মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠান : জায়েয ও বরকতময় আমল
--শায়খুল হাদীস আল্লামা হবিবুর রহমান ছাহেব
হযরত নবী করীম (সা.)-এর পবিত্র অভ্যাস ছিল, তিনি প্রতি সোমবার নফল রোযা রাখতেন। সাহাবায়ে কেরামের অভ্যাস ছিল, তাঁরা হুযুরে পাক (সা.)-কে যে আমল করতে দেখতেন, নিজেরাও সে আমল করার চেষ্টা করতেন। তাই তাঁরা নবী করীম (সা.)- কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি প্রতি সোমবারে রোযা রাখেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, সোমবার আমার জন্ম হয়েছে এবং ঐ তারিখে আমার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। মুহাদ্দিসিনে কেরাম বলেছেন, নবী করীম (সা.) তাঁর জন্মের শুকরিয়া স্বরূপ ঐ দিন রোযা রাখতেন, অর্থাৎ রোযা রেখে তিনি তাঁর জন্মদিবস পালন করেছেন। আগের যামানার মুহাদ্দিসিনে কেরাম যেমন হাফিয ইবনে সাখাভী (র.) ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (র.), ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র.), ইমাম ইবনে রজব (র.) সহ মুহাদ্দিসিনে কেরাম মিলাদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব হওয়ার স্বপক্ষে যত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন, তন্মধ্যে উক্ত হাদীসও অন্যতম। তাঁরা বলেছেন, নবী করীম (সা.)-এর পয়দায়েশের শুকরিয়া ¯^রূপই পড়ি। অন্য কোন কারণ নয়। অতএব এটা ভাল কাজ। তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (র.) তাঁর কিতাব ‘আল মদখল’-এ নিজের থেকে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন এবং জবাব দিয়েছেন। মিলাদ শরীফ যারা পড়েন না, তারা ইবনুল হাজ্ব সম্পর্কে বলে থাকেন যে তিনি মিলাদ শরীফ অ¯^ীকার করেছেন এবং বাধা দিয়েছেন। তা মোটেই সত্য নয়। সত্য হল, তিনি মিলাদ শরীফে গান বাজনা, রং-তামাশা ইত্যাদি খারাপ আচরণ বাধা দিয়েছেন। মিলাদ শরীফকে তিনি ভাল কাজ ও মু¯—াহাব বলেছেন। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, নবী করীম (সা.) তাঁর পয়দায়েশের শুকরিয়া আদায় করেছেন রোযা রেখে, আর আমরা তা পালন করি শিরনী ইত্যাদি খেয়ে, তা কেমন করে? জবাবে তিনিনিজেই বলেছেন, হুজুরে পাক (সা.) দু’টি কারণে অন্য অনুষ্ঠান না করে কেবল রোযা রেখে শুকরিয়া আদায় করেছেন। (১) যেহেতু ব্যাপারটি তাঁর নিজের, সুতরাং তাঁর নিজের জন্মের শুকরিয়া খুব আড়ম্বর করে অনুষ্ঠান-এর মাধ্যমে আদায় করা তাঁর নিজের ¶েত্রে পছন্দ করেন নি। (২) নবী করীম (সা.) আশংকা করেছেন যে, আমি যদি এই শুকরিয়া পালনকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেই এবং এতে শিরনী ও খানাপিনা ইšে—যাম করি এবং তা আলাহর পছন্দ হয়ে যায়, তবে হয়ত আমার উম্মতের সবার উপর ফরয হয়ে যায়, তবে তা সবার প¶ে পালন করা কঠিন হবে।
এ সন্দেহ নবী করীম (সা.)-এর কেন হল? সে ঘটনা সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে উলেখ রয়েছে। নবী করীম (সা.) রামাদ্বান শরীফের তিন রাতে জামাআত সহকারে তারাবীহের নামায পড়েছেন। প্রথম রাতে যারা নামায পড়েছেন, দিনে তারা বলাবলি করলেন যে আমরা তো একা একা বা পরস্পর মিলিত হয়ে জামাআতে নামায পড়ি। গত রাতে হুজুরে পাক (সা.)-এর পেছনে নামায পড়ে বড় মজা পেলাম। এ খবর শুনে পরের রাতে আরও অধিক লোকের সমাগম হল। এ খবর শুনে তৃতীয় রাতে আরও বেশী লোকজন জমায়েত হলেন। এ রাতে বা চতুর্থ রাতে মসজিদ এবং মসজিদের সম্মুখ ভাগ জনমুখর হয়ে উঠে এবং সবাই হুযুরে পাক (সা.)-এর অপে¶ায় থাকেন।
হুযুরে পাক (সা.) হুজরা শরীফ থেকে বের হলেন না। অনেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বের হয়ে বললেন যে, তোমাদের উপস্থিতি ও অপে¶ার কথা আমি জানি। তোমরা তোমাদের নামায আদায় করে চলে যাও। আমি আর বের হব না। কারণ তোমাদেরকে নিয়ে যদি আমি এভাবে তারাবীহর নামায জামাআত সহকারে আদায় করি, আর তা আলাহ পাকের পছন্দ হয়ে যায়, তবে আলাহ তোমাদের উপর তা ফরয করে দিতে পারেন। আর যদি আল্লাহ ফরয করে দেন, তবে সবার ¶েত্রে তা আদায় করা সহজসাধ্য হবে না। তাই আজ আমি আর বের হব না। সাহাবায়ে কেরাম সোমবার রোযা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করলে, জবাবে নবী করীম (সা.) নিজ পয়দায়েশের শুকরিয়া আদায়ের কথা জানালেন। ইমাম ইবনুল হাজ্ব (র.) বলেন, যদি নবী করীম (সা.) নিজ জন্মের শুকরিয়া কে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতেন, শিরনী ইত্যাদি আয়োজনের হুকুম দিতেন ও বড় মাহফিল অনুষ্ঠিত করতে বলতেন, তা আলাহর পছন্দ হয়ে গেলে তা উম্মতের সবার উপরফরজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আর ফরয হয়ে গেলে তা সবার ¶েত্রে পালন করা দুস্কর হত। তাই নবী করীম (সা.) কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজে রোযা রেখে শুকরিয়া আদায় করতেন। বুখারী শরীফ ও হাদীসের অন্যান্য কিতাবে বর্ণনা এসেছে নবী করীম (সা.)-এর এই তিন দিনকার জামাআত সহ তারাবীহর নামায আদায় করার উপর ভিত্তি করে হযরত উমর (রা.) তাঁর খিলাফতকালে সারা এলাকার লোকজনকে একত্রিত করে একই ইমামের পিছনে বড় জামাআত সহ তারাবীহর নামায পড়িয়েছেন। এর উপর সকল সাহাবায়ে কেরামের ইজমা হয়ে গেছে। এখন যদি কোন ব্যক্তি বলেন যে, নবী করীম (সা.)-এর এ তিন রাতে জামাআত সহকারে আদায়কৃত নামায তাজাহাজ্জুদের নামায ছিল, তবে তারাবীহর নামায আদায় জামাআতে পড়ার কোন দলীল থাকবে না। অতএব সকল মুহাদ্দিসীনে কেরাম একমত যে, হুযুরে পাকের তিন রাতের নামায তারাবীহর নামায ছিল, তাহাজ্জুদের নয়। ভারত বিখ্যাত সর্বজনমান্য আলিম আলামা আনওয়ার শাহকাশ্মিরী (র.) তাঁর ‘তাক্বরীরে তিরমিযী’তে বলেছেন যে, নবী করীম (সা.)-এর যামানায় তাহাজ্জুদ ও তারাবীহর নামাযের মধ্যে পার্থক্য এই ছিল যে, তারাবীহর নামায রাত্রের প্রথম দিকে পড়া হত, আর তাহাজ্জুদের নামায রাত্রের শেষ দিকে পড়া হত। এটা ছিল সময়ের পার্থক্য। আর কৈফিয়ত বা অবস্থার দিক থেকে এই পার্থক্য ছিল যে তারাবীহর নামায জামাআত সহ এবং তাহাজ্জুদের নামায একা একা পড়া হত। এই হল আলামা কাশ্মিরী (র.)-এর তাহকীক। আমরা তাঁর তাহকীক মেনে নিয়েছি। এ কারণে তামাম উলামা ও ফুকাহায়ে আহনাফ একমত যে, রামাদ্বান শরীফে তারাবীহর নামায ছাড়া (ফরয নামায ব্যতিত) অন্য কোন নামায জামআতে আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী। ফতওয়ায়ে রশীদিয়ায় লেখা হয়েছে, তাহাজ্জুদের নামায রামাদ্বান শরীফে বা অন্য মাসে জামাআত সহকারে পড়া মাকরূহে তাহরীমী। হযরত আশরাফ আলী থানভী (র.)ও তাঁর বেহেশতী যেওরে লিখেছেন যে, একমাত্র ই¯ে—সকার নামায ও তারাবীহর নামায ব্যতিত অন্য কোন নফল নামায জামাআতে পড়া না-জায়েয ও মাকরূহে তাহরীমী। এই হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, নবী করীম (সা.) নিজের জন্মের শুকরিয়া আদায় করেছেন।
মুহাদ্দিসীনে কেরাম আর একখানা হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন, যা সিহাহ সিত্তার অনেক কিতাবে আছে। হুযুরে পাক (সা.) হিজরত করে মদীনা শরীফ তাশরীফ নিলেন। গিয়ে দেখলেন, সেখানকার ইহুদী সম্প্রদায় মুহররমের ১০ তারিখে রোযা রাখে। কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, আমাদের নবী মূসা (আ.)-কে আলাহ পাক এই তারিখে ফেরাউনের কবল থেকে নাজাত দিয়েছিলেন। সুতরাং আমরা আলাহর শুকরিয়া পালনার্থে এই দিন রোযা রাখি। হুযুরে পাক (সা.) বললেন, তোমরা যদি মূসা (আ.)-কে নাজাত প্রদান উপল¶ে রোযা রাখ, তবে আমি তাঁর সাথে বেশী ঘনিষ্ট। কেননা তিনিও নবী আমিও নবী। অতঃপর হুযুর (সা.) আশুরার রোযা রাখা শুর“ করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ তারিখে রোযারাখার হুকুম দিলেন। ইমামুল মুহাদ্দিসীন ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (র.) বলেন, এই হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, যদি বিশেষ কোন তারিখে আলাহর বিশেষ কোন নিয়ামত লাভ করা যায় কিংবা বিশেষ কোন তারিখে আলাহর কোন গযব থেকে নিস্কৃতি লাভ করা যায়, তবে এই তারিখ বছর ঘুরে এলে সারা জীবন এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা মুস্তাহাব। এরপর বিভিন্ন মুহাদ্দিসীনে কেরাম লিখেছেন, ‘হুযুরে পাক (সা.)-এর ইহজগতে তাশরীফ আনা থেকে আর কোন বড় নিয়ামত নেই।’ এতএব রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্ম উপলক্ষে করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য মিলাদ শরীফের মাধ্যমে হুযুরে পাক (সা.)-এর জন্মের শুকরিয়া আদায় করা মুহাদ্দিসীনের মত ও পথ। আমার অনুসন্ধান মতে দেওবন্দের উলামায়ে কেরাম (তবে আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক দেওবন্দী উলামা নন) মিলাদ শরীফকে নিষেধ করেন না। কারণ মিলাদ শরীফে কী পড়া হয়? কুরআন তেলওয়াত করা হয়, হুযুরে পাক (সা.)-এর জন্মবৃত্তাš— বর্ণনা করা হয়, তথা বরযিনজী শরীফ পাঠ করা হয় এবং দাঁড়িয়ে হুযুরে পাকের প্রশংসা সম্বলিত কসীদা পাঠ করা হয়। অতঃপর শিরনী বিতরণ ও দু‘আ করা হয়। এই তো শেষ। এ সম¯— কাজের মধ্যে কোনটাই তো না-জায়েয নয়, হারাম নয়। কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা সর্বোত্তম কাজ। হুযুরে পাকের জন্ম বৃত্তাš— আলোচনা করাও তো বিশেষ সওয়াবের কাজ। কুরআন শরীফে আলাহ পাক অনেক নবী রাসূলের জন্মের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। আদম (আ.) থেকে আরম্ভ করে ঈসা (আ.) পর্যš— বিভিন্ন আম্বিয়ায়ে কিরামের জন্মবৃত্তাš— কি কুরআন শরীফে নেই? নিশ্চিয়ই আছে। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে যে কুরআন শরীফে আমাদের নবীর জন্মবৃত্তাšে—র আলোচনা নেই কেন? তার ইলমী জওয়াব কুরআন শরীফে আছে। আর ইলমী জওয়াব হচ্ছে যে, আমাদেরকে পরী করার জন্য আখেরী নবীর জন্মবৃত্তাš— কুরআন শরীফে আলোচনা করা হয় নি। আমরা হালালী উম্মত হলে তা আলোচনা করবো এবং বয়ান করবো। আমরা নবীর হালালী উম্মত কি না, ওফাদার উম্মত কি না, তা পরী¶া করার জন্য রেখে দেয়া হয়েছে। অতএব যারা নবীর জন্মবৃত্তাš— আলোচনা করেন, তারা নবীর হালালী উম্মত, ওফাদার উম্মত।
হুযুরে পাক (সা.)-এর জীবনের যে কোন অংশ আলোচনা করা সওয়াবের কাজ, তাতে সন্দেহ নেই। সাহাবায়ে কেরামের এ অভ্যাস ছিল। উলেখ্য হাদীস এবং সিয়রের কিতাব সমূহে এমন বহুবিধ বর্ণনা রয়েছে, যে সবের দ্বারা স্পষ্টতঃ জানা যায়, হুযুরে পাক (সা.)-এর জন্মবৃত্তাš— এবং শান ও মান ¯^য়ং তিনি এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম কখনো বা ঘটনাক্রমে আবার কখনো সমাবেশ ডেকে বর্ণনা করেছেন। নমুনা ¯^রূপ কতিপয় বর্ণনা নি¤েœ উদ্ধৃত করা হলোঃ
১. সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত ওয়াসিলা বিন আসক্বা (র.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুলাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আলাহ তায়ালা হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর আওলাদের মধ্য থেকে কুরাইশকে এবং কুরাইশদের মধ্য থেকে বনী হাশিমকে আর বনী হাশিমের মধ্য থেকে আমাকে মনোনীত করেছেন।
২. তিরিমীযি শরীফে হযরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন এবং বললেন বল, বল, আমি কে? সাহাবায়ে কেরাম জবাব দিলেন, আপনি আলাহর রাসূল। তখন হুযুর ইরশাদ ফরমাইলেন, আমি হলাম মুহাম্মদ বিন আব্দুলাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব। আলাহ তায়ালা মাখলুক্বাত পয়দা করে উত্তমদের মধ্যে আমাকে রেখে আবার এদেরকে দু’ভাগ করে আমাকে উত্তম ভাগে রাখলেন, আবার উক্ত ভাগকে বিভিন্ন গোত্র বানিয়ে আমাকে উত্তম গোত্রে রাখলেন। তাই আমি আমার সত্তার দিক থেকেও সবার চেয়ে উত্তম।
৩. ফক্বীহ আবুল লায়েস ‘তাম্বিহুল গাফিলীন’ কিতাবের মধ্যে ¯^ীয় মুত্তাসিল সনদের মাধ্যমে হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, সূরা নসর নাযিল হওয়ার পর বৃহস্পতিবার দিবসে হুযুরে পাক (সা.) বাইরে তাশরীফ আনলেন এবং মিম্বরের উপর উপবেশন করে হযরত বিলাল (রা.)- কে ডেকে বললেন, ‘বিলাল, তুমি মদীনায় এলান করে দাও, আমার উপদেশ শ্রবণ করার জন্য সবাই যেন এসে সমবেত হয়। হযরত বিলাল (রা.)-এর এলান শুনে ছোট-বড় সবাই এসে জড় হলো। হুযুরে পাক (সা.) দাঁড়িয়ে আলাহর হামদ ও ছানা এবং আম্বিয়ায়ে কিরামদের উপর সালাত ও সালামের পর ইরশাদ ফরমান, ‘আমি মুহাম্মদ বিন আব্দুলাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম এবং আমি আরবী, আমি হরমী, আমি মক্কী- আমার পর আর কোন নবী নেই।’
৪. সহীহ বুখারী শরীফে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম (সা.) হযরত হাস্সান বিন সাবিত (রা.)-এর জন্য মসজিদে নববীতে মিম্বর স্থ'াপন করে দিতেন, যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত হাস্সান (রা.) রাসূলুলাহ (সা.)-এর গৌরব গাঁথা এবং শান ও মান বর্ণনা করতেন।
৫. হযরত আবুল খাত্তাব বিন দেহইয়া তাঁর কিতাব ‘আত্তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর’ এর মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি একদিন নিজ বাড়ীতে লোকজনের সম্মুখে রাসূলুলাহ (সা.)-এর জন্ম সময়কার ঘটনাবলী বর্ণনা করেছিলেন এবং লোকজন খুশী হয়ে আলাহ তা’আলার হামদ এবং হুযুরে পাক (সা.)-এর উপর দুর“দ পাঠ করেছিলেন। এমন সময় হুযুরে পাক (সা.) তাশরীফ আনলেন এবং ফরমালেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) অনিবার্য হয়ে গেল।
৬. উক্ত ‘আত তানবীর’ কিতাবেই হযরত আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি রাসূলুলাহ (সা.) এর সঙ্গে হযরত আমীর আনসারীর ঘরে গেলেন। এ সময় হযরত আমীর আনসারী তাঁর পরিবার পরিজন এবং গোত্রীয় লোকজনকে সমবেত করে হুযুরে পাক (সা.) এর জন্ম সময়কার ঘটনা বর্ণনা করছিলেন আর বলছিলেন ‘আজ সেই দিন।’ তখন হুযুর পাক (সা.) ইরশাদ ফরমান, ‘আলাহ তা’আলা তোমাদের জন্য রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবংফিরিশতারা তোমাদের জন্য ই¯ে—গফার করেছেন, আর যে ব্যক্তি তোমাদের অনুরূপ কাজ করবে, নাজাত পাবে।
৭. শামায়েল তিরমীযী কিতাবে হযরত খাদিজা বিনতে যায়িদ হতে বর্ণিত আছে যে, তাবিয়ীন এর এক জামাত হযরত যায়েদ বিন সাবিত (রা.) এর খেদমতে এসে আরজ করলেন, আমাদেরকে হুযুর পাক (সা.) সম্পর্কে কিছু বর্ণনা কর“ন। হযরত যায়িদ (রা.) বলেন, কি বর্ণনা করব, তিনি তো সকল বর্ণনা ¶মতার উর্ধ্বে অতঃপর কিছু বর্ণনা পেশ করেন।
হাদীস, সিয়ার এবং ইতিহাস গ্রন্থসমূহের মধ্যে এ ধরনের অনেক বর্ণনা রয়েছে, যে সবের দ্বারা জানা যায়, হুযুরে পাক (সা.)-এর জন্মবৃত্তাš—, শান ও মানের আলোচনা ভালো ও পছন্দনীয় কাজ, যা হুযুরে পাক (সা.) এর ¯^ীয় বাণী ও আমল এবং সাহাবা তাবীঈনদের আমল দ্বারা প্রমাণিত এবং এও জানা যায় যে, লোকজনের সমাবেশে হুযুরের জন্ম সময়কার ঘটনাবলী এবং মান ও শান বর্ণনা করার প্রচলন তখনো ছিল। উক্ত আলোচনার জন্য দাওয়াত যিয়ারত, শিরণী বিতরণ এবং নানা ধরনের সদক্বা খয়রাতের প্রচলনের উপর কুরূনে ছালাছার (উত্তম তিন যুগ) পর উলামা-মাশায়েখ নেক ইরাদার ভিত্তিতে গুর“ত্বারোপ করেন। এসব কাজ মূলতঃ মুবাহ এবং ভালো। এসবের বৈধ এবং ভালো হওয়ার ¶েত্রে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
নি¤œ উল্লেখিত উলামা-মুহাদ্দিসগণের ফতোয়া ও বাণী সমূহের দ্বারা এ কথা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
কুরূনে ছালাছার পর মিলাদ শরীফ
ইতিহাস এবং সীরাতের কিতাবাদিতে উলেখ রয়েছে, হিজরী সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে সর্বপ্রথম মাওসিল শহরে এক বুযুর্গ হযরত শায়িখ উমর বিন মুহাম্মদ মিলাদ শরীফের জন্য মাহফিলের ব্যবস্থাপনার সূচনা করেন এবং তাঁরই অনুসরণে ইরবলেরবাদশাহ ‘মালিক মুজাফ্ফার আবূ সাঈদ’ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। যেমন ইমাম নববীর উ¯—াদ হাফিযে হাদীস শিহাব উদ্দিন বিন ইসমাঈল আবূ শামা তাঁর কিতাব আল-বায়িসূ ফী ইনকারিল বাদয়ে ওয়াল হাওয়াদিস’-এর মধ্যে উলেখ করেন। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম যিনি মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন, তিনি হচ্ছেন মাওছিলের একজন প্রখ্যাত বুযুর্গ ও মহাপন্ডিত শায়িখ উমর বিন মুহাম্মদ এবং তাঁরই অনুসরণ করে ইরবলের বাদশাহও মাহফিলে মিলাদের আয়োজন করতেন।
বাদশাহর উক্ত মিলাদের মাহফিলে সে যামানার উলামা-মাশায়েখ নির্দ্বিধায় শরীক হতেন। যেমন- ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (র.) ‘হুসনুল মাকসিদ ফী আমালীল মাওলিদ’ কিতাবে লিখেন, বাদশাহের এ মাহফিলে উলামা মাশায়েখ নিঃসংকোচে উপস্থিত হতেন।
ইরবলের বাদশাহ অনেক গুর“ত্ব সহকারে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করতেন। এতে উলামা মাশায়েখ এবং আম মুসলিম জন সাধারণের মহাসমাগম হত, যার ফলে এ মাহফিলের খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ কারণে কোন কোন কিতাবের মধ্যে উক্ত বাদশাহকেই মিলাদ মাহফিলের প্রথম আয়োজনকারী সাব্যস্থ করা হয়েছে। যেমন- ইমাম সুয়ূতী (র.) লিখেন, প্রথম যিনি মিলাদ মাহফিলের উদ্ভাবন করেন, তিনি হচ্ছেন ইরবলের অধিপতি আল মালিকুল মুজাফ্ফার আবু সাঈদ কাওকাবারী বিন যয়নুদ্দীন আলী বিন বুকতেগীন, যিনি ছিলেন উচ্চ মর্যাদা ও মহত্তে¡র অধিকারী, দানশীল বাদশাহগণের মধ্যে অন্যতম। তাঁর অনেক উত্তম স্মৃতি রয়েছে। তিনিই ‘জামে মুজাফ্ফরী’ নির্মাণ করেছিলেন।
আলামা মুহাম্মদ বিন ইউসুফ তাঁর কিতাব (সীরাতে শামীয়াহ)-এর মধ্যে উলেখ করেছেন, সর্বপ্রথম যিনি মিলাদ মাহফিলের উদ্ভাবন করেন, তিনি হচ্ছেন ইরবলের অধিপতি আল মালিকুল মুজাফ্ফর আবূ সাঈদ কাওকাবারী।
ইবনুল জওযীর কিতাব ‘মিরআতুয্ যামান যাওলে ওয়াফিয়াতুল আয়ান’ আলামা নুরুদ্দীন হালাবীর ‘সীরাতে হালাবিয়াহ’ শায়খ আহমদ জয়নী দাহলানের সীরাতে নাবাবীয়াহ প্রভৃতি কিতাবের মধ্যেও অনুরূপ উলেখ রয়েছে।
৬০৪ হিজরীতে হাফিযে হাদীস শায়িখ আব্দুল খাত্তাব বিন দেহইয়া আন্দুলুসী সিরিয়া ও ইরাক ভ্রমণ করে যখন ইরবল পৌছলেন তিনি দেখতে পেলেন, তথাকার বাদশাহ প্রতি বছর মহাসমারোহে মিলাদ শরীফের আয়োজন করে থাকেন। তিনি এ মাহফিলে পড়ার জন্য হুযুরে পাক (সা.)-এর জন্ম সময়কার ঘটনা সম্বলিত রিওয়াত সমূহ সংকলন করে একখানা কিতাব রচনা করেছিলেন। তাঁর এ কিতাবের নাম হচ্ছে, ‘আত-তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর।’ ইমাম ইমাদ উদ্দিন ইবনে কাসির (রহ.) তাঁর ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে লিখেন, ইরবলের বাদশাহ রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদ শরীফের মাহফিল করতেন। মাহফিলটি অত্যš— জাকজমকের সহিত মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হতো। তিনি ছিলেন একজন ত্যেজোদীপ্ত সাহসী বীর, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানী ও ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। আলাহ তাঁর উপর কর“ণা বর্ষণ কর“ন এবং আখেরাতের সম্মানিত আসনে আসীন কর“ন। শায়িখ আব্দুল খাত্তাব বিন দেহ্ইয়া তাঁর জন্য মিলাদে নববী সম্পর্কে একখানা গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার নাম ‘আত্ তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর।’ এর জন্য বাদশাহ তাকে এক হাজার ¯^র্ণমুদ্রা উপহার দেন। তাঁর রাজত্ব দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়। অবশেষে ৬৩০ হিজরী সনে ‘উকা’ নামক নগরে ইংরেজ কর্তৃক নযরবন্দী অবস্থায় চারিত্রিক এবং আত্মিক দিক থেকে প্রশংসিত এই ব্যক্তিত্ব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
‘তারীখে ইবনে খালিকান’-এ উলেখ রয়েছে- হাফিযে হাদীস আবুল খাত্তাব (র.) ছিলেন শীর্ষস্থানীয় উলামা ও প্রখ্যাত মহামনীষীগণের অন্যতম। তিনি মরক্কো থেকে আগমন করে সিরিয়া ও ইরাক হয়ে ৬০৪ হিজরীতে যখন ইরবল পৌছলেন, তখন সেখানকার বাদশাহ মুজাফ্ফার উদ্দীন বিন যয়নুদ্দীনকে অত্যš— শানদার রূপে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করতে দেখে ‘আত্ তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর নামে একখানা গ্রন্থ রচনা করে দেন।
অতঃপর সব মুসলিম দেশেরই অধিকাংশ উলামা ও মুসলমানদের মধ্যে এ মিলাদ মাহফিলের ব্যাপক প্রচলন শুর“ হয়ে যায়। যেমন ‘সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ’ গ্রন্থের প্রণেতা ইমাম সাখাভীর ফাতাওয়া থেকে উদ্ধৃতি এনেছেন, বলা হয়েছে যে, এরপর থেকে মুসলিম জাহানের দিকে দিকে বড় বড় শহরে নগরে ব্যাপকভাবে হুযুরে পাক (সা.)-এর জন্ম মাসে মুসলমানগণ মিলাদ অনুষ্ঠান করে আসছেন। এ সময়কালে অপূর্ব ধরনের খাবার পরিবেশন নহ নানাবিধ ছদক্বা খয়রাত করেন। আনন্দ ও উলাশ প্রকাশ করতে গিয়ে খুবই মুক্তহ¯ে— দান করেন এবং অত্যš— গুর“ত্ব ও মনোযোগের সহিত মিলাদ শরীফ পাঠ করেন।
অনুরূপভাবে মুলা আলী ক্বারী মিশরী (র.) তাঁর কিতাবে লিখেন যে, সে যামানার মুহাদ্দিসীন ও উলামা এ পূণ্য কাজকে অত্যধিক পছন্দ করেন এবং কাজটি মু¯—াহাব ও ভাল হওয়ার দলীল আহাদীসে নববী থেকে বের করেন।
বিশ্বের যে সকল মুহাদ্দিসীনে কেরাম দলীল প্রমান পেশ করে বর্তমান প্রচলিত মিলাদ শরীফ মু¯—াহাব হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত করেছেন এবং আমল করেছেন তাঁদের নাম ও লিখিত কিতাবের নাম নি¤েœ প্রদত্ত হলঃ
১. হাফিযে হাদীস শিহাব উদ্দিন আবূ মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বিন ইসমাঈল (র.)
কিতাবঃ আল্ বাইস আলা ইনকারিল বিদআ’ ওয়াল হাওয়াদিস।
২. হাফিযে হাদীস ইবনে হাজার আসকালানী (র.)
কিতাবঃ আল হাওয়ী লিল ফাতাওয়া লিস সুয়ূতী
৩. হাফিযে হাদীস শামসুদ্দীন বিন জাযরী (র.)
কিতাবঃ আরফুত তা’রীফ বিল মাওলিদিশ শরীফ
৪. হাফিযে হাদীস আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী (র.)
কিতাবঃ আল মাওলিদুশ শরীফ লি ইবনিল জাওযী
৫. ইমাম ওলী উদ্দীন আবূ জারআ ইরাকী (র.)
কিতাবঃ আল মাওলিদুল কবীর লি ইবনিল হাজার
৬. হাফিযে হাদীস যয়নুদ্দীন ইরাকী (র.)
কিতাবঃ আল মাওলিদুল হানী
৭. হাফিযে হাদীস আবুল খয়ের সাখাবী (র.)
কিতাবঃ আল মাওলিদুল রাবী ফী মাওলিদিন নবী লি মুল আলী কারী
৮. ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী (র.)
কিতাবঃ হুসনুল মাকসাদ ফী ’আমালিল মাওলিদ লিস্ সুয়ূতী
৯. শায়খ ছদর“দ্দীন মাওহুর বিন ওমর জযরী (র.)
কিতাবঃ আস সীরাতুশ শামিয়াহ
১০. আলামা ইবনে হাজার হায়তামী (র.)
কিতাবঃ ফাতহুল মুবীন লি শাহরিল আরবাঈন
১১. ইমাম কসত্বলানী (র.)
কিতাবঃ মাওয়াহিবে লেদুন্নিয়া ১ম খন্ড
১২. আলামা মুহাম্মদ আব্দুল বাকী যুরকানী (র.)
কিতাবঃ শরহে যুরকানী আলাল মাওয়াহিব
১৩. মুলা আলী কারী (র.)
কিতাবঃ আল মাওলিদুর রবী ফী মাওলিদিন নবী
প্রচলিত মিলাদ শরীফ সমর্থনকারী ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলিমগণের নাম ও কিতাবের নামঃ
১. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.)
কিতাবঃ মা সাবাতা বিস্ সুন্নাহ
২. মুজাদ্দিদে আলফে সানী (র.)
কিতাবঃ মকতুবাতে ইমাম রব্বানী ৩য় খন্ড, মকতুব নং ৭২
৩. হযরত শাহ আব্দুর রহীম দেহলভী (র.)
কিতাবঃ আদ্দুরর“স সামীন ফী মুবাশ শারাতিন নাবীয়্যিল আমীন
৪. শাহ ওয়ালিউলাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.)
কিতাবঃ ফুয়ূযুল হারামাইন
৫. শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.)
কিতাবঃ আদ দুরর“ল মুনায্যাম লিশ শাহ আব্দুল হক এলাহাবাদী
৬. শাহ মুহাম্মদ ইসহাক মুহাদ্দিসে দেহলভী
কিতাবঃ মিআতে মাসাইল মাসআলাহ নং ১৫
৭. শাহ আব্দুল গণী মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.)
কিতাবঃ আদ্ দুরর“ল মুনায্যাম
৮. হযরত মাওলানা ফজলুর রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদী
কিতাবঃ রিসালায়ে আসরারে মহব্বত
৯. সৈয়দ আহমদ শহীদ দেহলভী (র.)
কিতাবঃ আখযানে আহমদী
১০. হযরত ইসমাঈল শহীদ দেহলভী (র.)
কিতাবঃ আল কাওলুল মাকবুল ফী মীলাদির রাসূল (সা.)
১১. মাওলানা সালামত উলাহ কানপুরী (র.)
কিতাবঃ ইশবাউল কালাম ফী ইসবাতিল মাওলিদে ওয়াল কিয়াম
১২. মুফতী এনায়েত আহমদ (র.)
কিতাবঃ তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ
১৩. মাওলানা হাসান আলী মুহাদ্দিসে লকনবী (র.)
কিতাবঃ আদ্দুরর“ল মুনায্যাম
১৪. হযরত শাহ কারামত আল জৌনপুরী (র.)
কিতাবঃ আল মুলাখ্খাস
১৫. মাওলানা মুফতী সাদুলাহ মুরাদাবাদী (র.)
কিতাবঃ ফাতাওয়ায়ে সিন্ধীয়াহ
১৬. হাজী ইমাদাদুলাহ মুহাজিরে মক্কী (র.)
কিতাবঃ ফয়সালায়ে হাফ্ত মাসআলাহ
১৭. মাওলানা আব্দুল হাই লকনবী (র.)
কিতাবঃ মজমুআয়ে ফাতওয়া
১৮. মাওলানা কাশেম নানুতবী (র.)
ছাত্র যামানায় আমার মনে সন্দেহ হত যে, দেওবন্দের আকাবিরীন কেন মিলাদ শরীফকে না-জায়েয বলেন? আমি আমাদের উ¯—াদ সাহেবগণের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, দেওবন্দ ইউ-পিতে মিলাদ শরীফের মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। কিছু কাছিদা পাঠ করে কাওয়ালী আরম্ভ হয়। তখন যুবক ছেলেরা ও যুবতী মেয়েরা তবলা বাজায় এবং গায়ক গান গায়। গানের সুরের সাথে ঐ ছেলে মেয়েরা হেলে দুলে বাজনা বাজিয়ে তাল মিলায়। এ ধরনের আচরণকে আমরাও তো না-জায়েয বলি। দেওবন্দের আকাবিরীনে কেরাম ঐ সম¯— অনুষ্ঠানকে না-জায়েয বলেছেন। আর আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক আলিম দেওবন্দীরা তাঁদের ঐ নিষেধ শুনে এখানে এসেও মুবারক মিলাদ অনুষ্ঠানকে নিষেধ করে দিলেন। এখানে যে ঐ সকল গর্হিত আচরণ করা হয় না, তা মিলিয়েও দেখলেন না, প্রয়োজনও মনে করলেন না। জুমআর ব্যাপারেও ঠিক তা। আকাবিরীনে দেওবন্দ ইউপির গ্রামে জুমআ জায়েয নয় বলে ফতওয়া দিয়েছেন। আর সত্যই সে সকল গ্রামে জুমআ’ জায়েয হবার নয়। আর তা শুনে আমাদের দেশের দেওবন্দী কিছু আলিম এখানেও জুমআ’ আদায় করা বন্ধ করে দিলেন। আলাহর শুকরিয়া রেফারেন্ডামের সময় হযরত মদনী (র.) আমাদের দেশে তাশরীফ আনলেন। আমাদের উ¯—াদ মুহতারামদের থেকে শুনেছি যে, মদনী সাহেব বিয়ানীবাজারের কাকুরাতে জুমআ’ আদায় করেছেন। সিলেটের জকিগঞ্জের কামালপুরেও জুমআ আদায় করেছেন।
প্রশ্ন করা হয়েছে, হযরত কি এখানে জুমআর নামায পড়ছেন? এটা কি গ্রাম নয়? তিনি উত্তরে বলছেন, আপনারা আপনাদের পরিভাষায় এটাকে গ্রাম বা অন্য যা কিছু বলেন না কেন, এখানে জুমআ’র নামায পড়া ফরয। আমাদের এখানকার গ্রামে গ্রামে মদনী সাহেবের ঘুরা ফেরার সময় জুমআ’ আদায়ের কারণে আমাদের দেশের দেওবন্দীদের ভুল ভাঙল। তারা বুঝতে সক্ষম হলেন, আমাদের দেশের গ্রামে গ্রামে জুমআ’ আদায় করা ফরয। ইউপির গ্রাম সমূহে জায়েয নয়।