মিশন বগালেক টু কেওকারাডং
আরেকটা ভয়ানক সুন্দর ট্যুর শেষ করে আসলাম।সত্যি ভয়ানক সুন্দর। তবে ভয়ানক শব্দটা দিয়েই শুরু হোক। এই অভিযানে আমাদের লক্ষ্য ছিল কেওকারাডং বিজয়। আরেকটু ভেঙ্গে বললে ৩১৭২ ফুট উপরে উঠার লড়াই। না, এ লড়াই পাহাড়ের সাথে নয় ; নিজের সাথে নিজের শরীরের। কখনো হাপিয়ে উঠা হৃদপিন্ড আবার কখনো ফোলা পা কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার লড়াই। আর সাথে যদি থাকে ৫কেজি ওজনের একটি ব্যাকপ্যাক! ভয়ানক শব্দটা আরো ভয়ানক রুপ ধারণ করে।
পাহাড় বিজয় নিয়ে একসময় আমি নাক সিটকাতাম। ভাবতাম আরে এটা কোন বিষয় হল নাকি। সামান্য কয়েক হাজার ফুট একটা পাহাড়ে উঠে আবারবিজয় কিসের। আমি জানি আমার মতো অনেকেই আছেন যারা এই ধারণা পোষন করেন। আপনি যদি এই দলের সদস্য হোন তবে বেশি না মাত্র ১০ তলাএকটি ভবনে একটিবার সিড়ি বেয়ে উঠুন আর নামুন। ১০ তলা কিন্তু বেশি না মাত্র ১২০ অথবা ১৫০ ফুট উচু হবে ১০০০ ফুট তো অনেক দুরের পথ।
ওকে এবার ভ্রমন নিয়ে কিছু কথা হোক। এবারের কেওকারাডং অভিযানে আমরা ছিলাম ১০ জন। পরিচিত রাজিব ভাই ছাড়া বাকী প্রতিটি মুখই আমারজন্য ছিল সম্পূন্য নতুন। এর মাঝে ৭ জন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইজ্ঞিনিয়ারিং এ পড়ুয়া ছাত্র। তমাল সম্বভততাদের দলনেতা। ভদ্র এবং বেশ সিরিয়াস ছেলে। গায়ে তমাল নামের একটা টিশার্টই তার পরিচয় মেলে। সাব্বির ছিল তাদের একাউনটেন্ট। সবকিছুর হিসাব-নিকাশ তার কাছেই থাকতো। কেউ কোন বিপদে পড়লে সাব্বিরের ডাক পড়তো।আসা যাক হৃদয়ের কথায়। ওর হৃদয়টা আসলেই অনেক বড় ছিল। বন্ধুরা তাকে নিয়ে মজা করলেও কাউকে কিছু বলতো না। সাগর কে দেখে তো আমি হতবাক। বেচারা সাগর কেন পাহাড়ে। তাও আবার কক্সবাজার রেখে বান্দরবনে।উত্তরটা পেলাম রাতে বগালেকে ওর মাছ ধরার অভিযানটা দেখে। প্রনব বেশ মজার মানুষ। সর্বদা হাসিখুশি থাকতো আর ক্যামেরা দিয়ে প্রকতিকে ধারন করে রাখতো। আনিন্দ্যর কথা আর কি বলি ওর মতো যে আমিও চলি। একদম নরম, কথা বলে খুব কম। আলভীর কাহিনীটা ছিল বেশ মজার। বগালেকে সাপের বাচ্চা দেখে শিহরিত হবার। সব ঠিক ছিল কিন্তু বন্ধুদের ডেকেই গন্ডগোলটা বাধিয়ে দিল। ব্যাঙ্গাচিকে সাপের বাচ্চা বলাতে সবাই বেশ আনন্দ পেল।
ইব্রাহিম ভাই দুই সন্তানের জনক। নিজের জন্য সেলফী আর ভাবীর জন্য panorama মুডে তে ফটো তোলার পোঁক। রাজীব ভাইয়ের পাগলামীটা অসাধারণ। রাত ৩টায় ঘুম থেকে জেগে সবাইকে জাগানোর আয়োজন। পাহাড়ের মাঝে চাঁদেরআলোর বন্যা দেখা এটাই ছিল আসল কারন। শেষে এসে আবারো ভয়ানক গল্প। কেওকারাডং পাহাড়ে আমরা যে কটেজে ছিলাম তা থেকে জায়গাটার দূরত্ব ছিল অতি অল্প। কয়েকমাস আগে সেখান থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিল কয়েকজনপযর্টক। রাতে সে গল্প শুনে দরজা খুলা ঘরে কেপেঁছিল আমাদের বুক।
পরিশেষে বিশেষ ধন্যবাদ সেনাবাহিনীর অফিসার সাত্তার ভাইকে। পাহাড়ী খাবার খেয়ে হজমে গন্ডগোল বাধঁলে তিনি আমাকে ২টা এন্টাসিড ট্যাবলেট দিয়ে বাচিয়েছিলেন। কেওকারাডং এর চুড়ায় সিলেটি এক সেনা ভাইয়ের দেখা পাওয়াটাসত্যিই অবাক করার মত। অনেক দিন পর দেশি ভাইদের মধ্যে যখন সিলেটি ভাষায় গল্প হচ্ছিল তখন পাশে থাকা সেনাবাহিনীর অন্য ভাইয়েরা হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। তাদের সেই রহস্যভরা চোখে ভালবাসা ছাড়া আর কিছুছিলনা।