জন্মঃ সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার উত্তরকুল রাড়ী গ্রামে ১৯০৯ ইংরেজী, ১৩৩২ হিজরী ১৩১৬ বাংলা সালে এক সম্ভ্রান্ত্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবনঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী আন্ধা হাফিজ (রহ) এর মক্তব থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। তিনি ৭(সাত) বছর বয়সে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনকপুর ইউনিয়নের মোকাম মসজিদে ভর্তি হন। সেখানথেকে তিনি হিফজ সম্পন্ন করেন। হাফিজ ছাহেবের ওস্তাদ হচ্ছেন জনাব হাফিজ আব্দুল বারী (রহ)
ইলমে হাদিস অর্জনঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ হযরত শাহ ইয়াকুব বদরপুরী রহঃ এর কাছে হাদিস চর্চা করেন। এক সময় তিনি বুখারী শরিফ হিফজ করা শুরু করেন।
ইলমে ক্বিরাতঃ ইসলামী জ্ঞান অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হলো ইলমে ক্বিরাত। হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ ক্বিরাত বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করেন উপমহাদেশের বিখ্যাত ক্বারী হযরত মাওলানা হাফিজআব্দুর রউফ করমপুরী, শাহবাজপুরী এর কাছ থেকে।
তরিকতের জ্ঞান অর্জনঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ হিফজ সমাপ্ত করার পর তরিকার জ্ঞান অর্জনের জন্য চলে গেলেন ভারতের হযরত মাওলানা আব্দুর নুর গড়কাপনী রহঃ এর কাছে। তখন আব্দুন নুরগড়কাপনী রহঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ কে পাটিয়ে দিলেন হযরত শাহ ইয়াকুব বদরপুরী রহঃ এর কাছে। অতঃপর হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ হযরত শাহ ইয়াকুব বদরপুরীরহঃ এর কাছে তরিকতের জ্ঞান অর্জন করে খেলাফতি লাভ করেন।
কর্মজীবনঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ ইনামতি মোকাম মসজিদে হিফজ শিক্ষা গ্রহণ কালেই কর্ম জীবন শুরু হয়। যখন তিনি হিফজ সম্পুর্ণ করে উস্তাদের কাছে দাওরার শুনানী শুরু করলেন এমতাবস্থায়ওস্তাদ হযরত হাফিজ আব্দুল বারী (রহ) হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ কে মাহমদ আলী সাহেবের বাড়ীতে বাংলা ঘরে অত্র এলাকার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের পবিত্র কোরআনুল কারীম শিক্ষা দেওয়ারদায়িত্ব প্রদান করেন। তারপর হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ ইনামতির নওয়াগ্রাম পাঞ্জেগানা মসজিদে ইমামতি করেন। সেখান থেকে তিনি চলে যান সড়কের বাজারের ঈদগাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। সেখানেতিনি নয় বছর পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। তারপর তিনির নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত নয়াবাজার হাফিজিয়া ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে শেষ জীবন পর্যন্ত অতিবাহিত করেন।
সামাজিক খিদমতঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ দ্বীনি খিদমত ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্ম সম্পদানে যেমন আগ্রহী ছিলেন তেমনি সমাজ সেবায় হাফিজ ছাহেবের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি সারা জীবন খিদমতেখালক তথা সৃষ্টির সেবা করে গেছেন। তিনি মানব সেবাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের ধারা হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। অসহায় এতিম মিসকিন, বিধবা ও বস্ত্রহীন সবার দুঃখ বেদনাকে আজীবননিজের করে রেখেছেন। এমনকি মেহমান ও মুসাফির সহ সকলের জন্য প্রতি বুধবার নিজ বাড়ীতে অবস্থান করে মানুষের খেদমত করতেন।
প্রতিষ্ঠা সমুহঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ নিজবাড়ীর পাশে অর্থাৎ বর্তমান উত্তরকুল কামারগ্রাম এলাকার মুরব্বিয়ানের সমন্ময়ে একটি জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ১৯৫৯ সালেবারগাত্তা,হাসিতলা,সোনাসার, উত্তরকুল ইত্যাদ এলাকার মুরব্বিয়ানের সমম্ময়ে প্রতিষ্ঠা করেন নয়াবাজার হাফিজিয়া ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা। তারপর ১৯৯৭ সালে অত্র এলাকার মুরব্বিয়ানের সমম্ময়ে প্রতিষ্ঠা করেন উত্তরকুলদারুসুন্নাহ মোশাহিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
দৃষ্ঠি শক্তিঃ আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন নিজ কুদরতে মাতৃগর্ভে মানুষের দৈহিক আকৃতি গঠন করেন। এই আকৃতি গঠনে মানুষকে অনেক নিয়ামত দান করেন। যথা হাত,পা,চোখ,নাক, মুখ ও কান ইত্যাদি। তেমনি হযরতহাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ কে আল্লাহ তা'আলা দান করেছিলেন সকল নেয়ামত। তবে মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত নিজ ইচ্ছায় হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ এর দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে দেন।এজন্য হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ কে অন্য বলে দিয়ে হিফজ সম্পন্ন করার ফলে তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় হিফজ সম্পন্ন করেন এজন্য তাকে আন্ধা হাফিজ বলে বা আন্ধা হাফিজ নামে খ্যাত।
কারামতঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ এর জীবনে অনেক গুলো কারামত প্রকাশ পায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারামত নিম্মে তুলে ধরা হল।
১.পাগল লোক ভালোঃ
মৌলভীবাজারের এক ব্যক্তি তার একজন পাগল ছেলেকে নিয়ে বিশদ সমস্যায় পড়েন । অনেক ডাক্তার কবিরাজ ছেলেটিকে চিকিৎসা করে। কিন্তু কোন ফল আসেনা। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি তাকে আন্ধা হাফিজ (রহ) এর কথাবলল। লোকটির কথা শুনে পাগল ছেলের পিতা চলে আসেন হাফিজ ছাহেবের কাছে। তিনি নিজ ছেলের কথা হাফিজ ছাহেবকে বলার পর হাফিজ ছাহেব বললেন তুমি যদি আমার কথা শুন তাহলে তোমার ছেলে ভালো হয়ে যাবে।হাফিজ ছাহেবের কথা অনুযায়ী লোকটি নয়াবাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসায় কিছু টাকা দান করলেন। হাফিজ ছাহেব মাদ্রাসার সবাইকে নিয়ে দোয়া করলেন। আল্লাহর হুকুমে ছেলেটি ভালো হয়ে গেল।
২. শাহগলী গ্রামের এক ব্যক্তির ১২/১৩ বছরের একটি বালক স্কুলে যাওয়ার পথে শিশুপাচারকারীরা নিয়ে যায়। বালকটির বাবা-মা আত্মীয় স্বজন অনেক খোজাখোজি করে সন্ধান না পেয়ে আন্ধা হাফিজ (রহ) এর কাছে আসেন।হুজুরের কাছে ঘটনা বর্ণনা করার পর হুজুর একটি লোহার তালা পড়ে দিয়ে বালকটির পিতা-মাতাকে তালাটি ২১দিন আগুনে তা' দিতে বলেন। হাফিজ ছাহেব হুজুরের কথা মত বালকটির পিতা-মাতা তা' দেওয়া শুরু করার১৭দিনের মধ্যে বালকটি চলে আসে।
পবিত্র কোরআন হিফজের সনদঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ>হযরত আব্দুল বারী (রহঃ)>হাফিজ মাওলানা আব্দুর রউফ করমপুরী (রহ)> হযরত হাফিজ ইরকুসুস আল মিসরী>হযরত হাফিজ আব্দুল্লাহআল মক্কী> হাফিজ ইব্রাহীম সাদ মিসরী>হযরত হাফিজ হাসান বাদবার শাফিঈ>হযরত হাফিজ মোহাম্মদ আল মুতাওয়াল্লী(রহঃ)>হযরত হাফিজ সায়্যিদ আহমদ তিহামী থেকে উর্ধতম সনদ পর্যন্ত পৌছিছে।
ইলমে ক্বিরাতের সনদঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ>হাফিজ আব্দুর রউফ করমপুরী, শাহবাজপুরী (রহঃ)>হযরত হাফিজ ইরকুসুস আল মিসরী>হযরত হাফিজ আব্দুল্লাহ আল মক্কী> হাফিজ ইব্রাহীম সাদমিসরী>হযরত হাফিজ হাসান বাদবার শাফিঈ>হযরত হাফিজ মোহাম্মদ আল মুতাওয়াল্লী(রহঃ)>হযরত হাফিজ সায়্যিদ আহমদ তিহামী(রহঃ)>হযরত ইব্রাহীম আল উবায়দী (রহঃ)>হযরত আব্দুর রহমান আল আজহুরী (রহঃ)>হযরত শায়খ আহমদ আল বাকারী (রহঃ)>হযরত শায়খ মুহাম্মদ আল-বাকারী (রহঃ) থেকে উর্ধতম সনদ পর্যন্ত পৌছেছে।
ইলমে তরীকতের সনদঃ
হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ
শাহ ইয়া’কুব বদরপুরী রহ.
হাফিজ আহমদ জৌনপুরী রহ.
কারামত আলী জৌনপুরী রহ.
সাইয়েদ আহমাদ ব্রেলভী রহ.
শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ.
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ
যা রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌছেছে।
বিবাহ বন্ধনঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (রহ) ইনামতি গ্রামের অমশাই মিয়ার প্রথম কন্যা মুহতরাম মোসাম্মৎ মাহমুদা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
ইন্তেকালঃ হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ ১লা আগষ্ট ২০০৪ ইংরেজী ১৪২৬ হিজরী ১৪১২ বাংলা সনে রোজ মঙ্গলবার রাত ৮ঃ৪০ মিনিটের সময় ইন্তেকাল করেন।
ইন্না---------------------রাজিউন।
তথ্য সুত্রঃ মোঃ ছাদিকুর রহমান ছাদেকী রচিত হযরত হাফিজ মোশাহিদ আলী (আন্ধা হাফিজ) রহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবন কথা।