গোছলের ফরজ ও ওয়াজিব
গোছলের ৩ টা ফরজ
১। গড়গড়া করে কুলি করা
২। নাকের শক্ত হাড় পর্যন্ত পানি পৌঁছান
৩। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমপূর্ন শরীর পানি দিয়ে একবার ধুয়ে ফেলা।
গোছলের ৫টি ওয়াজিব
১। মেয়েলোকের চুল খোলা থাকলেও চুলের গোড়ায় পানি প্রবেশ করানো।
২। বেণী বাধা থাকলে উহার মধ্যে পানি প্রবেশ করানো।
৩। চুলে গাঢ় কিছু লাগানো থাকলে তা তুলে পানি প্রবেশ করানো। না তুললে যদি পানি প্রবেশ করে তবে তোলার দরকার নেই।
৪। নাকফুল বা আংটি ঢিলা না থাকলে তার মধ্যে পানি প্রবেশ করানো।
৫। স্ত্রী অঙ্গের বাহির অংশে পানি পৌছানো।
মেয়েরা বিশেষভাবে মনে রাখুনঃ
সকালের দিকে গোছল করলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে। রোগ পীড়া কম হয়। বিকালের দিকে গোছল করলে চুল ভিজা থাকে, চুল শুকায়না। ভিজা অবস্থায় চুল বাধলে চুলের ভিজা মাথায় বসে যায় ও ঠান্ডা লেগে সর্দ্দি হয়, মাথা ধরে, মাথার যন্ত্রনা হয়। অল্প দিনে হাঁচি ও মাথার রোগে আক্রান্ত হয়। হাজার হাজার টাকা ব্যয় করেও তখন রোগ নিরাময় হয়না। মেয়েরা প্রতিদিন গোছলের পরে অবশ্য চুল শুকিয়ে নিয়ে চুল বাধবে। গোছলের পর চুল শুকিয়ে নেয়া যায় এমন সময় গোছল করবে। তা হলে মাথার রোগ যন্ত্রনা থেকে বাচতে পারবে।
তথ্যসূত্র
নামাজ প্রশিক্ষণ (লেখকঃ মাহবুবুর রহমান, প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ, প্রতাপনগর আবূবকর সিদ্দিক ফাজিল মাদ্রাসা, সাতক্ষীরা)
পুকুরে গোছল
শরীর ও কাপড়ের নাপাকী ধুয়ে ফেলুন। (ছুন্নাত)
শরমগাহ ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন। (ছুন্নাত)
এবার অজুর নিয়মে অজু করুন। (ছুন্নাত)
গড়গড়া করে কুলি করুন। (ফরজ)
নাকের শক্ত হাড় পর্যন্ত পানি পৌছান। (ফরজ)
অজুর বাকী কাজ নিয়ম মাফিক শেষ করুন।
একবার পানির মধ্যে ডুব দিন। (ফরজ)
সম্পূর্ন শরীর ভালভাবে হাত বা কাপড় দিয়ে ঘসে ফেলুন। যেন শরীরের কোন জায়গার একচুল পরিমাণ শুকনো না থাকে। শুকনো থাকলে ফরজ গোছল আদায় হবে না।
আরও দুবার ডুব দিন। (ছুন্নাত)
উঠে শরীর মু ছে ফেলুন। (ছুন্নাত)
বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুনঃ
উলঙ্গ হয়ে গোছল করবেন না।
গোছলের সময় মেয়েরা বুকের ও মাথার কাপড় আলগা রাখবেন না।
গায়ের ঘাম না শুকালে গোছল করবেন না। করা মাকরুহ।
শরীরের কোন স্থানে আলকাতরা, মোম, মাছের আইশ, আটা, চুন বা নেল পালিশ থাকলে সেখানে পানি না পৌছান পর্যন্ত গোছল শুদ্ধ হবে না।
গোছলখানা অথবা বাথরুমে গোছল
বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুনঃ
এখানে (নিচে) যেমন ধারাবাহিকভাবে নিয়ম-কানুন লেখা হয়েছে তা একের পর এক আমল করার চেষ্টা করুন। আগে পিছে করবেন না।
বাথরুমে ঢুকুন। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করুন।
যদি বাথরুম ব্যতীত অন্য জায়গায় গোছল করেন তাহলে কেহ না দেখে এমন আড়াল জায়গায় গোছল করুন ।
পানির ছিটা শরীরে না লাগে এমন জায়গায় বসুন
দু’হাত কবজি পর্যন্ত ধুয়ে নিন। (ছুন্নাত)
গোছলের নিয়েত করুন। (ছুন্নাত)
পড়ুনঃ নাওয়াইতু আন আগছালা লিরাফয়িল জানাবাত।
অর্থাৎঃ আমি নাপাকী দূর করার জন্য গোছল করছি।
শরীরে বা কাপড়ে নাপাক জিনিষ লেগে থাকলে বাম হাত দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। (ছুন্নাত)
স্ত্রী বা পুরুষ অঙ্গ ধুয়ে ফেলুন। (ছুন্নাত)
মাটি বা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
পেশাব করার প্রয়োজন হলে পেশাব করুন। পেশাবের নিয়ম পরে লেখা হলো।
খেলাল করার দরকার হলে খেলাল করুন। (ছুন্নাত)
তারপর অজু করে নিন। (ছু ন্নাত)
অজুর সময় একবার গড়গড়া করে কুলি করুন। (ফরজ)
পুনরায় দুবার গড়গড়া করে কুলি করুন। (ছু ন্নাত)
নাকের ভিতর শক্ত হাড় পর্যন্ত পানি পৌছান। (ফরজ)
এবার নিয়ম অনুযায়ী অজু শেষ করুন। (ছুন্নাত)
উলঙ্গ হয়ে গোছল করবেন না।
বিছমিল্লাহ বলে ডান কাধে পানি ঢালুন। (ছুন্নাত)
এরপর বাম কাধে পানি ঢালুন। (ছুন্নাত)
মাথার উপরে পানি ঢালুন। (ছুন্নাত)
শরীরের সব যায়গায় যাতে পানি পৌছে সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। চুল, গোঁফ অথবা ভ্রæ ঘন হলে চেষ্টা করে এ সবের গোড়ায় পানি পৌঁছে দিন। (ওয়াজিব)
দাড়ীর গোড়ায় পানি পৌছান। (ফরজ) (কারণ সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ধোয়া ফরজ)।
মনে রাখুনঃ
বগল ও নাভীর নীচের লোমরাজি ৪০ দিনের বেশী সময় রাখা মাকরুহ তাহরীমী। এ সময়ের আগেই সাফ করুন। (ছুন্নাত)
মেয়েদের চুলের বেনী থাকলে তা খুলে চুলের গোড়ায় পানি পৌছান। (ওয়াজিব)
শরীরের সকল অঙ্গ মর্দন করুন। (ছুন্নাত)
শরীরের কোন স্থান যাতে শুকনো না থাকে সে দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন। শুকনো থাকলে ফরজ গোছল আদায় হবে না।
উপরের নিয়মে আরও দুবার সমস্ত শরীরে পানি পৌছান। (ছুন্নাত)
গোছল শেষে সমপূর্ন শরীর মুছে ফেলুন। (ছুন্নাত)
এরপর পা দুখানা ধুয়ে ফেলুন। (ছুন্নাত)
তথ্যসূত্র
নামাজ প্রশিক্ষণ (লেখকঃ মাহবুবুর রহমান, প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ, প্রতাপনগর আবূবকর সিদ্দিক ফাজিল মাদ্রাসা, সাতক্ষীরা)
৭ সময়ে গোছল করা ছুন্নাত
১। জুমার নামাজের আগে।
২। দু’ঈদে ঈদগাহে যাওয়ার আগে।
৩। হজ্বের এহরাম বাঁধার সময়।
৪। মক্কা শরীফে দাখেল হলে।
৫। মৃত ব্যক্তিকে গোছল দেয়ার পরে গোছল দেয়া ব্যক্তির।
৬। শরীরের কোন জায়গায় বদ রক্ত বের করার জন্যে সিঙ্গা লাগানোর পরে।
৭। অমুছলিম ইছলাম কবুল করার সময়।
গোছল
হে ঈমানদারগণ তোমরা যখন নেশাগ্রস্থ থাক, তখন নামাজের নিকটে যেওনা। তোমরা যে সব কথা বলছ তা যতক্ষন নিজে বুঝতে না পার। আর ফরজ গোছলের প্রয়োজনে যতক্ষন গোছল করে না নাও।
— ছুরা নিছা - আয়াত ৪৩
স্বপ্নদোষ অথবা স্বামী-স্ত্রীর মিলনে শরীর বেশী পরিমান ক্ষয় হয়। (পানিতে প্রত্যেক বস্তুর উপাদান থাকার কারণে পানিতে গোছল করলে সঙ্গে সঙ্গে উক্ত ক্ষয় পূরণ হয়ে শরীর সুস্থ হয়)। শরীয়তে স্বপ্নদোষ অথবা মিলনের পরে গোছল করা ফরজ করা হয়েছে।
গোছলের উপকারিতাঃ
হযরত খাজা মঈন উদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন - আমি আমার মোরশেদ হযরত খাজা ওছমান হারুনী কুদ্দিছা ছেররুহুর মুখে শুনেছি যে, হযরত আদম আলাইহিছ্ ছালামকে অপবিত্রতার কারণে জান্নাত হতে দুনিয়ায় আসতে হয়েছে। দুনিয়ায় তার তওবাহ কবুল হওয়ার পর যখন তিনি বিবি হাওয়া আলাইহিছ ছালামের সঙ্গে মিলন নেন তখন হযরত জিবরিল আলাইহিছ ছালাম হাজির হয়ে তাকে গোছল করার নিয়ম কানুন বলে দেন। হযরত আদম আলাইহিছ ছালাম গোছল করার পর তৃপ্তি পেলেন। তখন তিনি বললেন ভাই জিবরাইল ! এ গোছলের অন্য কোন ফায়দা বখশিশ আছে কি ? উত্তরে জিবরাইল আলাইহিছ ছালাম বললেন এর বিনিময়ে অনেক নেকী আছে। প্রথম আপনার শরীরে যত পশম আছে, এর প্রত্যেক পশমের বদলে এক বছরের নেকী পাবেন। দ্বিতীয় ফরজ গোছলের কারণে তার প্রতি ফোটা পানি হতে আল্লাহ তাআ’লা এক একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন, যারা কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থেকে ইবাদাত বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, আর আপনি ঐ সব ফেরেশতাগনের ইবাদাত বন্দেগীর নেকী পেতে থাকবেন।
এরপর আদম আলাইহিছ ছালাম জিজ্ঞেস করলেন ভাই জিবরাইল! এ পুরস্কার কি আল্লাহ তাআ’লা বিশেষভাবে আমার জন্যে নির্দিষ্ট করেছেন, না আমার সন্তানগণও এ পুরস্কার এভাবেই পেতে থাকবে ? জিবরাইল আলাইহিছ ছালাম উত্তরে বললেন আপনার সন্তান গণের মধ্যে ঈমানদার মুছলিমগণ যদি এ নিয়মে ফরজ গোছল আদায় করে তারাও এভাবেই পাবে যেভাবে আপনাকে দেয়া হলো।
এ শ্রেষ্ট নিয়ামত কেবল মাত্র তাদের জন্য যারা সঠিকভাবে ফরজ গোছল আদায় করে। কিন্তু এমন একটি দল আছে যারা এ বিশিষ্ট নিয়ামত হতে বঞ্চিত। কেননা তাদের গোছল প্রায় হারাম মিলনে ঘটে। আরও একটি দল আছে, যাদের হালাল মিলনের গোছল ও পরিপুর্নভাবে আদায় না করার কারণে গোছল বাতিল হয়ে যায়।
যখন কেউ হারাম মিলন নিয়ে গোছল করে তখন আল্লাহ তাআ’লা তার আমল নামায় এক বছরের গোনাহ লিখে দেন এবং তার হারাম গোছলের প্রতি ফোটা পানি হতে এক একটি দৈত্য দানব সৃষ্টি করেন, যারা কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থেকে যে সকল পাপ কাজ করবে তার সকল পাপই তার আমল নামায় লেখা হবে। [1]
মিলনের পরপরই ফরজ গোছল আদায় করলে ক্ষয় পুরন হয়ে শরীর সুস্থ হয়ে যায়। গোছল আদায় না করে তার পরিবর্তে ক্ষয় পুরনের জন্যে ঔষধ খেলে ও সে ক্ষয় কখনো পুরন হয় না। গোছলের জন্যে পানি না পেলে অথবা অন্য কোন অসুবিধা থাকলে অতি অবশ্য অজু করে নিবে।
নাজাছাতে খফীফা
হালকা জাতীয় নাপাক যেমন মায়ের দুধ পানকারী ৭/৮ মাস বয়স পর্যন্ত ছেলে মেয়েদের পেশাব। হালাল পশুর পেশাব ও নাজাছাতে খফীফা। এ জাতীয় নাপাক শরীরে লাগলে প্রথমে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলু ন। পূণরায় পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর আবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মোট তিন বার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। যা দূর করলে তার দূর্গন্ধও দূর হয়ে যায় এমন জাতীয় নাপাক নাজাছাতে খফীফা।
তথ্যসূত্র
নামাজ প্রশিক্ষণ (লেখকঃ মাহবুবুর রহমান, প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ, প্রতাপনগর আবূবকর সিদ্দিক ফাজিল মাদ্রাসা, সাতক্ষীরা)