জন্ম, বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবনঃ ১৯০৮ ঈসায়ি ঈসায়ি মোতাবেক ১৩১৫ বাংলা সনের কোন এক শুভক্ষণে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লী এলাকা মুন্সিবাজারের মামরখানী গ্রামের সম্ভান্ত এক পরিবারে তিনিজন্মগ্রহণ করেন। তার সম্মানিত পিতা ক্বারী আবদুল মজিদ ও গর্ভধারিনী মাতা রহিমা খাতুন ছিলেন অত্যন্ত ধর্মভীরু ও পরহেজগার। বাল্যকালে তিনি নম্র, ভদ্র ও খোশমেজাজি ছিলেন। মাতা-পিতার অনুগত ও লেখাপড়ায় খুবমনোযোগী ছিলেন। ১৯১৬ ঈসায়িতেতে আট বছর বয়সে তার পিতা বাড়ির পার্শ্ববর্তী নিজের প্রতিষ্ঠিত মক্তবে তাকে ভর্তি করে দেন। মাত্র ৩ বছরের মধ্যে তিনি দ্বীনের প্রাথমিক শিক্ষা তথা কালেমা, নামায, রোযা, দোয়া-দরূদইত্যাদি মুখস্ত করে নিতে সক্ষম হন। ১৯১৯ সালে ১১ বছর বয়সে তাকে মুনশিবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ১ম স্থান অধিকার করে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথেপ্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন। পিতার ইন্তেকাল ও দ্বীনি শিক্ষার সূচনা ১৯২০ সালে আপন পিতা ইন্তেকাল করেন। শিশু আবদুল গাফফার পিতা হারানোর বেদনা ক্বারী আবদুস সামাদ সাহেবের স্নেহ মমতায় ও মা জননীর আদরেরফলে তিনি সাময়িকভাবে ভুলে যান।
ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ায় যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে তার বড় ভাই খুব যত্নবান ছিলেন। মায়ের পরম আগ্রহে তাকে মুনশিবাজার মাদরাসায় ভর্তি করে দেয়া হয়। এখানে মাত্র চার বছর অধ্যয়ন করে তিনি আরবী, বাংলা, উর্দু, ফারসী ভাষার উপর বিশেষ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে সফর ইসলামি শিক্ষায় ব্যাপক ব্যুৎপত্তি অর্জনের উদ্দেশ্যে ১৯২৬ সালে তিনি ভারতের আসাম প্রদেশের হাইলাকান্দি মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯২৭ সালেসিলেটের প্রাচীনতম ইসলামি শিক্ষাগার জামিউল উলূম গাছবাড়ী মাদরাসায় চলে আসেন এবং দীর্ঘ আটবছরের ব্যবধানে এখানে তিনি নাহু, সরফ, বালাগাত, মানতিক, দর্শন, আকায়েদ, ফিকাহ, তাফসির, উসুলে ফিকাহ, হাদীসও উসুলে হাদিসের উপর বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। গাছবাড়িতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি মাদরাসার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৫ সালে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের উদ্দেশ্য তিনি বিশ্বেরঅন্যতম শ্রেষ্টতম ইসলামি বিদ্যাপিঠ দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। সেখানে তিনি দাওরায়ে হাদিস পাশ করে হাদিস, তাফসির ও ফিকাহর উপর গবেষণা করেন। দেওবন্দে যাদের সহচর্য লাভে তিনি ধন্য হয়েছিলেন, তাদেরমধ্যে হযরত মাওলানা সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি রাহ., হযরত মাওলানা সায়্যিদ আসগর হোসাইন দেওবন্দি রাহ., শায়খুল আদব হযরত মাওলানা এজাজ আলী রাহ., হযরত মাওলানা মুফতি শফি রাহ.সহ তৎকালেরজগদ্বিখ্যাত মনীষীদের নাম উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষকতা ও আধ্যাত্মিক সাধনাঃ ১৯৩৮ সালে তিনি দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। উপমহাদেশর অন্যতম শিক্ষাগুরু আল্লামা সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানী রাহ.’র হাতে তাসাউফের বাইয়াত গ্রহণকরে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। মুর্শিদের নির্দেশে তিনি দ্বীনি শিক্ষার প্রসার, আধ্যাত্মিক সাধনা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন। সিলেট বিভাগের প্রাচীনতম ইসলামি বিদ্যাপিঠ ঢাকা উওর রানাপিং আরাবিয়াহোসাইনিয়া টাইটেল মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্ম জীবন শুরু। এখানে প্রায় দুই বছর শিক্ষকতার পর স্বীয় মুর্শীদ আল্লামা সাইয়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানী রাহ.’র নির্দেশে ১৯৪১ সালে ভারতের আসাম প্রদেশেরভাংগা ইসলামিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। সেখান থেকে ১৯৪৩ ঈসায়ি সনে ভারতের হাইলাকান্দি টাইটেল মাদরাসায় শিক্ষা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির সময় তিনি চলে আসেনমাতৃভুমি বাংলাদেশের জকিগঞ্জে। স্থানীয় গঙ্গাজল সিনিয়র মাদরাসায় দীর্ঘ ৯ বছর শিক্ষকতার পাশাপাশি শিক্ষা পরিচালকেরও দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে জকিগঞ্জের মুনশিবাজার মাদরাসায় দীর্ঘদন একজন যোগ্য পরিচালকেরঅভাবে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে স্থানীয় জনতার অনুরোধে ১৯৫৭ সালে তিনি মাদরাসার মুহতামিমের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং মৃত্যু অবধি এপদে অধিষ্টিত থেকে মাদরাসাকে বিন্দু থেকে সিন্ধুতে পরিণত করেন।
আজকের সুবিশাল জামেয়া ইসলামিয়া ফয়জে আম মুনশিবাজার তারই কঠোর সাধনার ফসল। কিন্তু এতসব দায়িত্ব ও কর্ম তাকে সৃষ্টিকর্তাকে এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে দেয়নি। নয়াসড়ক মসজিদে হযরত হোসাইন আহমদমাদানী রাহ.’র সাথে আধ্যাত্মিক সাধনায় দীর্ঘ ১৩ বছর পুরো রমযান মাস অতিবাহিত করেন। এভাবে তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞানে সমৃদ্ধি লাভ করে স্বীয় মুরশিদের অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে মানুষকে আধ্যাত্মিক দীক্ষা ও আম জনতাকেহেদায়াতের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ-নসিহত, মানুষের প্রাত্যহিক সমস্যার শরয়ী ব্যাখ্যা প্রদান ও মানুষকে হেদায়াতের পথে আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর গোটা জীবন অতিবাহিত করেন।সিলেট বিভাগের সব উপজেলাতেই তিনি সফর করেছেন এবং বিভিন্ন স্থানে লোকজনকে বায়াত করানোর মাধ্যমে হেদায়াতের পথ প্রদর্শন করেছেন। খানকাহ প্রতিষ্ঠা উম্মতের হেদায়াত, মুরিদানের আত্মিক প্রশিক্ষণ ওদিকনির্দেশনার জন্য সুদীর্ঘ আঠার বছর খানকাহ পরিচালনা করেন। এর পূর্বে প্রায় ১২ বছর জকিগঞ্জের বালাউট মসজিদে মুরিদানসহ রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন।
হযরতের মৃত্যু পরও তাঁর প্রতিষ্ঠিত খানকার কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। এসব প্রচেষ্টার ফলে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শতশত আলেম ও হাজার হাজার মানুষ আত্মিক উৎকর্ষতা সাধনের সুযোগ পেয়েছেন | দক্ষপরিচালক হিসাবে মামরখানী রাহ. ১৯৫৭ সালের পূর্ব পযর্ন্ত হযরত মামরখানী রাহ. যদিও শিক্ষকতার ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন সাধনায় কাটিয়েছেন তবুও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টানের পরিচালনাগত বিভিন্ন দায়িত্ব তিনি এড়াতে পারেন নি। তাঁরদক্ষ পরিচালনা সবাইকে মুগ্ধ করত। বিশেষ করে মুনশিবাজার মাদরাসার পরিচালনা সাথে তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছরকাল জড়িত ছিলেন। এ সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠানকে একটি আদর্শ বিদ্যাপিঠ হিসেবে জাতির সামনে উপস্থাপিত করেগেছেন। শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে শৃংখলা বিধান, মাদরাসার আয়-ব্যায়ের হিসাব সংরক্ষণ, মাদরাসা কমিটি পরিচালনা, শিক্ষক স্টাফের তদারকি ও সমন্বয় সাধন, মাদরসার বিভিন্ন বিভাগ স্থাপন ও পরিচালনা ইত্যাদি কাজেএকজন দক্ষ পরিচালকের কাজ আনজাম দিয়েছেন। তিনি সমযয়ের প্রতি খুব যত্নবান ছিলেন, তাই মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের সময়মত উপস্থিতিকে খুব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন। মাদরাসার উন্নয়েনে থাকতেন সদা তৎপরথাকতেন। তহবিল সংগ্রহের জন্য জেলার সর্বত্র ঘুরে বেড়াতেন। জনসাধারণের দেয়া অনুদানকে তিনি আমানতদারীর সাথে ব্যয় করতেন এবং এর হিসাবও সুনিপূণভাবে সংরক্ষণ করতেন।
বস্তুত হযরতের এসব মেহনতের ফলে আজ মুনশীবাজার মাদরাসার সুনাম-সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়েছে। বিভিন্ন মাদরাসা পৃষ্টপোষকতা ও পরিচালনা হযরত আল্লামা মামরখানী রাহ. শুধু মুনশীবাজার মাদরাসা পরিচালনা ওউন্নয়নে জীবনের কর্ম পরিধি সংকোচন করেন নি, তিনি সিলেটে দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে্য বহু মাদরাসা প্রতিষ্টা ও পরিচালনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁর উৎসাহ-উদ্দিপনায় শাহজালাল উপশহরে ২টি মহিলামাদরাসা, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ নগর মহিলা মাদরাসা, বিয়ানীবাজার খাড়াভরা গাফফারিয়া মাদরাসা, কানাইঘাটে জুলাই মহিলা মাদরাসা ও বায়মপুর মাদরাসা, জকিগঞ্জ উপজেলায় উজিরপুরস্থ গাফফার নগরমাদরাসা, বালাউট মদরাসা, সোনাসার জালালিয়া মাদরাসা, শাহ শরীফ ঈদগাহ মাদরাসা, বারঠাকুরী আদর্শ মহিলা একাডেমি, আমলশীদ মহিলা একাডেমি ইত্যাদি দ্বীনি শিক্ষাঘার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়। এছাড়া জকিগঞ্জেজামেয়া ইসলামিয়া ছায়িদিয়া মাদরাসা, শাহবাগ ঘাটের বাজার মাদরাসা, খাড়াভরা মাদরাসা পরিচালনায় প্রত্যক্ষভাবে তিনি জড়িত ছিলেন।
সিলেটের কওমী মাদরাসা সমূহের শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ঐক্যের লক্ষ্যে তিনি ‘আযাদ দ্বীনী এদারা বৃহত্তর সিলেট’ (সিলেট বিভাগ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড) এবং বৃহত্তর সিলেট মহিলা মাদরাসা বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বওপালন করেন। তিনি কওমী মাদরাসাসমূহের হেফাজতে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় ছিলেন। সিলেটের বিভিন্ন কাওমী মাদরাসার দুর্দিনে তিনি ঘরে বসে থাকেন নি, বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন।তাঁর দেয়া রায় সবাই একবাক্যে মেনে নিত। সমাজ সেবায় হযরতের সাধনা হযরত শায়খে মামরখানি রাহ. একজন দরদী সমাজসেবক ছিলেন। এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে তাঁর প্রচেষ্টা ছিলো উল্লেখ করার মত। তিনি একবারনির্বাচিত ইউ/পি সদস্য হিসেবেও কাজ করেন। সোনাসার মুনশীবাজার রোড তাঁরই প্রচেষ্টার ফসল | ১ জানুয়ারি ২০০১ সালে তাঁর নামে একটিসেবামূলক ট্রাস্ট প্রতিষ্টা করা হয়। সমাজকর্মীদের তিনি অত্যন্ত স্নেহ করতেন।
কানাইঘাট জকিগঞ্জের সাবেক সংসদ সদ্যস এম আর মজুমদার, শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল হক রাহ., মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিগণ তাঁর দোয়া ও আশির্বাদ নিয়ে নির্বাচনী কাজ শুরুকরতেন। নিষ্টাবান সমাজকর্মী সকলেই তাঁর প্রিয়পাত্র ছিলেন। সমাজ সংস্কার ও রাজনীতি থেকে অব্যাহতি হযরত শায়খে মামরখানী রাহ. সামাজিক অবক্ষয়রোধ, কুসংস্কার দূরিকরণ এবং মানুষকে আল্লাহর প্রতি আহবানজানানোর জন্যে সিলেটের সর্বত্রই ওয়াজ মাহফিল, সভা-সেমিনারে আজীবন জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। দেশ-জাতির ভাগ্যোন্নয়ন ও অর্থ সামাজিক উন্নয়নে সেই ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িতছিলেন। দারুল উলূম দেওবন্দে পড়াশুনা অবস্থায় তিনি তৎকালীন সময়ে আসাম প্রদেশীয় ছাত্র সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে তিনি হযরত মাদানী রাহ.’র সাথে ভারতেরবিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন, সে সময় তিনি জমিয়তে উলামায় হিন্দের একজন ডাকসাইডে নেতা ছিলেন।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি হযরত শিব্বির আহমদ উসমানী রাহ., মুফতি মাহমুদ রাহ. প্রমুখের নেতৃত্বে জমিয়তের সিলেট জেলা সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি আইয়ুব শাহীর বিরুদ্ধে তীব্রআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীনতার পর হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ. তাওবার রাজনীতির ডাক দিলে তিনি তার নেতৃত্বে গঠিত খেলাফত আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালে খেলাফত আন্দোলনের ব্যানারেতৎকালীন সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৯ সালে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রাহ.’র নেতৃত্বে উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার বুদ্ধিজীবিদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস গঠিত হলেতিনি তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে উক্ত সংগঠনের কেদ্রীয় অভিভাবক পরিষদ সদস্য ও সিলেট জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি শুধু আলেম কিংবা আধুনিকশিক্ষিতের আন্দোলন নয়; বরং উভয় ধারার সমন্বিত আন্দোলনের মাধ্যমে খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নাবুওয়াহর আদলে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনজাতীয়, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে সংগঠিত সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে হযরত সব সময় সোচ্চার ছিলেন।
আন্দোলনঃ কুখ্যাত দাউদ হায়দারের অলপাল, ১৯৭৯ সালে সরদার আলাউদ্দিন কর্তৃক আল কুরআনের বিরুদ্ধে কটুক্তি, ১৯৯৩ সালে বাবরি মসজিদ আন্দোলন, আগ্রাসী ভারত কর্তৃক সুরমা-কুশিয়ারার উজানে বরাক ড্যামনির্মাণ আন্দোলন ও ১৯৯৪ সালে তসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দোলনে অশীতিপর বায়োবৃদ্ধ শায়খের অগ্রণী ভূমীকা সাধারণ জনতা, ছাত্র, যুবক ও তারুণ্যের মনে নবচেতনার সৃষ্টি করে। একবার গঙ্গাজল ঘেছুয়া এলাকায়নাচগানের আসর বসার সংবাদ পেলে তা বন্ধ করতে মাওলানা ফয়জুল হাসান রাহ. ও শায়খে মামরখানী রাহ. সাথে সাথে রওয়ানা হয়ে যান। পথিমধ্যে প্রতিপক্ষের আক্রমণে মাওলানা ফয়যুল হাসান রাহ.’র হাত ভেঙ্গে গেলেওতিনি পিছপা হননি। গানের আসর ভেঙ্গেই ঘরে ফিরেছিলেন। অন্যায়, অসত্য আর ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রের জবাবে তিনি বৃদ্ধ বয়সেও মানসিকভাবে একজন টগবগে তরুণের ভূমিকায় আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকতেন। এসবআন্দোলনে তার দরদভরা বলিষ্ট ভাষণ কর্মীদেরকে অনুপ্রাণিত করত। ইমানদীপ্ত ঐতিহাসিক লাময়ী ভাষণ হযরত শায়খে মামরখানী রাহ. ১৯৯৪ সালে সিলেট পৌর পয়েন্টে নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী মহাসমাবেশে সভাপতিরবক্তব্যে তার সারগর্ভ বক্তব্য সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন কোন সুন্নাত বাদ যায় নি যা তিনি আমল করেন নি। তাই কখনো তাকে দেখতে পাই একজন বিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে দারস দিচ্ছেন। কখনো দেখা একজন সফল ব্যাবসায়ী হিসেবে বাজারেসওদা পাতি নিয়ে উপস্থিত, কখনো দেখা যায় কাস্তে কুদাল হাতে একজন গেয়ো কৃষকের বেশে আবার কখনো গৃহকর্তা হিসেবে বাজারের ফর্দ নিয়ে কেনা কাটা করছেন পরিবারের জন্য।কখনো বিচারকের আসনে, কখনোরাজনীতির মঞ্চে আবার কখনোবা একজন দরদি সমাজসেবি হিসেবে জনগনের দুয়ারে। বস্তুত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে যেরূপ আমরা সার্বজনীন কর্মপ্রয়াসের সন্ধান পাই তদ্রূপ হযরত মামরখানীরহঃ এর জীবনেও রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র পদাংক অনুসরণের প্রমাণ পাই। এমন পূর্ণাঙ্গ চরিত্রের সন্ধান সত্যিই বিরল।
ইন্তেকালঃ মামরখানী রাহ.’র মাওলায়ে আ’লার সান্নিধ্যে গমন ২০০২সালের ১৮ইজুন। ৫ই আষাঢ় ১৪০৯বাংলা। ৬ঈ রবিউস সানি ১৪২৩হিজরী রোজ মঙ্গলবার ওসমানী মেডিকেলের ৩য় তলার ৯নং ওয়ার্ডের ১০নং কেবিনেশুয়ে আছেন আল্লাহর এক প্রিয় ওলী। খাদেম ও ছেলেরা তাকে ঘিরে বসে আছেন তখন হযরতের চেহারা মুবারকে মৃত্যুর আলামাত প্রকাশিত হলে খাদেমদের বিগলিত হৃদয়ের সুমধুর যিকিরে গুণঞ্জরিত হয়ে উঠলো ওসমানীমেডিকেলের সেই কক্ষ। আর তার ছেলে হাফিয মাওলানা মুফতি শায়খ আব্দুর রাজ্জাক ও কয়েকজন খাদেম সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত ছিলেন। এরই মাঝে তিনি ঠোঁটের কোনে নূরানী হাসির উজ্জল জ্যোতি ছড়িয়ে, উপরেরদিকে তাকিয়ে চিরদিনের জন্য বেলা ১টা ১৫মিনিটের সময় এ কীর্তিমান মনীষী সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে তার পরম প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যান। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তথ্য সুত্রঃ ইয়াকুব হোসাইন জাকির
কওমীমিডিয়া