আমার তৃতীয় কনে দেখা
আব্বুর হজ্ব থেকে আসার পর ফরমালি দ্বিতীয় কনের পরিবারকে না করে দেওয়া হল। প্রথমে বেশ খারাপ লেগেছিল। আসলে এই রকম
মেয়ে দেখা জিনিসটা আমার কাছে ভাল ঠিকছিলনা। আর মেয়ে দেখে এসে না করে দেওয়াটা সত্যি কথা বলতে একজনের মন ভাঙ্গার সমান। আমি জিনিসটা মেনে নিতে পারছিলামনা। মনের মাঝে একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল তখন। এরই মাঝে বাড়িতে শুনলাম আরেকটি মেয়ের কথা। এবারের মেয়েটি ছিল আব্বুর কলিগের মেয়ে। আব্বু তার ওই কলিগের সাথে হজ্বে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাদের মধ্যে কথাবার্তা ঠিক হয়েছিল।অফিসের অফ ডে তে বাড়িতে আসলে আম্মা প্রেসার দিতে লাগলেন ওই মেয়েকে দেখার জন্য। কি একটা বিশ্রি অবস্থা। এমনিতে এই সব বিষয় নিয়ে আমার মন ভাল ছিল না। সেই সাথে ওই মেয়ের বাবাকে আমি চাচা বলে ডাকি। উনাকে আব্বা বলে কেমনে ডাকবো সেটা নিয়ে বেশ চিন্তিত এবং লজ্জিত ছিলাম। আমি বার বার নানান অযুহাতে ওখানে যাওয়টা ক্যানসেল করে দিতাম।
আমার এই না যাওয়াতে একদিন আমার আব্বু আর চাচারা মিলে ঠিক করেন তারা কনে দেখতে যাবেন। যেমন কথা তেমন কাজ তারাও কোন এক শুক্রবার চলে যান কনে দেখতে। আমি আর তখন বিষয়টি নিয়ে তেমন চিন্তা করছিলাম না। তাদের পছন্দ না হলেই তো ব্যাস কাহিনী শেষ। কিন্তু না। তাদের সবার পছন্দ হয়ে যায় মেয়েটিকে। পড়লাম আরেক সমস্যায়। এবার আমি কি করি বেশ চিন্তা কাজ করলো মনে।
একদিন এক সন্ধায় কনের ছোট ভাই আমার অফিসে এসে হাজির। অফিস বলে কথা। কেমনে কি করবো। সবাই জানলে তো ইজ্জতের বারোটা বেজে যাবে। নিজের ল্যাপটপ নিয়ে চলে গেলাম মিটিং রুমে। সেখানে কথাবার্তা চললো অনেকক্ষন। এরই মাঝে সে আমার কয়েকটি ছবি তোলে নিল। তারপর ব্রেকের সময় তাকে নিয়ে চলে গেলাম একটি রেস্টুরেন্টে। সেখান হালকা নাস্তা করে তারপর বিদায় দিলাম। কেউ কিছু জানলোনা। ভাগ্যিস সেই যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
শেষবার আম্মা অনেক জোরজুরি করলেন ওখানে যাওয়ার জন্য। মায়ের কথা রাখতে গিয়ে আমি রাজি হলাম। গাড়িও ঠিক করা হল। যেদিন যাবো সেদিন সকালে খবর এল কনের মায়ের শরীর মারাত্মক খারাপ তারা সেদিন সিলেট যাবেন ডাক্তার দেখাতে। মনে মনে হাফ ছেড়ে বাচঁলাম। সে যাত্রায় যাত্রা ক্যান্সেল হল। অবশ্য ক্যান্সেল জিনিসটা বল ঠিক না আসলে ভাগ্যে এমন লেখা ছিল।
মাস খানেক আর তেমন একটা সমস্যা হচ্ছিলনা। কনের মায়ের অবস্থা তখন খুব খারাপ। সিলেটে হাসপাতালে ভর্তী। হার্ট এটাক করেছিলেন শুনলাম। আম্মা এবার প্রেসার দিলেন হসপিটালে ওর মাকে দেখতে যাওয়ার জন্য। ওখানে নাকি কনেও আছে। কি মুছিবত রোগী দেখতে গিয়ে কনে দেখবো এটা কেমনে হয়। যদি কনে না থাকতো তাহলে না হয় রোগী দেখতে যাওয়াটা যুক্তিযুক্ত হত। লজ্জায় আর যাই নি সেখানে। পরে খবর পেলাম কনের মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। অসম্বভ খারাপ লেগেছিল। হয়তো বেচারী আমাকে দেখার জন্য আকুল ছিলেন এটা ভেবে বেশ কষ্ট পাই। যাহোক, ভাগ্যে যেটা নাই সেটা নিয়ে তো আর বলার কিছু নাই।
মা মারা যাওয়ার পর কয়েকদিন পর হঠাৎ একদিন কনের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেলাম ফেসবুকে। আমি তখন শুধু কনের নামটিই জানতাম। আর কোন তথ্য আমার কাছে ছিলনা। ওর মাকে দেখতে না যাওয়ায় এমনিতে অপরাধবোধ কাজ করছিল মনে তাই ওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটি একসেপ্ট করে নেই। তারপর কথা হয় ম্যাসেন্জারে। যতটুকু সম্বভ তাকে সান্ত্বনা দেই। আমার আসলে ওখানে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলনা তাই ওর সাথে যখনই কথা বলতাম তখনই বিষয়টা মাথায় থাকতো।
কয়েকদিন পর ওর বাড়ি থেকে জোরাজুরি শুরু হল আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করার জন্য। মেয়েটিও আমাকে চাপ দিতে লাগলো। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলামনা। সবকিছু পরিবারের উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। আম্মা-আব্ব জানতেন আমি এখানে রাজি নই। পরে আব্বু ক্যান্সেল করে দেন বিয়েটি। অবশ্য তার এই ক্যান্সেল করার পিছনে কিছু যুক্তি ছিল। সেটা না হয় এই পাবলিক প্লেসে আর না বললাম। আফসোস থেকে গেল মেয়েটাকে আর সরাসরি দেখা হল না। পরে অবশ্য একদিন ফোন করে মেয়ের কাছে আমি মাফ চেয়েছিলাম।
কনে দেখতে যাওয়ার টিপস - যাওয়ার সময়
১. কনে দেখতে যাওয়ার সময় গাড়িতে খাবার পানি রাখবেন। বেশি বেশি পানি পান করবেন।
২. পকেট টিস্যু অবশ্যই সাথে রাখবেন গরম হোক আর শীত হোক।
৩. পরিবারের সদস্যদের জন্য আপনার সাধ্যমত কিছু জিনিস (মিষ্টি,নিমকি,জিলাপী, দই, বিষ্কিট) নিয়ে যাবেন।
৪. কনের বাড়িতে ছোট বাচ্চা আছে কিনা তা জেনে নিবেন। থাকলে চকলেট, চিপস, চানাচুর নিতে ভুলবেননা। এতে করে আপনি ছোট বাচ্চাদেরও সাপোর্ট পাবেন।
৫. যাওয়ার সময় কিংবা আসার সময় গাড়িতে ঘটক থাকলে তার সামনে সব কিছু বলবেননা। কে জানে সে হয়তো কনে পক্ষের ঘনিষ্ট লোক। যা বলার সব আপনার মা,বাবা,ভাই, বোনকে বলবেন।
সবগুলো পর্ব