*মাযহাব বিরোধীদের অভিযোগঃ
----------------------------------------
ক্বুরআনুল কারিম'র আয়াত,
``তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হইও না যারা আল্লাহর শরীক উপাসনা করে। আর তাদের মত হইও না যারা দ্বীনের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করে ও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয় আর প্রত্যেক দলই উল্লাস করে যে তারা সত্যের পথে আছে``।
• সুরা রুম, আয়াত: ৩১ ও ৩২।
আলোচনাঃ
আয়াতটি হচ্ছে,
وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ - مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ-
মূলতঃ এ আয়াতটিতে মুশরিকদের কথা বলা হয়েছে।
চলুন, তাফসীর দেখে নেই;
আহলে ছুন্নাত তথা আহলে হাক্ক'রা পূর্ববর্তি সম্মানীত সত্যায়িত মুহাদ্দিছানে ক্বিরামের তাফসীর অনুসুরণ না করে কোর’আনের মনগড়া ব্যাখ্যাকারী নয়।
• তাফসীরে ইবনু কাসীরঃ
ইমাম ইবনু কাসীর রাহিমাহুল্লাহ এ আয়াতের তাফসীরে বলেন,
(এ আয়াতটির মর্মার্থ হচ্ছে) তোমরা মুশরিকদের মত হয়োনা, যারা তাদের দীনকে পরিবর্তন করেছে, কিছু অংশের উপর ঈমান এনেছে আর কিছু অংশকে অস্বীকার করেছে। (সংক্ষেপিত)
আর তারা হচ্ছে ইয়াহুদী, নাসারা, অগ্নিপূজক, মূর্তিপূজক এবং আহলে ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল বাতিল ধর্মের অনুসারীগণ।
যেমন, আল্লাহ (অন্য আয়াতে) বলেছেন,
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينهمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَسْت مِنْهُمْ فِي شَيْء إِنَّمَا أَمْرهمْ إِلَى اللَّه
(এ আয়াতের আলোচনা ইতোমধ্যে করা হয়েছে, নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।)
এ আয়াতটি মাযহাবের বিপক্ষের নয়, বরং পক্ষের দলীলঃ
ইমাম ইবনু কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
এদের প্রত্যেকটি দল দাবী করে, তারা সত্যের উপর বিদ্যমান। এবং এই উম্মতের অবস্থা ও এমন যে, তারা নিজেদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করে। এদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট। শুধুমাত্র একটি দলই সঠিক পথপ্রাপ্ত। আর সেটি হচ্ছে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আত।
***তারপর তিনি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন:-
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ হচ্ছেন তারা,
• যারা কোর’আনে কারীমকে আঁকড়ে ধরে থাকে।
• সুন্নাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আঁকড়ে ধরে থাকে।
• সাহাবায়ে কেরামের পথকে আঁকড়ে ধরে থাকে,
• তাবেয়ীগণের পথকে আঁকড়ে ধরে থাকে।
• এবং মুসলমানদের ইমামগণের পথকে আঁকড়ে ধরে থাকে।
যেমনিভাবে, ইমাম হাকিম তাঁর ``মুসতাদরাক`` কিতাবে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন,
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নাজাত প্রাপ্ত দলের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, ``যে পথে আমি, আমার সাহাবায়ে কেরাম, তাঁদের অনূসারীগন আছেন এবং এ পথে যারা থাকবে, (তারাই নাজাতপ্রাপ্ত)``।
তাহলে যা দাঁড়ালো,
যদি কোন কাজ সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়গণ করে থাকেন, তা মানা ও অনুসরণ করার মধ্যে নাজাত নিহীত। আর এ অনুসুরণকারীরাই ``আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ``।
এবার চলুন, মাযহাব নিয়ে আলোচনা করি।
* মাযহাব সাহাবায়ে কেরামের যামানায় ছিলঃ
----------------------------------------------------
• ইবনু তাইমিয়্যার স্বীকারোক্তিঃ
সাহাবায়ে কেরামের যামানায় যে মাযহাব বিদ্যমান ছিল, তার সাক্ষ্য দিয়েছেন নজদী, ওয়াহাবী লা-মাযহাবীদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইমাম, তাদের শায়খুল ইসলাম, ইবনু তাইমিয়্যাহ।
তিনি “মাযাহিবুস সাহাবাহ” অর্থাৎ সাহাবীদের মাযহাব—ঠিক হুবহু এমন শব্দ উল্লেখ করে বলেছেন,
• মাজমু উল ফাতাওয়া
• কিতাবু মুকাদ্দামাতিত তাফসীরি
তিনি বলেছেন, (সংক্ষেপিত)
সাহাবীগণ এবং তাবেয়ীগণের মাযহাব এর বিরুদ্ধে অন্য কোন নতুন মাযহাব অনুসরণ করলে তারা বেদ’আতী বলে গন্য হবে।
লক্ষ্য করুন,
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ এখানে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের মধ্য যে মাযহাব বিদ্যমান ছিল, তা তিনি স্পষ্ট ও প্রকাশ্যভাবে বলে দিলেন।
তিনি অন্যস্থানেও ঠিক এভাবেই সাহাবীদের যে মাযহাব ছিল, তা সু-স্পষ্ঠভাবে ব্যাক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন,
ইমাম বুখারীর প্রসিদ্ধ উস্তাদ আলী বিন মাদীনীর কথাঃ
তিনিও ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ এর ন্যায় বলেছেন, সাহাবীদের মধ্যে মাযহাব বিদ্যমান ছিল।
আলী বিন মাদীনী রাহিমাহুল্লাহ হচ্ছেন,
বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ উস্তাদ। তিনি তাঁর কিতাবে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে প্রমাণ করেছেন, সাহাবায়ে কেরামের যুগে মাযহাব বিদ্যমান ছিল।
আলী বিন মাদীনী বলেন,
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মাত্র তিনজন সাহাবী ছিলেন, যাদের মাযহাবকে বাকী সকলে অনুসরণ করতেন।
যে তিনজন সাহাবীর মাযহাবকে অনুসরণ করা হত, তারা হচ্ছেন,
• আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
• যায়েদ বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু
• আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু।
আলী বিন মাদীনী বলেছেন,
``এই তিনজন সাহাবীর প্রত্যেকের অনুসারী ছিল। একেক দল সাহাবায়ে কেরাম একেক সাহাবীর মাযহাব অনুসরণ করতেন এবং ঐ সাহাবীর ফতোয়া মেনে চলতেন এবং একই ফতোয়া দিয়ে অন্যদেরকে ফতোয়া দিতেন``।
• কিতাবুল ইলাল, পৃষ্ঠা : ১০৭-১৩৫।
তাহলে প্রমাণিত হয়ে গেল, সাহাবীদের যামানায় মাযহাব বিদ্যমান ছিল।
**মাযহাবের অনুসারীগণই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্তঃ
---------------------------------------------------
যেহেতু প্রমাণিত হয়ে গেছে, সাহাবীদের মধ্যে মাযহাব ছিল, এবং পরবর্তীতে তাবেয়ীগণের যামানায় সেটা প্রসার লাভ করেছে তাই এ মাযহাবকে যারা অনুসরণ করে, মূলতঃ তারা সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের পথই অনুসরণ করলো।
যেমন, ইবনু কাসীর বলেছেন,
الْمُتَمَسِّكُونَ بِكِتَابِ اللَّه وَسُنَّة رَسُوله صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبِمَا كَانَ عَلَيْهِ الصَّدْر الْأَوَّل مِنْ الصَّحَابَة وَالتَّابِعِينَ وَأَئِمَّة الْمُسْلِمِينَ
এমন প্রমাণ পাওয়ার পর যে সাহাবীদের মাযহাবকে অস্বীকার ও সমালোচনা (ক্রিটিসাইজ) করবে, সে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের লোক নয়।
ইমাম ইবনু কাসীর তো বলেই রেখেছেন এ কথাটি, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া; নজদী-ওয়াহাবীদের ইমাম স্বয়ং বলেছেন, ``সাহাবীদের মাযহাবের বিরুদ্ধাচরণ কেউ করলে সে বেদ’আতী বলে গণ্য হবে``।
সুতরাং নজদী-ওয়াহাবী ইমামের কথায় বলতে হয়,
আজকের ফেতনাবাজ মাযহাব অস্বীকারকারী ও টাট্টা বিদ্রূপকারী নজদী-ওয়াহাবীরা হচ্ছে যামানার বেদ’আতী, ফিত্না সৃষ্টকারী সম্প্রদায়।
________________________________
অভিযোগঃ
ক্বুরআনুল কারিম'র আয়াত;
“এছাড়াও পবিত্র কোরানে সূরা শূরায়- ১৩ ও ১৪ নং আয়াতে আছে, যে তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো আর কোন রকম মতভেদ সৃষ্টি করো না”।
জবাবঃ
আয়াতটি হলো,
أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
এখানে, আল্লাহ বলেছেন, “মতভেদ সৃষ্টি করোনা”
এ ব্যাপারে তাফসীরে তাবারীতে বলা হয়েছে,
عن قتادة, قوله: ( وَلا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ) تعلموا أن الفرقة هلكة, وأن الجماعة ثقة
হাযরাত কাতাদাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে, ``জেনে রাখ, (বিভেদকারী) দল বা ফিরকা ধ্বংসশীল এবং জামাত নির্ভরশীল``।
• তাফছির এ তাবারি।
তাহলে এই জামাত কোন জামাত?
তার ব্যাখ্যা ইমাম ইবনু কাসীর রাহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেছেন, আর তা হচ্ছে ``আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত``। পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে,
আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাত কারা?
ইমাম ইবনু কাসীর তারও ব্যাখ্যা করেছেন যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
*মাযহাব ও আলোচ্য আয়াত'র মধ্যকার সম্পর্কঃ
-----------------------------------------------------------
তাহলে দুটি বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরের আলোকে যা প্রকাশ পেল, তা হচ্ছে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত থাকা এবং বিভেদ সৃষ্টি না করা।
আর ইমাম ইবনু কাসীর বলেছেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ মানে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের পথকে অনুসরণ করা। (সংক্ষেপিত)
আমরা ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছি, সাহাবাগণ এবং তাবেয়ীগণের যামানায় মাযহাব বিদ্যমান ছিল। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সুতরাং যারা মাযহাবকে অনুসরণ করে, তারা ``আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ``র অন্তর্ভুক্ত। আর যারা অস্বীকার ওমশকরা করবে তারা হচ্ছে সে বিভেদ সৃষ্টিকারী দল।
লক্ষ্য করুন,
• ইমাম বুখারী রহঃ শাফেয়ী মাজহাবের
অনুসারী।
ইবনুল কায়্যিম বলেন,
• ইমাম মুসলিম রহঃ শাফেয়ী মাজহাবের
অনুসারী।
সুত্রঃ আল-হিত্তা, ছিদ্দিক হাঃ খান
পৃষ্ঠা নং ২২৮।
• ইমাম তিরমিজী নিজে মুজতাহিদ ছিলেন।
তবে হানাফী ও হাম্বলী মাজহাবের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।
সুত্রঃ আল-ইনসাফ, শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ রহঃ
পৃষ্ঠা ৭৯।
• ইমাম নাসাঈ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন।
আল-হিত্তা, পৃষ্ঠা নং ২৯৩।
• ইমাম আবু দাউদ রহঃ শাফেয়ী।
সুত্রঃ আল-হিত্তা পৃষ্ঠা নং ২২৮।
• ইমাম ইবনে মাজাহ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী।
সুত্রঃ ফয়জুলবারী ১/৫৮।
সউদী ফতোয়া বিভাগের স্বীকারোক্তিঃ
মাযহাব কোর’আন সুন্নাহর উপর প্রতিষ্ঠিত।
সউদী ফতোয়া বিভাগ লাজনাহ দাইমাহ স্বীকার করেছে, চার মাযহাব কোর’আন হাদীসের উপর প্রতিষ্ঠিত। এবং যারা নিজে কোর’আন হাদীস থেকে মাস’আলা বের করার ক্ষমতা রাখেনা, তাদের জন্য মাযহাব এর তাকলীদ করা জায়েয।
প্রমাণঃ
المرجع:
فتاوى اللجنة 5/28
*সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মাত্র তিনজন সাহাবী ছিলেন:-
-----------------------------------------------------
যাদের মাযহাবকে বাকী সকলে অনুসরণ করতেন।
যে তিনজন সাহাবীর মাযহাবকে অনুসরণ করা হত, তারা হচ্ছেন,
• আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
• যায়েদ বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু
• আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু।
আলী বিন মাদীনী বলেছেন,
এই তিনজন সাহাবীর প্রত্যেকের ছিলেন অনুসারীগণ। একেক দল সাহাবায়ে কেরাম একেক সাহাবীর মাযহাব অনুসরণ করতেন এবং ঐ সাহাবীর ফতোয়া মেনে চলতেন এবং একই ফতোয়া দিয়ে অন্যদেরকে ফতোয়া দিতেন।
সূত্রঃ কিতাবুল ইলাল, ১০৭-১৩৫।
তাহলে কী দাঁড়ালো?
সাহাবাদের তিনটি মাযহাব প্রমাণিত হলোঃ
• হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা) এর মাযহাবঃ
সাহাবাগণের মধ্য থেকে এই মাযহাবের আলাদা অনুসারী ছিলেন। তাঁরা আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা) এর মাযহাবকে অনূসরণ করতেন এবং সে অনুসারে ফতোয়া দিতেন। এ মাযহাব যারা অনুসরণ করতেন তারা হলেন নিন্মোক্ত ছয়জন।
আলকামাহ (মৃত্যু : ৬২ হিজরী),
আসওয়াদ (মৃত্যু : ৭৫ হিজরী),
মাসরূক (মৃত্যু : ৬২ হিজরী),
আবীদাহ (মৃত্যু : ৭২ হিজরী),
আমর ইবনে শারাহবীল (মৃত্যু : ৬৩ হিজরী) ও
হারিস ইবনে কাইস (মৃত্যু : ৩৬ হিজরী)।
লক্ষ্য করুন,
এখানে আরেক বিষয় প্রমাণিত হয়ে গেল যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা) এর অনুসারীগণ তাঁর তাকলীদ করতেন। অর্থাৎ কোন প্রকার যাচাই বাচাই না করে সরাসরি তাঁর ফতোয়া তাঁরা মেনে নিতেন।
• হযরত যায়েদ বিন সাবিত (রা) এর মাযহাবঃ
যায়েদ বিন সাবিত (রা) এর এই মাযহাবের আলাদা অনুসারী ছিলেন। তারা এই মাযহাবকে ফলো করতেন এবং সে অনুসারে ফতোয়া প্রদান করতেন। যায়েদ বিন ছাবিত রা. এর যে শাগরিদগণ তাঁর মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং তাঁর মত ও সিদ্ধান্তসমূহ সংরক্ষণ ও প্রচার প্রসারে মগ্ন ছিলেন তাঁরা বারো জন।
তাদের নাম উল্লেখ করার পর ইবনুল মাদীনী রাহ. লেখেন, এই বারো মনীষী ও তাদের মাযহাবের বিষয়ে সবচেয়ে বিজ্ঞ ছিলেন,
• ইবনে শিহাব যুহরী (৫৮-১২৪ হিজরী),
• ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ আনসারী (মৃত্যু : ১৪৩ হিজরী),
• আবুয যিনাদ (৬৫-১৩১ হিজরী),
• আবু বকর ইবনে হাযম (মৃত্যু ১২০ হিজরী)।
লক্ষ্য করুন,
এখানেও প্রমাণিত হয়ে গেল যে, যায়েদ বিন সাবিত (রা) এর অনুসারীগণ তাঁর তাকলীদ করতেন। অর্থাৎ কোন প্রকার যাচাই বাচাই না করে সরাসরি তাঁর ফতোয়া মেনে নিতেন।
• হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) এর মাযহাবঃ
এই মাযহাবের ও একইভাবে আলাদা অনুসারী ছিলেন। তাঁরা শুধু আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) এর মাযহাবকে ফলো করতেন এবং সে অনুসারে ফতোয়া দিতেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.এর যে শাগরিদগণ তার মত ও সিদ্ধান্তসমূহ সংরক্ষণ ও প্রচারে মগ্ন ছিলেন, সে অনুযায়ী ফতওয়া দিতেন এবং তার অনুসরণ করতেন, তাঁরা ছয়জন।
লক্ষ্য করুন,
এখানে ও প্রমাণিত হয়ে গেল যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) এর অনুসারীগণ তাঁর তাকলীদ করতেন। অর্থাৎ কোন প্রকার যাচাই বাচাই না করে তারা সরাসরি তাঁর ফতোয়া মেনে নিতেন।
এ লেখাটি পড়ার পর যে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেলোঃ
মাযহাব নতুন উদ্ভাবিত কোন বিষয় নয়। সাহাবীগণের যামানায় মাযহাব বিদ্যমান ছিলো। গোটা কয়েক সাহাবী ফতোয়া প্রদান করতেন আর বাকী সকলে তাদের ফতোয়া অনুসরণ করতেন। নির্দ্বিধায় তা মেনে নিতেন।
সুতরাং—
• কেউ যদি মাযহাব অস্বীকার করে, সে প্রকারান্তরে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের পথ ও মতকে অস্বীকার করলো।
• কেউ যদি মাযহাব নিয়ে টিটিকারী, টাট্টা, উপহাস করে, তবে সে প্রকারান্তরে সাহাবা ও তাবেয়ীগণের পথ ও মত নিয়ে টাট্টা মশকরা করলো।