বিশ্ব নবী (সঃ) এর হাদিস দ্বারা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে- যদিও মৃত্যুর পর আমরা মানুষকে পচনশীল লাশ মনে করি। বস্তুত তারা লাশ নয়।বরং জীবিত থাকে ।তবে তাদের জীবন আমাদের এই পার্থিব জীবনের সম্পূর্ণ বিপরিত । বিশ্ব নবী (সঃ) বলেছেন –
মৃতের হাড় ভাঙ্গা, জীবিতের হাড় ভাঙ্গার মতই।
— মেশকাত,আবু দাউদ,ইবনে মাজা, মালেক
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) একদিন হযরত আমর ইবনে হজম (রাঃ) কোন একটি কবরের সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বললেন ,
এই কবরে সমহিত ব্যাক্তি কে কষ্ট দিয়ো না
— মেশকাত
মৃত্যুর পরে মানুষ এই পার্থিব জগত থেকে পর জগতে চলে যায় ।তাঁকে কবরে সমাহিত করা না হলেও বা চিতার আগুনে জ্বলানো হলেও তাঁর অবস্থান পরলোকে । সেখানে অবস্থান কালে তাঁর চেতনা উপলব্ধি ও বিদ্যমান থাকে ।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , মৃতের লাশ চৌ খাটে রেখে কবরস্থানে নেয়ার জন্য যখন তা কাধে করে বহন করে । তখন সে পুণ্যবান হলে বলে , আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো ।আর যদি সে পুণ্যবান না হয়, তাহলে নিজের পরিবার পরিজন কে বলে , হায় ! আমার ধংস , তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? মানুষ ছাড়া প্রত্যেক প্রাণী তাঁর এই কথা শুনতে পায় । আর মানুষ যদি শুনত অবশ্যই সে বেহুশ হয়ে পরত ।
— বুখারি শরীফ
মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের জীবনে যে সময় অতিবাহিত হয় তাঁকে বরজখ বা কবরের জীবন বলে । বরজখ শব্দের অর্থ – পর্দা বা আড়াল । যেহেতু এই সময় কাল টি দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে পর্দা বা আড়াল বিশেষ , এ জন্য একে বরজখ বলা হয় ।
সাধারনত মানুষ যেহেতু মৃতদের কে কবরে সমাহিত করে , সেহেতু হাদিসের ভাষায় বরজাখকালের শান্তি ও সাস্তি কে কবরের আজাব নামেই উল্লেখ করা হয়েছে। এর মর্ম এই নয় যে , যেসব মৃত কে আগুনে জালান হয় , বা গভীর পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয় , তারা বরজাখের সময়কালে জীবিত থাকে না । আসলে তারাও বরজখে জিবন্ত কাল কাটায় । তারা হয় শান্তি তে অথবা শাস্তির মধ্যে নিপতিতথাকে । যারা কাফের মুশরেক অবস্থায় মারা যায় ,তারা বরজখের জীবনে কোন আরাম শান্তি ভোগ করতে পারে না ।তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি আর শাস্তি । আল্লাহ্ তায়ালা মানব দেহের ভস্ম কে একত্রিত করে শাস্তি বা শান্তি দিতে পুরো মাত্রায় সক্ষম । হাদিসে আছে ,
পূর্ব জামানায় এক ব্যাক্তি খুব গোনাহর কাজ করত । তাঁর মৃত্যুর সময় উপস্তিত হলে সে তাঁর পুত্র দের এই অসিওত করল যে , তোমরা আমার মর দেহ টি আগুনে জালিয়ে দেবে। আর আমার চাই ভস্মের অর্ধেক বায়ু মন্দলে উড়িয়ে দেবে। এবং বাকি অর্ধেক সমুদ্রের গভীর পানিতে মিশিয়ে নিঃশেষ করে ফেলবে। । এরপর সে আরও বলল , আল্লাহ্ তায়ালা যদি এর পরেও আমাকে জীবিত করতে সক্ষম হন , তাহলে অবশ্যই আমাকে এমন কঠোর শাস্তি দেবেন , যা আমাকে ছাড়া ত্রিভুবনে আর কাউকে দেবেন না ।
লোকটির মৃত্যুর পর পুত্র গন পিতার অন্তিম কালের অসিওত মতো কাজ করল । অতঃপর আল্লাহ্ তায়ালা সমুদ্রকে ওই ভস্ম গুলো একত্রিত করার নির্দেশ দিলে সমুদ্র তা একত্রিত করল।এমনি ভাবে স্থল্ভাগের বায়ু মণ্ডলকে ভস্ম গুলো একত্রিত করার নির্দেশ দিলে সে ও তা একত্রিত করল। তখন আল্লাহ্ তায়ালা উভয় স্থানের ভস্ম একত্রিত করে তাঁকে জীবিত করলেন । অতঃপর তাঁকে জিজ্ঞেশ করলেন, তুমি এমন অসিওত কেন করলে? সে বলল, হে আমার প্রতিপালক ! আমি যে তোমার শাস্তির ভয়ে এরুপ করেছি। তাত তুমি ভালো ভাবেই অবগত আছো ।অতঃপর আল্লাহ্ তায়ালা একে ক্ষমা করে দেন ।
— বুখারি, মুসলিম
হাদিসের বর্ণনা দ্বারা এও জানা যায় যে, মৃত্যুর পর মুমিন বান্দা রা একে ওপরের সাথে দেখা সাক্ষাত করেন। আর নবাগত মৃত মুমিন ব্যাক্তির কাছে অপরাপর মুমিন ব্যাক্তিরা জিজ্ঞেস করে- অমুকের অবস্থা কি? সে কি অবস্থায় আছে?
হযরত সাইড ইবনে জুবায়ের (র) বলতেন, কারো মৃত্যু হলে কবরের জীবনে তাঁর মৃত সন্তানেরা তাঁকে এমন ভাবে সংবরধনা জানায়, যেরূপ পার্থিব জীবনে কোন বহিরাগত লোক কে সংবর্ধনা জানানো হয় ।
— সরহে সুদূর
হযরত ছাবেত বানানি (র) বলেছেন , কারো মৃত্যুর পর কবর জীবনে তাঁর পূর্বে মৃত নিকট-আত্মীয় গন তাঁর কাছে এসে তাঁকে ঘিরে ধরে । তারা পরস্পর এতো বেশি খুশী হয় , যেমন পার্থিব জীবনে বহিরাগত কারো আগমন হলে তাঁর সাথে সাক্ষাতে খুশী হয়ে থাকে ।
— সরহে সুদূর
হযরত কায়েস ইবনে কবায়সা (রা) বলেন রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ,কেউ মুমিন অবস্থায় মৃত্যু বরন না করলে তাঁকে অন্যান্য মৃতদের সাথে কথা বলার অনুমতি দেয়া হয় না । জনৈক সাহাবী (রাঃ) জিজ্ঞেশ করলেন , ইয়া রাসুলাল্লাহ ! মৃতের সাথে কি অন্যান্য মৃতরা কথা বলতে পারে? রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, হা কথা তো বলেই, তদুপরি তাদের পরস্পরের সাথে, দেখা সাক্ষাতও হয় ।
— শরহে সুদুর,বুশরাল কাতিব বিলিকায়েল হাবিব -সুয়ুতি
নবী পত্নি হযরত আয়েশা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি তাঁর মুসলিম ভাইয়ের কবর জেয়ারত করে এবং তাঁর কবরের পাশে বসে , কবরে সমাহিত ব্যাক্তি তাঁকে তাঁর সালামের জবাব দেয় । এবং জেয়ারত কারি চলে আসা পর্যন্ত তাঁকে চিনতে ও বুঝতে সক্ষম হয়।
— ইবনে আবি দুনিয়া ও শরহে সুদূর
হযরত উম্মে বাসার (রা) বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম , হে আল্লাহর রাসুল ! মৃতরা কি একে অপরকে চিনতে পারে ? তিনি বললেন , তোমার কল্যাণ হোক । মুত্মাইন আত্মা (যে সব মুমিনের আত্মা আল্লাহ্ তায়ালার ওপর সন্তুষ্ট থাকে,তা ) জান্নাতে সবুজ পাখির হৃদয় অভ্যন্তরে অবস্থান করে। এখন বুঝে নাও পাখিরা যদি বৃক্ষে থাকতে একে অপরকে চিনতে পারে , তাহলে মুমিনের আত্মা সমুহ ও একে অপরকে চিনে নিতে পারবে।
— ইবনে সায়াদ , শরহে সুদূর
হযরত আবু সাইদ খুদরি (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , যে ব্যাক্তি কুরআন মজিদ পাঠ শিক্ষা শুরু করে শেষ করার পূর্বেই মারা যায় , কবরে একজন ফেরেশতা তাঁকে কোরআন মজিদ শিক্ষা দেন। আর সে আল্লাহ্ তায়ালার সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করবে যখন সে সম্পূর্ণ কোরআন মজিদের হাফেজ হবে।
— শরহে সুদূর
যারা এই পার্থিব জীবন পুণ্য ময় কর্মে অতিবাহিত করেন এবং মৃত্যুর পরের জীবনের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করেন , এই দুনিয়ার প্রতি তাদের মন আকৃষ্ট হয় না ।তারা ইহকালের চেয়ে পরকালের জীবন কে বেশি প্রাধান্য দেন। আর যারা পার্থিব জীবন কে খারাপ ও অন্যায় কাজে অতিবাহিত করে । তারা মৃত্যুর কথা স্মরণেই ভয় পায়।
সলায়মান ইবনে আব্দুল মালেক আবু হাজেম (রঃ) কাছে জিজ্ঞেস করলেন , আমরা মৃত্যু সম্পর্কে কেন ভীত হই বলবেন কি? তিনি বললেন এর কারন হচ্ছে , তোমরা দুনিয়া কে খুব সুন্দর ভাবে আবাদ করো এবং পরকালকে বরবাদ করো । এবং আবাদ কৃত জায়গা হতে বরবাদ কৃত জায়গায় যাওয়া পছন্দ হয় না । সলায়মান বললেন আপনি যথার্থ ই বলেছেন।
— ফিকাতুস সাফওয়াহ্, ২য় খণ্ড , ৮৯ পৃষ্ঠা
কবর জীবনের প্রতি যে সন্দেহাতিত ভাবে বিশ্বাস রাখে এবং নিজের পুন্নময় কর্মের প্রতিদানে সেখানে ভালো অবস্থায় থাকার আশা পোষণ করে । আর মনে করে যে পার্থিব জগতের ভাই বন্ধু আত্মীয় স্বজন পরিত্যাগ করে চলে যেতে হবে , কবরের জীবনেও ভাই বন্ধু আত্মীয় স্বজন পরিবার বর্গ সাথে দেখা সাক্ষাত লাভ করে । সুতরাং মৃত্যু কে তারা ভয় কেন পাবে? আর এই ক্ষণস্থায়ী জীবন কে কেনই বা কবরের জীবনের ওপরে প্রাধান্য দেবে?
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন,
মানুষ এই পার্থিব জীবন কে খুব পছন্দ করে ও ভালবাসে । অথচ ম্রিত্তুই হচ্ছে তাঁর জন্য উত্তম ।
— বায়হাকি- শোয়া বুল ঈমান ।
কোন কোন বর্ননায় আছে রাসুলুল্লাহ (সঃ) মুমিনের জন্য মৃত্যুকে উপঢৌকন বলেছেন ।
— বায়হাকি , মেশকাত
তিনি এও বলেছেন ,
যে মানুষ মৃত্যুকে খারাপ জানে ও অপছন্দ করে , অথচ দুনিয়ার ফেতনা – ফাসাদ ও আল্লাহর পরীক্ষায় নিপতিত হবার চেয়ে তাঁর জন্য মৃত্যু উত্তম । মৃত্যু যত তাড়াতাড়ি হবে , তত তাড়াতাড়ি দুনিয়ার ফেতনা ফাসাদ থেকে নিরাপদ হওআ যাবে ।
— শরহে সুদূর
হযরত আনাস (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , মানুষের দুনিয়া হতে ইন্তেকাল করে পরকালে চলে যাওয়ার উদাহহরন হচ্ছে – শিশু যেমন মায়ের সংকীর্ণ ও অন্ধকার জঠর হতে জন্ম লাভ করে পার্থিব জগতের আলো বাতাসের আরামপ্রদ ও সুন্দর পরিবেশে চলে আসে , অনুরুপ ভাবে মানুষ দুনিয়ার অসান্তিময় জীবন হতে ইন্তেকাল করে, এক বিরাত প্রসস্ত ময় জীবনে পদারপন করে । মত কথা মুমিনের জন্য মৃত্যু খুব উত্তম বিষয় কিন্তু শর্ত হচ্ছে তাঁর জীবন হতে ,হবে পুণ্য ময় জীবন । এবং তাঁর ও আল্লাহ্ তায়ালার , মধ্যে কার সম্পর্ক সঠিক ও সুন্দর রাখতে হবে । আল্লাহ্ তায়ালার যেসব বান্দা পুন্নময় কর্মে জীবন অতিবাহিত করেন , তারা মৃত্যু কে পার্থিব জীবনের ওপরে প্রাধান্য দেন। পার্থিব জীবনের বিপদ আপদ , ফেতনা ও অস্থিরতা পূর্ণ জীবন থেকে বের হয়ে খুব তাড়াতাড়ি পরকালের চির শান্তি ও সুখ ময় জীবনে পদার্পণ করতে আগ্রহি থাকেন ।
কোন এক সময় হযরত আবু হরায়রা (রা) জনৈক ব্যাক্তি কে জিজ্ঞেশ করলেন কোথায় যাচ্ছ? সে বলল বাজারে যাওয়ার ইচ্ছা রাখি । তখন তিনি বললেন ঃ যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় , তাহলে আমার জন্য মৃত্যু ক্রয় করে নিয়ে আসবে।
— ইবনে আবু শায়বা , বায়হাকি
এ কথার মর্মার্থ হচ্ছে এ দুনিয়ায় বসবাস করা আমার পছন্দ নয় , যদি মূল্য দ্বারাও মৃত্যু ক্রয় করা যায় , তবে তা ক্রয় করে নেব। হযরত খালেদ ইবনে মায়াদান (রা) বলতেন , যদি কেউ একথা বলে , অমুক জিনিস যে স্পর্শ করবে , তৎক্ষণাৎ সে মারা যাবে । তাহলে আমার পূর্বে কেউ তা স্পর্শ করতে পারবে না । তবে কেউ যদি আমার চেয়ে বেশি দৌড়াতে পারে এবং আমার পূর্বেই তাঁর নিকত পৌঁছে যায় , তাহলে অন্য কথা ।
মৃত্যুর সময় ও মৃত্যুর পরে মুমিনের সম্মান
হযরত বারায়া ইবনে আজিব (রা) বলেন , আমরা একদিন রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর সাথে এক জনৈক আন সারির জানাজা পড়তে কবর স্থানে গিয়েছিলাম । সেখানে পৌঁছে দেখলাম তখনও কবর খনন করা হয় নাই । এ কারনে নবী করীম (সঃ) সেখানে বসলেন । আমরাও তাঁর চারদিকে আদবের সাথে এমন ভাবে বসলাম যেন , আমদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর হাতে এক খানা লাঠি ছিল , তা দ্বারা তিনি চিন্তা যুক্ত মানুষের ন্যায় মাটি খুঁড়ছিলেন । নবী করীম (সঃ) নিজস্ব মাথা মুবারক উঠিয়ে বললেন , কবরের শাস্তি হতে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো । এ কথা তিনি ২ বা ৩ বার বললেন । অতঃপর বললেন মুমিন বান্দা যখন দুনিয়া থে পরকাল অভিমুখি হয়, তখন আকাশ হতে তাঁর কাছে ফেরেস্তার আগমন ঘটে । যাদের চেহারা হচ্ছে সূর্যের ন্যায় সমুজ্জল । তাদের সাথে থাকে জান্নাতের কাফন ও জান্নাতের সুঘ্রাণ । এ ফেরেশতা গন মূমুর্ষ ব্যক্তির দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে বসে। অতঃপর মালাকুল মওত ফেরেশতার আগমন হয় । সে এসে মূমুর্ষ ব্যক্তির সিওরে বসে বলে হে পবিত্র আত্মা ! আল্লাহ্ তায়ালার ক্ষমা ও মাগফেরাত এবং তাঁর সন্তুষ্টির পানে দেহ থেকে বের হয়ে এসো । তখন মুমিন ম্যাক্তির আত্মা খুব সহজে এমন ভাবে দেহ থেকে বের হয়, যেমন কলসি থেকে পানির ফোটা প্রবাহিত হয়ে বেরিয়ে আসে । অনন্তর মালাকুল মওত তা বরন করে নেন ।
অতঃপর মালাকুল মওত হাতে নেওয়ার পর তিনি তা দূরে অপেক্ষ মান অন্যান্য ফেরেশ্তাদের হাতে ছেড়ে দিতে না দিতেই মুহূর্তের মধ্যেই তারা সে আত্মা কে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধিতে জড়িয়ে আসমানের দিকে চলে যান । এ সুঘ্রাণ সম্পর্কে নবী করীম (সঃ) বলেন , পার্থিব জগতে সবচেয়ে উত্তম সুগন্ধি হচ্ছে মেশক, তাদের সাথে আনিত সুঘ্রান মেশকের মতই উত্তম।
অনন্তর নবী করীম (সঃ) বলেন, অতঃপর সে আত্মা নিয়ে ফেরেশ তা গন ঊর্ধ্ব গগন পানে চলতে থাকেন ।তারা অন্যান্য যেসব ফেরেস্তাদের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করেন, তারা জিজ্ঞেস করেন , এই পবিত্র আত্মা কার?
প্রতুত্তরে তারা দুনিয়ায় উচ্চারিত সুন্দর নাম উল্লেখ করে বলেন, এ অমুকের পুত্র অমুকের আত্মা। এভাবে তারা প্রথম আকাশে পৌছলে প্রথম আকাশের দুয়ার খুলে দেয়া হয় । অতঃপর তারা এ আত্মা কে নিয়ে আরও ঊর্ধ্ব মারগে যেতে থাকেন । শেষ পর্যন্ত তারা পরজায়ক্রমে সপ্তম আকশে পোঁছান । এ সময় প্রত্যেক আকাশের ফেরেশ্তা গন তাঁকে অন্য আকাশ পর্যন্ত বিদায় অভিনন্দন জানান। সপ্তম আকাশে উপনিত হলে আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ আমার এ বান্দার নাম ইল্লিনের দফতরে লিপিবদ্ধ করো এবং তাঁকে পুনরায় পৃথিবীতে নিয়ে যাও । কেননা আমি মাটি দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং সে মাটিতেই তাঁকে ফিরিয়ে দেব। আর সে মাটি থেকেই তাঁকে দ্বিতীয়বার উত্থিত করবো।“ অতপর আত্মা কে তাঁর দেহ অবয়ব এ রাখা হয় । তারপর তাঁর কাছে ২ জন ফেরেশতার আগমন ঘটে । তারা তাঁকে উথিয়ে বসান এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করেন , তোমার প্রভু কে? সে বলে আল্লাহ্ তায়ালা আমার প্রতি পালক ,অতঃপর তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় তোমার ধর্ম কি? সে বলে আমার ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। পুনরায় তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় ,এ ব্যাক্তি কে? যাকে তোমাদের কাছে প্রেরন করা হয়েছিলো? প্রতুত্তরে সে বলে ইনি আল্লাহ্ তায়ালার রাসুল। অতঃপর তাঁকে জিজ্ঞাশ করা হয় তোমার আমল কি?সে বলে , আমি আল্লাহ্ তায়ালার কিতাব পাঠ করেছি। আর তা বিশ্বাস ও সত্তারপ করেছি ।
এরপর আসমান থেকে একজন ঘোষক এই ঘোষণা দেন (আসলে যা আল্লাহর ঘোষণা) “ আমার বান্দা সত্য বলেছে, সুতরাং তাঁর জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও ।, তাঁকে জান্নাতের কাপর পরিধান করাও। এবং তাঁর জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা উন্মুক্ত করে দাও ।“ অতঃপর তাঁর দিকে জান্নাতের একটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে দরজা দিয়ে জান্নাতের সুঘ্রাণ এসে তাঁর কাছে পৌঁছে । আর দৃষ্টিরশেষ সীমা পর্যন্ত তাঁর কবর কে প্রশস্ত করা হয় । এরপর খুব সুন্দর পসাক পরিহিত ও পবিত্র ও সুঘ্রাণ মাখা এক ব্যাক্তি এসে তাঁর কাছে বলেনঃ তুমি সুখ ও আনন্দ ও প্রসান্তির ব্যাপারে সুসংবাদ গ্রহন করো । এ হচ্ছে সেই দিন যেদিনের আগমন সম্পর্কে তোমাকে প্রতিস্রুতি দেয়া হয়েছে । মুমিন ব্যাক্তি তখন জিজ্ঞাস করেন তুমি কে? বাস্তবিকই তোমার চেহারা খুব সুন্দর এবং উত্তম চেহারা বলার যোগ্য।প্রত্যুত্তরে সে বলেঃ আমি তোমার পুণ্য কর্ম । তখন মুমিন ব্যাক্তি আনন্দ চিত্তে বলে , সে আমার প্রতিপালক ! কেয়ামত কায়েম করুন । হে আমার প্রতি পালক ! কেয়ামত কায়েম করুন । যাতে আমি আমার পরিবার পরিজন ও সম্পদের সাথে মিলিত হতে পারি ।
কাফেরদের লাঞ্ছনা ও অপমান
কোন অবিশ্বাসী কাফের যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় এবং পরকাল অভিমুখি হয় , তখন তাঁর কাছে আকাশ হতে কালো চেহারা বিশিষ্ট কয়েকজন ফেরেশতা অবতরন করেন । তাদের সাথে থাকে চাটাই । তারা মূমুর্ষ ব্যাক্তির দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে বসেন। অতঃপর মালাকুল মওত ফেরেশতা তাঁর শিওরে এসে বলেন, হে পাপিষ্ট আত্মা ! আল্লাহ্ তায়ালার অসন্তুষ্টির পানে ধাবিত হও ।মালাকুল মওতের এ কথাশুনে ওই আত্মা দেহের মধ্যে ছুটাছুটি করতে থাকে । অনন্তর মালাকুল মওত তাঁর আত্মাকে দেহ থেকে এমন সজড়ে বের করে আনেন, যেমন ভিজা তুলাকে লহার চিরুনি দ্বারা আঁচড়িয়ে পরিষ্কার করা হয় । অর্থাৎ কাফেরের আত্মা দেহ থেকে এমন জোড়ে টেনে বের করা হয়, যেমন লোহার চিরুনি হতে ভিজা তুলা কে টেনে বের করা হয় । অতঃপর মালাকুল মওত উক্ত আত্মা নিজের হাতে নিয়ে অপেক্ষমান অন্যান্য ফেরেশ্তাদের হাতে দিতে না দিতেই তারা আত্মা টি নিয়ে দুরগন্ধময় চাটাইতে জড়ান । সে চাটাই থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হতে থাকে, পচা ও গলিত মরদেহের দুর্গন্ধে সমস্ত পরিবেশ দুর্গন্ধময় করে তোলে । ঐ সব ফেরেশতা ওই পাপীষ্ট আত্মা কে নিয়ে আকাশের পানে আরহন করেন। পথিমধ্যে যেসব ফেরেশ্তার সাথে সাক্ষাত ঘটে তারা জিজ্ঞেস করেন, এই পাপিষ্ট আত্মা কার ? ফেরেশতা গন তখনদুনিয়ায় উচ্চারিত তাঁর খারাপ নাম উল্লেখ করে বলেন, এ হচ্ছে অমুকের পুত্র অমুকের আত্মা । তারা এই আত্মা নিয়ে প্রথম আকশে উপনিত হয়ে আকাশের দরজা খুলতে চান। কিন্তু আকাশের দরজা খলা সম্ভব হয় না । যেমন আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন,
তাদের জন্য আকাশের দরজা সমুহ খোলা হবে না ।আর সুচের ছিদ্র পথে উট জাতায়াত না করা পর্যন্ত তারা কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।
— সুরা আরাফ
(উট কখনও সুচের ছিদ্র পথে জাতায়াত করতে সক্ষম হবে না । আর তাদের জান্নাতে যাওয়া হবে না ) অতঃপর আল্লাহতায়ালা আত্মা বহন কারি ফেরেশতাকে বললেন , ভু তলের সর্ব নিম্ন স্থান সিজ্জিন দফতরে এ আত্মার নাম নিবন্ধন করো । অনন্তর তাঁর আত্মা কে সেখান থেকেই সিজ্জিনে নিক্ষেপ করা হয় । এরপর নবী করীম (সঃ) কোরআন মজিদের এই আয়াত টি পাঠ করেন ,
আর যারা আল্লাহ্ তায়ালার সাথে কাউকে শরিক করে তারা যেন আকাশ হতে পতিত হয় ।অতঃপর হয় পাখি থকর মেরে তাঁর মাংস ভক্ষন করে অথবা বাতাস তাঁকে দূর দুরান্তে নিয়ে নিক্ষেপ করে ।
— সুরা হজ্ব
এরপর সিজ্জিন হতে আত্মা কে তাঁর মর দেহে প্রবেশ করানো হয় । এরপর ২জন ফেরেশতা তাঁকে উথিয়ে বসান এবং জিজ্ঞেস করেন তোমার প্রভু কে? সে বলে আ হা আমার কিছু জানা নাই। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হয় তোমার ধর্ম কি? সে বলে আ হা আমার কিছু জানা নাই। অতঃপর তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করা হয় এই ব্যাক্তি কে? যাকে তোমার কাছে প্রেরন করা হয়েছিলো ? সে বলে আ হা আমি তো একে চিনি না ।
এ জিজ্ঞসাবাদ শেষ হবার পর আকাশ থেকে একজ ঘোষক ঘোষণা দেনঃ এ মিথ্যাবাদী । সে তার প্রতি পালক সম্পর্কে জ্ঞান রাখে , কিন্তু তাঁকে মানত না । আর যে ধর্ম তাঁকে দেয়া হয়েছিলো সে সম্পর্কে ও সে জ্ঞাত ছিল , আর মুহাম্মদ (সঃ) এর নবুওত সম্পরকেও সে অবহিত।। কিন্তু শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সে নিজেকে মূর্খ ও অজ্ঞ রুপে প্রকাশ করেছে অতএব তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও । জাহান্নামের দিকে তার কবরের একটি দরজা খুলে দাও ।অনন্তর জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খোলা হলে জাহান্নাম হতে প্রখর তপ্ত বায়ু তার কবরে প্রবাহিত হতে থাকে । আর তার কবরকে এতো সংকীর্ণ করা হয় যার ফলে মাটির চাপে তার পাজরের হাড় গুলো পরস্পর বিপরিত দিকে প্রবেশ করে । আতপর কুৎসিত চেহারা ও দুগন্ধ যুক্ত পোশাক পরিহিত এমন এক লোক তার কাছে আগমন করে , যার দেহ থেকে অসহনিও দুর্গন্ধ বের হতে থাকে । সে এসে বলে বিপদের সংবাদ শোন – এই দিন টি সেই দিন যা সম্পর্কে তোমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল ।। মৃত ব্যাক্তি জিজ্ঞাস করে তুমি কে ? তোমার কুৎসিত চেহারাই বলে তুমি খারাপ সংবাদ বয়ে নিয়ে এসেছ । সে বলে আমি হচ্চি তোমার পাপ কর্ম । তখন ভয়ে জড়ো সোর হয়ে বলে হে আমার প্রতিপালক! তুমি কখনও কেয়ামত কায়েম করো না ।
— মেশকাত শরীফ
আর এক বর্ণনা তে আছে মুমিন ব্যাক্তির আত্মা যখন দেহ থেকে বের হয় । তখন আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত ফেরেশতা তার প্রতি রহমত বর্ষণ করতে থাকেন । তার জন্য আকাশের দ্বার খুলে দেয়া হয় । প্রত্যেক দ্বার রক্ষী ফেরেশতা এই বলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যে, এ আত্মাকে আমাদের থেকে আরও ঊর্ধ্ব মণ্ডলে নিয়ে যাওয়া হোক । আর কাফের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তার আত্মা গলদেশ থেকে অতি কষ্টে বের হয় । নভ মণ্ডলের ও ভু মণ্ডলের সমস্ত ফেরেশতা তার প্রতি লানত বর্ষণ করতে থাকে । তার জন্য আকাশের দরজা সমুহ বন্ধ রাখা হয় । প্রত্যেক দ্বার রক্ষী ফেরেশতা আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা জানায় যে , এই আত্মা কে যেন আমাদের থেকে নিয়ে ঊর্ধ্ব মণ্ডলে তুলে নেয়া না হয় ।
— আহমেদ , মেশকাত শরীফ
কবরে মুমিনের নামাজের ধ্যান
হযরত জাবের (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , মুমিন ব্যাক্তিকে কবরে প্রবেশ করানো হলে , তার মনে হবে যেন সূর্য অস্তমিত হচ্ছে । অতঃপর তার দেহে পুনরায় আত্মাকে ফিরিয়ে দেবার পর সে চোখ মেলে তাকায় ।এবং উঠে বসে । আর ফেরেশতা দের বলে , আমাদের ছেড়ে দাও । আমি এখন নামাজ পড়ব ।
— ইবনে মাজা , মেশকাত শরীফ
আল্লামা মোল্লা কারী (র) লেখেন , তখন মৃত ব্যাক্তি নিজেকে দুনিয়াতেই আছে বলে ধারনা করতে থাকে । সে বলে জিজ্ঞাসা বাদ এখন রেখে দাও। আমাকে ফরজ আদায় করার সুযোগ দাও । সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে আমার নামাজ চলে যাবে ।এ কথা গুল তারাই বলবে , যারা নামাজের অনুরাগি ছিল । এবং যাদের মন সর্বদা নামাজেরই ধ্যানে নিমগ্ন থাকতো ।
এর দ্বারা বেনামাজী দের শিক্ষা গ্রহন করা উচিৎ । এবং নিজের অবস্থা কি হবে তা অনুমান করা উচিৎ । গভীর ভাবে চিন্তা করা উচিৎ যে , কবরে যখন হঠাৎ জিজ্ঞাসা বাদ করা হবে , তখন কেমন ব্যাকুলতা ও অস্থিরতার মধ্যে পড়তে হবে ।
কবরে মুমিনদের নির্ভীক হওয়া ও তাদের সম্মুখে জান্নাত তুলে ধরা
হযরত আবু হোরায়রা (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “ মুমিন ব্যাক্তি মৃত্যুর পর কবরে পৌঁছে নির্ভীক , এবং সান্ত শিষ্ট ও চিন্তামুক্ত অবস্থায় উঠে বসে । অতঃপর তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় তুমি কোন ধর্মে বিশ্বাসী ছিলে ? প্রতুত্তরে সে বলে আমি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ছিলাম । আবার জিজ্ঞেস করা হয় তাঁর সম্পর্কে কি ধ্যান ধারনা পোষণ করতে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরন করা হয়েছিলো ।? সে বলে , তিনি হচ্ছেন আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) । তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে সু স্পষ্ট জীবন বিধান নিয়ে এসেছেন । আমরা তাঁকে বিশ্বাস করেছি । এবং তাঁর প্রদর্শিত তরিকা অনুযায়ীজীবন যাপন করেছি। অতঃপর তাঁকে জিজ্ঞাস করা হয় তুমি আল্লাহ্ তায়ালাকে কখনও দেখেছ? প্রতুত্তরে সে বলে দুনিয়ার কোন লোক আল্লাহ্ তায়ালাকে দেখে না । অতএব আমি কীভাবে দেখবো ? অনন্তর তার কবরে জাহান্নামের দিকে একটা জানালা খুলে দেয়া হয় । তখন সে দেখে জাহান্নামের আগূনের অঙ্গার গুলো একটি অপরটিকে হজম করে ফেলছে । জাহান্নামের এড়ূপ বীভৎস দৃশ্য অবলোকন করার পর তাকে বলা হয়, তুমি কি দেখেছো ? কীরূপ ভয়ংকর বিপদ থেকে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে রক্ষা করেছেন ? অতঃপর তার কবরে জান্নাতের দিকে একটি জানালা খুলে দেয়া হয় । এ জানালা দিয়ে জান্নাতের ওপোড়ূপ শোভা অ অন্যান্য জিনিস গুলো অবলোকন করে অনন্তর তাকে বলা হয় এই জাণ্ণাত হচ্ছে তোমার চিরস্থায়ী বাসস্থান । তুমি দুনিয়ায় ইসলামের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলে , আর কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় তুমি সে বিশ্বাসের সাথেই কবর থেকে উত্থিত হবে । অতঃপর নবী করীম (সঃ) বলেন , কাফের ও নফর মাণ গোণ কবরে খুব ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ঊঠে বসে । তার কাছে জীজ্ঞাশা করা হয় দুনিয়ায় তুমি কোণ ধর্মে বিশ্বাসী ছিলে ? সে বলে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না । এরপর তার কাছে নবী করীম (স) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যে , তোমার বিশ্বাস অনুযায়ী ইনি কে? এ বেক্তি সম্পর্কে আমি তাই বলতাম যা অন্যরা বলতো । অতঃপর তার কবরে জান্নাতের দিকে একটি জানালা খুলে দেয়া হয় । এ জানালা দিয়ে সে নয়নাভিরাম শোভা ও অন্যান্য জিনিস অবলোকন করে । তখন তাকে বলা হয় তুমি আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য হওয়ার কারণে তিনি তোমাকে এই চিরো শান্তি ময় নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করেছেন । এরপর তার কবরে জাহান্নামের দিকের একটি দরজা খুলে দেয়া হয় ।সে তখন উক্ত জানালা পথে দেখতে পায় যে , জাহান্নামের আগুণের অঙ্গার গুলো একে ওপরকে খেয়ে ফেলছে । অনন্তর তাকে বলা হয় যে এই জাহান্নামী তোমার চিরো স্থায়ী বাস স্থান । তুমি দুনিয়ার জীবনে এ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করতে , আর সে সন্দেহ নিয়েই তোমার মৃত্যু হয়েছে , আর আল্লাহ্র ইচ্ছায় সে সন্দেহ নিয়েই তুমি কেয়ামতের দিন কবর থেকে উত্থিত হবে । - ইবনে মাজা , মেশকাত শরীফ
কবরে মুমিনগনের শান্তি ও কাফের মুনাফেকদের শাস্তি
হযরত আবু হরায়রা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “ মৃত ব্যাক্তিকে কবরে সমাহিত করার পর তাঁর কাছে দুজন ফেরেশতার আগমন ঘটে ,। তাদের দেহের বরং কালো এবং আখি জুগল নীল ।তাদের একজনের নাম মুন কির ও ওপর জনের নাম নাকির । তারা উভয়ে তাঁকে জিজ্ঞাস করে তুমি ওই ব্যাক্তি সম্পর্কে দুনিয়ায় কি বলতে? যাকে তোমাদের কাছে প্রেরন করা হয়েছিলো ? মৃত ব্যাক্তিমুমিন হলে প্রতুত্তরে সে বলে , ইনি হচ্চেন আল্লাহ্ তায়ালার বান্দা ও তাঁর রাসুল । আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্ তায়ালা ছাড়া কোন মাবুদ নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , মুহাম্মদ (স) নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তায়ালার বান্দা এবং রাসুল । একথা শুনে ফেরেশতা দ্বয় বলেন আমি জানি আমি জানি তুমি এভাবেই উত্তর দেবে । অতঃপর তাঁর কবর কে সত্তর গজ প্রশস্ত ও নুরানি আলোয় আলকিত করা হয় । আর তাঁকে বলা হয় তুমি এখন শান্তি তে ঘুমাও । সে বলে আমি আমার পরিবার পরিজন কে আমার অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য যাচ্ছি । তারা বলে এখানে কেউ আগমন করার পর পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে যাওয়ার কোন বিধান নাই ।তুমি অনুরুপ ভাবে নিশ্চিন্তে ঘুমাও যেভাবে বাসর ঘরে নবদুলা প্রসান্তি মনে ঘুমিয়ে পরে । যাকে তাঁর স্ত্রী ছাড়া কেউ জাগাতে পারেনা । সুতরাং মুমিন ব্যাক্তিতখন কবরে খুব প্রশান্তি তে অবস্থান করেত থাকে । অবশেষে আল্লাহ্ তায়ালা কেয়ামতের দিন তাঁকে উক্ত কবর থেকেই উত্থিত করবেন । আর যদি মৃত ব্যাক্তি মুনাফেক হয় , তাহলে মুন কির - নাকিরের প্রশ্নের উত্তরে বলে , মানুষ কে এই ব্যাক্তি সম্পর্কে যা বলতে শুনেছি আমিও টাই বলতাম। এর বেশি কিছু আমি জানি না ।তখন ফেরেশতা দ্বয় বলবেন আমরাও ভালভাবে জানি যে ,তুমি এভাবেই জবাব দেবে । অতঃপর মাটি কে বলা হয় , তুমি একে খুব জোড়ে চাপ দিয়ে শাস্তি দাও । মাটি তখন তাঁকে এমন জোড়ে চাপ দেবে যে , তাঁর পাজরের এক দিকের হাড় অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে যাবে। এরপর আল্লাহ্ তায়ালা কেয়ামতে র দিন তাঁকে সেখান থেকে উত্থিত না করা পর্যন্ত উক্ত কবরেই সে সর্বদা শাস্তির মধ্যে নিপতিত থাকবে ।
— তিরমিজি , মেশকাত
এ হাদিস দ্বারা জানা যায় যে , ইমানদার গন কবরের জীবনে খুব সুখ শান্তিতে থাকবেন, তাদের চেতনা অনুভুতিও থাকবে নিরাপদ । এমন কি তাদের মনে নামাজের কথাও সরন হবে। তারা ফেরেশতা গনের প্রশ্ন বানে কোন রুপ ভীত হবেন না , তারা যখন নিজের অবস্থা শুভ হওয়া সম্পর্কে অবহিত হবেন তখন নিজের পরিবার পরিজন দের এই সম্পর্কে অবহিত করার জন্য ফেরেশতা গন কে বলবেন, আমি এখন ঘুমাব না এবং পরিবার পরিজন কে আমার অবস্থা অবহিত করেতে যাচ্ছি । অতঃপর সে নিজের পরিনতি সিমাহিন সুখ ও শান্তি অবলকন করে ফেরেশতা গণকে তাৎক্ষনিক কেয়ামত সং ঘটনের কথা বলবেন । যাতে তারা খুব তাড়াতাড়ি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে । যার প্রতি আল্লাহর দয়া ও করুনা হয়, তাঁর চেতনা অনুভুতি ও জ্ঞান বহাল থাকে । আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে ফেরেশতা দের জিজ্ঞাসা বাদের সঠিক উত্তর প্রদানের তাওফিক প্রদান করেন । কোরআন মজিদে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন ,” ইমানদার গন কে আল্লাহ্ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতের সেই সুদৃঢ় কথা ( কালেমা এ তাইয়েবা ) উপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখেন ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (স) হযরত ওমর (রা) এর নিকট কবরে মৃত ব্যাক্তির মুন কির নাকির ফেরেশতা দ্বয় দ্বারা পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার বিষয় টি আলোচনা করলেন । তখন সাহাবা গন আরজ করলে । ইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ) ! তখন কি আমাদের হুঁশ জ্ঞান ফিরিয়ে দেয়া হবে ? রাসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন ,হা ! এখন যেরূপ হুঁশ জ্ঞান আছে তখনও অনুরুপ থাকবে । তখন ওমর (রা) বললেন , তাহলে ওদের মুখে পাথর । অর্থাৎ , যখন হুঁশ জ্ঞান থাকবে , আর ইমানের মহামূল্য বান সম্পদ যখন থাকবে । তখন ভয় কিসের ? তাদের কে এমন জবাব দিব , যেন প্রশ্ন কারির মুখ বন্ধ হয়ে যায় ।
— তারগিব , আহমদ , তাবরানি
মুমিনের কাছে অন্যান্য কবরবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ
হযরত আবু হোরায়রা (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “ ফেরেশতা গন যখন মুমিন ব্যাক্তির যান কবজ করে অন্নান্নন মুমিন আত্তার কাছে নিয়ে যান , যাদের অনেক পূর্বেই মৃত্যু হয়েছে, তখন সে আত্মা সমুহ এর আগমনে এমন ভাবে খুশী হয় , যেমন এই দুনিয়ায় কেউ কোন উপস্থিত আপন জনের আগমনে খুশী হয়ে থাকে । তখন তারা এই আত্মার কাছে জিজ্ঞাস করে অমুকের অবস্থা কি? অতঃপর তারা নিজেরাই বলে খান্ত হও , যেহেতু সে দুনিয়ার বিভিন্ন চিন্তায় নিমগ্ন ছিল , টাই কিছু সময় বিশ্রাম করতে দাও। অতঃপর ওই মৃত ব্যাক্তি তাদের কে বলে অমুকে এ অবস্থায় আছে , অমুকে এভাবে আছে । সে তাঁর অনেক পূর্বে মৃত জনৈক মৃত ব্যাক্তি সম্পর্কে বলে , অনেক পূর্বেই সে মৃত্যু বরন করেছে । সে কি তোমাদের কাছে আসে নি? তারা বলে যখন সে দুনিয়া ছেড়ে এসেছে এবং আমাদের কাচেও আসেনি । তাহলে অবশ্যই তাঁকে জাহান্নামে নেয়া হয়েছে।
— আহমদ , নাসাই , মেশকাত শরীফ
কবরবাসীদের কাছে জীবিতদের আমল পেশকরা হয়
তাবারানি গ্রন্থে উদ্ধৃত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, তোমাদের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যারা দুনিয়া ছেড়ে পরকালে চলে গেছেন , তাদের কাছে তোমাদের আমল সমুহ পেশ করা হয় , তা ভালো ও পুণ্য ময় হলে তারা অত্যন্ত খুশী হয় । এবং আল্লাহ্ তায়ালার কাছে এ দোয়া করে, হে আল্লাহ্ এই আমল হচ্ছে তাঁর প্রতি তোমার দয়া ও অনুগ্রহের ফলশ্রুতি । সুতরাং তাদের প্রতি আপনার নেয়ামত কে পূর্ণ করুন । আর যদি তাদের সম্মুখে খারাপ আমল পেশ করা হয় , তখন তারা বলে হে আল্লাহ্ এর অন্তকরনে পুণ্য ময়তা ঢেলে দিন , এবং আপনার সন্তুষ্টি ও পুণ্য তা লাভের কারন হয়, এমন আমল করার জন্য এর মনে আগ্রহ ও উৎসাহ সৃষ্টি করুন ।
— মাজমাউজ
মুমিনের প্রতি কবরে সুখকর চাপ
হযরত সাইদ ইবনে মুসায়েব (রা) বলেন , হযরত আয়েশা (রা) নবী করীম (সঃ) এর নিকত আরজ করলেন , হে আল্লাহ্র রাসুল ! আপনি যখন কবরে মুন কির – নাকির এর বিভতস কণ্ঠ এবং মৃত ব্যাক্তিকে কঠোর ভাবে চাপ দেয়ার কথা বলেছে ন ,তখন থেকি আমি কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না এবং কিছুতেই আমার মনের অস্থিরতা দূর হচ্ছে না । নবী করীম (সঃ) বললেন ওহে ! আয়েশা ! মুনকীর নাকিরের কণ্ঠস্বর মুমিনের কাছে অনুরুপ সুখকর মনে হবে , সুরেলা কন্থের আওয়াজ যেমন মনমুগ্ধকর হয়ে থাকে । নয়ন জুগলে সুরমা ব্যাবহার করলে যেমন চোখে সুখ ও শান্তি অনুভুত হয় , কবরে মুমিন দের প্রতি মাটির চাপ ও অনুরুপ সুখকর ও শান্তি দায়ক হবে , কারো মাথা ব্যথা হলে যেমন তাঁর স্নেহ ময়ি মা পুত্রের মাথা আসতে আসতে চাপতে থাকেন , আর পুত্র তখন খুব আরাম ও শান্তি অনুভব করতে থাকে । ওহে আয়েশা মনে রাখবে, আল্লাহ্ তায়ালা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ কারীদের জন্য বড়ই দুর্ভাগ্য । তাদেরকে এমন ভাবে মাটির চাপ দেয়া হবে , যেমন দিমের ওপর পাথর রেখে চাপ দেয়া হয় ।
— শরহে সুদূর
মুমিনের মৃত্যুতে আকাশ ও পৃথিবীর ক্রন্দন
হযরত আনাস (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন , প্রত্যেক মানুষের জন্য আকাশে দুটি দারপথ রয়েছে । এক পথে তাঁর আমল ঊর্ধ্ব পথে আরোহণ করে , আর ওপর পথে তাঁর জিবিকা নাজিল হয় , যখন মুমিনের মৃত্যু হয় তখন ওই পথ দুটি তাঁর জন্য ক্রন্দন করে ।
— তিরমিজি শরীফ, মেশকাত শরীফ
হযরত ইবনে ওমর (রা) বলেন , যখন কোন মুমিনের মৃত্যু হয় , তখন কবরস্থান নিজেই নিজেকে সজ্জিত করে নেয় এবং কবরস্থানের প্রতিটি অংশই তাঁকে নিজের বুকে দাফন হওয়ার আশা পোষণ করতে থাকে । হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন , মুমিনের মরনে জমিন চল্লিশ দিন পর্যন্ত রোদন করে ।
— হাকেম , নুরুস সুদূর
তাবেঈ হযরত মুজাহিদ (র) থেকেও অনুরুপ বর্ণনা পাওয়া যায় ।
— আবু নাইম
হযরত আতাউল খরাসানি (র) বলেছেন , কেউ মাটির কোন স্থানে সেজদা দিলে, সেখান কার মাটি কেয়ামতের দিন তাঁর পক্ষে সাক্ষ দিবে । এবং ওই ব্যাক্তির মৃত্যু দিনে তাঁর জন্য কাঁদবে ।
— আবু নাইম
পুণ্যবান সন্তান ও জনকল্যাণমূলক কাজের উপকারিতা
হযরত আবু উমামা (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , মরনের পরে মুমিন যেসব কাজের পুণ্য লাভ করে , তাঁর মধ্যে
প্রথম হচ্ছে এলমে দ্বীন পার্থিব জীবনে সে যা প্রচার ও প্রসার করেছে ।
দ্বিতীয় টি হচ্ছে পুণ্যবান সন্তান সন্ততি রেখে আসা ।
তৃতীয় টি হচ্ছে কোরআন মজিদ যা সে উত্তরাধিকারীদের কাছে রেখে এসেছে ।
চতুর্থ হচ্ছে যদি সে মসজিদ নির্মাণ করে এসে থাকে ।
পঞ্ছম হচ্ছে , যদি সে পথিক ও মুসাফির দের জন্য সরাইখানা স্থাপন করে আসে । স্বচ্ছ পানির অভাব দূর করার জন্য যদি সে নদী নালা খাল বিল পুকুর বা নল কুপের সু ব্যাবস্থা করে থাকে । আর জীবনের সুস্থ অবস্থায় যদি সে কোন ধন সম্পদ দান করে থাকে ।
এসবের পুণ্য মরনের পরেও সে লাভ করতে থাকে ।
— ইবনে মাজা , বায়হাকি
হযরত আবু হোরায় রা (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ঃ “ আল্লাহ্ তায়ালা জান্নাতে নেক কার দের মান মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন । তখন সে আরজ করবে , হে আল্লাহ্ ! এ মহান সম্মান ও মান মর্যাদা আমি কিভাবে পেলাম? আল্লাহ্ তায়ালা বলবেন , তোমার জন্য তোমার সন্তানদের ক্ষমা প্রার্থনার ফলে তোমাকে এ মান মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে ।
— আহমদ , মেশকাত
আর এক হাদিসে আছে ,
কেয়ামতের দিন কিছু কিছু লোক পাহাড় সমান পুণ্য লাভ করবে । তা দেখে তারা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করবে , এতো বিপুল পরিমান পুণ্য আমি কিভাবে পেলাম ? তখন তাঁকে বলা হবে , তোমার সন্তান গন তোমার জন্য মাগফেরাত কামনা করার ফলে তোমাকে এ সম্মান দান করা হয়েছে ।
— শরহে সুদূর
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “ কবরে মৃত ব্যাক্তি এমনভাবে ওপরের মুখাপেক্ষী হয় , যেমন পানিতে ডুবতে থাকা ব্যাক্তি হয়ে থাকে। তারা পিতা মাতা , ভাই , ও অন্যান্য লোক দের দোয়া লাভের জন্য অপেক্ষায় প্রহর গুনে । তাদের কাছে যখন এদের কারো কোন দোয়া পৌঁছে , তখন সমস্ত দুনিয়া ও এতে যা কিছু আছে তাঁর তুলনায় সে দোয়া হয় তাদের কাছে বেশি প্রিয় । নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তায়ালা পৃথিবীর মানুষের দোয়া দ্বারা কবর বাসীদের কে পাহাড় সমান পুণ্য দান করেন । মৃতদের জন্য জীবিত দের উপঢৌকন হচ্ছে তাদের জন্য এস্তেগ ফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা ।-
— বায়হাকি , মেশকাত
মুমিন ব্যক্তিকে মালাকুল মাউত এর সালাম
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেন , রাসুলে করীম (সঃ) বলেছেন
মালাকুল মাউত ফেরেশতা যখন আল্লাহ্ তায়ালা র কোন প্রিয় বান্দার নিকট আসে , তখন তাঁকে সালাম করে আর বলে , হে আল্লাহর বন্ধু ! তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক । সে ঘর থেকে তুমি বের হয়ে এসো , যে ঘরকে তুমি নিজের চাহিদা জলাঞ্জলি দিয়েও নষ্ট করে দিয়েছ । আর সে ঘরের পানে চলো , যে ঘরকে তুমি এবাদত বন্দেগি দ্বারা আবাদ করেছ ।
— শরহে সুদূর
দুনিয়ায় থাকতে মুমিনের অস্বীকার এবং তাঁর প্রতি সুসংবাদ জ্ঞাপন
হযরত ইবনে জারির (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় পত্নী হযরত আয়েশা (রা) কে বললেন ,
মৃত্যুর সময় মুমিন ব্যাক্তি যখন ফেরেশতাগণকে দেখতে পায় , তখন তারা তাঁকে বলেঃ আমরা কি তোমার যান কবজ না করে তোমাকে ফেরত পাঠাবো ? প্রতুত্তরে সে বলে , তোমরা কি আমাকে দুঃখবিষাদ ও চিন্তা যুক্ত রেখে যেতে চাও ? এখন আর এখানে থাকব না । আমাকে তোমরা আল্লাহ্ তায়ালা র কাছে নিয়ে চলো ।
— ইবনে জারির , শরহে সুদূর
হযরত জায়েদ ইবনে আসলাম (রা) বলেছেন,
মরণের সময় ফেরেশতা গন মুমিন ব্যাক্তির কাছে এসে সু সংবাদ জানায় । তারা বলেন , এখন যেখানে যাচ্ছ সেখানে যেতে ভয় পেও না । সেখানে মুমিনের মনে কোন ভীতি থাকে না । তারা তাঁকে এ কথাও বলেন যে , দুনিয়া ও দুনিয়াবাসিকে পরিত্যাগ করার জন্য দুঃখ করো না । জান্নাত লাভের সুসংবাদ নাও । অতএব সে এমন অবস্থায় মৃত্যু বরন করে যে, ইহলোকে থাকতেই আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর মন কে খুশি ও প্রশান্তিতে ভরে দেন ।
— ইবনে জারির , শরহে সুদূর
আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে শহীদগণকে সম্বোধন
তাবেঈ হযরত মাসরুক (র) বলেন , আমি হযরত ইবনে মাসউদ (রা) এর কাছে কোরআন মজিদের এ আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলামঃ
যারা আল্লাহর পথে জিহাদে নিহত হয়েছেন , তাদের কে তোমরা মৃত মনে করো না । তারা তোমাদের প্রতিপালকের নিকত জীবিত , তারা জীবিকা প্রাপ্ত হন ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বললেন , “ আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর কাছে এই আয়াতের তাফসির জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন , “শহীদের আত্মা সবুজ পাখির পক্ষপুটে অবস্থান করে । তাদের জন্য আল্লাহ্ তায়ালার আরশের নিচে ঝারবাতি ঝুলান আছে । তারা জান্নাতের যে কোন স্থানে ভ্রমন করতে পারেন । অতঃপর তারা উক্ত ঝারবাতির নিকট এসে অবস্থান করে , আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকেজিজ্ঞাস করেন , “তোমরা আমার নিকট কিছু চাও ? তারা বলেন আমরা কি চাইব ? আমরা তো জান্নাতের যে কোন স্থানে জাতায়াত করতে পারি । এভাবে তাদের ও আল্লাহ্ তায়ালার মধ্যে তিন বার কথোপোকথন হয় । অতপর তারা যখন মনে করেন যে , আমরা কিছু না চাওয়া পর্যন্ত আল্লাহ্ তায়ালা এভাবে বলতেই থাকবেন । তখন তারা বলবেন , আমরা চাই আমাদের আত্মাকে আমাদের দেহে ফিরিয়ে দেয়া হোক, যাতে আমরা পুনরায় আপনার পথে জিহাদ করে শহীদ হতে পারি । সুতরাং আল্লাহ্ তায়ালা যখন বুঝবেন তাদের কোন চাহিদা নাই, তখন তিনি তাদের কে পরিত্যাগ করবেন । এরপর আল্লাহ্ তায়লা আর কখনও তাদের কিছু জিজ্ঞাস করবেন না । অর্থাৎ তারা পারলৌকিক কিছুই কামনা না করে বরং পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসার আবদার করল, যা নিয়ম বিরোধী, তাই তাদের কে আর কিছু জিজ্ঞেস করা হবে না ।
— মুসলিম শরীফ , মেশকাত শরীফ
সবুজ পাখির পক্ষপুটে কেবল শহীদ গনের আত্মাই অবস্থানের সুযোগ দেয়া হয় না, বরং অন্যান্য মুমিন দের আত্মাও তাঁর মধ্যে অবস্থান করার সুযোগ পেয়ে জান্নাতে ভ্রমন করে থাকে । যেমন হযরতকায়াব ইবনে মালেক (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন
ইমানদার গনের আত্মাও সবুজ পাখির ডানার মধ্যে অবস্থান করে । আর সে পাখি গুলো জান্নাতের গাছপালার ফল ফলারি আহার করে ।
— মেশকাত
আল্লামা মোল্লা আলী কারী (র) মেরকাত শরহে মেশকাত গ্রন্থে লিখেছেন ,
এক হাদিসে আছে , মুমিন গনের আত্মা সবুজ পাখির পক্ষ পুটে অবস্থান করে জান্নাতের ফল ফলারি আহার ও পানি পান করে । আর আরশের নিচে স্বর্ণের ঝারবাতির কাছে বিশ্রাম করে ।
— মেরকাত
শহীদ হওয়ার কষ্ট পিপীলিকার কামড়ের ন্যায়
হযরত আবু হোরায়রা (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “ শহীদ ব্যাক্তি নিহত হওয়ার কষ্ট শুধু এতো টুকু অনুভব করেন , তোমরা যেমন পিপীলিকার কামড়ের কষ্ট অনুভব করে থাকো ।
— তিরমিজি ও মেশকাত
আহলে সুন্নাত অয়াল জামাতের আকিদা অনুযায়ী কবরের আজাব সত্য ও বাস্তব । পুণ্যবান মুমিনগণ কবরে যেরূপ শান্তি লাভ করেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত সুখ শান্তিতে অবস্থান করেন, তেমনি ভাবে কাফের বেইমান মুনাফেক ও কবরে শাস্তি ভোগকরে । অসংখ্য হাদিস দ্বারা এই বিষয়টি প্রমানিত ।
হযরত আয়েশা (রা) এর কাছে জনৈক ইহুদি মহিলা এসে কবরের আজাব প্রসঙ্গে আলোচনা করল । এবং বলল আল্লাহ্ তোমাকে কবরের আজাব থেকে নিরাপদে রাখুন । অতঃপর আয়েশা (রা) নবী করীম (সঃ) এর নিকট কবরের আজাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এরশাদ করেন ,” হা ! কবরের আজাবের বিষয় টি সত্য ও বাস্তব । আয়েশা (রা) বলেন , এর পর যখনি নবী (সঃ) নামাজ পড়তেন , তখনি নামাজ শেষে আল্লাহ্ তায়ালা র কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন
— বুখারি ও মুসলিম
হযরত উসমান (রা) যখন কোন কবরের কাছে দাঁড়াতেন , তখনি এতো বেশি কাঁদতেন যে , অশ্রু ধারায় তাঁর শ্মশ্রু মণ্ডলী ভিজে যেত । জিজ্ঞাস করা হল জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা হলে তো আপনি কাদেন না, অথচ কবর দেখে এতোকাঁদেন কেন ? হযরত উসমান (রা) বললেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
নিশ্চয়ই কবর হচ্ছে পরকালের মঞ্জিল সমুহের মধ্যে প্রথম মঞ্জিল । সুতরাং কবরের আজাব হতে নাজাত পেলে তাঁর পরবর্তী মঞ্জিল গুলো অনেক সহজ হয়ে যায় । আর যদি কবরের আজাব হতে নাজাত না পায়, তা হলে পরবর্তী মঞ্জিল গুলো তাঁর তুলনায় অনেক কঠিন হয় ।
— তিরমিজি , ইবনে মাজা
2 কবরের শাস্তির যন্ত্রণায় মৃতের চিৎকার করা এবং লোহার মুগুর দ্বারা পেটানো
3 চোগল খুরী ও পেশাবের ছিটা হতে আত্মরক্ষা না করায় কবরের আজাব
হযরত আবু সাইদ খুদরি (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন ,
কাফের ও বেইমান দের কবরে অবশ্যই বিষধর সাপ নিয়োজিত করা হয় । যারা কেয়ামত পর্যন্ত তাঁকে দংশন করতে থাকে । সাপ গুলোর বিষ এতো মারাত্মক হবে যে , তাঁর একটি সাপ ও যদি পৃথিবীতে নিঃশ্বাস ছাড়ে , তাহলে তার বিষক্রিয়ায় পৃথিবীতে এক গাছা ঘাস ও জন্মানোর যোগ্যতা অবশিষ্ট থাকবে না ।
আধুনিক যুগের এটম বমের কথা চিন্তা করলে নবী করীম (সঃ) এর এই হাদিসের মর্ম অনুধাবন করতে আদৌ কোন কষ্ট হয় না । কারন এটম বোমার বিক্রিয়ায় সবকিছু ধংস হয়ে মাটির উর্বরা ক্ষমতা কে বিনষ্ট করে ফেলে । যেমন হিরোসীমা ও নাগাসিকি শহর দুটিতে হয়েছিলো ।
হযরত বারায়া ইবনে আজিজ (রা) কর্তৃক বর্ণিত এক হাদিসে আছে ,
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ,কবরে কাফের ব্যাক্তি যখন মুন কীর নাকির এর জিজ্ঞাসার জবাবে বলে , হায় আমি কিছু জানি না, তখন আকাশ হতে একজন ঘোষক বলে, “এ লোক মিথ্যা বলছে , তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও । তাঁকে আগুনের পোশাক পরিধান করাও, তার দিকে জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দাও ।” অতঃপর জাহান্নামের দিকে দরজা খুলে দেয়া হলে সে দরজা পথে তার কবরে জাহান্নামের তপ্ত লু হাওয়া প্রবাহিত হতে থাকে । অতঃপর তার কবরকে এতো সংকুচিত করা হয় যে, মাটির চাপে তার উভয় পাঁজরের হাড় পরস্পর বিপরিত দিকে বের হয়ে পরে । তারপর একে শাস্তি দেবার জন্য এমন এক ফেরেশতা মোতায়েন করা হয়, যে অন্ধ ও বধির । তার হাতে থাকে বিরাট এক লোহার গদা । যার প্রকৃতি এমন যে, যদি তার ওপর পাহাড়ের ওপর আঘাত করা হয় , তবে পাহাড়ও মাটির সাথে মিশে যাবে । এ গদা দ্বারা এক বার আঘাত করলে মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব পশ্চিমে সমস্ত প্রাণী তার চিৎকারের শব্দ শুনতে পায় । আর একবার আঘাত করলে কাফের ব্যাক্তি মাটির সাথে মিশে যায় । অতঃপর তাঁকে পুনরায় জীবিত করা হয় ।
— আহমদ ও আবু দাউদ শরীফ
বুখারি ও মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত এক হাদিসে বলা হয়েছে , এ লোহার গদা দ্বারা আঘাত করলে কাফের ব্যাক্তি এমন জোড়ে চিৎকার দেয় , যার শব্দ তার নিকটবর্তী মানুষ ও জিন ছাড়া প্রতিটি বস্তু শুনতে পায় ।
— মেশকাত
এখানে এ জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয় যে , মৃত কে মারার এবং তার চিৎকার দেয়ার শব্দ মানুষ ও জিনদের কেন শোনানো হয় না ??
এর জবাবে বলা হয় , মানুষ ও জিন দের সাথে আলমে বরজাখের একটা সম্পর্ক বিদ্যমান । তাদের কে যদি কবরের আজাব দেখান হয় , অথবা তারা যদি সেখানে বিপদগ্রস্ত ব্যাক্তির চিৎকার শুনতে পায় , তাহলে তারা আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি ঈমান আনবে । এবং পুণ্যময় কাজ করবে । কিন্তু কথা হল আল্লাহ্ তায়ালা গায়েব ও অদৃশ্যের বিষয়ের প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন । সেরুপ ঈমান তার কাছে গ্রহন যোগ্য । শুধু আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর রাসুলের কথা শুনে , তা বুঝে আসুক বা না আসুক, তা সঠিক বলে বিশ্বাস করা কে ঈমান বলে । কোরআন মজিদে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন ,
ইন্নাল্লাজি না ইয়াখ সাও না রাব্বা হুম বিল গাইবি লাহুম মাগফিরাতুন অয়া আজরুন কাবির
অর্থঃ যারা নিজস্ব প্রতিপালক কে না দেখে অদৃশ্য ভাবে ভয় করে ,তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান ।
— সুরা মুমিন –শেষ রুকু
জানান্ত জাহান্নাম ও কবরের অবস্থা যদি অবলকন করানো হয় , তাহলে ঈমান বিল গায়েব বা অদৃশ্যে বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা হয় না । আল্লাহ্ তায়ালার কাছে চাক্ষুস দেখে ঈমান গ্রহন কবুল হয় না । এজন্য মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে মুমিন হওয়া গ্রহন যোগ্য নয় । কেন না তখন তো আজাবের ফেরেশতা কে দেখতে পাওয়া যায় । আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন
ফালাম ইয়াকু ইয়ান ফা উ হুম ই মাআনুহুম লাম্মা রা আ আও বা’সা না
অর্থ- তারা যখন আমার শাস্তি অবলকন করে , তখন তাদের ঈমান আনায় কোন উপকার হবে না ।
— সুরা মুমিন – শেষ রুকু
কেয়ামতের দিন কবর থেকে উঠে জান্নাত জাহান্নাম দেখে সবাই ঈমান আনবে । এবং নবী রাসুলগণকে সত্য মানবে , কিন্তু সে সময় বিশ্বাস স্থাপনে কোন ফল লাভ হবে না । তখন কারো ঈমান আল্লাহ্ তায়ালার কাছে গ্রহন যোগ্য হবে না ।
মানুষ কে কবরের আজাব না দেখানো এবং কবরে মৃত ব্যাক্তির চিৎকার না শোনানোর মধ্যে এ কল্যাণ ও নিহত আছে যে , তারা তা দেখলে ও শুনলে সহ্য করতে পারত না, তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারাবে , কোন ক্রমেই ধৈর্য ধারন করতে পারবে না ।
হযরত আবু সাইদ (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন,
মানুষ যখন কাফেরের কফিন বহন করে চলে , তখন মৃত ব্যাক্তি বলেঃ হায় আমার দুর্গতি ! তোমরা আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? তাঁর একথা মানুষ ছাড়া সমস্ত প্রাণী শুনতে পায় । এ কথা যদি কোন মানুষ শুনতে পেত , তবে তৎক্ষণাৎ সেঅচেতন হয়ে পড়ত ।
— বুখারি শরীফ ও মেশকাত শরীফ
অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে কবরের অবস্থা সম্পর্কে শুধু বলেন নি বরং তা দেখিয়েছেনও । কেননা তাঁর এসব শাস্তি দেখে সহ্য করার ক্ষমতা ছিল । এমনকি জাহান্নামের দৃশ্য দেখেও কান্না সম্বরন করার এবং স্বীয় সাহাবীদের সাথে চলাফেরা এবং পানাহার করনে তাঁর কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় নি । হযরত আবু আইউব (রা) বলেছেন,
রাসুল (সঃ) কোন এক সময় মদিনায় থাকাকালে সূর্য অস্ত মিত হওয়ার পর শহরের বাইরে গেলেন । এমন সময় তিনি এক বিরাট বিকট শব্দ শুনে বললেন, ইহুদিগণ কে তাদের কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে ।
— বোখারি শরীফ ও মুসলিম শরীফ
হযরত জায়েদ ইবনে ছাবিত (রা) বলেছেন
রাসুলুল্লাহ (সঃ) কোন এক সময় স্বীয় খচ্চরের পিঠে আরোহণ করে বনু নাজ্জারের বাগানে যেতে ছিলেন । আমিও তাঁর সাথে ছিলাম । হঠাৎ নবী করীম (সঃ) এর খচ্চরটি লাফ দিয়ে উঠল । এমন লাফ দিলো যে নবী করীম (সঃ) খচ্চরের পিঠ থেকে পরে যাওয়ার উপক্রম হলেন । সেখানে পাঁচ অথবা ছয়টি কবর ছিল । নবী করীম (সঃ) সমাহিত ব্যাক্তিদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন , এদের কে কি তোমরা চিনতে? এক লোক বলল আমি তাদেরকে চিনতাম । নবী করীম (সঃ)জিজ্ঞেস করলেন , এরা কখন মারা গেছে? সে বলল এরা শেরেকী জামানায় মরেছে । তখন নবী করীম (সঃ) বললেন , এদেরকে কবরে কঠিন শাস্তি দেয়া হচ্ছে , তোমরা মৃত ব্যাক্তি দের দাফন পরিত্যাগ করার আশংকা না হলে , আমি আল্লাহ্ তায়ালার কাছে এ দোয়া করতাম , তোমাদেরকে ও যেন এই কবরের শাস্তির কিছু অংশ শুনান – যা আমি এখন শুনছি ।
— মুসলিম শরীফ
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) দুটি কবরের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলেন , এমন সময় তিনি বললেন , এ কবর দ্বয়ে সমাহিত ব্যাক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেয়া হচ্ছে । তাদের কে বড় কোন অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে না বরং খুব ই সাধারণ কাজের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে, ইচ্ছা করলেই তারা এই কাজ থেক বেঁচে থাকতে পারত। কাজ দুটি হচ্ছে- একজন পেসাব করা কালে পর্দা করত না । আর এক বর্ণনায় আছে , পেশাবের ছিটা থেকে পবিত্র হতো না । আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কুটনামী ও চোগল খুরী করত । অতঃপর নবী করীম (সঃ) একটি কাঁচা খেজুরের ডাল আনিয়ে তা দু’ভাগ করে একটি করে সে কবর দুটিতে পুতে রাখলেন । সাহাবী (রা) গন জিজ্ঞেস করলেন , হে আল্লাহর রাসুল ! এটা কেন? এতে কি ফায়দা হবে? তিনি বললেন, আমি আশা করি এই ডাল দুটি না শুকানো পর্যন্ত তাদের শাস্তি কিছুটা হালকা করা হবে । এর ব্যাখ্যায় কোন কোন আলেম বলেছেন , তাজা ডালের আল্লাহ্ পাকের তজবিহ পাঠের কারনে শাস্তি হ্রাস পাওয়ার আশায় তিনি এরুপ করেছেন ।
— বুখারি, মুসলিম শরীফ
কবরে বিশেষ কিছু কাজের বিশেষ বিশেষ আজাব
বুখারি শরিফের একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর একটি স্বপ্নের বিবরন বর্ণিত হয়েছে , যাতে কবর জগতের বিশেষ বিশেষ কিছু আজাবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে । রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন ,
আমি আজ রাতে স্বপ্নে দেখেছি যে , দু জন লোক আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে এক পবিত্র ভুমির দিকে নিয়ে চলছে । ে অবস্থায় আমি দেখচি যে , একজন লোক বসা রয়েছে , আর এক লোক লোহার এক চিমটা হাতে দাড়িয়ে আছে , সে ওই চিমতা সে ওই চিমটা দ্বারা বসা ব্যক্তির গলা হতে গুহ্য দ্বার পর্যন্ত সম্মুখ ভাগে চিরছে । আমি জিজ্ঞেস করলাম এ কি ব্যাপার? প্রতুত্তরে উভয়ে বললেন সামনে চলুন । আমি চলতে চলতে এমন এক লোকের কাছে গিয়ে উপনীত হলাম , যে চিত হয়ে শুয়ে আছে । আর তাঁর শিওরে এক লোক ভারি পাথর হাতে দণ্ডায়মান । দণ্ডায়মান ব্যাক্তি তাঁর হাতের ভারীপাথর দ্বারা শোয়া লোক টির মাথায় সজোরে আঘাত করছে । আঘাতের পর পাথর টি দূরে ছিটকে পড়ছে । সে পাথর টি পুনরায় কুড়িয়ে আনছে । সে ফিরে আসার পূর্বেই তাঁর মাথার আঘাত ভালো হয়ে পূর্ব বত হয়ে যাচ্ছে । পুনরায় সে অনুরুপ করে চলছে । জিজ্ঞেস করলাম একি ব্যাপার ? তারা উভয়ে বলল সামনে চলুন । অতঃপর আমি চলতে চলতে একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম । যা দেখতে উনুনের মতো । এ গর্তের উপরিভাগ সরু কিন্তু নিম্ন ভাগ প্রশস্ত । তাতে আগুন জলছে । এবং তাঁর মধ্যে রয়েছে অনেক উলংগ নারী পুরুষ । আগুন যখন জ্বলে উপরের দিকে ওঠে , লোক গুলো সাথে সাথে ওপরের দিকে উঠে আসে । এবং বের হওয়ার উপক্রম করে । অতঃপর আগুন নিম্ন দেশে যাওয়ার সাথে সাথে লোক গুলো ও নিম্ন দেশে চলে যায় । আমি জিজ্ঞেস করলাম , এ কি ঘটনা? তারা উভয়েই বলল সামনে চলুন । আমি সামনে চলতে চলতে একটি রক্তের নহরের কাছে উপনীত হলাম । দেখলাম নহরের মাঝখানে এক লোক দাঁড়ানো । আর নহরের তীরে দাঁড়ানো এক লোক , তাঁর সম্মুখে রয়েছে অনেক গুলো পাথর খণ্ড । নহরের মাঝে দণ্ডায়মান ব্যাক্তি যখন তীরে উঠতে চায় , তখন তীরে অবস্থিত ব্যাক্তি তাঁর ওপর পাথর নিক্ষেপ করে , ফলে সে তাঁর পূর্ব স্থানে যেতে বাধ্য হয় । আমি জিজ্ঞেস করলাম , একি হচ্ছে ? তারা বলল সামনে চলুন । এরপর আমি চলতে চলতে এক সবুজ শ্যামল বাগানে উপনীত হলাম ।সে বাগানে রয়েছে বিশাল এক বৃক্ষ । সে বৃক্ষের তলায় বসে রয়েছেন এক বৃদ্ধ ও অনেক শিশু । এই বৃক্ষের নিকটেই বসে রয়েছে আর এক লোক , যার সম্মুখে আগুন জ্বলছে এবং সে তাতে ফুক দিচ্ছে । অতঃপর ওই দু ব্যাক্তি আমাকে উঠিয়ে বৃক্ষের ওপরে নিয়ে গেলো । সেখানে গাছপালার মধ্যে একটি সুন্দর ঘর বিদ্যমান । এর চেয়ে সুন্দর ঘর আমি ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি । সে ঘরে আমাকে প্রবেশ করানো হল । সেখানে আমি অনেক বৃদ্ধ যুবক শিশু নর নারী কে দেখতে পেলাম । অতঃপর আমাকে ওই ঘর থেকে বের করে আরও ওপরের দিকে নেয়া হল । সেখানে পূর্বের ঘরের তুলনায় অনেক সুন্দর ও মনমুগ্ধ কর আর একটি ঘর রয়েছে , সেখানে আমাকে নেয়া হল । তাতে অনেক বৃদ্ধ ও যুবক রয়েছে আমি তাদের দুজন কে বললাম , তোমরা আমকে সারারাত চতুর্দিকে ঘোরালে এখন বল আমি যা দেখেছি তাঁর মর্ম কি ?
তারা উভয়ে আমাকে বলল , আপনি প্রথমত যে লোকের দেহ চিরতে দেখেছেন , সে লোক টি মিথ্যা বাদী । সে সমাজে মিথ্যা কথা বলে বেড়াতো । এবং তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ত । এ লোকের সাথে কেয়ামত পর্যন্ত এই আচরণই করা হবে । আর যার মাথায় আঘাত করতে দেখেছেন , সে এমন এক লোক যাকে আল্লাহ্ তায়ালা কোরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন । সে রাতের বেলায় কোরআন অধ্যায় ন না করে ঘুমিয়ে থাকতো । এবং দিনের বেলা কোরআন অনুযায়ী কোন কাজ করত না । কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর সাথে এরুপ ব্যাবহারই চলতে থাকবে । আর আগুনের গর্তে যে সব লোক দেখছেন তারা ব্যভিচারী বা অবৈধ যৌনাচারী । ( তারাও কেয়ামত পর্যন্ত এসব আগুনের গর্তে থাকবে ) । আর যাকে রক্তের নহরের মাঝে দেখছেন সে সুদখোর । আর বৃক্ষের নিচে যে বৃদ্ধ কে দেখছেন তিনি হযরত ইব্রাহিম (আঃ) । তাঁর চতুর্দিকে যেসব শিশু দেখছেন তারা হচ্ছে মানুষের মৃত নাবালক সন্তান । আর যাকে আগুনে ফুক দিতে দেখছেন তিনি হচ্ছেন জাহান্নামের প্রধান কর্ম কর্তা মালেক ফেরেশতা ।আর প্রথম যে ঘরে প্রবেশ করেছেন তা হচ্ছে সাধারন মুসলমানের ঘর । আর দ্বিতীয় ঘরটি হচ্ছে যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছেন তাঁদের ঘর । আমি হচ্ছি জিব্রাইল ফেরেশতা এবং এ হচ্ছে মিকাইল ফেরেশতা । অতঃপর আমাকে বলা হল মাথা ঊরধে তুলুন । আমি মাথা উরধে তুললে এক খণ্ড সদা মেঘ দেখতে পেলাম । বলা হল এ হচ্ছে আপনার ঘর । আমি বললাম তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও , আমি আমার ঘরে প্রবেশ করবো । তাঁরা বলল , এখনও আপনার জীবন পূর্ণ হয়নি , অবশিষ্ট রয়ে গেছে । যদি পূর্ণ হতো তবে এখনি এই ঘরে প্রবেশ করতে পারতেন ।
— মেশকাত শরীফ
ফায়দাঃ
নবী রাসুল গনের স্বপ্ন হচ্ছে ওহী । এসব ঘটনা সবই সত্য । এ হাদিস দ্বারা কয়েকটি বিষয় অবহিত হওয়া গেলো । একটি হচ্ছে মিথ্যা কথার শাস্তি । দ্বিতীয় টি আমল হীন আলেমের শাস্তি । তৃতীয় টি জেনাকার ও ব্যাভিচার কারী দের শাস্তি , চতুর্থ হচ্ছে সুদখোরের শাস্তি । সে আল্লাহ্ ! সমস্ত মুসল মান কে এসব অশ্লীল গুনাহের কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন ।
মৃতের সাথে কবরের কথোপকথন
হযরত আবু সাইদ খুদরি (রা) বলেছেন ,
একদিন রাসুলুল্লাহ (সঃ) একদিন ঘরের বাইরে গেলে কিছু লোক কে দেখতে পেলেন যে , তাঁরা খুব জোড়ে হাঃ হাঃ হাঃ করে হাসছে । যার কারনে তাঁদের দন্ত রাজি বের হয়ে পড়ছে ।তিনি তাঁদের লক্ষ করে বললেন , “ সাবধান ! তোমরা যদি জীবন হরণকারী অর্থাৎ মৃত্যুর কথা অধিক পরিমানে স্মরণ করতে , তাহলে আমি তোমাদের কে এই অবস্থায় দেখতাম না । সুতরাং তোমরা জীবন হরন কারী মৃত্যুর কথা অধিক পরিমানে স্মরণ করবে ।কেননা কবর প্রতিদিন বলে আমি হচ্ছি বন্ধু হীন ব্যাক্তির ঘর । আমি হচ্ছি একাকি থাকার ঘর , আমি মাটির ঘর , আমি পোকা মাকড়ের ঘর ।“অতঃপর তিনি বললেন , যখন কোন মুমিন ব্যাক্তিকে দাফন করা হয় , তখন কবর বলে স্বাগতম ! তুমি তোমার নিজের ঘরে এসেছ । যারা মার বুকের ওপর চলাচল করে , তাঁদের মধ্যে নিঃসন্দেহে তুমি আমার প্রিয় পাত্র । সুতরাং তোমাকে আমার কাছে সোপর্দ করা হয়েছে । তুমি আমার কাছে এসেছ । অতএব তুমি আমার ব্যাবহার দেখবে ।, দেখবে আমি তোমার সাথে কিরুপ আচরন করি । এরপর মৃত ব্যাক্তির দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত কবর প্রশস্ত হয় এবং তাঁর জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হয় । আর কবরে যখন কোন কাফের বা পাপাচারি কে দাফন করা হয় , তখন কবর বলে তোমার আগমন খুবই খারাপ এবং তুমি খারাপ জায়গায় এসেছ । তুমি এখন জানবে আমার বুকের ওপর চলাচল কারী লোকদের মধ্যে তুমি ছিলে আমার কাছে কত টা ঘৃণিত । তোমাকে আজ আমার কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তুমি আজ আমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ।আজ তুমি ভালো ভাবে দেখবে আমি তোমার সাথে কিরুপ ব্যাবহার করি । এরপর কবর তাঁকে এমন ভাবে দু দিকে চাপ দেয় , যার ফলে তাঁর ডান পাঁজরের হাড় বাম দিকে এবং বাম পাঁজরের হাড় ডান দিকে ঢুকে পড়ে । “এ অবস্থাকে নবী করীম (সঃ) এভাবে প্রকাশ করেছেন যে , তাঁর মুবারক ডান হাতের আঙ্গুল সমুহ বাম হাতের আঙ্গুল সমুহের মধ্যে প্রবেশ করালেন ।
— তিরমিজি শরীফ, মেশকাত শরীফ
মহানবী (স) বলেছেন,
মৃত ব্যাক্তিকে দাফন করার পর লোকেরা যখন কবরস্থান থেকে চলে আসে , তখন সে তাঁদের পথ চলার জুতার শব্দ শুনতে পায় । সে মুমিন হলে তাঁর নামাজ এসে তখন শিওরে দাড়ায় । তাঁর রোজা এসে তাঁর ডান দিকে দাঁড়ায় এবং যাকাত এসে দাঁড়ায় বাম দিকে । আর সে যত নফল কাজ করেছে , যেমন নফল নামাজ , দান সদকা ও সৌজন্যমুলক আচরন ইত্তাদি কাজ গুলো তাঁর পদ যুগলের কাছে এসে দাঁড়ায় । তাঁর শিওরের দিক দিয়ে আজাবের আগমন ঘটলে , তাঁর নামাজ বলে ওঠে আমার দিক দিয়ে তোমার যাবার কোন পথ নেই । অতঃপর আজাব মৃত ব্যাক্তির ডান দিক থেকে আসার চেষ্টা করলে তাঁর রোজা বলে ওঠে, আমার দিক দিয়ে তোমার কোন পথ নেই । অতঃপর বাম দিক দিয়ে আসার চেষ্টা করলে , তাঁর দেয়া যাকাত দণ্ডায়মান হয়ে বলে আমার দিক দিয়ে তোমার যাবার কোন পথ নেই । অবশেষে পদযুগলের দিক দিয়ে আজাব আসতে শুরু করলে তাঁর নফল এবাদত সমুহ বলে আমাদের দিক দিয়ে তোমার কোন পথ নেই ।
— তারগিব , তারহিব , তাবারানি , ইবনে হেব্বান
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর জনৈক সাহাবী কোন এক কবরের ওপর তাবু স্থাপন করলেন । তাঁর জানা ছিল না যে সেখানে কবর রয়েছে । তিনি তাবুর অভ্যন্তরে বসা ছিলেন । এমনি সময় হঠাৎ তিনি ভুতলে জনৈক ব্যক্তির কোরআন মজিদের সুরা মূলক পাঠের কণ্ঠ শুনলেন । সে সমস্ত সূরাটি পাঠ করলেন । এই ঘটনা নবী করীম (সঃ) কে অবগত করা হলে তিনি বললেন , “এই সুরা কবরের আজাবকে বাধা দান করে , আর ওই লোককে আল্লাহ্র শাস্তি হতে নিরাপদ রাখছে ।
— তিরমিজি শরীফ
হযরত আবু হোরায়রা (রা) বর্ণনা করেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “কোরআন মজিদে এমন একটি সুরা রয়েছে , যার আয়াত সংখ্যা হচ্ছে তিরিশ । সে সুরাটি কারো জন্য আল্লাহ্র কাছে সুপারিশ করলে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে ক্ষমা করে দেন । সে সূরাটি হচ্ছে সুরা মূলক । ( অর্থাৎ তাবা-রাকাল্লাজি বি ইয়া দী হিল মূলক
— – তিরমিজি,আবু দাউদ
হযরত খালেক ইবনে মাদান (র) সুরা মূলক ও সুরা আলিফ লাম মিম সেজদা প্রসঙ্গে বলতেন, এই সুরা দুটি কবরে তাঁর পাঠক দের পক্ষ নিয়ে আল্লাহ্ তায়ালার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় । তাঁরা প্রত্যেকেই আল্লাহ্ তা'আলার কাছে বলে , “হে আল্লাহ্ ! আমি যদি তোমার কিতাবের কালাম না হয়ে থাকি তাহলে আমাকে তোমার কিতাব হতে বিলিন করে দাও । “খালেদ ইবনে মাদান (র) আরও বলতেন , এই সুরা দ্বয় পাখির ন্যায় ডানা মেলে তাঁর পাঠককে ধাকে রাখে , কবর আজাবথেকে রক্ষা করে ।
— দারেমি , মেশকাত
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হল যে , এ সুরা দুটি পাঠের ফলে , কবর আজাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । অন্য এক হাদিসে আছে ,
নবী করীম (সঃ) শয্যায় এ দুটি সুরা পাঠ করা ছাড়া নিদ্রা যেতেন না ।
— তিরমিজি শরীফ
হযরত সোলায়মান ইবনে মুরাদ (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , পেটের অসুস্থতায় যার মৃত্যু হয় কবরে তাঁকে শাস্তি দেয়া হবে না ।. তিরমিজি শরীফ , আহমদ
পেটের অসুস্থতা নানা ধরনের হতে পারে , তার কোন একটিতে মৃত্যু হলে কবরে তাঁকে শাস্তি দেয়া হবে না । হাদিসের এই বক্তব্যের মধ্যে পেট সংক্রান্ত যাবতীয় অসুস্থতাই শামিল ।যেমন কলেরা , বমি পেট বেদনা ইত্যাদি ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “কোন মুসলমান ম্যক্তির জুম্মার রাতে বা দিনে মৃত্যু হলে , আল্লাহ্ তাঁকে কবরের আজাব ও পরীক্ষা হতে নিরাপদে রাখেন ।
— তিরমিজি শরীফ, আহমদ
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেছেন , রমজান মাসে কবরে মৃতদের শাস্তি মুলতবি রাখা হয় ।
— বায়হাকি
হযরত আনাস (রা) আরও বলেন ,
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “কোন মুসলমান জুম্মার দিনে ইন্তেকাল করলে তাঁকে কবরের আজাব থেকে নিরাপদে রাখা হয় ।
— শরহে সুদূর , আবু ইয়ালা
হযরত মিকদাম ইবনে ইয়াক রাব (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “ আল্লাহ্ তায়ালার কাছে শহীদ গনের জন্য ছয়টি পুরুস্কার রয়েছে । তা হল –
১) রক্তের প্রথম ফোঁটা পতিত হওয়ার পূর্বেই তাঁকে ক্ষমা করা হয় । আর জান্নাতে তার যে বাসস্থান রয়েছে । তা তাঁকে প্রদর্শন করা হয় ।
২) শহীদ গন কে কবরের আজাব থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখা হবে।
৩) শিঙ্গা ফুঁকের সময় মানুষ যেভাবে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে , তাঁরা তা থেকে নিরাপদে থাকবে ।
৪) শহীদ গনের মাথায় সম্মানের প্রতিক স্বরূপ এমন এক মুল্লবান তাজ পরান হবে । যার ইয়াকুত পাথর গুলো দুনিয়া এবং তাতে যা কিছু আছে তার চেয়ে ও মূল্যবান ও উত্তম হবে ।
৫) জান্নাতে তাঁদের সঙ্গিরুপে বাহাত্তর জন অপরুপা হুর প্রদান করা হবে ।
৬) সত্তরজন আত্মীয়ের বেপারে তাঁদের সুপারিশ কে কবুল করা হবে ।
— তিরমিজি শরীফ , ইবনে মাজা
হযরত সালমান ফারসি (রা) বলেন , বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন , “ আল্লাহ্র পথে ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সীমান্তের প্রহরায় একদিন এক রাত কাটানো , একমাস নফল রোজা এবং এক মাস রাতভর নফল নামাজ আদায়করার চেয়েও উত্তম । প্রহরায় নিয়োজিত ব্যাক্তি যদি প্রহরারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে , তাহলে সে যে আমল করেছিল , কেয়ামত পর্যন্ত তাঁকে সেই আমলের সওয়াব প্রদান করা হবে এবং শহীদদের ন্যায় তার জীবিকাও চলতে থাকবে, আর সেকবরের আজাব ও পরীক্ষা হতেও নিরাপদ থাকবে ।
— মুসলিম শরীফ
হযরত আবু আইউব (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, কোন ব্যাক্তি শত্রুর মোকাবেলায় দৃঢ় পদে দণ্ডায়মান থেকে নিহত হলে অথবা জয়ী হলে, তাঁকে কবরের পরীক্ষায় নিপতিত করা হয় না ।
— নাসাঈ শরীফ, তাবারানি ।