অভিজ্ঞতা : ইন্ডিয়ার ভিসার জন্য আবেদন
হঠাৎ করে আমি আর অফিসের এক কলিগ শাফি ভাই প্ল্যান করে বসলাম সামনের অক্টোবরে ইন্ডিয়া যাব। তো ইন্ডিয়া যাব বললে তো আর হয়না এর জন্য দরকার ভিসা। শাফি ভাইয়ের আগেই ভিসা নেওয়া ছিল তাই প্রয়োজন হল আমার ভিসা নেওয়ার। এইসব কাজ কখনো করিনি তাই কেমনে কি করবো সব বুঝার জন্য প্রিয় গ্রুপ TOB তে সার্চ দিয়ে অনেক তথ্য পেলাম। প্রথমবার আমি আর শাফি ভাই মিলে ফরম ফিলাপ করে নিলাম। এমনকি এপয়নমেন্টের তারিখও নিয়ে নিলাম। সব ঠিকঠাক। হঠাৎ দেখি এপয়ন্টমেন্টের তারিখ আর আমার বরিশাল ট্যুরে যাবার তারিখ একই দিন। বাধ্য হয়ে মিস করতে হল ওই ডেটটি। বলে রাখা ভাল এপয়ন্টমেন্ট ডেট কিন্তু নতুন করে আপডেট করার সূযোগ নাই। এক্ষেত্রে পুনরায় ফরম ফিলাপ করে নতুন করে এপয়ন্টমেন্ট নিতে হয়। তারপর বরিশাল থেকে এসে আবারো নতুন করে অনলাইনে ফরম ফিলাপ করে নতুন এপয়েন্টমেন্টের তারিখ নিলাম। এবার বেশ ভাল করে সিডিউলটা চেক করে তারিখ নিলাম যাতে আর সমস্যা না হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবকিছু রেডি করে নিজে ২ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি ছবি স্টুডিও থেকে প্রিন্ট করে নিয়ে আসলাম। কিন্তু একি! ফটোশপ দিয়ে সাইজ করা ২ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি ছবি দেখি স্টুডিও থেকে আসার পর ১.৫ ইঞ্চি বাই ১.৫ ইঞ্চি হয়ে গেছে। বুঝলমান কি করে এই সমস্যা হল। আবারো তাই নতুন করে ছবি প্রিন্ট দিতে হল। এবার ভিসা ফি জমা দেওয়ার পালা। পড়লাম নতুন আরেক সমস্যায়। ইন্ডিয়ার ভিসা ফি টা তারা ইউক্যাশ এর মাধ্যমে জমা নেয়। ফরম জমা দেওয়ার আগের দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পযর্ন্ত সমস্ত সিলেট শহর ঘুরলাম কিন্তু আফসোস ইউক্যাশের কোন এজেন্টের সাক্ষাৎ পেলাম না। কি করা ভাবতে ভাবতে ইউক্যাশের কাষ্টমার কেয়ারে ফোন দেওয়া। তারা জনাব মোবারক নামের এক ব্যক্তির নাম্বার দিল এবং উনার সাথে যোগাযোগ করতে বললো। জনাব মোবারককে ফোন দিয়ে জানলাম তিনি এখন ময়মনসিংহ। উনি আম্বারখানার একটি দোকানের নাম বলে ওখানে যোগাযোগ করতে বললেন। উনার কথামত আম্বরখানা গেলাম। ওই দোকানের নাকি ফরম শেষ তাই ইউক্যাশে একাউন্ট খুলে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলো। আসলে তাদের ফরম কখনো ছিল কিনা তাই নিয়েই আমি সন্দিহান ছিলাম! কি আর করা। আবারো জনাব মোবারকের সাথে যোগাযোগ। এবার তিনি বললেন উনার কাছে সুন্দরবন কুরিয়ারের মাধ্যমে এক কপি NID এর ফটোকপি আর এক কপি ছবি পাঠাতে। মেসেজ দিয়ে তার এড্রেসটা দিলেন। তার কথামত আমিও সবকিছু পাঠিয়ে দিলাম। সমস্যার সমাধান তখনো হয়নি। উনি কুরিয়ার পেয়ে একাউন্ট খুলে একটিভ করতে সময় লাগবে আরো ৩ দিন। মনকে সান্তনা দিলাম যদি এবার টাকা জমা না দিতে পারি তবে পরেরবার তো আর সমস্যা হবেনা। যাহোক তারপর এল কাংক্ষিত দিনটি। সকাল ৮.১৫ তে কাগজপত্র জমা দেবার কথা। আমি ৭.৩০ থেকে State Bank of India এর সামনে। যেহেতু টাকা জমা দেওয়া হয়নি তাই অপশন খুজার জন্য আগেভাগেই চলে গেলাম। পরে ব্যাংকের এক সিকিউরিটি গার্ডের সাথে কথা বলে জানলাম সিলেটে নাকি ৬০০ টাকা নয় ৭০০ টাকা রাখা হয় আর সেটা ব্যাংকের ভিতরই ফরম জমা নেওয়ার সময় তারা রেখে দেয়। পূর্বের ইউক্যাশে একাউন্ট অপেন করার কষ্টটা নিমিষেই আনন্দের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেল। ৮ টা বেজে ১০ মিনিট ব্যাংক তখনো বন্ধ। কর্তাবাবুরা নিশ্চয়ই সিলেট শহরের মহা জ্যামে আটকে আছেন। ঠিক ৮.১৫ তে তাদের আগমন। আমার সাথে আরো ৪ জন মানুষ যারা ফরম জমা দিতে এসেছে। যেহেতু আমি কাছেই থাকি আর তাই ইচ্ছা করেই ৫ নাম্বার সিরিয়ালটা নিলাম। ৫ মিনিটের ভিতর ডাক পড়লো ভিতরে যাবার। সবকিছু নিয়ে যখন জমা দিলাম এমন সময় কর্তাবাবু জানতে চাইলেন ফরমে আমার এপয়ন্টমেন্টের ডেট কোথায়? আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। ফরমে আবার এপয়ন্টমেন্টের ডেট থাকে নাকি। তিনি আরেকটি ফরম আমাকে দেখিয়ে দিলেন। কি আর করা বিফল মনে রিক্সা নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার অফিসে চলে আসলাম। অফিসে এসে আবারো ফরমটা ডাউনলোড দিয়ে দেখি ওখানে এপয়ন্টমেন্টের ডেটটা আসছে। আসলে সমস্যা আমি করেছিলাম। আমি ফরম ফিলআপ করে এপয়ন্টমেন্ট নেওয়ার আগে ওটা ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করে রেখেছিলাম। আর তাই এপয়ন্টমেন্টের ডেটটা ওই ফরমে আসেনি। যাহোক তারপর আবারো ফরম প্রিন্ট করে তাড়াতাড়ি State Bank of India তে গেলাম। এবার কোন সিরিয়ালই লাগলোনা। গিয়েই সরাসরি জমা দিলাম। কর্তাবাবু এবার নতুন আরেকটা ভুল ধরলেন। ছবিটা ফরমে লাগিয়ে নিয়ে আসার কথা বললেন। সামনে রাখা স্টেপলার দিয়ে যেই ছবি লাগালাম সিকিউরিটি এসে জানালো এইরকম নাকি হবেনা গাম দিয়ে ছবি লাগাতে হবে । বেচারা নিজ উদ্যেগে গাম খুজতে লাগলো আমার জন্য। কিন্তু এত বড় ব্যাংকের কি আর ছোট গামের প্রয়োজন পড়ে। শেষে না পেয়ে এসে সরি বললো। কর্তাবাবুদের চেয়ে আমার কাছে তাদের সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবহারকে মানুষের ব্যবহার হিসাবে মনে হল। অবশেষে বেশ কিছু দোকান ঘুরে ঘাম কিনে ছবিটা লাগিয়ে সবকিছু জমা দিলাম। অপেক্ষা এবার ভিসা পাবার। রক্তের টানে অতীত বংশধরদের দেশে যাবার।
যা যা জমা দিতে হয়:-
১. ফরম দুই কপি (কালার প্রিন্ট)
অনেকে দেখেছি এক কপি নিয়ে যাবার জন্য ফেরত দিয়েছে। এত সকাল আশেপাশে ফটোকপির দোকান পাবেননা। তাই ২ কপি নিয়ে যাবেন। কালার প্রিন্ট করে নিবেন। লেখা একটু অপরিষ্কার হলে বাতিল করে দেয়। আর অবশ্যই উভয় ফরমে ২ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি দুটো ছবি গাম দিয়ে লাগাবেন।
২. NID বা জন্ম নিবন্ধন কার্ড যেটি দিয়ে আপনার পাসপোর্ট করা তার এর ১টি ফটোকপি নিবেন
ফটোকপিতে ক্লিয়ার সবকিছু আসতে হবে। ভাল হয় কালার প্রিন্ট কপি নিলে।
৩. বিদ্যুৎ বিল/গ্যাস বিল/টেলিফোন বিল বা পোষ্টপেইড মোবাইল ফোনের বিল যেকোন একটির একটি ফটোকপি নিবেন।
৪. ব্যাংক স্টেটমেন্ট/ডলার এন্ডোসমেন্ট সার্টিফিকেটের ফটোকপি - ১কপি
বলে রাখা ভাল ব্যাংক স্টেটমেন্ট কিন্তু লাষ্ট ৬ মাসের নিতে হয়। যেদিন জমা দিবেন বলে ঠিক করেছেন তার আগের দিন অথবা আগের সপ্তাহে ওটা নিয়ে রাখবেন। আর ব্যাংকে টাকার পরিমান ২০০০০ থাকতে হবে। আপনি চাইলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়ে টাকাটা তুলে ফেলতে পারবেন।
৫. চেয়াম্যান/কমিশনারকর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়ন পত্র বা নাগরিক সার্টিফিকেটের ফটোকপি -১ কপি
৬. পাসপোর্টে পেশা
চাকরিজীবি হলে অফিস থেকে No Objection Certificate (NOC) নিবেন। ফরমে সম্ভাব্য যে তারিখ দিবেন ইন্ডিয়া যাবার ওই তারিখের ভিতর NOC নিবেন।
ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি নিবেন
ছাত্র হলে স্কুল আইডি কার্ডের ফটোকপি নিবেন
কৃষি হলে জমির খতিয়ানের ফটোকপি নিবেন।
৭. পাসপোর্ট নিবেন এবং এর মেইন পেইজের ফটোকপি নিবেন। (যদি পুরাতন কোন পাসপোর্ট থাকে তবে তার ফটোকপি সাথে নিবেন)
৮. ভিসা ফি ৮০০ টাকা অনলাইনে পে করবেন। ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার দিন বা তার আগের দিন পেমেন্ট করতে পারেন।
সিলেটের বাহিরের হলে আপনাকে হয়তো ইউক্যাশে টাকা জমা দিতে হতে পারে।
** ফটোকপির সাথে সকল ডকুমেন্টের অরিজিনাল কপি সাথে রাখবেন। সন্দেহ হলে চেক করতে পারে।
** সকল ডকুমেন্টে যাতে আপনার বর্তমান অ্যাড্রেস সমান থাকে সেটি লক্ষ্য রাখবেন। বিশেষ করে অনলাইনে ফিলআপকৃত ফরম আর ইউটিলিটি বিলের ঠিকানা যেন একই থাকে।
** সবকিছু ঠিক থাকলে তারা আপনার ফাইল রিসিভ করে একটি ডেট দিবে পাসপোর্ট নেবার। যেদিন ডেট দিবে সেদিন গিয়ে নিয়ে আসবেন।
বি:দ্র: বর্তমানে সিলেটের জন্য কোন অ্যপয়ন্টমেন্ট নেওয়া লাগেনা। সরাসরি গিয়ে ডকুমেন্ট জমা দিতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন ফরম ফিলআপ করার পর এর মেয়াদ থাকবে ৫ দিন। অর্থাৎ এই ৫ দিনের ভিতর আপনাকে ফরমটা জমা দিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ লিংক:-
অনলাইন ফরম ফিলাপ করবেন: Indian Visa
বিভিন্ন ইনফোরমেশন: IVAC
ভিসা ফি দিবেন: Visa Fee