আআল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَعَلَّمَ ادَمَالْاَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ
এবং আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত কিছুর নাম শিখিয়ে দিলেন । অতঃপর সে সমস্ত বস্তু ফিরিশতাদের কাছে উপস্থাপন করলেন ।
তাফসীরে মাদারেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ
وَمَعْنَى تَعْلِيْمِه اَسْمَاءِ الْمُسَمِّيَاتِ انَّهُ تَعَالَى اَرَاهُ الاَجْنَاسَ الَّتِىْ خَلَقَهَا وَعَلَّمَهُ اَنَّ هذَا اِسْمُه‘ فَرَسٌ وَهذَا اِسْمُه‘ بَعِيْرٌ وَهذَا اِسْمُهَ كَذَا وَعَنْ اِبْنِ عَبَّسٍ عَلَّمَهُ اِسْمَ كُلِّ شَئْىٍ حَتّ الْقَصْعَةَ وَالْمَغْرَ فَةَ
হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত বস্তুর নাম শিক্ষা দেয়ার অর্থ হচ্ছে-আল্লাহ তাআলা তাঁকে তাঁর সৃষ্ট সব কিছু দেখিয়েছেন এবং বলে দিয়েছিন যে এটার নাম ঘোড়া ঐটার নাম উট এবং ওটার নাম অমুক । হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে তাঁকে প্রত্যেক কিছুর নাম, শিখিয়ে দিয়েছেন এমন কি পেয়ালা ও কাঠের চামচের নাম পর্যন্ত ।
তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় একই কথা বলা হয়েছে তবে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হয়েছে যে-
وَقِيْلَ عَلَّمَ ادَمَ اَسْمَاءَ الْمَلَئِكَةِ وَقِيْلَ اَسْمَاءَ ذُرِّيَّتِه وَقِيْلَ عَلَمَّهُ اللَّغَاتَ كُلَّهُا
কারো মতে আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত ফিরিশতাদের নাম কারো মতে তার সন্তান সন্ততিদের নাম আবার কারো মতে সমস্ত ভাষা শিখানো হয়েছিল
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে কবীরে লিখা হয়েছেঃ-
قَوْلُه اَىْ عَلَّمَهُ صفَاتَ الْاَشْيَاءِ وَنَعُوْ تَهَا وَهُوَ الْمَشْهُوْرُ اَنَّ الْمُرَالدَ اَسْمَاءُ كُلِّشَئْىِ مِنْ خَلْفٍ مِنْ اَجْنَاسِ الْمُحَدَثَاتِ مِنْ جَمِيْعِ اللُّغَاتِ الْمُخْتَلِفَةِ الَّتِىْ يَتَكَلَّمُ بِهَا وَلَدُ ادَمَ الْيَوْمَ مِنَ الْعَرَبِيَّةِ وَالْفَارِسِيَّةِ وَالرُّوْ مِيَّةِ وَغَيْرِهَا
আদম (আলাইহিস সালাম) কে সমস্ত বস্তুর বৈশিষ্ট্য ও অবস্থাদি শিক্ষা দিয়েছেন । এ কথাই প্রসিদ্ধ লাভ করেছে যে সৃষ্টবস্তু দ্বারা বোঝানো হয়েছে অচিরন্তন প্রত্যেক বস্তুর নাম সমূহ যেগুলো বিভিন্ন ভাষায় প্রচলিত হবে ও যে নামগুলো আজ পর্যন্ত আদম সন্তান সন্ততিগণ আরবী ফার্সী রুমী ইত্যাদি ভাষায় ব্যবহার করে আসছে ।
তাফসীরে আবুস সাউদে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছেঃ
وَفِيْلَ اَسْمَاءَ مَاكَانَ وَمَا يَكُوْنُ وُقِيْلَ اَسْمَاءِ خَلْقِه مِنَ الْمَعْقُوْ لاَتِ وَالْمَحْسُوْسَاتِ وَالْمُتَخَيَّلَاتِ وَالمَوْهُوْ مَاتِ وَالْهَمَهُ مَعْرَفَةَ ذَوَاتِ الْاَشْيَاءِ وَاَسْمَءَ هَاخَوَ الصَهَا وَمَعَارِ فَهَا اُصُوْلَ الْعِلْمِ وَقَوَانِيْنَ الصَّنْعَاتِ وَتَفَاصِيْلَ لْاَتِهَا وَكُيْفِيَةَ اِسْتِعْمَالَاتِهَ
কারো মতে আদম (আলাইহিস সালাম) কে অতীত ও ভবিষ্যতের সমস্ত বিষয়ের নাম শিখিয়েছিলেন। ইন্দ্রিয়াতীত ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য কাল্পনিক ও খেয়ালী সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছিলেন সব কিছুর সত্ত্বা নাম বৈশিষ্ট্য পরিচিতি জ্ঞান বা বিদ্যার নিয়মাবলী পেশা ও কারিগরী নীতিমালা এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও সাজসর ক্রোমের বিস্তারিত বর্ণনা ও সেগুলোর ব্যবহার প্রণালী আদম (আলাইহিস সালাম) কে অবহিত করেছিলেন।
তাফসীরে রুহুল বয়ানে আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ-
وَعَلَّمَه‘ اَحْوَالَهَا وَمَا يَتَعَلَّقَ بِهَا مِنَالْمَنَافِعِ الدِّيْنِيَّهِ وَالدُّنْيَوِيَّةِ وَعَلَّمَ اَسْمَاءَ الْمَلَا ئِكَةِ وَاَسْمَاءِ ذُرِّيَّتِهِ وَاَسْمَاءَ الْحَيْوَانَاتِ وَالْجَمَادَاتِ وَصَنْعَةَ كُلِّ شَئْىٍ وَاَسْمَاءَ الْمُدْنِ وَالْقُرَى وَاَسْمَاءَ الطَّيْرِ وَالشَّجَرِ وَمَا يَكُوْنُ وَاَسْمَاَءِ كُلِّ شَئْىٍ يَخْلُقُهَا اِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَاَسْمَاءَ الْمَطْعُوْ مَاتِوَالْمَشْرُوْبَاتِ وَكُلِّ نَعِيْمِ فِى الْجَنَّةِ وَاَسْمَاءَ كُلِّ شَيْئٍ وَفِى الْخَبْرِ عَلَّمَهُ سَبْعَ مِاَئةِ اَلْفِ لُغَاتٍ
হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) সমস্ত জিনিসের অবস্থাদি শিখিয়েছেন এবং এগুলোর অন্তর্নিহিত ধর্মীয়-পার্থিব উপকারিতার কথা বলে দিয়েছেন। তাকে ফিরিশতাদের নাম তার বংশধর জীব জন্তু ও প্রাণীবাচক বস্তু সমূহের নাম শিক্ষা দিয়েছেন প্রত্যেক জিনিস তৈরী করার পদ্ধতি সমস্ত শহর ও গ্রামের নাম সমস্ত পাখী বৃক্ষ রাজির নাম যা হয়েছে এবং যা হবে সবকিছুর নাম কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছুসৃষ্টি হবে সবকিছুর নাম যাবতীয় আহর্য দ্রব্য সামগ্রীর নাম বেহেশতের প্রত্যেক নিয়ামতের নাম মোট কথা প্রত্যেক কিছুর নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন । হাদীছ শরীফে আছে যে আদম (আলাইহিস সালাম) কে সাত লাখ ভাষা শিখিয়েছেন ।
উপরোক্ত তাফসীর সমূহ থেকে এতটুকু বোঝা গেল যে যা কিছু হয়েছে ও যা কিছু হবে সমস্ত কিছুর সম্পূর্ণ জ্ঞান হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে দান করা হয়েছে। তাকে বিভিন্ন ভাষাজ্ঞান দান করেছেন বিভিন্ন জিনিসের উপকারিতা ও অপকারিতা তৈরী করার পদ্ধতি যন্ত্রপাতির ব্যবহার সবকিছু দেখিয়ে দিয়েছেন । এখন আমাদের আকা মওলা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞান ভাণ্ডার দেখুন। সত্যি কথা এই যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর এ ব্যাপক জ্ঞান নবী করিম আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমুদ্রের এক ফোটা তুল্য বা ময়দানের এক কণা সদৃশ। শাইখ ইবনে আরবী তদ্বীয় ফুতুহাতে মক্কীয়া গ্রন্থে দশম অধ্যায়ে বলেছেনঃ-
اَوَّلُ نَائِبٍ كَانَ لَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلِيْفَتُهَ اَدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ
অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালামের প্রথম খলীফা ও প্রতিনিধি হলেন হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) ।
এতে বোঝা গেল যে, হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) হলেন হুযুর আলাইহিস সালামের খলীফা । খলীফা হচ্ছেন তিনিই, যিনি আসমান বা প্রকৃত মালিকের অনুপস্থিতিতে তাঁর স্থলাভিশিক্ত হয়ে কাজ করেন। হুযুর আলাইহিস সালামের জন্মের আগেকার সমস্ত নবী (আলাইহিস সালাম) তারই প্রতিনিধি ছিলেন । এ কথাটি মৌলভী কাসেম ছাহেরও তদীয় তাহজীরুন নাস গ্রন্থে লিখেছেন যার বর্ণনা পরে করা হবে । এ হলো প্রতিনিধির ব্যাপক জ্ঞানের অবস্থা ।
কাযী আয়ায (রহমতুল্লাহে আলাইহে) এর শেফা শরীফ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ নসিমুর রিয়ায এ উল্লেখিত আছেঃ-
اِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَرْضَتْ عَلَيْهِ الْخلَائِقُ مِنْ لَّدْنِ اَدَمَ اِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ فَعَرَفَهُمْ كُلُّهُمْ كَمَا عَلَّمَ اَدَمَ الْاَلسْمَاءَ كُلَّهَا
অর্থাৎ হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে আরম্ভ করে রোজ কিয়ামত পর্যন্ত তার বংশজাত আওলাদকে হুযুর আলাইহিস সালামের সম্মুখে উপস্থাপিত করা হয়েছিল। তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদের সবাইকে চিনেছিলেন যেমনিভাবে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে সবকিছুর নাম শিখানো হয়েছিল।
এ ভাষ্য থেকে বোঝা গেল যে হুযুর (আলাইহিস সালাম) সবাইকে জানেন সকলকে চিনেন ।
মুহাম্মাদ (সঃ) এর এলমে গায়েবের প্রমাণ - কোরআনের আলোকে 2
وَيَكُوْنَ لرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا
এ রসুল তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সাক্ষী হবেন ।
এ আয়াতটির ব্যাখ্যায় তাফসীরে আযীযীতে লিখা হয়েছে-
হুযুর (আলাইহিস সালাম) স্বীয় নবুয়তের আলোকে প্রত্যেক ধর্ম পরায়ণ ব্যাক্তির ধর্মের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন । কোন ব্যক্তি ধর্মের কোন স্তরে পৌছেছেন তার ঈমানের হাকীকত কি এবং তার পরলৌকিক উন্নতির পথে অন্তরায় কি এসব কিছুই তিনি জানেন। সুতরাং হুযুর (আলাইহিস সালাম) তোমাদের বিশুদ্ধ চিত্ততা ও কপটতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল । এ জন্যই তো পৃথিবীতে উম্মতের পক্ষে বা বিপক্ষে তার সাক্ষ্য শরীয়তের বিধানমতে গ্রহণীয় এবং অবশ্যই পালনীয় ।
তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ-
هَذَا مَبْنِىّ عَلَى تَضْمِيْنِ الشَّهِيْدِ مَعْنَى الرَّقِيْبِ وَالْمُطَلِّعِ وَالْوَجْهُ فِىْ اِعْتِبَارِ تَضْمِيْنِ الشَّهِيْدِ الْاِشَارَةُ اِلَى اَنَّ التَّعْدِيْلَ وَالتَّزْكِيَّةَ اِنَّمَا يَكُوْنُ عَنْ خُبْرَةِ وَمَرَاقَبَةٍ بِحَالِ الشَّاهِدِ وَمَعْنَى شَهَادَةِ الرَّسُوْلِ عَلَيْهِمْ اِطَّلَاعُهَ رُتَبَةَ كُلَّ مُتَدَينٍ بَدِيْنِه فَهُوَ يضعْرِفُ دَنَوْبَهُمْ وَحَقِيْقَةَ اِيْمَانِهِمْوَاَعْمَالِهُمْ وَحَسَنَاتِهمْ وَسَيْئَاتِهِمْ وَاِخْلَاصِهُمْ وَنِفَاقِهُمْ وَغَيْرِ ذَالِكَ بِنُوْرِالْحَقِّ وَاُمَّتُهَ يَعْرِفُوْنَ ذَالِكَ مِنْ سَائِرِ الْاُمَمِ بِنُوْرِه عَلَيْهِ السَّلَامُ
অর্থাৎ এটা এ কারণেই যে আয়াতে উল্লেখিত شهيد শব্দটি রক্ষণাবেক্ষণাকারী ও ওয়াকিফহাল কথাটাও অন্তর্ভুক্ত করে এবং এ অর্থ দ্বারা একথারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে কোন ব্যক্তির যথার্থতা ও দূষণীয় সাক্ষ্য প্রদান তখনই সম্ভবপর হবে, যখনই সাক্ষী উক্ত ব্যক্তির যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে সম্যকরূপে ওয়াকিফহাল হয়। হুযুর আলাহিস সালামের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তিনি প্রত্যেক ধর্মপরায়ণ ব্যক্তির ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত। সুতরাং বোঝা যায় যে হুযুর (আলাইহিস সালাম) মুসলমাদের গুনাহ সমূহ তাদের ইসলামের হাকীকত, তাদের ভালমন্দ কার্যাবলী তাদের আন্তরিকতা ও কপটতা ইত্যাদিকে সত্যের আলোর বদৌলতে অবলোকন করেন । হুযুর (আলাইহিস সালাম) এর নিকট ও তার নুরের ওসীলায় অন্যাণ্য সমস্ত উম্মতের অবস্থা ও কিয়ামতেন ময়দানে সস্পর্ণরূপে উদ্ভাসিত হবে।
তাফসীরে খাযেনে এ আয়াতেন ব্যাখায় লিখা হয়েছে
ثُمَّ يُؤْتَى بِمُحَمَّدٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَيُسْئَلُهُ عَنْ حَالِ اُمَّتِه فَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَشْهَدُ بِصِدْقِهِمْ
অতঃপর কিয়ামতের দিন হুযুর আলাইহিস সালামকে আহবান করা হবে। এর পর আল্লাহ তাআলা তাকে তার উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। তখন তিনি তাদের পবিত্রতা ও সত্যতার সাক্ষ্য দিবেন
তাফসীরে মাদারেকে ২য় পারার সূরায়ে বাকারার এ আয়াতের তাফসীরে লিখা হইয়াছেঃ-
فَيُؤْتَى بِمُحَمَّدٍ فَيُسْئَلُ عَنْ حَالِ اُمَّتِه فَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَشْهَدُ بِعَدَ الَتِهِمْ وَيُزَ كِّيْهِمْ وَيَعْلَمُبِعَدَا لَتِكُمْ
অর্থাৎ অতঃপর হুযুর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) আহবান করা হবে তার উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তখন তিনি স্বীয় উম্মতের সাফাই বর্ণনা করবেন এবং তাদের ন্যায় পরায়ণ ও যথার্থ হওয়া সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবেন। সুতরাং হুযুর আলাইহিস সালাম আপনাদের যথার্থতা সম্পর্কে অবগত আছেন ।
এ আয়াত ও তাফসীর সমূহে এটাই বলা হয়েছে যে কিয়ামতের দিন অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরামের (আলাইহিস সালাম) উম্মতগণ আল্লাহর দরবারে আরয করবে হে আল্লাহ! আমাদের কাছে তোমার কোন নবী আগমন করেননি। পক্ষান্তরে ঐ সমস্ত উম্মতের নবীগণ আরয করবেনঃ হে খোদা আমরা তাদের কাছে গিয়েছি তোমার নির্দেশাবলী তাদের কাছে পৌঁছিয়েছি কিন্তু তারা গ্রহণ করেনি । আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নবীগণকে বলা হবে যেহেতু তোমরা বাদী সেহেতু তোমাদের দাবীর সমর্থনে কোন সাক্ষী উপস্থাপন কর । তারা তখন তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে হুযুর (আলাইহিস সালামের উম্মতকে পেশ করবেন। তারা সাক্ষ্য দেবেন হে আল্লাহ । তোমার নবীগণ সত্যবাদী তারা তোমার নির্দেশাবলী স্ব স্ব উম্মতের কাছে পৌছিয়েছিলেন ।
এখানে দুটি বিষয়ের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা দরকারঃ
প্রথমতঃ
মুসলমানগণ সাক্ষ্য দেয়ার উপযুক্ত কিনা। (ফাসিক, ফাজির ও কাফিরদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। একমাত্র পরহেযগার মুসলমানদের সাক্ষ্যই গ্রহণযোগ্য।)
দ্বিতীয়তঃ
এ সমস্ত লোকগণ তাদের পূর্বেকার নবীগণের জামানা দেখেননি । তবুও তারা কিভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন । মুসলমানরা আরয করবেন ‘হে খোদা! আমাদেরকে তোমার হাবীব মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, আগেকার নবীগণ ধর্ম প্রচার করেছিলেন। এটা শুনেই আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। তখন হুযুর আলাইহিস সালামকে আহবান করা হবে ।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) দুটি বিষয়ের সাক্ষ্য দিবেন। একটি হলো এ সমস্ত লোকগণ এমন পাপিষ্ট বা কাফির নয় যে তাঁতের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তাঁরা পরহেযগার মুসলমান। অন্যটি হলো তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলবেন-হ্যাঁ, আমিই তাদেরকে বলেছিলাম যে আগেকার নবীগণ নিজ নিজ উম্মতের কাছে খোদার ফরমান পৌঁছিয়েছিলেন । অতঃপর ঐ সব নবীগণের পক্ষে রায় দেয়া হবে ।
এ বর্ণনা থেকে নিম্নোল্লেখিত কয়েকটি বিষয় জানা গেলঃ
একঃ
হুযুর আলাইহিস সালাম কিয়ামত পর্যন্ত ভূ-পৃষ্ঠে আগমণকারী মুসলমানদের ঈমান, আমল, রোযা, নামায ও নিয়ত সম্পর্কে সম্যকরূপে অবগত । নচেৎ তাদের সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়া কিভাবে সম্ভব? কোন মুসলমানের অবস্থা তার দৃষ্টি বহির্ভূত হতেই পারে না । হযরত নূহ (আলাইহিস সালাম) তাঁর কওমের ভবিষ্যৎ বংশধরদের অবস্থা জেনে আবেদন করেছিলেন- হে খোদা! এদের বংশোদ্ভূত লোকগণও পাপিষ্ট ও কাফির হবে । সুতরাং, তুমি তাদেরকে ডুবিয়ে দাও। হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) যে শিশুটিকে হত্যা করেছিলেন, তার ভবিষ্যৎ অবস্থা সম্পর্কে অবগতি লাভ করে বুঝতে পেরে ছিলেন যে, যদি সে জীবিত থাকে তবে আবাধ্য হবে তাহলে হুযুর আলাইহিস সালামের কাছে কারো অবস্থা কিভাবে গোপন থাকতে পারে?
দুইঃ
পূর্ববর্তী নবীগণ ও তাঁদের উম্মতগনের অবস্থা হুযুর আলাইহিস সালাম নূরে নবুয়তের বদৌলতে অবলোকন করেছিলেন এবং তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে সাল্লাম) সাক্ষ্যটা ছিল একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য। যদি তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সাক্ষ্য শ্রুত বিষয়ের সাক্ষ্য হতো, তাহলে এ ধরনের সাক্ষ্য মুসলমানরা তো আগেই দিয়েছে । শ্রুত বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের সর্বশেষ পর্যায়ে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেয়া হয় ।
তিনঃ
এ থেকে আরও বোঝা গেল যে, আল্লাহ তাআলা-নবী যে সত্যবাদী, তা জানা সত্ত্বেও সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে রায় দেন অনুরুপ যদি হুযুর আলাহিস সালাম, বিচার কার্য তদন্ত করেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণ করেন, তখন এ কথা বলা যাবেনা যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সে বিষয়ে অবগত নন। দায়েরকৃত মুকাদ্দমায় এটায় নিয়ম। (এ ব্যাপারে আর ও বিস্তারিত জানতে হলে আমার রচিত কিতাব শানে হাবীবুররহমান-দেখুন) এ সাক্ষ্যের উল্লেখ পরবর্তী আয়াতের মধ্যেও রয়েছে।
মুহাম্মাদ (সঃ) এর এলমে গায়েবের প্রমাণ - কোরআনের আলোকে 3
وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيْدًا
অর্থাৎ যে মাহাবুব (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমি আপনাকে এদের রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে আনব ।
তাফসীরে নিশাপুরীতে এ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখিত আছে-
لِاَنَّ رُوْحَهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ شَاهِدٌ عَلَى جَمِيْعِ الْاَرْوَاحِ وَالْقُلُوْبِ وِالنَّفُوْسِ بِقَوْلِه عَلَيْهِ السَّلَامُ اَوَّلُ مَاخَلَقَ اللهُ نُوْرِىْ
অর্থাৎ এটা এ কারনে যে হুজুর আলাইহিস সালামের রুহ মোবারক সমস্ত রুহ দিল ও সত্তা সমুহকে দেখতে পান । কেননা তিনিই বলেছেন- আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম যা সৃষ্টি করেছেন’ তা হলো আমার নূর ।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বয়ানে আছে-
وَاعْلَمْ اَنَّهُ يُعْرَضُ عَلَى النَّبِىْ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَعْمَالُ اُمَّتِهِ غَدَوْةً وَعَشِيَّةً فَيَعْرِ فُهمْ بِسِيْمَاهُمْ اَعْمَالَهُمْ فَلِذَالِكَ يَشْهَدُ عَلَيْهِمْ
হুজুর আলাইহিস সালামের কাছে তার উম্মতের আমলসমূহ সকাল বিকাল পেশ করা হয়। তাই তিনি উম্মকতকে তাদের চিহ্ন দৃষ্টে চিনেন ও তাদের কার্যাবলী সম্পর্কে অবগত হন। এজন্য তিনি রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদের ব্যপারে সাক্ষ্য দিবেন ।
তাফসীরে মাদারেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে-
اَىْ شَاهِدً عَلَى مَنْ اَمَنَ بِالْاِيْمَانِ وَعَلَى مَنْ كُفُرَ بِالْكُفْرِ وَعَلَى مَنْ نَافَقَ بِالنِّفَاقِ
অর্থাৎঃ হুজুর আলাইহিস সালাম মুমিনদের জন্য তাদের ঈমানের’ কাফেরদের জন্য তাদের কুফরীর জন্য ও মুনাফিকদের জন্য মুনাফেকীর সাক্ষী।
এ আয়াত ও তাফসীর সসূহ দ্বারা বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সৃষ্টির আদিকাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত লোকের কুফর, ঈমান, কপটতা, আমল ইত্যাদি সব কিছুই জানেন। এ জন্যইতো তিনি সকলের জন্য সাক্ষী। একেইতো বলে ‘ঈলমে গায়ব’ বা অদৃশ্য জ্ঞান।