩০০০ টাকা (১৪জন)
চান্দের গাড়িতে যেতে সময় লাগে: ১.৩০ মিনিট
অপশন সি:
রুমাবাজার টু কেওক্রাডং
গাড়ি: চান্দের গাড়ি
চান্দের গাড়ির ভাড়া: ১২০০০ টাকা (১৪জন)
চান্দের গাড়িতে যেতে সময় লাগে: ৪ ঘন্টা
কমলাবাজার টু বগালেক
পদযাত্রা
সময় লাগবে: ৩০/৪০ মিনিট
বগালেক টু কেওক্রাডং
পদযাত্রা
সময় লাগবে: ৩/৪ ঘন্টা
গাইড নিতে হবে:
গাইড নিতে হবে রুমাবাজার থেকে। এক্ষেত্রে সাজেশন হল আপনি যাবার আগে অবশ্যই সিয়াম দিদির সাথে পরামর্শ করে গাইড নিন। কেন পরামর্শ করবেন? কারন ভাল বা খারাপ গাইড সেটা আপনি আগে থেকে জানবেননা। যদি আপনার ভাগ্য খারাপ হয় তবে দেখবেন আপনি একাই কেওক্রাডং গাইডের কোন খবর নাই।
অনুমতি নিতে হবে:
কেওক্রাডং যেতে হলে আপনাকে অনুমতি নিতে হবে ৫ জায়গা থেকে
১. রুমাবাজার গিয়েই সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ফরম পূরন করে অনুমতি নিতে হবে
২. রুমাজার পুলিশ ফাড়ি থেকে অনুমতি নিতে হবে
৩. বগালেকে যাবার সময় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে
৪. কেওক্রাডং যাবার আগে বগালেকের সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আবারো অনুমতি নিতে হবে
৫. কেওক্রাডং গিয়ে আবারো ওখানকার সেনাবাহিনীর কাছে থেকে অনুমতি নিতে হবে।
- চিন্তা নাই সবগুলো কাজ আপনার গাইড করবে। আপনি শুধু নিজের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার আর সাক্ষর দিবেন।
- এই সব অনুমতি নিতে কোন খরচ হয়না।
- ফেরত আসার সময় আবার একই স্থানে গিয়ে সাক্ষর দিয়ে আসতে হবে।
ব্যাকপ্যাক:
অবশ্যই ২টা ব্যাগ নিবেন। আপনার ব্যাকপ্যাকের ভিতর ছোট আরেকটা ব্যাগ রাখবেন। কেন ২টা ব্যাগ নিবেন? বগালেক যাবার পর আপনি ভারী ব্যাগটা সিয়াম দিদির কটেজে রেখে ছোট ব্যাগে প্রয়োজনীয় ওষুধ, পানি, মোবাইল, ক্যামেরা, চার্জার ইত্যাদি নিতে পারবেন। তখন ব্যাগ হালকা থাকায় আরামে হেটে যেতে পারবেন। আর অবশ্যই সাথে কিছু পলিথিন ব্যাগও রাখবেন। ভেজা কাপড় নিয়ে আসতে সুবিধা হবে। আসার সময় যেহেতু বগালেক হয়েই আসবেন সুতরাং ভারি ব্যাগটা ওখান থেকে নিয়ে আসতে পারবেন। মনে রাখবেন কেওক্রাডং এ পায়ে হেটে যেতে হবে বগালেক হল আপনার বেস ক্যাম্প।
পোষাক কি পরবেন:
ছেলেরা স্পোর্টস টি শার্ট নিবেন ১টি
স্পোটর্স পেন্ট ২। এইগুলি নিচ ছিড়ে যাবার আশংকা থাকে।
জুতা হিসাবে ট্র্যাভেলিং স্যান্ডেল বা ক্যাডস নিতে পারেন।
হাটার সময় আংলেট, নিক্যাপ পড়ে নিতে পারেন।
বাশেঁর লাটি:
কমলা বাজার থেকে যদি আপনি হেটে হেটে বগালেক, কেওক্রাডং যেতে চান তবে ওই বাজার থেকে ১০ টাকা দিয়ে একটি বাশেঁর লাটি কিনে নিন। লাটিটি বগালেকে কটেজে থাকাকালীন সময়ে আপনার সাথেই রাখুন। যদি হারিয়ে ফেলেন তবে চিন্তা নাই আপনাকে আবারো ১০ টাকা খরচ করতে হবে। মোটকথা লাটি কমলাবাজার থেকে কিনবেন যেখানেই যান সাথে রাখবেন আবার ফেরত আসার সময় কমলাবাজার ফেলে যাবেন বা অন্য কোন পযর্টককে ফ্রি দিয়ে দিবেন।
কি খাবেন:
ডাবের পানি পান করবেন যেখানেই পান। এটা প্রচুর শক্তি যোগাবে শরীরে।
হাটা শুরু করার আগে কলা খাবেন। শক্তি পাবেন।
হাটার সময় কিসমিস, বাদাম বার, খেজুর খাবেন।
কেওক্রাডং যাবার সময় গ্লুকোজ পানি সাথে রাখবেন জনপ্রতি মিনিমাম ১ লিটার।
কি খাবেননা:
সিদ্ধ ডিম না খাওয়াই উত্তম। অনেক সময় ২/৩দিন আগের সিদ্ধ করা ডিম দিতে পারে।
স্যালাইন পানি হাটার সময় না খাওয়াই উত্তম। প্রেসার থাকলে বেড়ে যেতে পারে। গিয়ে যখন রেস্ট নিবেন তখন খাবেন।
ক্যালসিয়াম না খাওয়াই ভাল। অনেকের পেট এটা সহ্য করতে পারেনা।
হাটার সময়:
মুখে চকলেট রাখবেন। এটা গলা শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।
পাহাড় থেকে নামার সময় একজন আরেকজনের চেয়ে যথেস্ট দূরত্ব বজায় রাখবেন।
সাথে ১ লিটার বা ৫০০ এম এল পানি রাখবেন।
গোসল:
বগালেকে গোসল করতে পারবেন ফ্রি।
কেওক্রাডং এ গোসল করতে হলে ৫০ টাকা গুনতে হবে।
কেওক্রাডং যেতে সাথে যা যা রাখবেন:
পেষ্ট-ব্রাশ, টিস্যু।
মোবাইল, ক্যামেরা নিতে পারেন।সাথে চার্জার নিবেন। কেওক্রাডং এ চার্জ দেবার ব্যবস্থা আছে।
সাবধানতা:
বগালেকে পানিতে নেমে গোসল না করাই উত্তম।
কেওক্রাডং এ সন্ধা ৬টার পর হেলিপ্যাড থেকে নেমে যেতে হবে।
কেওক্রাডং এ রাত ১০টার পর বাহিরে থাকতে পারবেননা।
মাদকদ্রব্য সেবন করা নিষেদ।
অবশ্যই সাথে রাখবেন:
অডোমোস ক্রিম। ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব আছে সেখানে।
বর্ষায় গেলে ছাতা/রেইনকোট সাথে রাখবেন মাষ্ট।
সাথে আরো যা যা নিতে হবে
১. মোবাইল (রবির সীমসহ)
২. সানগ্লাস
৩. ধুলার জন্য মাস্ক
৪. NID কার্ড
৫.পাওয়ার ব্যাংক
৬. সাবান
৭. শ্যাম্পু মিনি প্যাক
৮. চিরুনী
৯. ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ, গ্যাসের ট্যাবলেট, প্যারসিটামল, স্টিমিটিল, বমির ট্যাবলেট, পেট খারাপের ওষুধ।
১০. আপনার প্রয়োজনীয় ওষুধ।
কমন সমস্যা:
পেট খারাপ, বমি, মাথা ধরা ইত্যাদ সমস্যা হতে পারে।
বিখ্যাত খাবার:
গয়ালের গোস্ত খেতে পারেন
পাহাড়ী পিঠা
কলা, পেপে
কি কি কিনবেন:
আদিবাসীদের গানের সিডি কিনতে পারেন রুমা বাজার থেকে।
ডাউনলোড সেকশন