আমার চতুর্থ কনে দেখা
চতুর্থ পর্বটা লেখা আমার জন্য বেশ কঠিন হবে জানি। কারণ বিগত পর্বগুলো যা দিয়ে সমাপ্ত হয়েছিল এই পর্বে ঠিক তার উল্টো হবে।
যতই কঠিন হোক তারপর লিখতে যখন বসেছি তখন ঠিকই লিখে শেষ করবো। যাহোক, প্রথম বিয়ের আলাপটা আমার যে ফুফা ভেঙ্গে দিয়েছিলেন এবার তিনি একটা মেয়ে খোজ নিয়ে এলেন। মেয়েদের পরিবার উনার গ্রামের। তারা ফুফার কোন আত্মিয় কিনা তা আমার অজানা।একদিন ফুফু ফোন দিয়ে জানালেন আগামীকাল সিলেট আসবেন এবং আমাকে নিয়ে কনে দেখতে যাবেন। আমি বিষয়টা তেমন একটা আমলে নিলাম না। ভাবলাম ফুফু যখন বলছেন তখন যাই দেখে আসি। কনে দেখতে যে প্রিপারেশন দরকার হয় (মেন্টালি) আমার তখন সেটা ছিলনা। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতায় আমি ছিলাম সত্যিই বিরক্ত। যাহোক পরেরদিন ফুফু ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে গাড়িতে উঠার আগেই আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলেন যে তারা সিলেট আসছেন। আমি যেন রেডি হয়ে নির্ধারিত স্থানে থাকি। খুব সম্বভত সেদিন আমার অফিস ছিল। আমি সেখান থেকে ঘন্টা দুয়েকের জন্য ছুটি নিয়েছিলাম।
ফুফুরা ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে সিলেট এসে হুমায়ুন রশিদ চত্তরে নামলেন। আমি তখন ফুলকলি সামনে দাড়ানো। তারপর সেখান থেকে মিষ্টি কেনা হল। ভাবলাম গাড়ি একটা রিজার্ভ করে নেই। আমার ফুফা বাঁধা দিলেন। বললেন সেটার দরকার নাই। একটু সামনেই কন্যার বাসা। মাত্র ৫ মিনিটের জন্য অযথা গাড়ি রিজার্ভ করা হবে অপচয়। যেহেতু মুরব্বী মানুষ তাই উনার কথার অবাধ্য হলাম না।
একটা সিএনজি ডেকে সরাসরি চলে গেলাম কনের বাসায়। সেখানে গিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলাম। খুব সম্বভত ফাষ্ট ফ্লোরে তাদের অবস্থান। বিশাল বড় বাসা। তাদের বাসার এদিকে আমার জীবনের প্রথম আসা। বাসাটা বড় হলেও তেমন একটা সুন্দর নয়। মনে হচ্ছিল যেন কোন একটা কলেজের বিল্ডিং এ এসে পড়ছি। কলিং বেলে চাপ দিতেই কন্যা বাবা এসে দরজা খুললেন। ফুফার সাথে হ্যান্ডশেক করলেন তিনি। তারপর আমরা সবাই ভিতরে ঢুকলাম। আমার ফুফু চলে গেলেন কন্যার মায়ের কাছে, রান্না ঘরে।
আমি, ফুফা আর কন্যার বাবা মিলে গল্প করতে লাগলাম। গল্পের সাবজেক্ট ছিল এই বাসা। একটু পর কন্যার বাবা ভিতরে ঢুকে গেলেন। আমি আর ফুফা তখন সোফায় হেলান দিয়ে গল্প করছিলাম। কন্যার বাবা কিছুক্ষন পর পর এটা সেটা খাবার নিয়ে আসতে লাগলেন। বুঝলাম বাসায় মনে হয় আর কোন মানুষ নাই। নাস্তা খাবার পর্ব শেষ হলে কন্যার মা এলেন অবশেষে। যথেষ্ট আন্তরিক মনে হল তাকে।
এবার কন্যা দেখার পালা। না, আমাকে কোথাও যেতে হল না। কন্যাকে নিয়ে কেউ একজন চলে আসলো ড্রয়িং রুমে। আমি আর কন্যা বসে গল্প করতে লাগলাম। এই প্রথম আমার মনে হল না যে আমি কোন কন্যা দেখতে আসছি। অগোছালোভাবে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতে লাগলাম। ওর সাথে কথা বলে বেশ ভাল লাগলো। দ্রুত সময় চলে গেল। আবারো কেউ একজন এসে খুব সম্বভত আমার ফুফা কন্যাকে ভিতরে যাবার কথা বললেন। তারপর তিনি আমার পাশে বসে আমার অভিমত জানতে চাইলেন। বরাবরের মত আমি সেই উত্তরটাই দিলামা। সবার পছন্দ আমার পছন্দ। সত্যি কথা বলতে গেলে তাদের সবাইকে আমার খুব ভাল লেগেছিল।
দেখতে দেখতে বেশ সময় চলে গেল। এবার কন্যার বাসা থেকে ফেরার পালা। যথারিতী কন্যার মা, বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কন্যার কাছ থেকেও বিদায় নিলাম। তারপর নিচে নেমে এসে দেখি আমরা আতিয়া মহলে এসেছিলাম। আতিয়া মহল ! শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। এবার বুঝলাম বিল্ডিংটার এই দশা কেন হয়েছিল।
অফিসে এসে কম্পিউটার অন করে ফেসবুকে ঢুকতেই দেখি কন্যার ফেন্ড রিকোয়েষ্ট। আইডির নামটাও বেশ অদ্ভুত। জনপ্রিয় একটা গল্প বইয়ের নাম। বলে রাখা ভাল আমার এক সময় কিন্তু ফেসবুক আইডির নাম ফেরিওয়ালা ছিল। এটি একটি কবিতার নাম। সেই কবিতাকে ভালবেসে রেখেছিলাম আমার ফেসবুক আইডির নাম। আমার সাথে কন্যার চমৎকার একটা মিল খুজে পেলাম। তারপর মেসেঞ্জারে যখন কথা হয় বুঝে নিলাম সে একজন সাহিত্য প্রেমিক মানুষ। কন্যা হিসাবে নয় একজন সাহিত্য প্রেমিক মানুষ হিসাবে তার জমিয়ে আড্ডা দিতে লাগলাম
দিন যেতে লাগলো। আমাদের পরিবার থেকে তেমন একটা রেসপন্স না আসলেও তাদের পরিবার থেকে সহসাই রেসপন্স চলে আসলো। কন্যা যেহেতু স্টুডেন্ট তাই ওর বড় ভাই এখনই বিয়ে দিতে আপত্তি করলেন। বিষয়টা আমি জানলাম কনের মাধ্যমেই। বেশ খারাপ লাগলো। প্রেমের ক্ষেত্রে প্রেম ভেঙ্গে গেলে যেমন হয় ঠিক তেমনি প্রেমিকা হারানোর বেদনা অনুভূব করলাম। অবশ্য তার চেয়ে বড় কথা একজন সমমনা মানুষকে জীবন থেকে হারালাম। হয়তো জীবন এমনই।
কনে দেখতে যাওয়ার টিপস- কনে বাড়িতে গিয়ে
১. কনে বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলবেন।
২. কেউ কিছু জানতে চাইলে ছোট করে সুন্দর করে উত্তর দিবেন।
৩. অতিরিক্ত কথা বলা যাবেনা।
৪. বাচ্চাদের অবশ্যই আদর করবেন। তাদের সাথে মনখুলে গল্প করতে পারেন।
৫. বয়ষ্ক ব্যাক্তিদের সম্মান করবেন। বিশেষ করে কনের দাদা,দাদী, নানা, নানীদের সাথে মিশবেন এবং গল্প করবেন।
সবগুলো পর্ব