১. ঈদের সংজ্ঞা বর্ণনা করতে গিয়ে আরবী অভিধানের অন্যতম কিতাব ‘আল মুজামুল ওয়াসীত’ এর ৬৩৫ পৃষ্ঠায় আছে-
“ঈদ বলা হয় কোন দুশ্চিন্তা বা কোন রোগ অথবা কোন আকাংখ্যা বা এ ধরণের অন্যান্য বিষয় যা বারবার ফিরে আসে এবং এমন প্রত্যেক দিনকে ঈদের দিন বলা হয় যে দিন কোন সম্মানীত বা প্রিয়তম ব্যক্তির স্মরণে মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়”।
২. ঈদের সংজ্ঞা বর্ণনা করতে গিয়ে ‘মেসবাহুল লুগাত’ এর ৫৮৩ পৃষ্টায় লিখা আছে-
“ঈদ এমন প্রত্যকে দিনকে বলা হয় যে দিন কোন সম্মানীত মহান ব্যক্তির অথবা কোন গুরুত্বপূর্ণ বড় ঘটনার স্মরণে কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঈদকে এ জন্য বলা হয় কারণ তা প্রত্যেক বছর ফিরে আসে”।
৩. ‘ফিরজুল লুগাত’ এর ১২৭ পৃষ্ঠায় বলা আছে-
“ঈদ হল মুসলমানদের আনন্দের দিন, খুশির কোন অনুষ্ঠান ও খুবই আনন্দিত হওয়া”।
ঈদ কি শুধু দুটিই ??
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা সম্পর্কে হাদিসে পাকে বলা হয়েছেঃ
সাহাবী আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সা. যখন মদীনায় আসলেন তখন দেখলেন বছরের দুটি দিনে মদীনাবাসীরা আনন্দ-ফুর্তি করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এ দিন দুটো কি? তারা বলল যে আমরা ইসলামপূর্ব মুর্খতার যুগে এ দুদিন আনন্দ-ফুর্তি করতাম। রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ 'আল্লাহ তাআলা এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটো দিন তোমাদের দিয়েছেন। তা হল ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর'।
— আবু দাউদ
এখানে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা কে দুটি ঈদের দিন হিসেবে বলা হয়েছে কিন্তু এই দুইটি দিন ছাড়া অন্য কোন ঈদের দিন নাই তা এখানে উল্লেখ নাই । পবিত্র কুর’আন ও আরও অসংখ্য হাদীসে আরও অনেক দিনকে ঈদ এর দিন হিসেবে উল্লেখ হয়েছে।
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
অর্থঃ ঈসা ইবন মারিয়ম বললেন- হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন। এ দিন আমাদের জন্য ঈদ হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্যও তা হবে ঈদের দিন। আপনার পক্ষ থেকে এটি হবেএকটি কুদরতি নিদর্শন।
— সূরা মায়িদাহ ১১৪
উক্ত আয়াতে প্রমাণিত হল যে, আল্লাহ পাকের কোন নিয়ামত লাভের দিনকেও ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করা যায়। নিঃসন্দেহে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে প্রেরিত দুনিয়াবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত; কারন তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত । আল্লাহ তায়ালা বলেন,
আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি ।
— সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১০৭
সুতরাং এই দিনটি অবশ্যই আনন্দ তথা ঈদের দিন । এছাড়াও লাইলাতুল বারাত ও লাইলাতুল কদরকেও ঈদের দিন হিসেবে বলা হয়েছে। হযরত আব্দুল কাদীর জিলানী (রঃ) বলেন-
ফেরেশতাদের জন্য লাইলাতুল বারাত ও লাইলাতুল ক্বদর দুটি ঈদের দিন।
— গুনিয়াতুত তালেবীন (উর্দু) পৃঃ ৩৬৫
১. জুম্মার দিন
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ (দঃ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় এ দিন (জুমুআর দিন) আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি জুমুয়া পড়তে আসবে সে যেন গোসল করে ও সুগন্ধি থাকলে উহা লাগায় এবং তোমাদের উপর মিসওয়াক করা আবশ্যক।
— ইবন মাজাহ পৃঃ ৭৮
অনেক হাদীসে এই দিনটিকে ইদুল ফিতর ও ইদুল আযহা থেকেও শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
—ইবন মাজাহ পৃঃ ৭৭ ও মিশকাত শরীফ পৃঃ ১২০
২. আরাফার দিন (৯ই জিলহজ্ব)
অনেক রেওয়াতে ৯ই জিলহজ্ব অর্থাৎ আরাফার দিনটিকেও ঈদের দিন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
—মিশকাত শারীফ পৃঃ ১২১ ও তিরমিযী শারীফ পৃঃ ১৩৪
৩. প্রতি মাসে ৪/৫ দিন
হুজুর পাক (সঃ) ইরশাদ করেন, মু'মিন মুসলমানদের প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে চারটি অথবা পাঁচটি সোমবার হয়ে থাকে।
— কিফায়া শরহে হিদায়া ২য় খন্ড - বাবু ছালাতিল ঈদাইন; হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া
৪. রোযাদারের জন্য দুটি ঈদ
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, রোযাদারের জন্য দুটি ঈদ বা খুশি। একটি হলো তার প্রতিদিন ইফতারের সময়। আর অন্যটি হলো মহান আল্লাহ পাকের সাক্ষাতের সময়!
— বুখারী শরীফ - কিতাবুস সাওম; মুসলিম শরীফ; মিশকাত শরীফ, রোজা অধ্যায়
সুতরাং কোরআন ও হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে, শরীয়ত সমর্থিত যেকোন আনন্দের দিনই ঈদের দিন । আর ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী বলতে বুঝায় নবী কারীম (দঃ) এর পৃথিবীতে আগমন উপলক্ষে ঈদ বা আনন্দের দিন।
১) নিজ মহল্লার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করা
২) মিসওয়াক করা
৩) গোসল করা
৪) খুশবু লাগানো
৫) সাদাকায়ে ফিতর যার জন্য ওয়াজিব তা নামাজের পূর্বেই আদায় করে নেয়া
৬) সাধ্যানুযায়ী উত্তম পোশাক পরিধান করা
৭) খুশী ও আনন্দ প্রকাশ করা
৮) ঈদুল ফিতরে ঈদের ময়দানে যাওয়ার পূর্বে কিছু নাস্তা করা
৯) মিষ্টি জাতীয় ও বিজোড় সংখ্যক খেজুর দিয়ে এই নাস্তা করা
১০) সামর্থ অনুযায়ী অধিক পরিমাণ দান সাদাকা করা
১১) আগেভাগে ঈদগাহে যাওয়া
১২) পায়ে হেটে ঈদগাহে যাওয়া
১৩) ঈদগাহে একপথে যাওয়া এবং অন্য পথ ধরে ফিরে আসা
১৪) ঈদগাহে যাওয়ার সময় চুপে চুপে তাকবীরে তাশরীফ অর্থাৎ বলাঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবারওয়ালিল্লাহিল হামদ । ঈদগাহে পৌছার পর তাকবীর বলা বন্ধ করে দিতে হবে । এক রেওয়ায়েত অনুযায়ী ঈদের নামায আরম্ভ হওয়ার পূর্বে তাকবীর বলা মুস্তাহাব ।ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যাওয়ার পথে উল্লেখিত তাকবীরটি জোরে জোরে পড়া মুস্তাহাব (আলমগীরী, ১ম খন্ড)
১৫) ঈদগাহে ঈদের জামা’আত করা
১৬) কুরবানি ঈদের দিন যে লোক নিজের পক্ষ থেকে কুরবানি করবে, তাঁর জন্য ঈদের নামায ও কুরবানির জন্তু জবেহ্ করার পর নখ ও লোম কাটা মুস্তাহাব ।এভাবে হাজীদের সাথে তাঁর সামঞ্জস্য ঘটে । যেহেতু হাজী সাহেবগণও কুরবানির পর নখ কাটা মাথা কামানো ইত্যাকার কাজগুলো করে থাকেন (আলমগীরী, ১ম খন্ড)
১৭) মুসলিম শরীফে বর্নিত হয়েছে, নবী করীম (সঃ) ইরশাদ করেছেনঃ যখন যিলহাজ্জের চাঁদ উঠে তখন তোমাদের যে কেউ কুরবানির ইচ্ছা করবে সে কুরবানি পর্যন্ত নখ ও চুল ইত্যাদি কাটবে না (দুররুল মুখতার, ১ম খন্ড)
১৮) ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামাযের পূর্বে কিছু না খাওয়া মুস্তাহাব । দিনের প্রথম খাবার হিসেবে কুরবানির গোস্ত খাওয়া মুস্তাহাব । সাধারণ লোকের মাঝে প্রচলিত রয়েছে, কুরবানির গোস্ত খাওয়া পর্যন্ত বিলম্বিত সময়টিকে তারা রোযা বলে আখ্যায়িত করে । এরূপ মনে করা ভ্রান্তি ও গুনাহ ।
১৯) ধীরস্থিরভাবে ঈদগাহে যাওয়া মুস্তাহাব;