হজ ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন। হজের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা করা, পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে বায়তুল্লাহর সম্মানার্থে বায়তুল্লাহজিয়ারত করা। হজের মধ্যে আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত দুটিই একসঙ্গে হয়ে থাকে। কোরআন শরিফে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন : ‘মানুষের মধ্যে যাদের কাবাঘর পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এ ঘরের হজ করা তাদের জন্য ফরজ।
হাদিসে হজের পুরস্কার সম্পর্কে বলা আছে : ‘কবুল হজের একমাত্র পুরস্কার জান্নাত।’ হাদিসে হজকে উত্তম আমল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন : রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি ইমান আনা। প্রশ্ন করা হলো- তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। তারপর কী? তিনি বললেন, মকবুল হজ। শুধু তাই নয়, হজ এক প্রকার জিহাদ।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন : আল্লাহর রসুল এরশাদ করেন, বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তি ও মহিলার জন্য জিহাদ হলো হজ করা। হাদিসে আরও আছে, হজ গুনাকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরও বর্ণনা করেন : আল্লাহর রসুল এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ করল কিন্তু হজের মধ্যে স্ত্রীসহবাস করল না এবং পাপ কাজও করল না সে নবজাতকের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এলো। হাজীকে হাদিসে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
হাদিসে আছে : হজ ও ওমরাকারীরা আল্লাহর প্রতিনিধি যদি তারা তাঁর কাছে দোয়া করে, তবে তিনি কবুল করেন, তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করে দেন। হাদিসে হজের ফজিলত উল্লেখের পাশাপাশি হজ পরিত্যাগ করলে কী শাস্তি হবে, তা-ও উল্লেখ আছে। হজরত আবদুর রহমান ইবনে সারিত (রা.) বর্ণনা করেন : তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসুল এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অসুস্থতা, অত্যাচারী বাদশাহ বা কোনো প্রকার প্রয়োজনে প্রতিবন্ধক না হওয়া সত্ত্বেও হজ সম্পাদন করল না সে যেভাবে ইচ্ছা তথা ইহুদি হয়ে মরুক বা নাসারা হয়ে মরুক তাতে আমার কোনো আসে যায় না।’
এ ছাড়া হজের একেকটি কাজের একেকটি ফজিলত রয়েছে। যেমন তাওয়াফ, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, জমজমের পানি পান, তালবিয়া পাঠ, মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায়, আরাফায় অবস্থান- এই প্রতিটি কাজের জন্য বিশেষ বিশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। হজ একটি এমন গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা একজন বান্দাকে শিশুর মতো নিষ্পাপ করে দিয়ে জান্নাতের অধিবাসী করে দেয়। এ হজের পুরস্কার আমরা কখন লাভ করব? যখন আমরা এ হজটি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করব। বাহ্যিক কিছু লক্ষণ এ হজটি আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করছি বলে প্রমাণ করে না। যেমন হজ জীবনে একবার ফরজ। এ হজটি করার জন্য আমি পাগলের মতো হয়ে গেছি। খুব ভালো কথা। তবে নিজের বাড়িতে এ রকম প্রতিদিন পাঁচটি ফরজ তথা নামাজ আমার কাছে গুরুত্ব নেই কেন? যাতে কোনো পয়সাও খরচ হয় না।
এ রকমভাবে হজ জীবনে একবার ফরজ হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যেক বছর হজে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা রাখা ভালো। তবে সঙ্গে অন্যের হক, প্রতিবেশীর হক এগুলোও আদায় করতে হবে। বরং এগুলো আদায় না করে পরের অর্থসম্পদ আত্দসাৎ করে হজের জন্য আমি পাগল হয়ে গেছি। তাহলে এ হজটি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে না নিজের প্রবৃত্তি চরিতার্থে? হজের আদব রক্ষা না করে হজ করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয় না বরং ফ্যাশন হয়। আমরা যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ করতে যাব হজে যাওয়ার আগে এসব বিষয় পর্যালোচনা করে বিশুদ্ধ নিয়তে হজ করতে বের হতে হবে। তাতে আল্লাহ আমাদের হজের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সফলতা দান করবেন বলে আশা করা যায়। আল্লাহতায়ালা আমাদের হজ আদায়কারী ভাই-বোনদের হজ কবুল করুন এবং আমাদেরও তাদের সঙ্গে কবুল করুন। আমিন।