যাকাত
'যাকাত' একটি আরবি শব্দ । এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা, বৃদ্ধি পাওয়া, বরকত লাভ হওয়া, প্রশংসা করা ইত্যাদি । কুরআন মজীদ ও হাদীস এসব অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।[1] শরীয়াতের পরিভাষায় 'যাকাত' বলা হয় নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কর্তৃক বছরান্তে তাঁর সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ (শতকরা ২.৫০ টাকা হারে) যাকাতের হকদার ব্যক্তিকে প্রদান করা । নিসাবের মালিক ব্যক্তির উপর যাকাত আদায় করা এবং তা অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত । এর ফরযিয়াত অস্বীকার করা কুফরী । ইসলামী শরীয়াতে তাঁর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড । নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর বছর অতিবাহিত হলে সাথে সাথে এর যাকাত আদায় করা ফরয । বিনা কারণে বিলম্ব করলে গুনাহগার হবে । যাকাত ফরয হওয়ার দলিল দ্বিতীয় হিজরি সনে যাকাত ফরয হয়েছে । কুরআন হাদিস ও ইজমার দ্বারা যাকাতের ফরযিয়াত প্রমাণিত । পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ
আর নামাজ কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছেঃ
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দোয়া কর, নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য সান্ত্বনা স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ সবকিছুই শোনেন, জানেন।
— সূরা তাওবা, আয়াত ১০৩
আরো ইরশাদ হয়েছেঃ
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
এবং তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল।
— সূরা আয যারিয়াত , আয়াত ১৯
আরো ইরশাদ হয়েছেঃ
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।
— সূরা তাওবা, আয়াত ৩৪
যাকাত ফরয হওয়ার ব্যাপারে উম্মাতের ইজ্মা সংগঠিত হয়েছে [2]।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলী
মাসআলাঃ
যে ব্যক্তি সাড়ে ৫২ তোলা রুপা, অথবা সাড়ে ৭ তোলা সোনার কিংবা তৎমূল্যের টাকার মালিক হয় এবং তাহার নিকত ঐ পরিমান মাল পূর্ন এক বৎসরকাল স্থায়ী থাকে, তাহার উপর যাকাত ফরয হয় । ইহা অপেক্ষা কম হইলে যাকাত ফরয নহে । ইহা অপেক্ষা বেশী হইলেও যাকাত ফরয হইবে । এই মালকে 'নেছাব' বলে এবং যে এই পরিমান মালের মালিক হয়, তাহাকে 'মালেকে নেছাব' বা 'ছাহেবে নেছাব' বলা হয় ।
মাসআলাঃ
যদি কাহারো নিকট সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা ৪/৫ মাস থাকে, তারপর কম হইয়া যায় এবং ২/৩ মাস কম থাকে, তারপর আবার নেছাব পূর্ন হইয়া যায়, তবে তাহার যাকাত দিতে হইবে । মোটকথা, বৎসরের শেষেও মালেকে নেছাব হয়, মাঝখানে কিছু কম হইয়া যায়, তবে বৎসরের শেষে তাহার নিকট যত টাকা থাকিবে, তাহার যাকাত দিতে হইবে । অবশ্য বৎসরের মাঝখানে যদি তাহার সম্পূর্ন মাল কোন কারনে নষ্ট হইয়া যায়, তবে পূর্বের হিসাব বাদ দিয়া পুনরায় যখন নেছাবের মালিক হইবে, তখন হইতে হিসাব ধরিতে হইবে, তখন হইতেই বৎসরের শুরু ধরা হইবে ।
মাসআলাঃ
কাহারো নিকট ৮/৯ তোলা সোনা ছিল, কিন্তু পূর্ন বৎসর শেষ হওয়ার পূর্বেই তাহা তাহার হাত ছাড়া হইল, (চুরি হইয়া গেল বা হারাইয়া গেল, বা দান করিয়া ফেলিল) এমতাবস্থায় তাহার উপর যাকাত ওয়াজিব হইবে না ।
মাসআলাঃ
(নেসাব পরিমাণ সম্পদের মূল্য ১০০ টাকা ধরিয়া) কাহারো নিকট ২০০ টাকা আছে, কিন্তু আবার ২০০ টাকা কর্যও আছে, এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তির উপর যাকাত ওয়াজিব হইবে না; পূর্ন বৎসর থাকুক বা না থাকুক । আর যদি ১৫০ টাকাও কর্য হয়, তবুও যাকাত ওয়াজিব হইবে না । কেননা ১৫০ টাকা বাদ দিলে মাত্র ৫০ টাকা থাকে । ৫০ টাকায় নেছাব পুরা হয় না । কাজেই যাকাত ওয়াজিব হইবে না ।
মাসআলাঃ
(নেসাব পরিমাণ সম্পদের মূল্য ১০০ টাকা ধরিয়া) যদি কাহারো নিকট ২০০ টাকা থাকে এবং ১০০ টাকার কর্য থাকে, তবে ১০০ টাকার যাকাত দিতে হবে ।
মাসআলাঃ
সোনা এবং রুপা যে কোন অবস্থায় থাকুক না কেন, মাটির নিচে পোঁতা থাকুক, কারবারের মধ্যে থাকুক (নোটের পরিবর্তে) গভর্নমেন্টের যিম্মায় বা অন্য কাহারো নিকট কর্য হিসাবে থাকুক, যেওর আকারে থাকুক এবং উহা ব্যবহারে থাকুক বা আজীবন বাক্সে তোলা থাকুক, কাপড়ে, টুপিতে, তলোয়ারে বা জুতায় কারুকার্যরুপে থাকুক, সব অবস্থায়ই নেছাব পরিমান পূর্ন হইলে এবং এক বৎসরকালমালিকের অধিকারে থাকিলে তাহাতে যাকাত ফরয হইবে; (অবশ্য যদি নেছাব পরিমান না হয়, বা পূর্ন এক বৎসরকাল মালিকের নিকট না থাকে, তবে যাকাত ফরজ হইবে না । সোনা ও রুপা ব্যতিরেকে অন্য কোন ধাতুতে তেজারত না করা পর্যন্ত উহাতে যাকাত ফরয হইবে না)
মাসআলাঃ
সোনা ও রুপা যদি খাঁটি না হয় অন্য কোণ ধাতু তাহাতে মিশ্রিত থাকে (মুদ্রা হউক, জেওর হউক বা অন্য বস্ত হউক) তবে দেখিতে হইবে যে, বেশীর ভাগ সোনা বা রুপা কিনা ? যদি বেশীর ভাগ সোনা বা রুপা হয়, তবে সম্পূর্ন রুপা বা সোনা ধরিয়া হইতে হইবে এবং নেছাব পরিমান পূর্ন হইলে হিসাব করিয়া তাহার যাকাত দিতে হইবে । আর যইদ সোনার বা রুপার ভাগ কম হয় অন্য ধাতু (রাং বাদস্তা ইত্যাদি) বেশি হয়, তবে তাহাতে শুধু নেছাব পরিমান হইলে যাকাত ওয়াজিব হইবে না, অবশ্য এই মাল দ্বারা তেজারত করিলে, তেজারতের হিসাবে যাকাত দিতে হইবে ।
মাসআলাঃ
যদি কিছু সোনা এবং কিছু রুপা থাকে, কিন্তু পৃথকভাবে সোনারো নেছাবও পূর্ন হয় না, রুপার নেছাবও পূর্ন হয় না, তবে উভয়ের মূল্য যোগ করিলে যদি নেছাব পরিমান অর্থাৎ সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সাড়ে ৭ তোলা সোনার মূল্যের সমান হয়, তবে যাকাত ফরজ হইবে; নতুবা যাকাত ফরজ হইবে না । আর যদি উভয়টার নেছাব পূর্ন থাকে, তবে মূল্য ধরিয়া যোগ করার আবশ্যক নাই
মাসআলাঃ
ধরুন ২৫ টাকায় এক ভরি সোনা পাওয়া যায়, আর এক টাকায় দেড় তোলা চাঁদি পাওয়া যায় । এখন কাহারো নিকট দুই ভরি সোনা এবং পাঁচটি টাকা বেশী আছে এবং পূর্ন এক বৎসর তাহার কাছে আছে । এখন তাহার উপর যাকাত ফরজ হইবে । কেননা, দুই ভরি সোনা ৫০ টাকা; ৫০ টাকায় ৭৫ চাঁদি কিনিলে ৭৫ তোলা হইল । দুই ভরি স্বর্ণ দিয়া চাঁদি কিনিলে ৭৫ তোলা হইবে আরও পাঁচ টাকা মৌজুদ আছে । এই হিসাবে যাকাতের নেছাবের চেয়ে মাল অনেক বেশী হইল । অবশ্য যদি শুধু দুই তোলা সোনা থাকে উহার সহিত কোন চাঁদি বা টাকা না থাকে, তবে যাকাত ফরয হইবে না ।
মাসআলাঃ
যদি কাহারো নিকট ত্রিশ টাকা এক বৎসর কাল থাকে এবং ঐ সময় রুপার ভরি ||0 বিক্রয় হয় এবং ত্রিশ টাকায় ৬০ ভরি রুপা পাওয়া যায়, তবুও তাহার উপর যাকাত ফরজ হইবে না । কেননা, তাহার নিকট ত্রিশ টাকার মধ্যে ৩০ ভরি রুপাই আছে, যদিও উহার মূল্য ৬০ ভরি রুপা হয়; (অবশ্য ৬০ ভরি রুপা থাকিলে যাকাত ফরজ হইবে, যদিও তাহার মূল্য ৩০ টাকা হয়।) কিন্তু শুধু সোনা বা শুধু রুপা থাকিলে তাহার মূল্যের হিসাব ধরা হয় না; ওজনের হিসাবই ধরা হয় ।
মাসআলাঃ
(নেসাব পরিমাণ সম্পদের মূল্য ১০০ টাকা ধরিয়া) কেহ ১৬ই রজব তারিখে (হাজাতে আছলিয়া বাদে এবং করজ বাদে) ১০০ টাকার মালিক হইল এবং রমযানে আরও ২০ টাকা লাভ পাইল, তারপর রবিয়ল আউয়ালে আরও ৩০ টাকা লাভ পাইয়া মোট ৫০ টাকা বাড়িল । এখন পর বৎসর ১৫ই রজব তারিখে হিসাব করিয়া দেখে যে (করজ ও হাজাতে আছলিয়া বাদে) তাহার মোট ১৫০ টাকা আছে । এইরূপ হইলে ১৫ই রজব তারিখে তাহার উপর ১৫০টাকারই যাকাত ফরয হইবে । ইহা বলা চলিবে না যে, পরে ৫০ টাকা লাভ করিয়াছে তাহার ত পূর্ন এক বৎসর যায় নাই । কেননা বৎসরেরমাঝখানের কম বা বেশির হিসাব ধরা হয় না; হিসাব ধরা হয় বৎসরের শুরু ও শেষের ।
মাসআলাঃ
কেহ ১৫ই শওয়াল তারিখে মাত্র ১০০ তোলা রুপার মালিক ছিল ( হাযাতে আছলিয়া এবং করয বাদে ) তারপর বৎসরের মাঝখানে ২/৪ তোলা বা ৯/১০ তোলা সোনারও সে মালিক হইল, এইরূপ অবস্থা হইলে বৎসর যখন পূর্ণ হইবে অর্থাৎ পর বৎসর ১৪ শওয়াল তারিখে তাহার সোনা এবং রূপা উভয়েরই যাকাত দিতে হইবে । এ বলা যাইবে না যে, সোনার উপর এক বৎসর পূর্ণ হয় নাই। কারন, রুপার সঙ্গে সঙ্গে সোনার বৎসরও পূর্ণ ধরিতে হইবে ।
মাসআলাঃ
সোনা বা রুপা ব্যতিরেকে অন্য যত ধাতু আছে যেমন, লোহা, তামা, পিতল, কাঁসা, রাং ইত্যাদি, অথবা কাপড়, জুতা, চিনাবাসন, কাঁচের বরতন ইত্যাদি যত আসবাব-পত্র আছে তাহার হুকুম এই যে, যদি এইগুলির কেনা-বেচার ব্যবসা করে, তবে নেছাব পরিমাণ হইলে বৎসর কাল হইলে স্থায়ী হইলে তাহার যাকাত দিতে হইবে; নতুন ব্যবসা না করিয়া শুধু ঘরে রাখা থাকিলে, এইসব আসবাবপত্রের মুল্য হাজারটাকা হইলেও তাহার উপর যাকাত ফরয হইবে না ।
মাসআলাঃ
ডেগ, ছিউনি ( খাঞ্জা ) লগন, বরতন ইত্যাদি, কোঠাঘর ইত্যাদি, বারী, জমীন, কাপড়, শাড়ী, জুতা ইত্যাদি এবং মনিমুক্তার মুল্যবান হার; ফলকথা এই যে, সোনা এবং রুপা ব্যতিরেকে অন্য যত জিনিস আছে তাহা দৈনন্দিন ব্যবহারে আসুক বা শুধু ঘরে থাকুক, যে পর্যন্ত তাহার কেনা-বেচা এবং ব্যবসা করা না হইবে, সে পর্যন্ত তাহাতে যাকাত নাই । অবশ্য এই সব জিনিসের তেজারত করিলে হিসাব করিয়াতাহার যাকাত দিতে হইবে । ( পক্ষান্তরে সোনা এবং রুপা শুধু সিন্দুকে রাখা থাকিলে বা মাটির নিচে পুতিয়া রাখিলেও তাহার যাকাত দিতে হইবে। )
মাসআলাঃ
কাহারও নিকট যদি দশ পাঁচটা বাড়ী থাকে এবং তাহা ভাড়ার উপর দেয়, অথবা চার পাঁচশত টাকার বাসন কিনিয়া তাহা ভাড়া দেয় ( অথবা চার পাঁচ হাজার টাকার মোটর বা নৌকা কিনিয়া তাহা ভাড়া দেয় বা নিজের কারবার চালায় ) তবে ঐসব মালের উপর যাকাত নাই । মোটকথা, ভাড়ার উপর হাজার হাজার টাকার গাড়ী ঘোড়া চালাইলেও তাহার উপর যাকাত নাই । অবশ্য ভাড়ার টাকা নেছাব পরিমাণ হইলে এবং বৎসর অতীত হইলে তাহার উপর যাকাত ফরয হইবে, অথবা এইসব জিনিসের কেনাবেচা করিলে এই সব জিনিসের উপরও যাকাত ফরয হইবে এবং মুল্য হিসাব করিয়া যাকাতদিতে হইবে ।
মাসআলাঃ
পরিধানের কাপড় বা জুতা যতই ঘরে থাকুক না কেন এবং যতই মুল্যবান হউক না কেন তাহাতে যাকাত নাই, কিন্তু যদি তাহাতে খাঁটি সোনা বা রুপার কারুকার্য থাকে, তবে সোনা বা রুপার পরিমাণ নেছাব পরিমাণ পৌঁছাইলে ( অন্য সোনা রুপা থাকিলে তাহার সহিত মিলাইয়া বা পৃথক ভাবে ) তাহার যাকাত দিতে হইবে । অন্যথায় যাকাত দিতে হইবে না ।
মাসআলাঃ
কাহারও নিকট যদি কিছু পরিমাণ সোনা বা রুপার জেওর থাকে এবং কিছু পরিমাণ তেজারতের মালও থাকে ( কাপড়, জুতা, ধান, পাট হইলেও ) সবের মুল্য যোগ করিলে যদি ৫২।।০ তোলা রুপা বা ৭।।০ তোলা সোনার সমান হয়, তবে যাকাত ফরয হইবে, কম হইলে ফরয হইবে না ।
মাসআলাঃ
( নিজের জমির পাট বা ধান এক বৎসর কাল ঘরে জমা করিয়া রাখিলে তাহার যাকাত দিতে হইবে না । শাদী বিবাহের জন্য, যিয়াফতের জন্য, নিজের বছরের খোরাকের জন্য চাউল গোলা করিয়া রাখিলেও যাকাত দিতে হইবে না ।) মোটকথা, ব্যবসার নিয়তে যে মাল খরিদ করিবে উহা তেজারতের মাল হইবে এবং তাহার উপর যাকাত ফরয হইবে । নিজ খরচ অথবা দানের নিয়তে খরিদ করিলে পরে যদি ব্যবসার নিয়ত করে, তবে ইহা তেজারতের মাল হইবে না ।
মাসআলাঃ
যদি কাহারও নিকট তোমার টাকা পাওনা থাকে, তবে পাওনা টাকার যাকাত দিতে হইবে । পাওনা টাকা তিন প্রকার। প্রথম প্রকার এই যে, হয়ত নগদ টাকা বা সোনা রুপা কাহাকেও ধার দিয়াছে। অথবা তেজারতের মাল বিক্রিয় করিয়াছে সে বাবত টাকা পাওনা হইয়াছে। এক বৎসর বা দুই তিন বৎসর পর টাকা উসুল হইল। এখন যত টাকায় যাকাত ওয়াজিব হয় পাওনা টাকা তত পরিমাণ হইলে অতীত বৎসর সমুহের যাকাত দেওয়া ওয়াজিব হইবে । যদি একত্রে উসুল না হয়, তবে যখন ১১ তোলা রুপার সমপরিমান টাকা উসুল হইবে তখন ঐ টাকারই যাকাত দিতে হইবে । যদি উহা হইতে কম উসুল হয়, তবে ওয়াজিব হইবে না । আবার যখন সেই পরিমান টাকা পাইবে, তখন ঐ পরিমাণ টাকার যাকাত দিবে । এইরূপ দিতেই থাকিবে । আর যদি পাওনা টাকা নেছাব হইতে কম হয়, তবে যাকাত ওয়াজিব হইবে না । অবশ্য তাহার কাছে যদি অন্যান্য সম্পত্তি থাকে যে উভয় মিলিয়া নেছাব পুরা হয়, তবে যাকাত ওয়াজব হইবে ।
মাসআলাঃ
দ্বিতীয় প্রকার যদি নগদ টাকা করয না দেয় বা তেজারতের মাল বিক্রয় না করে, তেজারতী বা অন্যান্য মাল বিক্রয় করিলে যেমন, পরিবার বস্ত্র, অন্যান্য সামগ্রী ইত্যাদি বিক্রয় করে এবং উহার দামও ঐ পরিমাণ বাকী আছে, যে যাকাত ওয়াজিব হয়, এই টাকা যদি কয়েক বৎসর পর উসুল হয়, তবে ঐ কয়েক বৎসরের যাকাত দেওয়া ওয়াজিব, আর যদি এক সঙ্গে উসুল না হয় বরং কিছু কিছু করিয়া উসুল হয়, তবে নেসাবে যাকাত পরিমাণ টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত যাকাত ওয়াজিব হইবে না । যখন সেই পরিমাণ পাইবে তখন কয়েক বতসরের যাকাত দেওয়া ওয়াজিব হইবে ।
মাসআলাঃ
তৃতীয় প্রকার এই যে, স্বামীর নিকট মোহরের টাকা পাওনা ছিল । কয়েক বৎসর পর ঐ টাকা পাওয়া গেল। টাকা পাওয়ার পর হইতে যাকাত হিসাব করিতে হইবে। বিগত বৎসর সমুহের যাকাত ওয়াজিব হইবে না । ঐ টাকা পুরা এক বৎসর মজুদ থাকিলে যাকাত ওয়াজিব হইবে; অন্যথায় নহে ।
মাসআলাঃ
মালেকে নেছাব যদি পূর্ণ বৎসর অতিবাহিত হইবার ( হাওলানে হাওলের ) পূর্বেই যাকাত আদায় করিয়া দেয়, তবে তাহাও দুরুস্ত আছে। আর যদি কোন গরীব লোক মালেকে নেছাব না হওয়া স্বত্বেও কোথাও হইতে টাকা পাওয়ার আশায় আগেই যাকাত আদায় করিয়া দেয়, তবে যাকাত আদায় হইবে না । পরে যদি মাল পায়, তবে হাওলানে হাওলের পর হিসাব করিয়া তাহার যাকাত দিতে হইবে; পূর্বে যাহা দিয়াছে তাহা নফল ছদ্কা হইয়া যাইবে এবং তাহার সওয়াব পৃথক ভাবে পাইবে, উহাকে যাকাত রুপে গন্য করা যাইবে না ।
মাসআলাঃ
মালেকে নেছাব লোক যদি কয়েক বৎসরের যাকাত যদি এককালীন অগ্রীম দিয়া দেয়, তবে তাহাও দুরুস্ত আছে । কিন্তু যে কয়েক বৎসরের যাকাত অগ্রীম দিয়াছে তাহার মধ্যে কোন বৎসরের মাল যদি বাড়িয়া যায়, অর্থাৎ যত টাকা হিসাব করিয়া যাকাত দিয়াছে, মাল তাহা অপেক্ষা বেশী হয়, তবে যত টাকা বাড়িয়াছে তাহার যাকাত পুনরায় দিতে হইবে ।
মাসআলাঃ
(নেসাব পরিমাণ সম্পদের মূল্য ১০০ টাকা ধরিয়া) আমীনের নিকট ১০০ টাকা মজুদ আছে, আরও ১০০ টাকা অন্য কোন জায়গা হইতে পাইবার আশা পাওয়া গেল, এমতাবস্থায় বৎসর শেষ হইবার পূর্বেই আমীন হয়ত পূর্ণ ২০০ টাকা যাকাত দিয়া দিল, এইরূপ দেওয়া দুরুস্ত আছে । কিন্তু ঘটনাক্রমে যদি বৎসর শেষে মাল নেছাব হইতে কম হইয়ায় যায়, তবে যাকাত মাফ হইয়া যাইবে এবং যাহা পূর্বে দেওয়া হইয়াছে তাহা নফল ছদ্কা হইয়া যাইবে ।
মাসআলাঃ
কাহারও মালের উপর পূর্ণ এক বৎসর শেষ হইয়া গেল অথচ এখনও যাকাত দেয় নাই, এমন সময় তাহার মাল চুরি হইয়া গেল বা অন্য কোন প্রকারে যেমন বাড়ী পুরিয়া বা নৌকা ডুবিয়া তাহার সমস্ত মাল নষ্ট হইয়া গেল , এইরূপ অবস্থা হইলে তাহার যাকাত দিতে হইবে না । কিন্তু যদি নিজে ইচ্ছা করিয়া মাল নষ্ট করিয়া ফেলে বা কাহাকেও দিয়া ফেলে, তবে যাকাত মা’ফ হইবে না ।
মাসআলাঃ
বৎসর পুরা হইবার পর অর্থাৎ, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর যদি কেহ নিজের সমস্ত মাল খয়রাত করিয়া দেয়, তবে যাকাত মা’ফ হইয়া যাইবে ।
মাসআলাঃ
(নেসাব পরিমাণ সম্পদের মূল্য ১০০ টাকা ধরিয়া) কাহারও নিকট ২০০ টাকা ছিল, এক বৎসর পর তাহা হইতে ১০০ চুরি হইয়া গেল বা খয়রাত করিয়া দিল, এইরূপ অবস্থা হইলে তাহার মাত্র ১০০ টাকা যাকাত দিতে হইবে, বাকী ১০০ টাকার যাকাত মা’ফ হইয়া যাইবে । যদি হিসাব করিয়া যাকাতের টাকা গরীবের হাতে না দিয়া পৃথক করিয়া নিজের কাছে রাখে এবং সেই টাকা নষ্ট হইয়া যায়, তবে তাহাতে যাকাত আদায় হইবে না, যাকাতের টাকা পুনরায় বাহির করিয়া গরীবকে দিতে হইবে ।
যাকাত আদায় করিবার নিয়ম
মাসআলাঃ
আল্লাহ্ পাক যে দিন তোমাকে মালেকে নেছাব করিলেন, সেই দিন আল্লাহ্ পাকের শোকর করিবে এবং সেই তারিখটি (চাঁদের হিসাবে) লিখিয়া রাখিবে । তারপর যখন বৎসর শেষ হইয়া যাইবে, তখন কিছুমাত্র বিলম্ব না করিয়া যাকাত বাহির করিয়া দিবে । নেক কাজে দেরী করে উচিত নয় । কারন, কি জানি, হঠাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হইয়া নেক কাজ করার সুযোগ হারাইয়া ফেলে এবং গোনাহ্র বোঝাকাঁধে থাকিয়া যায় । যদি এক বৎসর অতীত হইবার পর যাকাত না দেওয়া অবস্থায় দ্বিতীয় বৎসরও অতীত হইয়া যায়, তবে ভারি গোনাহগার হইবে । তখন তওবা করিয়া খোদার কাছে কাকুতি মিনতি করিয়া মাফ চাহিয়া উভয় বৎসরের যাকাত হিসাব করিয়া দিয়া দিবে । মোটকথা, জীবনের যে কোন সময় দিয়া দিবে; বাকী রাখিবে না ।
মাসআলাঃ
মালের চল্লিশ ভাগের একভাগ যাকাত দিতে হইবে । একশত টাকায় ২||০ টাকা, ৪০ টাকায় এক টাকা দিতে হইবে ।
মাসআলাঃ
যে সময় যাকাতের মাল কোন গরীব মিস্কীনের হাতে দিবে, তখন মনে মনে এই খেয়াল (নিয়ত) করিবে যে, এই মাল আমি যাকাত বাবত দিতেছি । যদি দিবার সময় এইরূপ নিয়ত মনে উপস্থিত না থাকে তবে যাকাত আদায় হইবে না, যাকাত পুনরায় দিতে হইবে । নিয়ত ছাড়া যাহা দিয়াছ তাহা নফল ছদ্কা হইয়া যাইবে এবং তাহার সওয়াব পৃথকভাবে পাইবে ।
মাসআলাঃ
কেহ যাকাতের মাল যখন গরীবের হাতে দিয়াছে, তখন যাকাতের কথা করে নাই, এইরূপ অবস্থায় ঐ মাল গরীবের হাতে থাকিতে থাকিতে যদি যাকাতের নিয়ত করে, তবুও যাকাত আদায় হইয়া যাইবে, কিন্তু খরচ করিয়া ফেলার পর যদি নিয়ত করে, তবে আদায় হইবে না; পুনরায় যাকাত দিতে হইবে ।
মাসআলাঃ
কেহ যদি দুই টাকা পৃথক যাকাতের নিয়তে এক জায়গায় রাখিয়া দেয় যে, যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যাইবে, তখন তাহাকে দেওয়া হইবে, তারপর যখন উপযুক্ত পাত্র পাইয়া তাহাকে দিয়াছে, তখন যাকাতের নিয়তের কথা তাহার মনে আসে নাই । এইরূপ অবস্থা হইলে যাকাত আদায় হইয়া যাইবে । যদি পৃথক করিয়া না রাখিত, তবে যাকাত আদায় হইত না ।
মাসআলাঃ
কেহ হিসাব করিয়া যাকাতের টাকা বাহির করিল। এখন তাহার ইচ্ছা, একজনকেই দিয়া দেউক বা অল্প অল্প করিয়া কয়েকজনকে দেউক। যদি অল্প অল্প করিয়া কয়েক দিন দেয়, তবে তাহাও জায়েয আছে। আর যদি তখন দিয়া ফেলে, তাহাও দুরুস্ত আছে ।
মাসআলাঃ
যাকাত যাহাকে দিবে অন্ততঃ এত পরিমাণ দেবে যেন, ঐ দিনের খরচের জন্য সে অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়। ( কম পক্ষে এত পরিমাণ দেওয়া মুস্তাহাব। ইহা অপেক্ষা কম দিলেও যাকাত আদায় হইয়া যাইবে ।)
মাসআলাঃ
যত মাল থাকিলে যাকাত ওয়াজিব হয় তত যাকাত একজনকে দেওয়া মাকরুহ্। তাহা স্বত্বেও দিলে আদায় হইয়া যাইবে । তদুপেক্ষা কম দেওয়া জায়েয আছে; মাকরুহ্ নহে।
মাসআলাঃ
কোন একজন গরীব লোক আমীনের নিকট টাকা হাওলাত চাহিল; আমীন জানে সে এমন অভাবগ্রস্ত যে, টাকা দিলে আর দিতে পারিবে না বা দিবেও না ; এই কারনেই আমীন হাওলাত বলিয়াই তাহাকে যাকাতের টাকা দিল, কিন্তু আমীনের মনে নিয়ত রহিল যে সে যাকাত দিয়াছে , এমতাবস্থায় যদি সে হাওলাত মনে করে, তবুও আমীনের যাকাত আদায় হইয়া যাইবে । ( কিন্তু সে যদি কোন দিন হাওলাত শোধ করিতে আসে, তবে আমীন লইবে না, তাহাকেই আবার দিয়া দিবে ।)
মাসআলাঃ
যদি কোন গরীবকে পুরস্কার বা বখ্শিশ্ বলিয়া যাকাতের মাল দেওয়া হয়, কিন্তু মনে যাকাতের নিয়ত থাকে, তবে থাতেও যাকাত আদায় হইয়া যাইবে। ( সম্মানী অভাবগ্রস্ত লোককে যাকাতের কথা বলিয়া দিলে হয়ত তাহারা মনে কষ্ট পাইতে পারে, এই জন্য তাহদিগকে এই ভাবেই দেওয়া সঙ্গত। কিন্তু যদি সাইয়্যদ বংশ বা মালদারের না বালেগ সন্তান হয়, তবে তাহাদিগকে যাকাতের মাল হইতে দিবে না , লিল্লাহ্র মাল হইতে দিবে ।)
মাসআলাঃ
কোন গরীবের নিকট ১০ টাকা পাওনা ছিল এবং নিজের মালের যাকাতও ১০ টাকা বা তার বেশী হইয়াছে। ইহাতে যদি যাকাতের নিয়তে সে পাওনা মা’ফ করিয়া দেয়, তবে যাকাত আদায় হইবে না । অবশ্য তাহাকে যাকাতের নিয়্যতে ১০ টাকা দিলে যাকাত আদায় হইয়া যাইবে । এখন এই টাকা তাহার কাছ থেকে করয শোধ বাবদ লওয়া দুরুস্ত আছে।
মাসআলাঃ
কাহারো নিকট যে পরিমাণ জেওর আছে হিসাব করিয়া তাহার যাকাত ৩ তোলা রুপা হইল, বাজারে ৩ তোলা রুপার দাম ২ টাকা। এখন যদি সে ৩ তোলা রূপা না দিয়া গরীবকে ( রুপার ) ২টি টাকা দিয়া দেয়, তবে যাকাত আদায় হইবে না । কেননা, ২ টি টাকার ওজন ৩ তোলা নহে, অথচ শরীঅতের কানুন ও হুকুম এই যে, রুপার যাকাত যখন রুপার দ্বারা আদায় করিবে, তখন তাহার মূল্যের হিসাব ধরা যাইবে না, ওজনের হিসাব ধরিতে হইবে । অবশ্য ৩ তোলা রুপার মুল্য যে ২ টাকা হয় সেই ২ টাকার সোনার বা তামার পয়সা বা ( ধান, চাউল বা কাপড় দিলে যাকাত আদায় হইবে, রুপা পুরা ৩ তোলার কম দিলে যাকাত আদায় হইবে না ।)
মাসআলাঃ
যাকাতের টাকা গরীবদিগকে নিজের হাতে না দিয়া যদি অন্য কাহাকেও উকিল বানাইয়া তাহার দ্বারা দেয় তাহাও দুরুস্ত আছে। মুয়াক্কেলের যাকাতের নিয়্যত থাকিলে উকিলের নিয়্যত যদি নাও থাকে তাহাতেও কোন ক্ষতি হইবে না, যাকাত আদায় হইয়া যাইবে ।
মাসআলাঃ
আপনি গরীবদিগকে যাকাত দেওয়ার জন্য কাহাকেও উকিল নিযুক্ত করিয়া তাহার হাতে যাকাতের ২ টাকা দিলেন। সে অবিকল ঐ টাকা গরীবকে না দিয়া নিজের টাকা হইতে ২ টাকা গরীবকে আপনার যাকাতের নিয়্যতে দিয়া দিল, মনে মনে ভাবিল যে, গরীবকে আমি আমার টাকা হইতে দিয়া দেই, পরে ঐ টাকা আমি নিয়া নিব। এইরূপ করিলে যাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত এই যে, ঐ ২ টাকা যেন তাহ্র কাছে মওজুদ থাকে, এইরূপ হইলে আপনার যাকাত তাহার নিজের টাকা হইতে দিয়া আপনার দেওয়া টাকা সে নিতে পারিবে এবং আপনার যাকাত আদায় হইয়া যাইবে, কিন্তু যদি সে ২ টাকা খরচ করিয়া ফেলিয়া থাকে ( বা নিজের টাকার সহিত মিলাইয়া ফেলিয়া থাকে ) এবং নিজের টাকা হইতে আপনার যাকাত দেয়, তবে আপনার যাকাত আদায় হইবে না । এইরূপ যদি নিজের টাকা হইতে দেওয়ার সময় নিয়্যত না করিয়া থাকে, তবুও আপনার যাকাত আদায় হইবে না। এখন ঐ ২ টাকা পুনরায় যাকাত বাবদ দিতে হইবে ।
মাসআলাঃ
যদি আপনি টাকা না দিয়া কাহাকেও আপনার যাকাত দেওয়ার জন্য উকিল নিযুক্ত করেন এবং বলিয়া দেন যে, আমার তরফ হইতে আপনার নিজ তহবিল হইতে যাকাত দিয়া দিন, পরে আমি আপনাকে দিয়া দিব, এরুপ দুরুস্ত আছে । এইরূপে যাকাতের নিয়্যতে দিলে আপনার যাকাত আদায় হইয়া যাইবে এবং যত টাকা সে দিয়াছে তত টাকা সে পরে আপনার নিকট হইতে নিয়া নিবে ।
মাসআলাঃ
আপনার বলা ব্যতিরেকে যদি কেহ আপনার পক্ষ হইতে যাকাত দিয়া দেয়, তবে তাহাতে আপনার যাকাত আদায় হইবে না, এখন যদি আপনি মঞ্জুরও করেন, তবুও দুরুস্ত হইবে না এবং যে পরিমাণ টাকা আপনার পক্ষ হইতে দিয়াছে তাহা সে আপনার নিকট হইতে উসুল করিতে পারিবে না ।
মাসআলাঃ
যদি আপনি কাহাকেও আপনার যাকাতের টাকা হইতে ২ টাকা দিয়া বলেন যে, আপনি এই টাকা গরীবকে দিয়া দিবেন । এখন আপনি নিজেও দিতে পারেন বা নিজে না দিয়া অন্য কোন বিশ্বস্ত লোকের দ্বারা দিয়া দেন তাহাও দুরুস্ত আছে । নাম বলার প্রয়োজন নাই যে, অমুকের পক্ষ হইতে যাকাত দিতেছি । এইরূপে তিনি যদি নিজের মা, বাপ বা নিজের অন্য কোন গরীব আত্মীয়কে দেন, তাহাও দুরুস্ত আছে; কিন্তু যদি নিজে গরীব হন এবং উহা গ্রহন করেন, তবে তাহা দুরুস্ত নহে । অবশ্য আপনি যদি তাহাকে টাকা দিবার সময় এইরূপ বলিয়া দিয়া থাকেন যে, যাকাতের টাকা দিলাম, আপনি যাহা ইচ্ছা তাহাই করিতে পারেন, তবে তিনি নিজে গরীব হইলে ( সাইয়্যদ না হইলে ) নিজেও নিতে পারিবেন ।
[ যাকাত দেওয়ার সময় এইরূপ দোয়া করিবেঃ হে আল্লাহ্! দয়া করিয়া আমার এই যাকাত কবুল করিয়া লও, তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ ।]
জমিনে উৎপন্ন দ্রব্যের যাকাত
মাসআলাঃ
কোন শহর কাফেরদের অধীনে ছিল। তাহারাই সেখানে বাস করিত । মুসলমান বাদশাহ্ স্বীয় প্রতিনিধি পাঠাইয়া অমুসলমানগনকে মিথ্যা ধর্ম ও দোযখের পথ পরিত্যাগ করিয়া সত্য ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিতে আহ্বান করিলেন। কিন্তু দুরাচার কাফেরেরা সে আহ্বানে সাড়া দিল না। এইরূপ তাহাদিগকে বলা হইল যে, তাহা হইলে তোমারা আমাদের অধীনতা স্বীকার করিয়া খাজনা আদায় কর এবং আমাদেরপ্রজা হইয়া আমাদের রক্ষণাবেক্ষণে সুখে শান্তিতে বাস করতে থাক। কাফেরেরা এই আহ্বানেও সাড়া দিল না । তারপর মুসলমান বাদশাহ্ খোদার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করিলেন। খোদা তা’আলা মুসলমানদের জয়ী এবং কাফেরগনকে পরাস্ত করিয়া দিলেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এতীমের মালের যাকাত দিতে হইবে কিনা এ সম্বন্ধে মতভেদ আছে । আমাদের ইমাম আবু হানিফা (রঃ) ছাহেব বলেন, এতীমের মালের যাকাত ওয়াজিব হয় না, ইমাম শাফেয়ী ছাহেব বলেন, এতীমের মালেরও যাকাত দিতে হইবে।
মুসলামান বাদশাহ্ ঐ শহর বা দেশ যাঁহারা ঐ জেহাদের গাযী ছিলেন তাঁহাদের মধ্যে বন্টন করিয়া দিলেন। এইরূপে যে সমস্ত দেশ মুসলমানদের অধীন হইয়াছে, অথবা সে দেশের অধিবাসী মুসলমানদের সহিত যুদ্ধ-বিগ্রহ না করিয়া আপন ইচ্ছায় মুসলমান হইয়া গিয়াছে এবং মুসলমান বাদশাহ্ও তাহাদিগকেই তাঁহাদের জমীনের আধিকারে বহাল করিয়াছেন, এই দুই প্রকার জমিনকে ওশ্রী জমিন বলে। সমগ্র আরব দেশের জমিন ওশরী।( এতদব্যতিত মুসলমান বাদশাহ্ দ্বারা যে সমস্ত জমিনের স্বত্বাধিকারী কাফেরেরা সাব্যস্ত হইয়াছে এবং তাঁহাদের উপর খেরাজ ধার্য করা হইয়াছে সেই সমস্ত জমিন খেরাজী জমিন।)
[খেরাজী জমিনের খেরাজ দিতে হয় ওশ্র দিতে হয় না, আর ওশ্রী জমিনের ওশ্র দিতে হয় ।]
মাসআলাঃ
কাহারও পূর্বপুরুষ হইতে পুরুষানুক্রমে যদি ওশ্রী জমিন চলিয়া আসিয়া থাকে, অথবা কোন মুসল্মানের হইতে ওশরী জমিন খরিদ করিয়া থাকে , তবে সেই জমিনের যাকাত দিতে হইবে। ( জমিনের যাকাতকে ওশর বলে। ) ওশর দেওয়ার নিয়ম এই যে, সমস্ত জমিনে পরিশ্রম করিয়া পানি দিতে হয় না; বরং স্বাভাবিক বৃষ্টির পানিতে বা বর্ষার স্রোতের পানিতে ফসল জন্মে সে সব জমিতে যাহা কিছু ফসল হয় তাহার দশ ভাগের এক ভাগ আল্লাহর রাস্তায় দান করা ওয়াজিব। অর্থাৎ দশ মন হইলে এক মন, দশ সের হইলে এক সের। আর যে সমস্ত জমিতে পরিশ্রম করিয়া পানি দিয়া ফসল জন্মাইতে হয়, সে সব জমির ফসলের ২০ ভাগের এক ভাগ আল্লাহ্র রাস্তায় দান করিতে হইবে। অর্থাৎ বিস মন হইলে এক মন, বিশ সের হইলে এক সের। বাগ বাগিচারও এই হুকুম। ( আমাদের ইমাম আ’যম ছাহেব বলেন, ) জমিনের ফসলের কোন নেছাব নির্ধারিত নাই, কম হউক বা বেশী হউক যাহা হয় তাহার দশ ভাগের এক ভাগ দিতে হইবে।
মাসআলাঃ
ধান, পাট, গম, যব, সরিষা, কলাই, বুট, কাওন, ফল, তরকারী, শাক-সব্জি, সুপারী, নারিকেল, আখ, বেরন, খেজুর গাছ, কলা গাছ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যাহা কিছু জন্মিবে, তাহার ওশর দিতে হইবে, ইহাই জমিনের যাকাত।
মাসআলাঃ
ওশ্রী জমিন হইতে, অথবা বে আবাদ বন বা পাহাড় হইতে যদি মধু সংগ্রহ করে তবে তাহারও ওশ্র দিতে হইবে।
মাসআলাঃ
চাষের জমিনের বা বাগিচায় না হইয়া বারীতে যদি কোন ফল বা তরকারী হয়, তবে তাহাতে ওশ্র ওয়াজিব হইবে না ।
মাসআলাঃ
ওশ্রী জমিন যদি কোন কাফের ক্রয় করিয়া নেয়, তবে সেই জমিন ওশ্রী থাকিবে না। পুনরায় সেই কাফেরের নিকট হইতে যদি কোন মুসলমান খরিদ করিয়া লয় বা অন্য কোন প্রকারে পায়, তবুও ওশ্রী হইবে না ।
মাসআলাঃ
দশ ভাগের এক ভাগ বা বিশ ভাগের এক ভাগ জমিনের উপর, না ফসলের মালিকের উপর, ইহাতে আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে। সুবিধার জন্য আমারা বলিয়া থাকি যে, ফসলের মালিকের উপর । অতএব, জমিন যদি নগদ টাকায় পত্তন (ইজারা) দেওয়া হয়, তবে ফসল যে পাইবে, ওশ্র তাহারি দিতে হইবে; আর যদি বর্গা দেওয়া হয়, তবে ফসল যেই পরিমাণ পাইবে তাহার সেই পরিমাণ ওশ্র দিতে হইবে ।
যাকাতের গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি
মাসআলাঃ
মালদার লোকের জন্য যাকাত খাওয়া বা তাহাকে যাকাত দেওয়া জায়েয নহে । [ সে মালদার পুরুষ হউক বা স্ত্রী হউক, বালেগ হউক বা না বালেগ হউক ।] মালদার দুই প্রকারঃ এক প্রকার মালদার যাহার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়; যেমন, যাহার নিকট ৫২।।০ তোলা রুপা বা ৭।।০ তোলা সোনা আছে বা ঐ মূল্যের দোকানদারীর মাল আসবাব আছে, তাহার উপর যাকাত, ফেৎরা ও কোরবানী ওয়াজিব হইবে। সে যাকাত খাইতে পারিবে না, তাহাকে দিলে যাকাত আদায় হইবে না। দ্বিতীয় প্রকার মালদারঃ যাহার উপর যাকাত ওয়াজিব নহে; যেমন যাহার নিকট উপরোক্ত তিন প্রকার মাল নাই বটে; কিন্তু হাজতে আছলিয়া অর্থাৎ, দৈনন্দিন জীবন যাপনোপযোগী আবশ্যকীয় মাল আসবাব ব্যতিরেক উপরোক্ত মূল্যের অন্য কোন মাল আছে, তাহার উপর যাকাত ওয়াজিব নহে; ( কিন্তু ফেৎরা ও কোরবানী ওয়াজিব। তাহার জন্য যাকাত, ফেৎরা, মান্নতের মাল,কাফ্ফারার মাল, জিযিয়া, কোরবানীর চামড়ার পয়সা ইত্যাদি ছদ্কায়ে ওয়াজিবার মাল খাওয়া জায়েয নহে। )
মাসআলাঃ
যাহার নিকট নেছাব পরিমাণ মাল নাই বরং অল্প কিছু মাল আছে কিংবা কিছুই নাই, এমনকি এক দিনের খোরাকীও নাই, এমন লোককে গরীব বলে। ইহাদিগকে যাকাত দেওয়া দুরুস্ত আছে, ইহাদের যাকাত লওয়ায়ও দুরুস্ত আছে। অর্থাৎ গরীব উহাকে বলে, যাহার নিকট কিছু মাল সম্পত্তি আছে, কিন্তু নেছাব পর্যন্ত পৌঁছে নাই ( যাকাতের নেছাবও নহে, ফেৎরা, কোরবানীর নেছাবও নহে )। কিংবা যাহার নিকটকিছুই নাই, এমনকি একদিনের খোরাকও নাই, ইহাদিগকে যাকাত দেওয়া দুরুস্থ আছে এবং তাঁহাদের যাকাত লেওয়াও দুরুস্ত আছে ।
মাসআলাঃ
বড় বড় ডেগ, বড় বড় বিছানাপত্র বা বর বড় শামিয়ানা, যাহা দৈনন্দিন কাজে লাগে না, বৎসরে দুই বৎসরে শাদী বিবাহের সময় কখনও কাজে লাগে; এই সব জিনিসকে হাজাতে আছলিয়ার মাঝে গন্য করা হয় না ।
মাসআলাঃ
বসতঘর বা দালান, পরিধানের কাপড়, কামকাজ করার জন্য নওকর চাকর, বড় গৃহস্থের আসবাবপত্র, আলেম ও তালেবে ইলমের কিতাব, এই সবকে হাজাতে আছলিয়ার মাঝে গন্য করা হয়।
মাসআলাঃ
যাহার নিকট দশ পাঁচটি বাড়ী আছে, যাহার কেরায়া দ্বারা সে জীবিকা নির্বাহ করে, অথবা এক আধ খানা গ্রাম আছে, কিন্তু পরিবারবর্গের খরচ এত বেশী যে, তাহার আয়ের দ্বারা ব্যয় নির্বাহ হয় নাঃ বরং অনেক কষ্টে জীবন যাপন করিতে হয় এবং তাহার নিকট অন্য কোন জিনিসও যাকাত বা ফেৎরা ওয়াজিব হওয়ার উপযুক্ত নাই, এমন লোককে যাকাতের পয়সা দেওয়া জায়েয আছে।
মাসআলাঃ
মনে করুন, কাহারও নিকট হাজার টাকা আছে, কিন্তু আবার হাজার টাকা বা তাহা অপেক্ষা বেশী দেনাও আছে, এরুপ লোককে যাকাত দেয়া জায়েয আছে। আর যদি যত টাকা জমা আছে, দেনা তাহার চেয়ে কম হয় এবং দেনা আদায় করিয়া দিলে মালেকে নেছাব না থাকে, তবে তাহাকেও যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। যদি দেনা আদায় করিবার পর মালেকে নেছাব থাকে, তবে তাহাকে যাকাত দেওয়া বা তাহার জন্য যাকাত খাওয়া জায়েয নহে।
মাসআলাঃ
কেহ হয়ত বাড়ীতে খুব ধনী, কিন্তু বিদেশে এমন মুছিবতে পড়িয়াছে যে, বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছাইবার বা তথা হইতে টাকা আনাইয়া খরচ চালাইবার কোনই উপায় নাই, এইরূপ লোককে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। এইরূপ কোন লোক হজ্জ করিতে গিয়া পথিমধ্যে যদি অভাবে পড়ে, তাহাকেও যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। (এইরূপ ধণী হওয়া স্বত্বেও যে ব্যক্তি অভাবে পড়ে তাহাকে “ইবনোস্সনীল” বলে ।ইবনোস্সবীলকে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে ।)
মাসআলাঃ
যাকাত অমুসলমানকে দেওয়া জায়েয নাই। যাকাত, ওশর , ফেৎরা, মান্নত, কাফ্ফারা ইত্যাদি ছদ্কায়ে ওয়াজিবার মাল মুসলমানকেই দিতে হইবে । ছদকায়ে নাফেলা অমুসলমানকেও দেওয়া জায়েয আছে ।
মাসআলাঃ
( যাকাত ইত্যাদি সর্বপ্রকার ছদ্কায়ে ওয়াজিবার হুকুম এই যে, কোন গরীবকে মালেক বানাইয়া দিতে হইবে ।) কোন গরীবকে মালেক না বানাইয়া যদি কেহ যাকাতের পয়সা দ্বারা মসজিদ বা মাদ্রাসার ঘর নির্মাণ করে বা উহার বিছানা খরিদ করে বা কোন মৃত ব্যক্তির কাফনে খরচ করে বা তাহার দেনা পরিশোধ, তবে যাকাত আদায় হইবে না ।
মাসআলাঃ
নিজের যাকাত ( সর্বপ্রকার ছদ্কায়ে ওয়াজিবা ) নিজের মা, বাপ, দাদা, দাদী, নানা, নানী পরদাদা ইত্যাদি অর্থাৎ, যাহাদের দ্বারা তাহার জন্ম হইয়াছে, তাহাদিগকে দেওয়া জায়েয নহে। এইরূপ ছেলে, মেয়ে, পোতা, পুতি, নাতি, নাতনী এবং ঊহাদের বংশধরগণ যাঁহারা তাহার ঐরসে জন্মিয়াছে তাহাদিগকে যাকাত দেওয়া জায়েয নহে । স্বামী নিজের স্ত্রীকে এবং স্ত্রী নিজের স্বামীকেও যাকাত দিতে পারিবে না ।
মাসআলাঃ
এ ব্যতীত চাচা, মামু, খালা, ভাই, ভগ্নী, ফুফু, ভাগিনেয়, ভাতিজা, সতাল মা, শ্বাশুড়ী ইত্যাদি রেশ্তাদারগনকে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে ।
মাসআলাঃ
না-বালেগ সন্তানের বাপ যদি মালদার হয়, তবে ঐ না-বালেগ সন্তানকে যাকাত দেওয়া জায়েয নহে। বালেগ সন্তান যদি নিজে মালদার না হয়, তবে শুধু তাহার বাপ মালদার হওয়ায় তাহকে যাকাত দেওয়া দুরুস্ত হইবে ।
মাসআলাঃ
না-বালেগ সন্তানের বাপ মালদার নহে; কিন্তু মা মালদার তবে তাঁহাদের ঐ না বালেগ সন্তানকে যাকাত দেওয়া দুরুস্ত হইবে।
মাসআলাঃ
সাইয়্যেদকে (মা ফাতেমার বংশধরকে), হযরত আলীর বংশধরকে, এরুপে যাঁহারা হযরত আব্বাছ, হযরত জাফর (রাঃ), হযরত আক্কীল, হযরত হারেস ইব্নে আবদুল মোত্তালেব প্রমুখদের বংশধর তাহাদিগকে যাকাত দেওয়া দুরুস্ত নাই এবং ওয়াজিব ছদ্কাও দেওয়া জায়েয নাই । যেমন, মান্নত, কাফ্ফারা, ছদ্কায়ে ফেৎর । এগুলো ব্যাতীত অন্যান্য ছদ্কা খয়রাত দান করা দুরুস্ত আছে।
মাসআলাঃ
বাড়ীর চাকর বা চাকরানীকে যাকাত দেওয়া দুরুস্ত আছে, কিন্তু বেতনের মধ্যে গনিয়া দিলা যাকাত আদায় হইবে না । অবশ্য ধার্য বেতন দেওয়ার পর বখশীশ স্বরূপ যদি দেয় এবং মনে যাকাতের নিয়্যত রাখে, তবে যাকাত আদায় হইয়া যাইবে।
মাসআলাঃ
দুধ মাকে বা দুধ ছেলেকে যাকাত দেওয়া দুরুস্ত আছে।
মাসআলাঃ
কোন মেয়েলোকের এক হাজার টাকার মহর আছে , কিন্তু তাহার স্বামী গরীব, মহরের টাকা দেবার মত শক্তি তাহার নাই, অথবা শক্তি আছে কিন্তু তলব করা স্বত্বেও সে দেয় না, অথবা মেয়েলোকটি তাহার মহরের টাকা সম্পূর্ণ মা’ফ করিয়া দিয়েছে, (এ ব্যতীত জেওরপাতি বা অন্য কোন দিক দিয়াও সে মালদার নহে ) এরুপ মেয়েলোককে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। অবশ্য যদি স্বামী ধনী হয় এবং মহ্রের টাকা তলব করিলে দেয়, তবে ঐ মেয়েলোককে যাকাত দেওয়া দুরুস্ত নাই।
মাসআলাঃ
যাকাতের মুস্তাহেক (লওয়ার যোগ্য) মনে করিয়া যদি কোন অপরিচিত লোককে যাকাত দেওয়ার পর জানা যায় যে, সে যাকাতের মুস্তাহেক নহে সাইয়্যদ বা মালদার, কিংবা অন্ধকার রাত্রে যাকাত দেওয়ার পর জানিতে পারিল যে, সে তাহার মা, মেয়ে বা নিজের এমন কোন রেশ্তাদার, যাহাকে যাকাত দেওয়া দুরুস্ত নহে, তবে তাহার যাকাত আদায় হইয়া যাইবে, ( কিন্তু যে নিয়াছে তাহার জন্য ঐ পয়সা হালাল হইবে না;) যদি সে জানিতে পারে যে, ইহা যাকাতের পয়সা তবে ফেরত দেওয়া ওয়াজিব হইবে। এইরূপ অপরিচিত লোককে দেওয়ার পর যদি জানা যায় যে, যাহাকে যাকাত দেওয়া হইয়াছে সে মুসলমান নহে , কাফের, তবে যাকাত আদায় হইবে না , পুনরায় দিতে হইবে ।
মাসআলাঃ
যদি কাহারও উপর সন্দেহ হয়, যে সে হয়ত মালদার হইতে পারে, তবে সন্দেহের পাত্রকে যাকাত দিবে না । বাস্তবিক অভাবগ্রস্ত কি না তাহা জানিয়া তারপর যাকাত দিবে। সত্যই অভাবগ্রস্ত কিনা, তাহা না জানিয়া যদি কোন সন্দেহের পাত্রকে যাকাত দেওয়া হয় এবং দেলে গাওয়াহী দেয় যে,সে অভাবগ্রস্ত, তবে যাকাত আদায় হইয়া গিয়াছে। আর যদি দিলে গাওয়াহী দেয় যে, সে মালদার, তবে যাকাত আদায় হইবে না; আবার যাকাত দিতে হইবে। আর যদি দেওয়ার পর জানা গিয়া থাকে যে, বাস্তবিক পক্ষে সে গরীব ছিল, তবুও যাকাত আদায় হইয়া যাইবে।
মাসআলাঃ
যাকাত দিবার সময় আত্মীয়-স্বজনের কথা মনে করিবে এবং তাহাদিগকে দিবে। কিন্তু নিজের আত্মীয়-স্বজনকে দিবার সময় যাকাতের কথা শুধু মনে মনে নিয়ত করিবে, তাঁহাদের সামনে যাকাতের কথা উল্লেখ করিবে না । কারণ হয়ত লজ্জা পাইতে পারে। হাদীস শরীফে আছে, “নিজের আত্মীয়কে খয়রাত দিলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়”। একে ত খয়রাতের সওয়াব, দ্বিতীয়তঃ আত্মীয়র উপকার অ অভাবমোচন করার সওয়াব । নিজের আত্মীয়দের অভাব মোচনের পর যাহা বাকী থাকিবে, তাহা অন্য লোককে দিবে।
মাসআলাঃ
এক শহরের যাকাত অন্য শহরে পাঠান মাকরুহ্। কিন্তু যদি নিজের অভাবগ্রস্ত কোন আত্মীয় অন্য শহরে থাকে, অথবা অন্য শহরের লোক এ শহর অপেক্ষা বেশী অভাবগ্রস্ত হয়, অথবা অন্য শহরে দ্বীন ইসলামের খেদমত বেশী হয়, তবে তথায় পাঠাইয়া দেওয়া মাকরুহ্ নহে। কেননা, যাকাত খরাতের দ্বারা তালেবে এল্মগনের এবং দ্বীনই খাদেম আলেমগনের সাহায্য করাতে অনেক বেশী সওয়াব পাওয়া যায়।