মুহাম্মাদ (সঃ) এর ব্যক্তিত্ব এক কথা, হাক্বীকাতে মুহাম্মাদী (দঃ) আর এক কথা । ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এ দেহ মোবারকের নাম যা হযরত আদম (আঃ) এর সন্তান হিসেবে হযরত বিবি আমেনার (রাঃ) বংশোদ্ভূত । যিনি পৃথিবীতে সর্বপ্রকার সম্পর্কে সম্পর্কিত । তিনি আমেনা (রাঃ) এর নয়নমণি হওয়া, হযরত আয়েশা (রাঃ) এর শিরোমণি হওয়া, হযরত ইব্রাহীম, তৈয়ব, তাহের, ফাতেমা এর পিতা ইত্যাদি সম্পর্কে সম্পর্কিত হওয়া ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এর গুণাবলী ।
সূফীগণের দৃষ্টিতে হাক্বীকাতে মুহাম্মাদী (সঃ) হল জাতে মোতলাকা, অর্থাৎ আল্লাহ্র সত্ত্বার প্রথম অস্তিত্বের নাম । কোন প্রকার দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে এটাই বুঝে নিন যে, (আরবী ব্যকরন মতে) ‘মাজি মোতলাক’ যা ‘মাছদার’ হতে সৃষ্ট । আবার সমস্তছিগা মাজি মোতলাক হতে নির্গত । সুতরাং মাজি মোতলাক হল মাছদার এর প্রথম অস্তিত্ব এবং অবশিষ্ট অন্যান্য ছিগাসমূহ পরবর্তীতে সৃষ্ট । অনুরূপ আল্লাহ্ তা’আলা সমস্ত তাজাল্লীর কেন্দ্রবিন্দু । হুজুর (সঃ) তাঁর প্রথম তাজাল্লী । এবং অন্যান্য সৃষ্টিজগত তারই তাজাল্লীর আলোকে সৃষ্ট । ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) সম্পর্কে পবিত্র কোরআন বর্নিত হয়েছে
হে নবী আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের মত বশর ।
হাক্বীকাতে মুহাম্মাদী (সঃ) সম্পর্কে স্বয়ং বলেন-
আমি ঐ সময় নবী ছিলাম যখন আদম (আঃ) মাটি এবং পানির মধ্যে নিহিত ছিলেন ।
হাক্বীকাতে মুহাম্মাদী হযরত আদম (আঃ) বংশোদ্ভূত নন, বশরও নন, কারো মতোও নন । তিনি কারো বাপও নন, সন্তানও নন । বরং তিনি সৃষ্টি জগতের মূল । উল্লেখ্য যে, বশরিয়তের সূচনা আদম (আঃ) থেকে । অথচ হুজুর (সঃ) তখনো নবী যখন আদম (আঃ) এর সৃষ্টির উপাদানও তৈরি হয়নি । যদি ঐ সময়ও ঐ অবস্থায় হুজুর (সঃ) বশর হন, তাহলে আদম (আঃ) না-বশর বলে গণ্য হতেন, না আবুল বশর (মানব পিতা) সাব্যস্ত হতেন ।
নবীর সংজ্ঞা এভাবে দেয়া হয় যে, ঐ মানুষটিই নবী যাকে আল্লাহ্ তা’আলা শরীয়তের আহ্কাম প্রচার করার জন্য প্রেরন করেছেন । উক্ত সংজ্ঞা হল ব্যক্তি নবীর, হাক্বীকতে নবীর সংজ্ঞা নয় । হুযুর (সঃ) ঐ সময় নবুওয়ত প্রাপ্ত যখনইনসানিয়াত এবং স্থান তৈরি হয়নি । অথচ নবী করিম (সঃ) এর নবুয়ত স্থান ও কালের অনেক পূর্বেকার তৈরী । বাদামের খোসাকে যেমনি বাদামের নামানুসারে নামকরন করা হয়; অনুরূপ বাদামের মগজকেও করা হয় । কিন্তু বাদামের মগজের মর্যাদা এবগ খোসার মর্যাদা সম্পূর্ন ভিন্ন । অনুরূপ হাকিকতে মোহাম্মাদী (স:) ব্যক্তি মোহাম্মাদ (সঃ) এর মধ্যে নিহিত । নবী (সঃ) “নূর” হওয়া “বোরহান” হওয়া, আল্লাহর অস্তিত্বের দলিল হওয়া হল হাকিকতে মোহাম্মদী এবং উহার গুনাবলী । এ প্রসংগটি মসনবী শরীফের মধ্যে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে । মৌলভী আশরাফ আলী সাহেব তার “নশরুত তীব” কিতাবে কিতাবে এটা দৃঢ়ভাবে প্রমান করেছেন । তফসীর রুহুল বয়ানে সূরা আরাফ ৯ম পারাস্থ
হুয়াল্লাজি খলাকাকুম মিন নাফসিন ওয়াহিদাতিন
এর তাফসীরে বলা হয়েছে যে, সমস্ত আত্মা হুজুর করিম (সঃ) এর পবিত্র আত্মা মোবারক হতে সৃষ্ট । তাই হুযুর (সঃ) সমস্ত রুহ বা আত্মা জগতের পিতা । [1]
বিশ্বনবী নূরের রবি (লেখকঃ মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রহঃ))
ভূমিষ্ট হয়েই কথা বলা
সায়রুল ওয়াকেদী কিতাবে হাকেম আবুল ফজল বর্ননা করেন—রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ভূমিষ্ট হয়েই কথা বলেন । আল-খাসায়েস ইব্ন সাবা রেওয়ায়েত করেন—ফেরেশতারা তাঁর দোলনা নাড়াতো । তিনি সর্বপ্রথম যে কথা বলেন তা ছিল-
আল্লাহ্ বড় মহান, তাঁর জন্য সকল প্রশংসা সর্বাধিক বার ।