শুধু পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত বা তাফসীর নয় অসংখ্য - সহীহ হাদীস দ্বারাও উছিলা প্রমাণিত।
✔ ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসাই, ইমাম বায়হাকী ও ইমাম তাবরানী সহীহ সনদের মাধ্যমে সাহাবী হযরত উসমান ইবনে হানীফ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু থেকে বর্ননা করেন,,,
হযরত ওসমান ইবনে হানীফ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেনঃ এক অন্ধ সাহাবী নবী করিম ﷺ এর খেদমতে এসে আরজ করলেন - ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুণ যেন তিনি আমার অন্ধত্ব দূর করে দেন । রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বললেন- যদি তুমি চাও, তাহলে আমি দোয়া করবো । আর যদি ইচ্ছা করো, তাহলে সবর করতে পারো । এটা তোমার জন্য মঙ্গলজনক হবে । উক্ত সাহাবী বললেন- বরং আপনি আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করুণ । তার অনুরোধে নবী করিম ﷺ তাঁকে উত্তমরূপে ওজু করে এই দোয়া পড়তে শিখিয়ে দিলেন- “হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি এবং তোমার নবী যিনি রহমতের নবী সে নবী মুহাম্মদ ﷺ কে উছিলা করে তোমার দিকে আমি মুতাওয়াজ্জাহ (মনোযোগী) হলাম । হে প্রিয় মুহাম্মদ ﷺ, আমি আমার এই মাকসুদ পূরণের জন্য আপনার মাধ্যমে (উছিলায়) আল্লাহর দিকে মুতাওয়াজ্জাহ হলাম । হে আল্লাহ ! তুমি আমার মাকসুদ পূরণের ব্যাপারে হুজুর ﷺ এর সুপারিশ কবুল করো” এই দোয়া করে ঐ সাহাবী চলে গেলেন । তারপর পুনরায় ফিরে আসলেন । ইত্যবসরে আল্লাহ্ তা'য়ালা তার চক্ষু ভাল করে দিয়েছেন । বায়হাকীর বর্ননায় আছে উক্ত সাহাবী উঠে দাঁড়াতেই তার চক্ষু ভাল হয়ে গেলো” ।
— তিরমিজি, নাসাই, বায়হাকী, তাবরানী।
🔃 হাদীসের পর্যালোচনা,,,
এই হাদিসের মধ্যে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- অন্ধত্ব দূর করার জন্য সাহাবী একবার আল্লাহকে সম্বোধন করেছেন । আর একবার রাসুলুল্লাহ ﷺ কে সম্বোধন করেছেন । এইভাবে সম্বোধন করা জায়েজ । হাদীস বিশারদগণ বলেছেনঃ এই হাদীসে নবী করিম ﷺ কে উছিলা করে দোয়া করা এবং নবী করিম ﷺ কে সম্বোধন করে ডাক দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় । এই দোয়া এস্তেমাল করেছেন সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, সলফে সালেহীন ও পরবর্তী বুযুর্গানে দ্বীন- তাঁদের মকসুদ পূরণের জন্য।
উক্ত হাদীসে আরও প্রমাণিত হয় যে, নবীজি ﷺ এর জীবদ্দশায় এবং ইন্তিকালের পরবর্তী সময়ে যাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গিয়েছিল, সেসব বুযুর্গানে দ্বীন উপরোক্ত আমল করে সকলেই দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন । এতে প্রমাণিত হল ﷺ এর ইন্তিকালের পরেও তাঁকে উছিলা ধরা যায় । সত্যি কথা এই রাসুলুল্লাহ ﷺ আগমনের পূর্বেও সকল নবী ও সকল উম্মত তার পবিত্র নামের উছিলা ধরেই বিপদ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন ।
✔ কোন সাহাবী বা ওলীর উছিলা ধরার প্রমাণ নিম্ন বর্নিত হাদীস খানা যা বুখারী শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে,,,,
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু হতে বর্নিত - তিনি বলেন, হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এর খেলাফত কালে যখন অনাবৃষ্টির কারনে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিত, তখন তিনি হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মোত্তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু কে উছিলা করে খোদার কাছে বৃষ্টি কামনা করতেন এবং ইস্তিস্কার নামাজ পড়তেন । হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এভাবে দোয়া করতেনঃ “হে আল্লাহ, এতদিন আমরা নবী করিম ﷺ এর উছিলা দিয়ে বৃষ্টি কামনা করতাম । বর্তমানে নবীজীর চাচা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু কেও উছিলা করে তোমার কাছে বৃষ্টি কামনা করছি । তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দাও” । হযরত আনাছ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেন, এভাবেই লোকেরা বৃষ্টি পেতো
— বুখারী শরীফ।
হাদীস বিশারদ উলামা ও ইমামগণ বলেছেন, এই হাদীস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, বুযুর্গানে দ্বীনের উছিলা করে দোয়া করা হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এর সুন্নাত । কেননা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু ছিলেন রাসুল ﷺ এর চাচা এবং বিশিষ্ট সাহাবী । লোকেরা তাঁকে উছিলা করে বৃষ্টি প্রার্থনা করার সাথে সাথে বৃষ্টিপাত হতো । নবীজীর বংশের গুন এবং বুযুর্গীর মর্যাদা আল্লাহ তা'য়ালার নিকট অতি উচ্চ ।
🔃 বিপথগামীদের জন্য সতর্কবানী,,,!!!!
বিপথগামী লোকেরা বলে থাকে- হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু নবীজীর উছিলা না ধরে তাঁর যুগে জীবিত হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু কে উছিলা ধরেছেন । এতে বুঝা যায়- মৃত কাউকে উছিলা ধরা জায়েয নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
হাদীস বিশারদ ওলামাগণ বলেছেন, বিপথগামীরা হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যা করেছে । বরং উক্ত হাদীসের প্রকৃত ব্যাখ্যা হচ্ছে।হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু কে উছিলা ধরে একথাই বুঝিয়েছেন যে, নবীজী ﷺ ছাড়াও ঐসব লোককে উছিলা ধরা যায়- যারা নবীজীর অতি নিকটের এবং আত্নীয়জন । সুতরাং পাক পাঞ্জাতন ও আউলিয়া কেরামের উছিলা ধরার প্রকৃষ্ট প্রমান হলো - হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এর উক্ত আমল । অন্যান্য সাহাবীগনকে উছিলা না ধরার মধ্যে কারন হলো- নবীজী ﷺ ও তাঁর পরিবারের সদস্যগনের বুযুর্গী ও মর্তবা আল্লাহ তা'য়ালার কাছে কত বেশী তা প্রকাশ করা । নজদী ওহাবীদের প্রতারনামূলক ব্যাখ্যা যে সম্পূর্ন মিথ্যা- তা অন্যান্য হাদীস দ্বারাও প্রমানিত হয়েছে ।
ইন্তিকালের পর কাউকে উছিলা ধরার অসংখ্য প্রমান আছে। যেমন,,
✔ ইবনে হিব্বান, হাকেম ও তাবরানী সহীহ সনদের মাধ্যমে একটি হাদীস বর্ননা করেছেন । হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এর মা হযরত ফাতেমা বিনতে আছাদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা যখন ইন্তিকাল করেন (৩য় হিজরী) তখন নবী করিম ﷺ তাঁর জন্য এভাবে দোয়া করেছেন,,,,
হে আল্লাহ! তুমি আমার মা (চাচী) ফাতেমা বিনতে আছাদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা কে মাফ করে দাও, তাঁর জন্য তাঁর কবরকে প্রশস্ত করে দাও । তোমার প্রিয় নবী (আমি) ও আমার পূর্ববর্তী সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের উছিলায় আমার চাচীর মাগফিরাত করো ।
— ইবনে হিব্বান, হাকেম ও তাবরানী।
অন্য হাদীসে আছে,,
✔ নবী করিম ﷺ এর ইন্তিকালের পর হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এর খেলাফত যুগে জনৈক সাহাবী বেলাল ইবনে হারেছ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু রাসুলুল্লাহ ﷺ এর রওজা মোবারকে গিয়ে বৃষ্টির জন্য হুজুর ﷺ এর খেদমতে প্রার্থনা করেছিলেন । ইমাম বায়হাকী, ইবনে আবি শায়বা প্রমুখ হাদীস বিশারদগণ সহীহ সনদের মাধ্যমে এ মর্মে নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ খানা বর্ননা করেছেন,,,
মদীনাবাসীগণ একবার হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এর খেলাফত কালে অনাবৃষ্টির কারণে দূর্ভিক্ষে পতিত হন । হযরত বেলাল ইবনে হারেছ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু নামক জনৈক সাহাবী নবী করিম ﷺ এর রওজা মোবারকে গিয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ! আপনার উম্মতেরা ধবংসের সম্মুখীন হয়েছে । আপনি তাদের জন্য বৃষ্টির জন্য দোয়া করুন । অতঃপর রাত্রে স্বপনে এসে নবী করিম ﷺ বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু কে বললেন, তুমি ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর নিকট গিয়ে আমার সালাম জানিয়ে বলো- তারা বৃষ্টি পাবে । স্বপ্ন দেখে বেলাল ইবনে হারেছ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে কে এ শুভ সংবাদ দিলেন । হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এ সংবাদ শুনে কেঁদে ফেললেন । মদিনাবাসীগণ রহমতের বৃষ্টি লাভ করলেন ।
— বায়হাকী ও ইবনে আবি শায়বা।