আমার দ্বিতীয় কনে দেখা
আমার জীবনের সবচেয়ে ঘটনাবহুল কনে দেখা হল দ্বিতীয়টি। প্রথম প্রস্তাব ভাঙ্গার পর দ্বিতীয় প্রস্তাবটি নিয়ে আসেন সুমন ভাই যিনি
কিনা প্রথমটি ভেঙ্গে দেওয়ার পেছনে শক্ত ভূমিকা রেখেছিলেন। কনে ছিল উনার ওয়াইফের খালাতো বোন। শহরের এক নামদামী প্রাইভেট ভার্সিটির ইংরেজী অনার্সের স্টুডেন্ট। তো ঠিক হয় একদিন কনে দেখতে যাবার। কোন এক শুক্রবার আমি, সুমন ভাই, ছোট ফুফু, ফুফাতো বোন আর আমার চাচী মিলে চলে যাই কনে দেখতে। শুক্রবারে অফিস থাকায় সেদিন ১ ঘন্টার ছুটিও নিয়ে নেই।একটি গাড়ি রিজার্ভ করে উপশহর ফিজা থেকে মিষ্টি কিনে শুরু হয় আমাদের যাত্রা। কনের বাসাও আশেপাশেই ছিল (সঙ্গত কারনে নাম, ঠিকানা প্রকাশ থেকে বিরত থাকছি)। আমরা ১০ মিনিটের ভিতর সেখানে পৌছাই। যেহেতু এটা দ্বিতীয় কনে দেখা ছিল তাই এ যাত্রায় তেমন একটা সমস্যা হচ্ছিলনা। মনে মনে কনে দেখাকে ডাল-ভাত মনে করছিলাম। অবশ্য মুখে প্রকাশ না পেলেও কিছুটা লজ্জা কাজ করছিল অন্তরে। সেই লজ্জা কনে দেখাকে নিয়ে নয় বরং চাচী আর ফুফুর সামনে কেমনে কি করবো সেটা নিয়ে।
জুম্মার নামাযের ঠিক পূর্বে সেখানে পৌছানোর পর প্রথমে হালকা জল খাবার খেয়ে কন্যার ভাইদের সাথে মসজিদে গিয়ে নামাজটা আদায় করে নেই। নামাজ থেকে ফেরার পর শুরু হয় নাস্তা খাবার পর্ব। ফাঁকে ফাঁকে চলছিল কনের ভাই আর পিতার সাথে আলাপচারিতা। কনের পিতার কথাবার্তায় মনে হল বেশ শক্ত মানুষ। মায়ের সাথে অবশ্য তখনো দেখা হয়নি। কনের ছোট ভাইটা ছিল বেশ নাদুস নুদুস। বড় বড় গোল গোল চোখে আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছিল। আদর করে আমি তাকে কোলে নেই। বেশ একটা ভাব হয়ে যায় পিচ্ছিটার সঙ্গে।
আমাদের আলাপচারীতার মাঝে হঠাৎ ডাক পড়ে অন্য ঘরে যাবার। যেহেতু অভিজ্ঞ মানুষ তাই বুঝে নিয়েছিলাম এই অন্যঘরটা কি। নিজেকে একটু প্রস্তুত করে চলে যাই কনে দেখতে। এবার বর-কনে একা নয়। ঘরভর্তী মানুষজন। তাও আমার ফুফু, চাচী, ফুফাতো বোন এবং কনের মা, দাদী। বাপরে বাপ এত মানুষের সামনে আমি কেমনে কি করি। প্রথমে গিয়ে নিশ্চুপ বসে রইলাম। আমার চাচী তাড়া দিতে লাগলেন কনের সাথে কথা বলার জন্য। আমার তো মুখ দিয়ে কথা বের হয়না। চাচী আবারো তাড়া দিলেন।
প্রথম চোখ তুলে তাকালাম কনের দিকে। দেখি কনের অবস্থাও একই। লজ্জায় মেয়েটা মরে যাবার ভাব। মাথার ভিতর প্রশ্নগুলো গুলিয়ে গেল। কি দিয়ে শুরু করবো সেটা নিয়ে চিন্তা শুরু হল। চাচীই বলে দিলেন নাম, কিসে পড়ে জিজ্ঞেস কর, কথা বল। মনে একটু অভয় পেয়ে চাচীর কথামত নাম জানতে চাইলাম। তারপর কোথায় পড়ে, কিসে পড়ে জেনে নিলাম। বলে রাখা ভাল মেয়ে যে ভার্সিটিতে পড়ে সেটার সাবেক ছাত্র ছিলাম আমি। তাই বেশ কয়েকজন স্যারের সম্পর্কে জানতে চাইলাম। ও যতটুক জানে ছোট করে উত্তর দিল। এবার আর কনের পক্ষ থেকে কোন প্রশ্ন পেলাম না। চাচী বললেন কনের ছবি তোলতে। আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। মেয়ে দেখতে এসে ছবি কেমনে তুলি। মোবাইল বের করে একটি ছবি তোলতে গিয়ে টের পেলাম হাতের কাপঁন। চাচী আমার অবস্থা দেখে তিনি মোবাইল নিয়ে ছবি তোলতে লাগলেন। যত তাড়াতাড়ি পালিয়ে বাঁচি অবস্থার মধ্যে পড়ায় তাড়াতাড়ি সবকিছু শেষ করলাম
তারপর সেখান থেকে বিদায় নিয়ে সোজা চলে গেলাম ফুফাতো বোনের বাসায়। সেখানে গিয়ে চললো আমার উপর আরেক দফা রিমান্ড। কনে পছন্দ হয়েছে কিনা তা জানতে চাইলো সবাই। বরাবরের মতো আমার স্মার্ট উত্তর ছিল সবার পছন্দই আমার পছন্দ। সত্যি কথা বলতে মেয়েটাকে আমার পছন্দই হয়েছিল। বাড়িতে সবাই সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে গেল কি করবে সেটা নিয়ে। এরই মধ্যে আমার ভিজিটিং কার্ডে থাকা নাম্বারে কল করলেন কনের মা। প্রথমবার কনের মায়ের সাথে কথা হল। উনাকে বেশ আন্তরিক মনে হল।
দেখতে দেখতে রমজান চলে আসলো। আব্বু সেবার হজ্বে যাবেন বলে ঠিক করা ছিল। কনে পক্ষ থেকে তাড়া আসছিল তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত দেওয়ার। সুমন ভাই তাদের জানালেন আব্বুর হজ্ব থেকে আসার পর সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। হঠাৎ একদিন কনে ফোন দিয়ে বসলো আমাকে। প্রথমদিন নাম বলে লাইন কেটে দিল। আমি কল ব্যাক করার সাহস পাইনি। তাছাড়া আরো কিছু কারন ছিল ওর সাথে কথা না বলার। আমার ছোট ফুফুর কনে পছন্দ হয়নি। বাড়িতে তিনি তার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। আর তাই আব্বু আর আম্মার মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করেছিল।
আমি ধরেই নিয়েছিলাম এ বিয়েটি হবেনা। আমার ধারণা শেষ পযর্ন্ত ঠিক হয়েছিল। এখানে বাড়ির প্রতিনিধী হিসাবে আমার ফুফুর মতামতকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি সিলেট থাকায় বাড়িতে কি হয়েছিল সেটা জানার আর সূযোগ ছিলনা। এই প্রথম বিয়ে ভাঙ্গায় বেশ খারাপ লেগেছিল।
কনে দেখতে যাওয়ার টিপস - প্রস্তুতি পর্ব
১. কনে দেখতে যাওয়ার সময পোষাকের ক্ষেত্রে ফরমাল শার্ট পেন্ট পরে যাবেন। টাই পরতে পারেন তবে এর চেয়ে বেশি কিছু না পরাই উত্তম। ভুলেও টিশার্ট পরবেননা। জিন্স এর পেন্ট না পরা উত্তম।
২. সম্বভ হলে শার্টটা ইন করে নিবেন।
৩. জুতার ক্ষেত্রে সু জুতা মাননসই।
৪. মোজা পরলে পা গন্ধ হয় এমন হলে জুতার ভিতর পাউডার লাগিয়ে নিতে ভুলবেননা।
৫. দাড়ি না রাখার অভ্যাস থাকলে সেটা কেটে যাবেন।
৬. চুলটাকে মার্জিতভাবে রাখতে হবে। লম্বা রাখা যাবেনা।
৭. সম্বভ হলে ফেইস ওয়াস করে যাবেন।
৮. পারউফিমের ক্ষেত্রে উগ্র ঘ্রানওয়ালা পারফিউম মাখবেননা।
৯. সানগ্লাস পরলে অবশ্যই সেটা খুলে রাখবেন কনে বাড়িতে গিয়ে।
সবগুলো পর্ব