আমার প্রথম কনে দেখা
প্রথমবার যেদিন বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাই সেদিন যে আমি মেয়ে দেখতে যাবো সেটার কোন প্ল্যান ছিলনা। হুট করে এক
ঘটক এসে অনেকটা জোর করে আমাকে বাড়ি থেকে তোলে নিয়ে যায়। তোলে নিয়ে যায় একথা বলার কারন আমার মুখভর্তী তখন দাড়ি ছিল। তাই বাড়ি থেকে তোলে নিয়ে বাজারে গিয়ে প্রথমে দাড়ি কামানোর ব্যবস্থা করা হল। তারপর প্রথমবার যেহেতু কনে দেখতে যাচ্ছি তাই একটা গাড়ি রির্জাভ করে নিলাম। বলে রাখা ভাল, কনের বাড়ি কিন্তু আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ছিল। বড়লেখায় গিয়ে মিষ্টি কেনা হল। মিষ্টি কেনার সময় এক প্যাকেট টিস্যু ও এক বোতল পানি কিনে নিলাম, প্রথমবার বলে কথা। যাহোক, কনের বাড়িতে যাবার পথেই, পানি যা ছিল সব শেষ হয়ে গেল। যেহেতু তাদের বাড়ি কাছেই ছিল তাই ১০ মিনিটের মধ্যেই পৌছে গেলাম সেখানে।ঘরবর্তি মানুষ। সাবজেক্ট তখন আমি। একবার চিন্তা করুন। একটা ছেলে যে কিনা কখনো এই রকম পরিস্থিতিতে পড়েনি। পকেট থেকে দ্রুত টিস্যু শেষ হতে লাগলো। তারপর শুরু হল খাবার-দাবারের পালা। যেহেতু কনে দেখতে বিকালে গিয়েছিলাম তাই ভাগ্যিস শুধু নাস্তার আয়োজন ছিল। সাবজেক্টের পেট ভরানো ছিল তখন সাধারন জনগনের একমাত্র কর্ম। বেচারা সাবজেক্ট ভয় আর লজ্জায় না পরে কইতে, না পারে সইতে অবস্থা। কোনক্রমে খাবার পর্ব শেষ হবার পর শুরু হল ফাইনাল খেলা। এবার একাকী মেয়ে দেখার পালা।
অফিসে অনেক মেয়ের ইন্টারভিউ এবং মিটিং করায় বেশ কনফিডেন্ট ছিলাম। কিন্তু ওই যে প্রথমবার বলে কথা। হার্টবিট উঠানামা করছিল। কনের সালাম পাওয়ার বুঝলাম যে করেই হোক ইজ্জত বাচাতে হবে। মনে মনে বেশ শক্ত হলাম। কনেটাকে কনে না ভেবে অফিসের কোন ইন্টারভিউ ক্যান্ডিডেট ভেবে প্রশ্ন করা শুরু করলাম। বাহ ! অবজেক্ট দেখি বেশ সক্রিয়। ধারনা করেছিলাম গ্রামের মেয়ে তাই হয়তো ঘাবড়ে যাবার চান্স আছে। আমার সেই ধারনাকে মিথ্যা করে দিয়ে অবজেক্ট উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করে বসে। বুঝলাম সে টিচার মানুষ। তাই মানুষ সামলানোর কৌশল ভালই জানা আছে। ইন্টারভিউটা আর ইন্টারভিউ থাকলো না।
আমাদের কথোপকতোনের বেশ কিছুক্ষন পর অন্য ঘর থেকে তাদের বাড়ির কিছু মানুষ আমাদের সাথে যোগ দিল। আমাকেও তারা বেশ কিছু প্রশ্ন করে বসলো। বুঝলাম তারা আসলেও কনে কে হেল্প করার নিয়তে এখানে এসেছিল। কনে দেখার পর দ্রুত আরো কিছু ফরমালিটিস মেনটেইন করে ওখান থেকে চলে আসা হল।
ওখানে বিয়েটা হয়ে যাওয়টা প্রায় নিশ্চিত ছিল। হঠাৎ বাঁধ সাধলো আমার ফুফুরা। যেহেতু তারা কনে দেখেনি তাই কনে দেখবে বলে বায়না ধরলো। কি মনে করে পাত্রী পক্ষ তাদের এই আবদারটা মেনে নিল না। ফুফুরা কন্যা দেখতে না পারায় ফুফাতো ভাই আর ফুফারা বেশ রাগ করলো। এমনকি ফুফাতো ভাই (সুমন ভাই) এবং এক ফুফা তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়ালো। প্রথমবারের কাহিনীটা ওখানেই শেষ হয়ে গেল। এবার ফুফাতো ভাই (সুমন ভাই) জানালেন তার আত্মিয় এক কন্যার কথা। সেখানে ছিল আমার সেকেন্ড বার কনে দেখতে যাওয়ার আরেক ঘটনাবহুল কাহিনী। সেটা থাকছে আরেক পর্বে।
কনে দেখতে যাওয়ার টিপস
১. প্রথমবার কনে দেখতে যাওয়ার সময় মনে রাখবেন এটাই কিন্তু আপনার প্রথম এবং শেষ কনে দেখা নয়। প্রথম দিকে যাকে দেখবেন ভাল লাগবে। সুতরাং টাসকী খাওয়া যাবেনা। কন্যা যদি বিশ্বসুন্দরী হয় তাও না।
২. কনে পছন্দের ক্ষেত্রে প্রেমের বিয়ে না হলে অবশ্যই পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের মতামত নিবেন। তারা কিন্তু আপনার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। তারা যা বলবে তা অপকটে মেনে নিবেন।
৩. কনে দেখে এসে কনের সাথে মোবাইল /ফেসবুকে কিংবা কোন প্রকার যোগাযোগ রাখবেননা। কারণ একদম শেষে এসেও বিয়ে ভাঙ্গার দৃষ্টান্ত অনেক। আর আপনার তো এখন কিছুই হয়নি।
৪. ঘটককের সব কথা বিশ্বাস করবেননা। কারণ তাদের কাজই হচ্ছে সুন্দর করে মিথ্যা বলে বিয়েটা লাগানো আর আপনার পকেট থেকে কিছু টাকা খসানো।
৫. ছবি দেখে কখনো কনে পছন্দ করবেননা। ছবিতে অনেক সময় অনেক সুন্দর মানুষকেও বিশ্রি দেখায়। তাই অবশ্যই সরাসরি দেখবেন।
৬. কনের সাথে অবশ্যই কনের মাকে ভালভাবে দেখে আসবেন। কেননা মেয়েরা সাধারনত মায়ের গুন পেয়ে থাকে।
যেহেতু এই লেখাটি চলমান তাই টিপসগুলোও চলমান থাকবে।
#কনে #পাত্রী #বিয়ে #কনেদেখা #পাত্রীদেখা #kone #konedeka #patri #patrideka
পরবর্তী পর্ব