মাজহাব শব্দের অর্থ – মতামত, বিশ্বাস, ধর্ম, আদর্শ, পন্থা, মতবাদ, উৎস। মিসবাহুল লুগাত (থানবী লাইব্রেরী-২৬২ পৃষ্ঠা)
ইসলামি পরিভাষায় == কোরআন – সুন্নাহর প্রদর্শিত,রাসুল সাঃ ,সিদ্দিকীন,শোহাদায়ে কেরাম ও সতকর্মশীল ব্যক্তিবর্গের মনোনীত পথের নামই হল মাজহাব।
অন্য শব্দে এটাই সিরাতেমুস্তাকিম ও সরল পথ ।সুতরাং মাজহাব কোন নতুনধর্ম,মতবাদ বা কোরআন সুন্নাহ বহির্ভূত ব্যক্তি বিশেষের নিজস্ব মতের নাম নয়, বরং মাজহাব হল কোরআন, সুন্নাহ,ইজমা ও কেয়াসের ভিত্তিতে
বিভিন্ন ধর্মীয় সমস্যার প্রদত্ত সমাধান যা এবিষয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ প্রদান করেছেন। মাজহাব হল , কোরআন -সুন্নাহর তে অঅস্পষ্ট আয়াতও হাদীস গুলুর ব্যাখ্যা মাত্র।সুতরাং কোন ইমাম ই রাসুলের কথার বাহিরে এক কদম ও দেননি । সুতরাং যেহেতু চার মাজহাবই ইসলামের মুল ৪ টি ভিত্তি তথা কোরআন ,সুন্নাহ, ইজমা, ও কিয়াসের আলোকে প্রণীত ।আর এই ৪ টি মাযহাবের ব্যাপারে রাসুলের সাঃ ও সমর্থন ছিল।যা আমরা মুয়াজ রাঃ” এর হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারি। তাহলে মাজহাব মানার মানেই হল রাসুলের কথা মানা ।
এখানে একটা প্রশ্ন? কুরআন –সুন্নাহ থাকতে মাযহাব মানার দরকার কি? - হাদিস শরীফে মূলত পাওয়া যায়, কুরআন –সুন্নাহ মানার কথা তাহলে মাযহাব মানার দরকার কি?
হাদিসের কথা অবশ্যই ঠিক ।কিন্তু কুরআন –সুন্নাহর প্রত্যক্ষ –পরোক্ষ , সুস্পষ্ট –অস্পষ্ট ও পরস্পর বিরোধপূর্ণ জটিল বিষয়ের যথাযথ সমাধান বের করে তা অনুসরণ করে মূল লক্ষে যাওয়া সকলের পক্ষে মোটে ও সম্ভবপর নয়। বরং এ সকল বিষয়ে পূর্ণ পারদর্শী ব্যক্তি বর্গের দেওয়া সমাধান মেনে চলেই মূল লক্ষে যাওয়া সম্ভব।
এখানে অনেকে প্রশ্ন করেন, এক সময় বাংলায় কোরআন হাদিস ছিলনা তাই আমরা মৌলবীদের কথা মেনেছি। এখন আর দরকার নাই। কেননা বাংলায় কোরআন ও হাদিসের অনেক বই পাওয়া যায়, তাই আমরা এগুলু দেখে দেখে আমল করব ৷
এদের উত্তরে আমি প্রথমে - বলবো ভাই দেখুন, আপনি হয়ত বাংলা পড়তে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে লাখো মানুষ আছে যারা বাংলা পড়া থাক দূরের কথা তারা তো ক,খ ই চিনেনা এদের কি হবে? এমন আবস্হা পূর্বেও ছিল ,আছে এবং থাকবে ৷ তাছাডা আরবীকোরআন হাদীসতো বাদই দিলাম বিশ্বে এখনও লাখো-কোটি মুসলিম এমনও রয়েছেন যারা আরবী কোরআন হাদীস পড়তে পারেনা ,ব্যখা জানাতো দূরের কথা ৷
দ্বিতীয়ত -শুধু বই পড়েই সব জিনিসের সমাধান দেয়া যায়না । বিশেষ করে ঐ সকল জিনিস যে গুলুর জন্য রয়েছে কিছু নীতি মালা ও কোর্স , প্রশিক্ষণ । যেমন , ডাক্তারি বিষয়গুলু। বাংলায় এবিষয়ে বইয়ের কোন অভাব নেই। বরং ফুটপাথেও পাওয়া যায়। অনুরূপ উকিলি, সংবিধান থেকে নিয়ে সকল আইনের বই কিন্তু কিনতে পাওয়া যায়। এখন বলুন তো কেউ একজন যদি এ বই গুলু কিনে এনে আগা –গোঁড়া মুখস্ত করে ফেলে এবং অনায়াসে বলতে ও পারে , সরকার কি তাকে ডাক্তার / উকিল হিসেবে সার্টিফিকেট দিবে? আর আপনিও সমস্যা নিয়ে তার কাছে যাবেন ? অথবা আপনি নিজে বাংলা পরে নিজের চিকিৎসা ও আইনি বিষয় সমাধান করেন? সেক্ষেত্রে তো ঠিকই বলবেন যে এ গুলো আমার কাজ না। এ প্রশ্নের যে জবাব যারা মাজহাব মানবেনা বলে তাদের ও একি জবাব।
তাছাড়া আমরা সকলের জন্য সমহারে মাজাহাব মানা ওয়াজিব এ কথা ও তো বলিনা । বরং আমরা বলি মাজহাবের রয়েছে বিভিন্ন স্তর । যাদের এজতেহাদ করার ক্ষমতা আছে তাদের জন্য অন্য কারো মাযহাব মানার প্রয়োজন নেই ৷ আর যাদের কাছে এজতেহাদ করার ক্ষমতাতো দূরে থাক কোন কিছু পড়তে ও জানেনা তাদের জন্যই মাযহাব বা তাকলীদ ৷
; আমাদের অনেক ভাই বলেন, মাযহাব মানার কোন দলীল নাই। বরং এটা ভিত্তিহীন, বানানো ,বিদাআত। আসলে কি তাই? তাহলে একটু পযালোচনা করা যাক ,
কথাটি সঠিক নয়। মাযহাব মানার অবশ্যই দলীল প্রমান আছে। আমাদের কে প্রথমে একটা বিষয় পরিষ্কার করতে হবে। তা হল, মাজহাব মানার অর্থ কি? এর একটা অর্থ হতে পারে কোরআন –সুন্নাহ বাদ দিয়ে কোন ব্যক্তির কথা মানা ।
আরেকটা অর্থ হল, ধর্মীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির ফায়সালা মেনে নেওয়া। যা তিনি কোরআন –সুন্নাহ কে সামনে রেখে প্রদান করেছেন। তার থেকে বর্ণিত প্রতিটি মাসালায় তিনি কোরআন – হাদিসকে ই প্রাধান্য দিয়েছেন। সুতরাং এদের কথা মানার অর্থই হল , কোরআন হাদিস মানা । মূলত এদেরকে মানা উদ্দেশ্য নয়, এবং মানাও হয়না । বরং তাদের দেখান মূলনীতি অনুযায়ী কোরআন- সুন্নার উপর আমল করা ই উদ্দেশ্য , এবং তাই করা হয়। এমন নয় যে, তারা একেকটা নতুন নিয়ম-কানুন দাড় করিয়েছেন।আর আমরা এ গুলোর অনুসরন করছি। এমনটি হলে আবশ্যই প্রত্যাখান যোগ্য ,যেমনটি করছে ভন্ড পীর গন ৶ সারকথা, দ্বীন মানার জন্য তাদের মাতামত গুলো কে সহায়ক হিসেবে নেয়া হয় মাত্র।