কুরআনের অসংখ্য আয়াতের মধ্যে মোট ৩ টি আয়াত এবিষয়ে দলীল হিসেবে তুলে ধরছি ।
১ ম আয়াত فا سئلوا اهل الذكر ا ن كنتم لاتعلمون তোমাদের কোন বিষয়ে জানা না থাকলে আহলে ইলমদের নিকট জিজ্ঞাসা কর । সুরা, আল আম্বিয়াঃ৭,ও সুরা আন নাহালঃ৪৩,
টীকাঃ এ আয়াত যদিও বিশেষ ঘটনার সাথে যুক্ত । কিন্তু কুরআনের একটি মূলনীতি হল, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা নাযিল হয়েছে তা এতে সীমাবদ্ধ থাকেনা।বরং শব্দের ব্যাপক অর্থ ব্যাবহার হবে।আয়াতে বলা হচ্ছে,অজানা বিষয়ে বিজ্ঞ লোকদের অনুসরণ করার জন্য। এখন আমরা যদি বলি , না তাদের অনুসরণ কারা যাবেনা । তাহলে এটা কি কোরআনের বিরোধিতা হবেনা?আর অজানা বিষয়ে বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নাম ই হল , তাকলিদ। সুতরাং তাকলিদ কোরআন দ্বারা প্রমাণিত।
আল্লামা খতীবে বাগদাদি (রাহ)বলেন, কোরান-সুন্নার যে সকল বিষয়ে সাধারণ লোক সরাসরি শরীয়তের বিধান আহরণে অক্ষম, তাদের জন্য কোন বিজ্ঞ আলেমের তাকলিদ করা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক জায়েজ।সুত্রঃ আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাককিহ ৩০৬।
আল্লামা ফাখ্রুদ্দিন ও আল্লামা আলুসি উক্ত আয়াতের তাফসীরে লিখেন, উপরোল্লোখিত আয়াতের ভিত্তিতে অনেকেই মুজতাহিদ ইমামগনের তাকলিদ বৈধ ও অনভিজ্ঞ সবাইকে বিজ্ঞ মুজতাহিদের শরণাপন্ন হওয়া ওয়াজিব বলেন।
সুত্রঃতাফসিরে কাবির১৯/১৯,রুহুল মায়ানি-১৪/১৪৮, মাঝহারি- ৫-৩৪২, লুবাব-১২/৬১, কুরতুবি ১০/৭২
২য় আয়াতঃ اطيع الله واطيع الرّسول وأولى ألامر من كم الخহে ইমানদারগণ ! আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর।আর আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যে যারা “ উলিল আমর” তাদের । সুরা আন নিসাঃ ৫৯
আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসুলের পাশাপাশি উলিল আমরের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে।আসুন, দেখি এ ব্যাপারে মুফাসসির গণ কি বলেন।তাফসির গ্রন্থাবলিতে উলিল আমরের ২ টি তাফসীর পাওয়া যায়। ১মঃ কুরআন- সুন্নার ইলমের অধিকারী ফাকিহ ও মুজতাহিদগণ। ২য়ঃ মুসলিম শাসক বর্গ । ১ম তাফসীর টি অধিক গ্রহণযোগ্য । কেননা , এর পক্ষে মতামত দিয়েছেন, হযরত জাবের, এবনে আব্বাস, মুজাহিদ, আতা বিন আবি রাবাহ, আতা বিন সাইব, হাসান বাসরি ও আলিয়াহ (রাহ) এর মত সেরা মুফাসসিরগন । মাত্র দু একজন ২য় মত টি ব্যক্ত করেছেন।
আল্লামা রাযি (রাহ) প্রথম তাফসীরের সমর্থনে সারগর্ভ যুক্তি প্রমান অবতারনা করে বলেছেন, বস্তুত আয়াতে উলিল আমর ও উলামা শব্দ দুটি সমার্থক।
ইমাম আবু বাকার (রাহ) বলেন , এখানে মূলত কোন বিরোধ নেই। মূলত উলিল আমর শব্দ টি ব্যপক। সুতরাং ধর্মীয় বিষয়ে ১ম তাফসীর গৃহীত হবে। আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে ২য় তাফসীর গ্রহন হবে। আয়াতের অর্থ হবে, তোমরা রাজনীতি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শাসকবর্গের কথা আর আহকাম ও মাসআলার ক্ষেত্রে আলিমগণের ইতায়াত কর । সুত্রঃ আহকামুল কুরআন-২/২৫৬,তাফসিরে কাবির-৩/ ৩৩৪ ।
মোট কথাঃ আলোচ্য আয়াতের আলোকে আল্লাহ ও রাসুলের ইতায়াত যেমন ফরয তেমনি কুরআন ও সুন্নার ব্যাখ্যা দাতা হিসেবে আলিম ও মুজতাহিদ্গনের ইতায়াত ও ফারয।
আয়াতের শেষাংশের ব্যাখ্যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, যেখানে বলা হয়েছে মতবিরোধ পূর্ণ ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসুলের দিকে ফিরার জন্য । এ ব্যাপারে আমরা বলবো, মূলত এ দ্বিতীয়াংশের মাধ্যমে ফকিহ ও মুজতাহিদদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। সাধারন মানুষের জন্য নয়। যা আহলে হাদিসদের ইমাম জনাব নবাব সিদ্দিক হাসান খান তার লিখিত কিতাব “ফাতহুল বায়ান “ নামক গ্রন্থে ও স্বীকার করেছেন, তার ভাষায়ঃوالظاهرأنّه خطاب مستقلّ مستأنف موجّه للمجتهدين স্পষ্টতই এখানে মুজতাহিদ গণকে সতন্ত্রভাবে সম্ভোধন করা হয়েছে। এ দুটি আয়াতের আলোচনা বিস্তারিতভাবে করলাম। আশা করি আমার লা মাজহাবী ভাইগণ একটু হলেও চিন্তা করবেন।
তৃতীয় আয়াত: والتّبع سبيل من أناب اليّ যে আমার অভিমুখী হয়েছে , তুমি তার পথ অনুসরণ কর। সুরা আল লোকমানঃ ১৫ ,এ আয়াতে মূলত আবু বাকার (রা) মতান্তরে সা”দ ইবনে ওয়াককাসের ব্যাপারে মন্তব্য করা হলেও কোন কোন তাফসীর কারক বলেছেন, এখানে উদ্দেশ্য হল , ধর্মানুরাগী মুসলমান । আল্লামা জমখসরি লিখেন,আল্লাহ অভিমুখী বলতে মুমিনদের পথ বুঝানো হয়েছে। কাজেই আয়াতের অর্থ হল, তুমি দ্বীন ধর্মের ক্ষেত্রে মুমিনগণের পথ অনুসরণ কর। সুত্রঃ আল কাসসাফ-৩/৪৭৯।
হে আল্লাহ! আমাদের কে সরল পথে পরিচালিত কর ।অর্থাৎ তাদের পথে যাদের কে তুমি নেয়ামত দান করেছ,
যে মুজতাহিদদের ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী বলেছেন-
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪}
তারা ভুল করলেও এক নেকি পাবে, আর সঠিক করলে ডাবল নেকি, তাদের ব্যাখ্যাকে অনুসরণ করি। ব্যক্তিকে অনুসরণের জন্য নয়, বরং তিনি কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ হওয়ার কারণে, এবং নবীজী সাঃ এর বলা শ্রেষ্ঠ যুগের ব্যক্তিত্ব হওয়ায় নিজের ইচ্ছা ও বুঝের উপর নির্ভর না করে বিজ্ঞ ব্যক্তির ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করি।