উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুসলিম বিভাজনকারী এবং জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদির সঙ্গে তাঁর পুত্র প্রগতিশীল ইসলামি চিন্তাবিদ ফারুক মওদুদির বিরোধ এখন এক ঐতিহাসিক বাস্তবতা। পিতার গড়া রাজনৈতিক দল জামায়াতকে সহিংসতাবিরোধী আদর্শিক অবস্থানে রাখতে রাজনীতি শুরু করেছিলেন ফারুক মওদুদীও। তাঁর নেতৃত্বে জামায়াত থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন পাকিস্তান জামায়াতের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীরা।
৭১ বছর বয়সী সৈয়দ হায়দার ফারুক মওদুদি দেখাতে চান, ইসলাম কোনো অনগ্রসর জীবনাদর্শ নয়। আধুনিক জীবনের বাস্তবতায়ও তা সমান উপযোগী। ইসলামের নামেধর্মভীরু সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার বিপক্ষে তিনি। কূপমন্ডুক মোল্লাতন্ত্রের হাতে ইসলামকে ছেড়ে দিতে চান না তিনি। জম্মুু-কাশ্মীর সমস্যায় জিহাদের নামে নিরীহ মানুষকে বিপথে নেওয়ার বিরুদ্ধে তিনি উচ্চকিত। ইসলামের দোহাই দিয়ে জামায়াতে ইসলামির প্রতারণা, সহিংসতা ও ভণ্ডামির গোপন সত্য সবার সামনে তুলে ধরেছেন ফারুক মওদুদি। এক্ষেত্রে পিতার স্ববিরোধী অবস্থান তুলে ধরতে পিছপা হননি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এবং বর্তমান বাংলাদেশে জামায়াতের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। নিজের এই অবস্থানের কারণে পাকিস্তানের জামায়াত ও জমিয়ত তাকে বারবার খতম করে দিতে চেয়েছে।
ফারুক মওদুদি মুখ না খুললে উপমহাদেশের জামায়াত এবং ইসলামের নামে বিধ্বংসী রাজনীতি করা অনেক দলের অন্দরমহলের অনেক কুৎসিত সত্য আমাদের জানাই হত না।নানা ইস্যুতে ফারুক মওদুদির বিভিন্ন সময়ের সাক্ষাৎকার, বক্তব্য ও আলোচনা নিয়ে আমাদের এই আয়োজন। আসুন পড়ে দেখি…
পাকিস্তানি জামায়াতের থলের বেড়াল
জামায়াতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদির পুত্র সৈয়দ হায়দার ফারুক মওদুদিকে নিয়ে ২০১১ সালের ২৮ মে প্রায় ঘণ্টাখানেকের একটি অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারিত হয় পাকিস্তানের লাহোরভিত্তিক টিভি চ্যানেল রয়্যাল নিউজে। আওয়ামী এহতেসাব নামের ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আমানুল্লাহ খান। পাকিস্তানের অ্যামনা নিউজ চ্যানেলের কর্ণধার আমানুল্লাহ খান বিভিন্ন দিক থেকে সৈয়দ হায়দার ফারুক মওদুদিকে প্রশ্ন করে জেরবার করেন। তাঁর কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য হায়দার ফারুক মওদুদির বড় ভাই ডাক্তার ফারুক আহমেদের সঙ্গে সরাসরি ওই অনুষ্ঠান থেকে কথাও বলেন তিনি। দর্শকও ফারুক আহমেদ মওদুদির কথা শুনেছে। যাচাই করার সুযোগ পেয়েছে। উর্দু ভাষায় সরাসরি সম্প্রচারিত সেই অনুষ্ঠানে ফারুক মওদুদি তুলে ধরেছেন জামায়াতে ইসলামের অতীত ও বর্তমান, তাদের সহিংস রাজনীতি, জামায়াত নেতাদের অসততা, মওদুদি পরিবারের সঙ্গে জামায়াতের বিরূপ আচরণ, একাত্তরে বাংলাদেশে জামায়াতের গণহত্যা ও বর্বরতার নানা অজানা অধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানে দেওয়া হায়দার ফারুক মওদুদির সাক্ষাৎকারের বাছাই অংশ বাংলা ভাষার পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: আজ আপনাদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি সৈয়দ আবুল আলা মওদুদির সাহেবের ছেলে সৈয়দ হায়দার ফারুক মওদুদির সঙ্গে। যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে একাই দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারেন। শাহ সাহেব, আসসালামু আলাইকুম।
উত্তর: ওয়ালাইকুম সালাম।
প্রশ্ন: বর্তমান অবস্থা এমন কেন, কী হচ্ছে এসব?
উত্তর: প্রথম কথা হচ্ছে, ওইসব লোকজন কোথায়, যারা আমার বাবা সৈয়দের (মওদুদি) সঙ্গে কাজ করেছেন। আজ জামায়াত চলে গেছে জমিয়াতের হাতে। কাজী হোসাইন আহমেদ, মুনওয়ার হাসান- এরা সবাই জমিয়াতের লোক। লিয়াকত বালুচ, হাফিজ মোহাম্মদ ইদ্রিস- এরা সবাই জমিয়াতের লোক। জমিয়ত এখানে বদমাশি, গুণ্ডাগিরি, ধ্বংসযজ্ঞ, খুন- যা যা করেছে, জামায়াতের ওপর ভর কর এখন তারা সেটা সারা দেশে করার চেষ্টা করছে। আপনার সম্ভবত মনে নেই, লাহোরের গুলবার্গে শেখ মুজিবের একটা সমাবেশ ছিল। তারা তাকে সেখানে সেই সমাবেশ করতে দেয়নি, বক্তব্য রাখতে দেয়নি। সমাবেশস্থলে তারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। শেখ মুজিব তখন মওদুদিকে বলেছিলেন, তুমি আমার মাটিতে পা রেখে দেখাও। একটা সমাবেশ করে দেখাও। তারপর আমার বাবা ওখানে গিয়ে পল্টন ময়দান পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। এরা (জামায়াত) মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানির সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেছে। ভাষানীকে তারা চড়-থাপ্পড় মেরেছে, দাড়ি ধরে টানাটানি করেছে, তার চোখে মরিচ ঢেলে দিয়েছে। একাত্তরে পাকিস্তানি ফৌজ এবং গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশে ওরা আল-বদর আল-শামস গঠন করে। খুররম ঝা মুরাদ ছিল আল-বদর, আল-শামসের ইনচার্জ। প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের সময়ে গঠিত হামিদুর রহমান কমিশনের কাছে তাকে সাক্ষ্য দিতে হয়েছে। হামিদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনে আছে, ওই বদবখত শয়তান খুররম ঝা মুরাদ পনের জন বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করে। আমার বাবা মওদুদীর অনুসারী ওই লোকগুলো ধর্মের নাম করে গুণ্ডামি-বদমায়েশি করেছে। এখন আমরা তাদের এসব কর্মকাণ্ডের শিকার হচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনার কাছে তো এ ধরনের উদাহারণ অনেক আছে। আমরা আজ যে বিষয়ে অনুষ্ঠান করছি সে প্রসঙ্গে আসুন।
উত্তর: আমি সে প্রসঙ্গেই আসছি, একটু বলতে দিন, সে প্রসঙ্গেই আসছি আমি। এক মিনিটেই শেষ হয়ে যাবে। যে শিক্ষা ওরা পেয়েছে, যেভাবে লোকজনকে হত্যা করেছে, যেসব লোকজন তাদের অত্যাচারের শিকার হয়েছে, তারা যখন আমার বাবার কাছে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলতে এসেছে, তখন আমার বাবা তাদের বলেছেন, দেখো, আমারছেলেপিলের সঙ্গে যাতে তোমাদের বাচ্চাকাচ্চারা বিরোধে না জড়ায়। যদি বিরোধে জড়ায় তো আবার কিন্তু এই ধরনের ঘটনাই ঘটবে। সেসব ফরিয়াদি লোকজনের বদদোয়াতেইআজ আমাদের এই দশা। ওইসব লোকের বদদোয়ায় আজ আমরা এখানে এসে পৌঁছেছি। যারা ভেবেছিল, এরা আমার ছেলেপিলে আমার তো কোনো সমস্যা করছে না। তাদের সন্তান হিসেবে ওইসব ছেলেপিলের দ্বারা আমরা আজ সমস্যার শিকার হয়েছি।
প্রশ্ন: আপনাদের পরিবারের সঙ্গে জামায়াতের মামলা সম্পর্কে বলুন? এই মামলা ও বিরোধে কাজি হোসাইন আহমেদ কীভাবে জড়িত?
উত্তর : আমার বাড়িতে প্রথম যে হামলা হয়েছে সেটা তো কাজির নেতৃত্বেই হয়েছে। আমি লাহোরে ছিলাম না, পাকিস্তানে ছিলাম না। কাজি হোসাইন আহমেদের দেড় থেকে দুশ ছেলে এসে আমার ঘর থেকে সব জিনিসপত্র বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয়। আমার স্ত্রী-সন্তানদের একটা ঘরে আটকে রাখে। তারা তিন দিন তাদের এভাবে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে, বাইরে বের হতে দেয়নি। এই ঘটনায় আমি মিয়া উসমান ও জমিয়াতের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে গিয়েছি। এফআইআর নেওয়া হয়নি। আমার কাছে পাঁচ লাখ রুপি চাওয়া হয়েছে। পাঁচ লাখ রুপি তো আমার কাছে নেই। কীভাবে কি করব?
প্রশ্ন: আচ্ছা শাহ সাহেব, যেখানে আপনার বাড়ি, সেখানে জমি কতটুকু? দুই কানাল?
উত্তর : নাহ, পাঁচ কানাল।
প্রশ্ন: যতটুকুই হোক।
উত্তর: আমাদের নয় ভাইবোনের মধ্যে ভাগ হলে দশ কি এগারো মারলা (ছয় শতাংশের কিছু বেশি) করে পড়বে।
প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামির কাছে এই দশ-এগারো মারলা সম্পত্তি তো খুব দামি কিছু নয়। কেননা, জামায়াতে ইসলামি তো গরিব নয়, বরং আমির। তাছাড়া এই ঘর যেখানে, সেটা তো জামায়াতের সম্পত্তি নয়?
উত্তর: আমানুল্লাহ খা সাহেব, মাফ করবেন, বললেন যে জামায়াত গরিব নয়, আমির। কিন্তু আমি তো জানি যেসব লোক জামায়াতে যোগ দেয়, জমিয়াতে যোগ দেয়, তারা এক একজন কোটিপতি হয়ে যায়। কওমের নামে, মিল্লাতের নামে তারা এমন লুটপাট চালায়! সেসব আপনার সামনে তুলে ধরলে আপনার চোখ খুলে যাবে।
প্রশ্ন: কারা তারা?
উত্তর: লিয়াকত বালুচের মতো লোকজন। এমনকি জামায়াতের সাবেক আমির কাজি হোসাইন আহমেদ সাক্ষাৎকারে বলেছেন তার পিতার (মাওলানা কাজি মোহাম্মদ আব্দুর রব) ঘর ও তাদের ঘরে একটি মাত্র বাতি জ্বলত। আজ ইসলামাবাদে তাঁর বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখুন। ইসলামাবাদে তাঁর কিসের ব্যবসা? কোত্থেকে এল তাঁর এত সম্পদ? নওয়াজ শরিফ নাকি তাঁকে ১৪ কোটি রুপি দিয়েছেন। তিনি নিজে বলেছেন। সেসব টাকার হিসাব কোথায়?
প্রশ্ন: একবার সাক্ষাৎকারে মিয়া তোফায়েল মোহাম্মদ আমাকে বলেছিলেন, আমি কাজী হোসাইন আহমেদের কাছে যে জামায়াতে ইসলাম দিয়েছি সেটা ছিল দুধের মতো, কাজি হোসাইন আহমেদ সেটাতে পানি ঢালতে ঢালতে লাসসি বানিয়ে দিয়েছেন। কাজী সাহেব সম্পর্কে মিয়া সাহেবের এই ছিল দৃষ্টিভঙ্গি। মিয়া তোফায়েলের জীবদ্দশাতেই এমন কি ঘটলযে জামায়াতে ইসলামি তার আসল তত্ত¡ ও আদর্শের জায়গা থেকে সরে এল?
উত্তর: দেখুন, আমার সবেচেয়ে বড় আপত্তি ও দুঃখ মিয়া সাহেবকে নিয়েই। তাঁর ওপর আমার বাবার খুব আস্থা ছিল। আমার বাবা আমেরিকা থেকে চিঠি লিখলেন যে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে হবে, কিন্তু আমি আমার ছেলেদের কাছ থেকে টাকা নিতে চাই না। আমার বই-পুস্তক বিক্রির রয়্যালটির যে টাকা জমা আছে সেখান থেকে যদি টাকা দিতেন। সেই চিঠির জবাবে মিয়া সাহেব লিখলেন, রয়্যালটি জমা করা আপনার কাজ, কিন্তু ব্যক্তিগত খরচের জন্য তো জামায়াতে ইসলাম না। আমার মা বলেছেন, সেই চিঠি দেখে বাবার চোখে পানি এসে গিয়েছিল এবং তিনি চুপ হয়ে গিয়ে ছিলেন। এ তো গেল এক ব্যাপার। আরো ঘটনা আছে। ডাক্তার আহমেদ ফারুক সাহেব বেঁচে আছেন। আমি আপনাকে তার সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিতে পারি। উনি আমাকে বলেছেন বাবার সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, তিনি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। আমরা পরেরদিন তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসব ভেবেছিলাম। তখন খুররাম ঝা মুরাদ এলেন। তিনি বললেন, জামায়াতের আমিরের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আছে, তা সৈয়দ সাহেবকে বলতে হবে। ডাক্তার আহমেদ ফারুক সাহেব তাকে বললেন, এই মুহূর্তে তাঁর সাথে কথা বলা যাবে না, ডাক্তারের নিষেধ আছে। তখন খুররাম বললেন, খুব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, সেটা সৈয়দ সাহেবের কাছেইবলতে হবে। ডাক্তার ফারুক সাহেব ভিতরে গিয়ে বাবাকে সেটা জানালেন। বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী সংবাদ আছে, আচ্ছা ঠিক আছে, তাকে ভেতরে পাঠাও। ফারুকসাহেব খুররাম সাহেবকে ডেকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। ভেতরে ঢুকে খুররাম সাহেব ফারুক সাহেবকে বললেন, আপনি জামায়াতের কেউ নন, আপনি বাইরে চলে যান, আপনারসামনে কথা বলা যাবে না। ফারুক সাহেব বাইরে বেরিয়ে এলেন। এর দুই মিনিট পরই বাবার বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়। জানি না এই বদমাশ কি করেছিল, উনার মুখেরওপর থুথু দিয়েছিল, নাকি দাড়ি ধরে টেনেছিল, কাপড় ধরে টেনেছিল, না গালি দিয়েছিল, বলতে পারব না, শুধু জানি হার্ট অ্যাটাক। এরপর উনার মরদেহ নিয়ে আসি। পরে আমি মিয়া তোফায়েল সাহেবের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কী এমন সংবাদ ছিল যা উনি সহ্য করতে পারেননি। মিয়া সাহেব বললেন, আমি তো কোনো সংবাদ দিইনি। কে বলেছে আমি সংবাদ পাঠিয়েছি? উনি আমিরের দায়িত্ব ছেড়ে আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। উনার কাছে আমি কী সংবাদ পাঠাব? তারপর খুররামের কাছে যাই এবং বলি মিয়া সাহেব তো এসব বলছেন। সে বলে, তোমার বাবার কী দাম আছে, তোমার বাবার বই কে পড়ে? তুমি কি বলতে এসেছ? সবাই তো আমার বই পড়ে। বদমাশের এসব কথা শুনে আমি তো চুপ। এসব কথার প্রমাণ আছে। ডাক্তার সাহেব সবই জানেন। ডাক্তার সাহেবের ফোনে কথা বলে দেখতে পারেন। আমি জানি না আমার বাবা এই কাজ কেন করেছিলেন, কী কারণে করেছিলেন, জানি না এর জন্য উনি কী শাস্তি পাচ্ছেন, খোদা জানেন।
প্রশ্ন: আচ্ছা শাহ সাহেব, বলুন তো, এই সম্পত্তি আপনার নয় ভাইবোনের। এই বিষয়টি ফয়সালার জন্য জামায়াতে ইসলামির কী প্রয়োজন?
উত্তর: দেখুন, সারা পাকিস্তানে বাবার যেসব বন্ধু আছেন তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা আসুন, পারিবারিক সম্পত্তির এই বিবাদ থেকে আগে জামায়াতকে সরান। তারপর এই সম্পত্তি আমাদের ভাইদের মধ্যে, যারা পাবেন, তাদের মধ্যে ভাগ করে দিন। আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া নেই।
প্রশ্ন: আপনাদের এই জমি সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হয়নি কেন?
উত্তর: আদালত বিচারের জন্য তিন জিনিস চেয়েছে উমরে এনু, সবরে আইয়ুব এবং কানুন কা খাজানা। বাইশ-তেইশ বছর হয়ে গেছে, এখনও প্রাথমিক ডিগ্রি জারি হয়নি। এই মামলা এখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। কোনো অগ্রগতি হয়নি। কার সম্পতি, আমার বাবার সম্পত্তি, কারা ওয়ারিসদার তা-ও জানা, বিরাট কোনো সম্পত্তিও নয়, যে লাইব্রেরি আদালত সিল করে দিয়েছিল পাঞ্জাবের অ্যাডভোকেট জেনারেল ছিলেন সেটার রিসিভার, উনার লাগানো তালা ভেঙে লাইব্রেরির থেকে জমিয়াতের লোকজন সব নিয়ে গেছে। প্রথমে পুরো লাইব্রেরি উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তারপর নিয়েছে আসবাবপত্র। এ ব্যাপারে কোথায় কোনো অভিযোগ করা যায়নি। থানায় গেলে বলা হয়, জনাব, জামায়াত ও জমিয়তের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেওয়া যাবে না, আইএসআই এবং সেনাবাহিনীর নিষেধ আছে। আপনি হাইকোর্টে যান। ওখানে গিয়েই কী হবে! জামায়াত ও জমিয়ত তো আইএসআই জন্যই কাজ করেছে। মুনাওয়ার হাসান তো প্রথমে এনএসএফে ছিলেন।
প্রশ্ন: এনএসএফ কি?
উত্তর: ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশন। সেখান থেকে জামায়াতে নিয়ে এসেছে সিআইএ।
প্রশ্ন: মুনাওয়ার সাহেব ওখানে ছিলেন?
উত্তর : হ্যাঁ, হ্যাঁ, এনএসএফে ছিলেন, দাড়ি ছিল না, গিটার বাজাতেন। তারপর সিআইএ উনাকে জামায়াতে নিয়োগ দিলেন।
প্রশ্ন: জামায়াতের সঙ্গে সিআইএর কী সম্পর্ক ?
উত্তর: সিআইএ’র জন্য উনারা কাজ করেন। আপনার হয়ত মনে আছে, একবার মিয়া সাহেব বয়ান দিয়েছিলেন। সেখানে বলেছিলেন, আমার পরে জামায়াতের আমির হবেন কাজীসাহেব।
প্রশ্ন: আপনি এসব কথা বলছেন। লোকজন শুনছে। পাকিস্তানে আইন আছে। সবাই তো আর অন্ধ নয়। প্রধান বিচারপতি আছেন। আপনার মামলা তো ২৩ বছরের। এইমামলা তাদের নজরে পড়েনি? আপনি তাঁর কাছে যাচ্ছেন না কেন?
উত্তর: লাহোর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এজাজ সাহেব, উনি তো জমিয়তে ছিলেন, গুণ্ডাগিরি, বদমাশিতে সব সময় আগে আগে ছিলেন। জনাব, তিনি হলেন প্রধান বিচারপতি। সিনেটে তো কাজী হোসাইন আহমেদ আছেনই। জামায়াতের ব্যাপারে বিচার চাইতে এজাজ সাহেবের কাছে যাব? উনার কাছে আপিল করব? সবখানে তো এই ধরনের লোকই বসে আছেন। কিসের আপিল করব, কার কাছে আপিল করব! আমার আপিল পুরো পাকিস্তানের মানুষের কাছে। আপনার দেখুন, এদের কর্মকাণ্ড দেখুন। আজ তারা আমাদের সাথে যা করছে, পুরো দেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এলে কী করবে, দেখুন। যারা আমাদের সঙ্গে ইনসাফ করেনি, তারা পুরো দেশের সঙ্গে, জনগণের সঙ্গে কী করবে, দেখুন।