জন্ম ও পরিচয়ঃ পীরে কামিল হযরত আল্লামা নিজাম উদ্দীন চৌধুরী বিশকুটি (রহঃ) ছিলেন, ফুরফুরা ছিলছিলার অন্যতম উজ্বল নক্ষত্র, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অকুতোভয় সিপাহসালার, উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাতওলীয়ে কামিল ও বিশিষ্ট বুযুর্গ। তাঁর জন্ম সাল-১৪ অক্টোম্বর ১৯২৭ ইংরেজী । আল্লামা বিশকুটি (রহঃ) ভারতে জন্মগ্রহণ করেন, দেশ স্বাধীনের পর মৌলভীবাজার জেলার বর্তমান হিঙ্গাজিয়া গ্রামে একজন ব্রাক্ষণের সাথে বাড়ীবা সম্পত্তি বিনিময় করে বাংলাদেশে হিজরত করেন। কিন্তু তার পিছনে একটি ইতিহাস রয়েছে যা প্রমাণ করে গোপালগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ভাদেশ্বরের অধিবাসী তথা আল্লামা ছাহেব কিবলাহ্ বিশকুটি (র.) বাংলাদেশী ওভাদেশ্বরী।সঠিক ইতিহাস জানার স্বার্থে প্রাসঙ্গিক বিষয়টি বলতে পূর্ব ইতিহাস আলোচনা করতে হচ্ছে।
সিলেট হযরত শাহ্ জালাল (র.) যখন ১৩০৩ খৃঃ আগমন করেন এর পর এ ভু-খন্ড "সিলহট" বলে পরিচিত ছিল।
হযরত শাহ্ জালাল (র.) এর আগমনের পূর্বে চীন দেশীয় পর্যটক হিউয়েন সাং যখন ৬৪০ খৃঃ রাজা ভাষ্কর বর্মার আমন্ত্রনে কামরুপ ভ্রমন করেন। তখন সিলেট "শিলাচটলো" বা "শিলিচটলো" বলে উল্লেখ করেন, তখন সিলেটেরঅধিবাসী বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ছিলেন, ১৬১২ খৃঃ সিলেট মোগল শাসনাধীনে আসে। পাঠান বীর খাজা উসমান-(১৫৭১)-(১৬১২) খৃঃ সিলেটের মোগল বাহিনীর মোকাবেলা করেন প্রবল বিক্রমে।। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানারপতন উষার গ্রামে ছিল তান রাজধানী। ১৬১২ খৃঃ মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার নিকট করাইয়া স্থানীয় পাঠান শাসনকর্তা উসমানের সাথে মোগল সেনাপতি সুজাত খানের এক প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে পাঠানসেনারা পরাজিত হলে পাঠানদের সর্বশেষ ঘাটির পতন ঘটে। পরাজিত সেনাপতিগণ প্রাণ রক্ষার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহন করেন। এদেশে কয়েক জনের আগমন হয় ভাদেশ্বর এলাকায়। তাঁদের মধ্যে লালখাঁন নামক একজন সেনাপতি ভাদেশ্বর পূর্বভাগ গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। অতঃপর সেনাপতি শাহ্ চম্পা ভাদেশ্বর কুশিয়ারা নদীর তীরে বর্তমান শেখপুর গ্রামে বসতি করেন। পরে তাঁর পুত্র শেখ শাহ্ আলমের বংশধর দোস্তমুহাম্মদ মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে বিরাট ভূ-সম্পত্তির বন্দোবস্ত লাভ করেন। তাঁর ঐ বংশধর শাহ্ আব্দুল্লাহ্(র.) ভাদেশ্বরী। তিনি দক্ষিণ ভাদেশ্বরের বসতি স্থাপন করেন। শাহ্ আব্দুল্লাহ্ ভাদেশ্বরী-(র.) , শাহ্ মশহুদবিশকুটি ও শাহ্ নিজাম উদ্দীন বিশকুটি (র.) মোগল সম্রাটের সেনাপতি শেখ শাহ্ চম্পা এর বংশধর। ভাদেশ্বর দক্ষিণভাগ বসতি স্থাপন করলে তাঁর বংশধর শাহ্ আব্দুল্লাহ্ ভাদেশ্বরী (র.) ছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশ ও ভারতেরস্বনাম ধন্য ওলীয়ে কামিল।
আধ্যাত্মিক জীবনঃ বিশকুটি -(রহঃ) এমন মহান ব্যক্তি ছিলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত একটি ইলমে তাসাউফ পন্হী বিখ্যাত খান্দানের কীর্তিমান অধঃস্থন পুরুষ। তাঁর পিতা আল্লামা মুহাম্মদ শাহ্ মশহুদ (র.) এবং পিতামহ হযরতআল্লামা আব্দুল্লাহ্ ভাদেশ্বরী (র.) বর্তমান সিলেট বিভাগ ও কাছাড়ের রুহানী মরকজ ও ইসলামী রেনেসাঁয় যারা অবদান রেখে অমর হয়ে আছেন তাদের পয়লা কাতারের আধ্যাত্বিক সাধক ও রুহানী রাহনুমা বা রাহ্ববার। তিনিইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। তন্মধ্যে ভারত, পাকিস্তান,
আমেরিকা, ইংল্যান্ড,
কানাডা, ফ্রান্স, জার্মান, সৌদিআরব, সুইডেন। বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, অষ্টেলিয়া, যুগোস্লাভিয়া, তুরস্ক, ইতুপিয়া, সিরিয়া, ইরাক, ও ইরান,
সহ পৃথিবীর বহু দেশ সফর করেছেন।
তাঁর মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত কোরআন হাদীছের খেদমত করে গেছেন। তিনি এশিয়া মহাদেশে অনেক খেদমত করে গেছেন। আল্লাহর ওলী বিভিন্ন দেশ সফরের পর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর প্রদর্শিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতভিক্তিক সমাজ ব্যবস্থা পরিচালনার লক্ষে বাংলাদেশে তাঁর অনেক অবধান রয়েছে, বিশেষ করে, বাংলাদেশের বৃহত্তর ঢাকা বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগ, সুনামগঞ্জ জেলা, এবং বিশেষ করে সিলেট বিভাগের ভাদেশ্বর, বিশ্বনাথ,আজমিরীগঞ্জ, লাখাই, শেরপুর, হবিগঞ্জ, জেলা, মাধব পুর, এবং তাঁর নিজ জেলা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সহ বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর খেদমত রয়েছে, তাঁর স্বীয় জন্মভূমি ভারতে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, খানক্বা শরীফ, এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। আরো বিভিন্ন সামাজিক ভাবে তিনি গরীব- অনাথ, এতিম ও দুঃস্থ রোগীদের জন্য ইসলামী মিশন প্রতিষ্টা করেছেন।
আল্লামা বিশকুটি (র.) ছিলেন, একজন খাঁটি ওলী আল্লাহ্। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, ওলী আল্লাহ্ সে ব্যক্তি, যার দিকে তাকালে মহান আল্লাহ্ পাকের কথা স্বরণে আসে। (তাফসীরে খাযেন)। আল্লামা বিশকুটি (র.) এর চেহেরার মধ্যে এমন একটা উজ্বলতা ছিল যে, তাঁর দিকে তাকালে স্বভাবতই মনের মধ্যে একটা শ্রদ্ধা জাগ্রত হত এবং মহান আল্লাহ্ পাকের কথা স্বরণে আসত। আল্লামা বিশকুটি (র.) এর খলিফাগণ, ও মুরিদীন, মুহিব্বীন বিশ্বেরবিভিন্ন দেশে রয়েছেন।
বিশকুটি (র.) এর প্রতিষ্টিত অনেক প্রতিষ্টান থেকে, আল্লামা, মোফাস্সীর, মোহাদ্দীস, মুফতি, হয়ে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামের খেদমত
করছেন।
কারামতঃ জালালপুর জালালিয়া ফাদ্বিল ডিগ্রী মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক মাওলানা মোঃ কবিরুজ্জামান সাহেবের মুখ নিঃসৃত কথা গত ৬ই এপ্রিল ২০১৮ইং শুক্রবার আমি বিস্কুটি ছাহেব বাড়ীতে উনার সুযোগ্য আদরের দুলাল নাতীজনাব মাওলানা আব্দুল্লাহ আল নিজাম মশহুদ মাজেদ চৌধুরী এর ওয়ালীমা ও নাতনীর বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া আমার সৌভাগ্যে জুটে। আমার সাথে আরো কয়েকজন ওলামা খানা খেতে বসেছেন। মনের অজান্তে একটি হাড়গলায় ঢুকে গেল। একপর্যায়ে আমি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় পড়ে রইলাম। আমার পার্শ্ববর্তী আলিমদের কেউ কেউ বললেন আপনি তাড়াতাড়ি ক্লিনিকে ভর্তি হোন। আমি ইশারায় বললাম আপনারা খানা খান আমি মাজারে যাচ্ছি। এইবলে তাড়াতাড়ি আমি ছাহেব ক্বিবলাহের মাজারে দরবারে ওলীর কদমে উচ্চ আওয়াজে কান্না জড়িত কন্ঠে নিবেদন করলাম ছাব আমি আপনার কবির আহমদ। যাকে আপনি পাশে ডেকে আনতেন। আমি আপনার সেই কবিরআহমদ। আজ বড় অসহায়। আমার এই দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে। আজ আমার জন্য বুঝি জমিনের মাঠি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। ছাব আপনার বাড়ির মেহমান আমি। এই কথা বলতে না বলতেই আমার অশ্রু স্বজল নয়ন দুটি মুছেফেললাম। কিছু সময় পর একটি অদৃশ্য আওয়াজ শুনতে পেলাম। তুমি খেগলা মার সাথে সাথে আমি উপর দিকে মাথাটা তুলে হালকা একটু খেগলা (বমি বমি ভাব) মারলাম। আল্লাহর কসম এই কাঠা অনায়াসে আমার জিহবার মধ্যখানে এসে গেল। বাম হাত দিয়ে কাঠা বের করে দেখি এটাতো হাড় নয়। বরং ফাতাম সাইজের এক ইঞ্চি থেকে একটু বেশি হাড় ছিল।
#বিশকুটি ছিলছিলার শাজরা নামা
______________________________
# শেখ শাহ্ চম্পা (র.) হতে বর্তমান প্রজন্ম পর্যন্ত বংশ তালিকা নিম্নরুপঃ
শেখ শাহ্ চম্পা (র.) এর ছেলে শাহ্ আলম তাঁর ছেলে, শাহ্ রাজ্জাক, তাঁর ছেলে, মজলিস জাহান, তাঁর ছেলে, মজলিশ মোবারক,
তাঁর ছেলে, মজলিশ ফতেহ, তাঁর ছেলে, ছেহেত আলী, তাঁর ছেলে, আব্দুল মালেক, তাঁর ছেলে, রাজু খান তাঁর ছেলে, ইয়াকুব খাঁন, তাঁর ছেলে, দোস্ত মোহাম্মদ তাঁর ছেলে মোঃ শুফী, তাঁর ছেলে, মুকীম, তাঁর ছেলে, মোঃ মছীম, তাঁরছেলে মোঃ আজীম, তাঁর ছেলে, তাঁর ছেলে ওলীয়ে কামিল আল্লামা শাহ্ আব্দুল্লাহ্ ভাদেশ্বরী-(র.) তাঁর ছেলে, ওলীয়ে কামিল আল্লামা শাহ্ মোঃ মশহুদ বিশকুটি (র.)। তাঁর ছেলে, ওলীয়ে কামিল আল্লামা ছাহেব কিবলাহ্ নিজাম উদ্দীন, বিশকুটি-(র.)।
আল্লামা বিশকুটি ছাহেব কিবলাহ (রহঃ) এর আপন ভাই,
মুহতারাম হুসাম আহমদ চৌধুরী উনার দুই ছাহেব জাদা এহতেশাম মসহুদ চোধুরী এবং ইয়াসির মসহুদ চৌধুরী।
বিশকুটি (রহঃ) এর ছেলে, আব্দুল্লাহ্ আল মশহুদ ফুয়াদ-(র.)
# বর্তমানে যারা জীবিত আছেন। আব্দুল্লাহ্ আল নিজাম মশহুদ (মাজেদ), ও মাহির আব্দুল্লাহ্ আল মশহুদ।
আল্লামা শাহ্ আব্দুল্লাহ্ ভাদেশ্বরী -(র.) হতে এই পর্যন্ত ধারাবাহিক হিসেবে বংশনুক্রমে ওলী আউলিয়া জন্মগ্রহণ করেছেন।
#আল্লামা বিশকুটি (র.) ছিলেন, অগণিত ভক্তের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ ও রুহানী পথ প্রদর্শক। মেহেরবান আল্লাহ্ তা'আলা তাঁকে জান্নাতের আ'লা দরজা দান করুন। এবং আমাদের কে তাঁর রুহানী ফয়েজে ফয়েজিয়াত করুন। আমীন।
ইন্তেকালঃ তিনি ২৩ মার্চ ২০০৯ইং সোমবার বেলা ১১ ঘটিকার সময় ইহকাল ত্যাগ করেন।
তথ্য সুত্রঃ
মুহাম্মদ শাহ নিজাম উদ্দীন, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার, বাংলাদেশ।