সহীহ বুখারী, মুসলিম, সিয়াহ সিত্তাহ হাদীসে অসংখ্য হাদীস রয়েছে-
হুজুর (সাঃ) সাহাবীদেরকে নিয়ে শোহাদায়ে ওহুদের মাজারে তাশরীফ নিয়েছিলেন এবং তিনি সেখানে একা নয় বরং সাহাবীদের (রাঃ) জামাত নিয়ে তাশরীফ নিয়েছিলেন। তিনি (সাঃ) ইজতেমায়ি জিয়ারত করেছেন। সুতরাং সাহাবা, শোহাদা এবং ওলীদের মাজারে জামাতেরসাথে জিয়ারতের জন্য যাওয়া নবী (সাঃ) এর সুন্নত। সাহাবায়ে কেরামগণ বলেন- ওহুদের শহীদদের মাজার জিয়ারত এবং দোয়া শেষ করে সেখানে রাসুল (সাঃ) মিম্বর স্থাপন করেন। এখন কথা হচ্ছে- যেখানে নামাজ হবেনা, খুতবা হবেনা সেখানে মিম্বর কেন রাখা হবে? ঐসময়তো সেখানে যুদ্ধের ময়দান ছিল, লোকবসতি ছিলনা যে খুতবা হবে, নামাজ হবে। সাহাবাগণ (রাঃ) যেখানে শহীদ হয়েছেন সেখানেই দাফন করা হয়েছে। বুখারী শরীফের হাদীসে রয়েছে- ওহুদের মাজারে জিয়ারত এবং দোয়া শেষে রাসুল (সাঃ) মিম্বরে তাশরীফরাখেন। কিছু জিনিসের আলোচনা কিতাবে না থাকলে তার আলোচনা আসেনা এবং আমরা যুক্তির মাধ্যমে তা বুঝার চেষ্টা করি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- সেখানে যেহেতু মসজিদ ছিলনা তাহলে মিম্বর আসল কোথা থেকে ? উত্তর হচ্ছে- রাসুল (সাঃ) মদিনা শরীফ থেকে মিম্বর সাথেকরে নিয়েই এসেছিলেন। রাসুল (সাঃ) এর ইরাদা ছিল যে- জিয়ারত হবে, দোয়া হবে এবং এটা তাঁর (সাঃ) সুন্নত বানানোর জন্য মিম্বর সাথে নিয়ে এসেছিলেন। ওহুদের শহীদদের মাজারে রাসুল (সাঃ) সাহাবাগণ (রাঃ) নিয়ে জামাতের সাথে উপস্থিত হওয়া, জিয়ারত করা, দোয়া করা, অতঃপর মিম্বরে দাড়িয়ে খুতবা দান করা (শহীদ সাহাবাদের সম্পর্কে কথা বলা) এটাকেই ঈসালে সাওয়াব বলা হয়। এসব ছাড়াতো ঈসালে সাওয়াবে আর অন্য কিছু হয়না।
রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন-
"ইন্নি লা আখাফু আলাইকুম আন তুশরিক বা'দি................................"
আমি আল্লার শপথ করে বলছি আমি দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর আমার উম্মত শিরিক করবে না, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। এবং আমার উম্মত মুশরিক হবে না। বরং আমার ভয়, তারা দুনিয়াদারীতে লিপ্ত হবে। দুনিয়ার সম্পদের জন্য ফাসাদ সৃষ্টি করবে।
যেখানে রাসুল (সাঃ) এর স্পষ্ট ঘোষণা এসেছে- আমার উম্মত শিরিক করবে না, মুশরিক হবে না। এখন যে ব্যক্তি রাসুল (সাঃ) এর উম্মতকে মুশরিক বলবে সে প্রকাশ্যে হুযুর (সাঃ) এর ঘোষণার বিরোধিতা করবে। এই ঘোষণা রাসুল (সাঃ) সেই সময় দিয়েছেন যখনশোহাদায়ে ওহুদের (রাঃ) ঈসালে সাওয়াব করছিলেন, তাদের (রাঃ) মাযার যিয়ারত করে, দোয়া করে, মিম্বরে দাড়িয়ে বক্তব্য দান করছিলেন। এবং সেই সময়ে এসব বলার মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে। হুযুর (সাঃ) এর এই ঘোষণার ইরাদা ছিল এটাই যে- কিয়ামত পর্যন্তউম্মতরা শহিদদের, আউলিয়াদের মাযারে যারা আসবে, যিয়ারত করবে, ঈসালে সাওয়াব করবে, খবরদার! কেউ যেন তাদেরকে মুশরিক না বলে। রাসুল (সাঃ) চাইলে অন্য যে কোন সময় ঘোষণা দিতে পারতেন। কিন্তু ঈসালে সাওয়াবের সবকিছু ঠিক করে, শোহাদায়েওহুদের মাযারে (মসজিদে নববীতে ফিরে গিয়ে নয়) সেখানেই মিম্বরে দাড়িয়ে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। তা দিয়ে রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে বুঝিয়েছেন যে, এসব আমার সুন্নত। নির্ভয়ে তোমরা এই সুন্নতকে জারি রাখবে, শিরীক হবেনা। শিরীকের ভয় করবে না, যে বলবেএসব শিরিক সে নিজেই মুশরিক হবে। যখন এটা সুন্নতে রাসূল (সাঃ) হয়ে গেল, তখন এটা শিরিক কিভাবে হতে পারে?
-প্রফেসর ডঃ তাহির আল কাদরীর বক্তব্যের অনুলিখন