আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত এর সংজ্ঞা ও আক্বীদা
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرُوْ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَـمَ سَتَفْتَرِقُ اُمَّتِىْ عَلـٰى ثَلَاثٍ وَّسَبْعِيْنَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِىْ النَّارِ اِلَّا مِلَّةً وَّاحِدَةً. قَالُوْا مَنْ هِىَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّـمَ قَالَ مَا اَنَا عَلَيْهِ وَاَصْحَابِىْ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত ও পথের উপর যারা কায়িম থাকবে (তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে-
عن حَضْرَتْ مُعَاوِيَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ ثنتان وَّسَبْعِيْنَ فِى النَّارِ وَ واحِدَةٌ فِى الْـجَنَّة وَهِىَ الـجَمَاعَةٌ.
অর্থ : হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, ৭২টি দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি দল জান্নাতে যাবে। মূলতঃ সে দলটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত জান্নাতী দলটির পরিচয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, مَا اَنَا عَلَيْهِ وَاَصْحَابِىْ “মা-আনা আলাইহি ওয়া আছহাবী” অর্থাৎ যে ত্বরীকা মুবারক-এ আমি আছি, আর আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ত্বরীকা মুবারক বা উনার অনুসৃত পদ্ধতি মুবারক হচ্ছে উনার সুন্নত মুবারক, আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমষ্টিকে জামায়াত বলা হয়। তাই আলোচ্য হাদীছ শরীফ উনার এ অংশটির মর্মার্থ হল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক এবং উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জামায়াত উনাদের আদর্শে প্রতিষ্টিত দল। তাই হাদীছ শরীফখানা “আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত” উনার নামের উৎস হিসেবে বিবেচিত।
মুসনাদে আহমদ শরীফ ও আবূ দাঊদ শরীফ উনার বর্ণনায় উক্ত হাদীছ শরীফ উনার শেষাংশে উল্লেখ আছে, জান্নাতী দলটিই হচ্ছে জামায়াত। অন্য বর্ণনায় উল্লেখ আছে, যারা সুন্নত এবং জামায়াত উনার উপর প্রতিষ্টিত তারাই জান্নাতী দল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ উনার মর্মই শুধু আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত নামকরণের উৎস নয় বরংহাদীছ শরীফ উনার সরাসরি শব্দ থেকেই হকপন্থী মুসলমান দলের নামটি গৃহীত। (আক্বীদাতুত ত্বহাবী)
মূলত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত নামের দুটি অংশ। প্রথম অংশ হচ্ছে সুন্নত ত্বরীকা যা আলোচ্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত مَا “মা” শব্দটির মর্ম আর দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র আত্মাসমূহ, যা الـجَمَاعَةٌ “জামায়াত” শব্দটির মর্ম।
সুতরাং এ হাদীছ শরীফ দ্বারা মিয়ারে হক্ব বা সত্যের মাপকাঠি অর্থাৎ মুসলমানদের ৭২টি বাতিল দল থেকে একমাত্র হক্ব বা সত্যপন্থী দলটি পরখ করার মানদ- সাব্যস্ত হল- ১) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক আর ২) উনার অনুসারী দল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জামায়াত। তাই সুন্নত মুবারক এবং জামায়াত একটি অপরটির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ, সুন্নত মুবারক উনার উপরই জামায়াত প্রতিষ্ঠিত, আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দ্বারাই সুন্নত মুবারক অনুসৃত।
উপরের আলোচনা দ্বারা এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি প্রসিদ্ধ হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতেই “আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত” নামকরণ করা হয়েছে এবং সুন্নত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও জামায়াতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি হওয়াই এ নামকরণের কারণ।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আক্বীদা হচ্ছে- খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এক। তিনি নিরাকার। তিনি ক্বদিম, হাদিছ নন। উনার সাদৃশ্য কোন কিছুই নেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও রসূল। তিনি হাদিছ বা সৃষ্টি হওয়ার পরও ক্বদিম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে উনার মর্যাদা মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই। তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন। বাকি সমস্ত মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম এবং হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বতই ঈমান আর হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত হচ্ছে জুযে ঈমান বা ঈমানের অংশ।
হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনার মা’ছূম বা নিষ্পাপ আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মাহফুজ বা সংরক্ষিত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মিয়ারে হক্ব বা সত্যের মাপকাঠি। মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বিভিন্ন কার্য নির্বাহে নিয়োজিত আছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ সহ ১০৪ খানা আসমানী কিতাব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট থেকে বিভিন্ন রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি নাযিল হয যা মাখলূক বা সৃষ্ট বস্তু নয় বরং মহান আল্লাহ পাক উনার পাক কালাম। মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকেই সমস্ত ভাল-মন্দ তবে মানুষকে তার আমলের ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে।