মজ্জুব শব্দটি মূলত আরবী। এর মূলধাতু হল- “জযবা” । জযবা শব্দের অর্থ হচ্ছে- আকর্ষণ। মজ্জুব শব্দের অর্থে ফিরোজুল লুগাত অভিধানে বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহর ভালবাসায় নিমজ্জিত, আল্লাহর ভালোবাসায় দুনিয়া হতেবিচ্ছিন্ন,আল্লাহর প্রতি আকর্ষিত, পাগল(আল্লাহর প্রেমে), দিওয়ানা সহ ইত্যাদি। মজ্জুব সাধারণত আউলিয়ায়ে কিরামদেরই একটি বৈশিষ্ট্য। সাধারণভাবে মজ্জুব হল তাদেরকেই বলে, যারা সর্বদা আল্লাহর প্রেম সাগরে নিমজ্জিত থাকে। যাদের জীবনযাপন সমাজের বাকি আট-দশজনের মত নয়। দুনিয়া হতে যারা নিজেরদেরকে পরিপূর্ণ বিমুখ করে আল্লাহমুখী হয়ে যান। যাদের মাধ্যমে আল্লাহর কুদরত প্রকাশ পায়। বাহ্যিকভাবে তাদের দেখতে মনে হয় শরিয়ত বিবর্জিত। কিন্তু তারা আসলে তা নন। মূলত তারা শরিয়তের চত্বরেই আছেন।
তাসাউফের কিতাব সমূহে এসেছে, আল্লাহর অলীদের মধ্যে দুইটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, ১. সালিক(স্বাভাবিক, যাদের চলাফেরা সমাজের বাকি আট-দশজনের মতই), ২.মজ্জুব (এরঅর্থ উপরোল্লিখিত হয়েছে) । এখন অলীদের মধ্যে এই দুই বৈশিষ্ট্যের আধিক্যের দিক থেকে অলীদের শ্রেণি আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে। ১. মজ্জুবে সালিক :ার মধ্যে সালিক বৈশিষ্ট্য হতে মজ্জুব ববৈশিষ্ঠ্য অধিকহারে থাকে। ২.সালিকে মজ্জুব : যার মধ্যে মজ্জুব বৈশিষ্ট্য হতে সালিক বৈশিষ্টের আধিক্য বেশি।
ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই তাসাউফের সূচনা। তাসাউফ এমন একটি নেয়ামত, যার মাধ্যমেই কেবল আল্লাহকে পরিপূর্ণরুপে চেনা সম্ভব। এবং এই তাসাউফের চর্চা স্বয়ং নবীজীর প্রকাশ্য জিন্দেগী হতেই হয়ে আসছে। যার চর্চাকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা। তারই ধারবাহিকতায় এটি আউলিয়ায়ে কিরামগণ পর্যন্ত এসে স্থির হয়েছে।
মজ্জুব অলী-আউলিয়ার ব্যাপারে নবীপাকের সেই বিখ্যাত হাদীসটি,
মুসলিম শরীফে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে।
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗَﺎﻝَ " ﺭُﺏَّ ﺃَﺷْﻌَﺚَ ﻣَﺪْﻓُﻮﻉٍ ﺑِﺎﻷَﺑْﻮَﺍﺏِ ﻟَﻮْ ﺃَﻗْﺴَﻢَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻷَﺑَﺮَّﻩُ
অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, এমন অনেক উষ্ক-খুষ্ক লম্বা চুলধারী ধূলামলিন বিশিষ্ট লোক আছেন, যাদেরকে মানুষের দরজা থেকে বিতারিত করা হয়, অথচ তারা যদি আল্লাহর কাছে কিছু দাবী করে, তাহলে আল্লাহ তাদের সে দাবী পূরণ করেন।"। (মুসলিম শরীফ, কিতাবু বিররি ওয়াসসিলা ওয়াল আদব, বাব (অনুচ্ছেদ/পরিচ্ছেদ) :
ﺑﺎﺏ ﻓَﻀْﻞِ ﺍﻟﻀُّﻌَﻔَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﺨَﺎﻣِﻠِﻴﻦَ হাদিস নং-২৬২২ (মূল মুসলিম শরীফ -মিশরী ছাপা) অনুবাদ হাদিস নং-৬৪৯৪ সম্ভবত) এছাড়া এ ধরণের আরও একটি হাদিস তিরমিজী শরীফ সহ আরও কয়েকটি হাদিসের গ্রন্থে রয়েছে।
যেমন: ﻛَﻢْ ﻣِﻦْ ﺃَﺷْﻌَﺚَ ﺃَﻏْﺒَﺮَ ﺫِﻱ ﻃِﻤْﺮَﻳْﻦِ، ﻳﻌﻨﻲ ﺛﻮﺑﻴﻦ ﺑﺎﻟﻴﻴﻦ، ﻟَﺎ ﻳُﺆْﺑَﻪُ ﻟَﻪُ، ﻟَﻮْ ﺃَﻗْﺴَﻢَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﺄَﺑَﺮَّﻩُ অর্থাৎ ‘হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহর অনেক বান্দা এমন হন যে, তাদের চুল থাকে আলুথালু। দেহ থাকে ধুলি মলিন। (কেননা চুল ও দেহ পরিচর্যার সংগতি থাকে না তাদের)। দুটি ছেড়াফাটা পুরোনো চাদর পরিধান করেন তাঁরা। কেউ তাঁদেরকে খুব একটা গনায় না ধরলেও তাঁরা যদি আল্লাহর নাম নিয়ে কোনও একটা কসম খেয়ে বসেন যে, এটি এমন হবে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর কসম পূরণ করেন। (অর্থাৎ তিনি যেমন চান তেমনই হয়। (তিরমিজী, কিতাবুল মানাকিব, বাব মানাকিবি বারা ইবন মালিক, হাদিস নং-৩৮৫৪, মিরকাতুল মাফাতিহ শরহে মিসকাতুল মাসাবীহ, হাদিস নং-৬২৪৮, এছাড়া ইমাম বায়হাকি দালায়েলুন নবুয়াত কিতাবেও হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।